আমি রাজা নই
আমি রাজা নই
এ শোক আমি নিতে চেয়েছি বারবার
চিৎকার করে বলতে চেয়েছি আমার পিতৃপরিচয়
যারা লুকিয়ে রাখা পাথরের গায়ে লাগিয়েছিল ভাইয়ের প্রতীকী রক্ত
তাদের দিকে আমিই এগিয়ে দিয়েছি খাণ্ডব দহনের সমস্ত অভিযোগ।
ওরা বিষ তুলে নিয়েছিল ধর্মান্ধ তীরের ফলায়
ওরা ঈশ্বরের সামনে রেখেছিল নিজেদের বংশ মর্যাদা-
যুধিষ্ঠিরের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি তীর ওরা সয়েছিল বুকে।
ওরা ভাই। হয়তবা আমারও।
কিন্তু ওরা মায়ের কোলে সযত্নে রেখে এসেছিল আমার পুড়ে যাওয়া একটা দমবন্ধ খোলস-
জন্ম থেকে এক-একটি দিন আমায় শিখিয়েছে নিঃশ্বাস নিতে
প্রতিদিন দেখিয়েছে নিজের বিপরীতে বেড়ে ওঠা আরও একটি খাঁচার গড়ন...
ছায়ার বদলে আমি আমি একটু একটু করে চেয়ে নিয়েছি সেই উপভোগ্য রেগিস্তান।
ওড়বার বদলে আমি ডানা মেলে আছড়ে পড়েছি হস্তিনাপুরের লুকনো বারান্দায়।
ওরাই চিৎকার করে তুলেছে আমায়
ঝলসানো চোখের পাতায় আমি বারবার খুঁজে দেখেছি ওদের নাম-
জানতে চেয়েছি ওরা আসলে কারা?
ছেলেবেলার অভ্যাসের বাণ যেভাবে বিদ্ধ করতো সহায়সম্বলহীন নীতিকথাদের
গুরু পরশুরামের অভিশাপ যেভাবে মুছে দিয়েছিল দংশনের চিহ্ন
ঠিক সেভাবেই ওদের দরবারে আমি মুকুট পরেছি যুদ্ধের আগে-
আগামী প্রত্যেকটি দিন এই ছিঁড়ে পড়া বাকল থেকে ধীরে ধীরে জন্ম হবে অচেনা সাম্রাজ্যের।
আমার এভাবে রাজা হবার কথা ছিল না-
ভেদ করার কথা ছিল না কুমার অর্জুনের সমস্ত যুদ্ধসাজ-
কিন্তু ওরা চেয়েছিল-
আমায় বিশ্বাস করে বাসুদেবের সুদর্শন কেড়ে সেখানে বসিয়েছিল বিষাক্ত সিংহাসন।
আমি কোনোদিন এই সিংহাসনের দাবীদার নই-
যুদ্ধের এগারোতম দিনে প্রথম অস্ত্র ধারণের আগে আমি নিজেকে একবার সাজিয়েছিলাম সূতপুত্র সাজে,
রথের দড়ির আগায় বসিয়েছিলাম নিজের বিপর্যস্ত ছায়া,
নিজের ঋণগুলো একটা একটা করে সাজিয়েছিলাম তূণে।
কিন্তু ধনুকের ছিলায় এদের বসানোর আগে বন্ধ হয়েছিল বরাদ্দ খাঁচার দরজা-
বন্দি হবার আগে ওরাই পাঠিয়ে দিল খোলাচিঠি আর অব্যবহৃত ঘুণ ধরা ব্রহ্মাস্ত্র...
আমি পারলাম না নিজের রথটুকু দাঁড় করাতে-
কবজকুণ্ডলের ঋণ থেকে একটু বাঁচিয়ে নিজেকে ঘিরে দিলাম আত্মপরিচয়।
এরপর রাজপথে বিছিয়ে রাখা দেহটাকে আপন করে ঘিরে রেখেছিল সেই ওরাই-
শেষমেশ যুদ্ধের সমস্ত সরঞ্জাম ফিরিয়ে দেবার পরে আমি একবার তাকিয়ে দেখেছি ওদের মুখ
ওরা কেউ ধর্মলোভী পান্ডব নয়
ওরা কেউ নয় কৌরব নামক কলঙ্কিত নায়কের ভার
ওরা কেবল আমার দিকে ধেয়ে আসা মাতা কুন্তীর চার চারটি গর্ভের আপোষ।