STORYMIRROR

Smarajit Datta

Tragedy Others

3  

Smarajit Datta

Tragedy Others

অপেক্ষা স্মরজিৎ দত্ত

অপেক্ষা স্মরজিৎ দত্ত

2 mins
192

অপেক্ষা 

স্মরজিৎ দত্ত


আমি সুমি

বার্ধক‍্য বয়সে এসে

অপেক্ষা করছি।

রোগের ভারে ক্লান্ত আজ;

ছেলে বৌমা নিয়ে ছোট্ট সংসার।

ঘরের দেওয়ালে ঝোলানো 

ঝোলানো অনিসের ছবি।

তাকিয়ে কখনো হাসী,

কখনো করি চরম অভিমান।

তবে প্রতি ক্ষণেই বলি,

তোমার অপেক্ষা করানো কি

আজও একই ভাবে বজায় রাখবে।


স্কুল লাইভে পরিচয়,

সদ‍্য কিশোরীতে পা দেওয়া

নতুন উদ্দমী তখন আমি।

স্পোর্টসের মাঠেই প্রথম পরিচয়;

আরাইশো মিটার লং রেসে

দৌড়চ্ছি তখন আমি।

বেশ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি,

তুমি হঠাৎ ঠিক পেছনে চলে

চলে এসে আমায় বললে;

স্লো স্লো দম রাখতে পারবে না

এখনোও দু পাক বাকি।

আমি বলেছিলাম তুমি,

তুমি জিতে যাবে তো!

উত্তরে বলেছিলে তুমি 

দেখইনা, অপেক্ষা করো

ফল নিজেই দেখতে পাবে। 

শেষ রাউন্ডে প্রায় দু-মিটার

দুরত্ব রেখে ভিক্ট্রি স্পটে 

আমাকে পৌছতে সাহায্য করেছিলে।

সেই মূহুর্তে আনন্দ হলেও 

পরে কষ্ট হয়েছিল ভিক্ট্রি স্তম্ভে

যখন দাড়িয়ে পুরস্কার নিচ্ছিলাম;

বার বার মাঠের ধারে

তোমার দাড়িয়ে অপেক্ষাকে

করছিলাম প্রত্যক্ষ বার বার;

ওটাই শুরু তোমার অপেক্ষা।


তারপর কখনও বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা,

কখনও কলেজের ক্যানটিনে,

কখনও নিজের বাড়িতে তোমাকে 

তোমাকে নিমন্ত্রন করেও,

নিস্তার মেলেনি আমার অপেক্ষা।

তুমি জেলা বা রাজ‍্যের

কোন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেই

ফোন দিতে আমায়;

তখনও বলতে সুমি,

অপেক্ষা করো সামনেই 

মেয়েদের একটা প্রতিযোগিতা আসছে;

আমি ফিরেই তোমায় নিয়ে

প্র‍্যাকটিস নামবো।

শুধু সময়ের অপেক্ষা,

তুমিও জিতে আসবে, আসবেই।


 খেলা জানার দৌলতে তোমার চাকরিও জুটল একটা;

 এদিকে তখন আমিও তিরিশ।

 বাবা অবসর নেবেন,

 তাই মা বাবার ইচ্ছে আমাকে বিয়ে দেবে।

 তোমাকে বললাম সে কথা,

 সেদিনও তুমি আমায় বললে

 বেশ অপেক্ষা করো দুটো মাস;

 সামনের মাসেই আমার একটা প্রমোশন আছে,

 তারপরেই তোমাদের বাড়িতে যাব

 ফাইনাল করব আমাদের বিয়ে।


 যদিও সন্তান আসতে দেরি করতে হয়নি বা অপেক্ষা;

 এক বছরের মাথাতেই আমাদের সন্তান এসেছিল।

 এরপর আরো অনেকবার অপেক্ষা

 তোমার মুখে শুনেছি;

 তবে আমার ক্ষেত্রে নয়,

 আমাদের সন্তানের ক্ষেত্রে।


 আমার মতন তোমার ছেলেও বুঝতে 

পেরে গিয়েছিল বাবার অপেক্ষার কৌশল।

 তাই তেমন সমস্যা কখনও হয়নি

 তবে হঠাৎ করে তোমার চলে যাওয়া,

 সামান্য কদিনের জ্বরে;

 আমাকে অপেক্ষা করিয়ে তোমার

 না ফেরার দেশে চিরতরে।

 তোমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবার আগে,

 হাত তুলে কিছু বলবার ভঙ্গিমা করেছিলে

 তাও ছিল অপেক্ষার দিশা;

 সেই অপেক্ষাই আজও আমি করছি।

 জানি,তুমি বলতে

 আমি চলে গেলে তোমায় বেশিদিন একা থাকতে দেবো না।

 ওই আশাতেই আজও তাকিয়ে থাকি তোমার ছবিতে;

 এ অপেক্ষা বড় কঠিন,

 এবার কি নিয়ে যাওয়া যায় না তোমার কাছে!

 নাকি আরও অপেক্ষা।


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Tragedy