Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Kausik Chakraborty

Abstract

3  

Kausik Chakraborty

Abstract

ডুয়ার্সের রানী - জয়ন্তী

ডুয়ার্সের রানী - জয়ন্তী

4 mins
1.8K


সুন্দরী ডুয়ার্সের মাথায় পালকের প্রান্তর ছুঁয়ে মুকুটের মতো যে স্বর্গরাজ্য প্রতিনিয়ত ডেকে চলেছে প্রত্যেকটি ভ্রমণপিপাসু বাঙালি মননকে, জয়ন্তী গ্রাম তারই এক অঙ্গ। বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্পের মধ্যে নিবিড় অরণ্যবেষ্টিত গ্রাম হলো জয়ন্তী। পাশেই বয়ে চলা জয়ন্তী নদী ও ভোরে নদীর জলে হাতির পালের নির্লিপ্ত জলপান - এই নিয়েই ঘুম ভাঙে জয়ন্তীর। দক্ষিণবঙ্গ ও শহরাঞ্চলের কর্মব্যাস্ত মানুষের কাছে এ যেন এক প্রকৃতিদেবীর মুক্ত পসরা। নতুন রাজ্য আলিপুরদুয়ারের উত্তর পূর্বে ভারত ভুটান সীমান্তে সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে রয়েছে এই গ্রাম। গ্রামের পাশেই জয়ন্তী নদী আর তার ওপারেই ভুটানের সবুজ পাহাড়। আলিপুরদুয়ার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে জয়ন্তী যাবার সম্পূর্ণ পথই জঙ্গলে ঘেরা। বক্সা জঙ্গলের প্রায় ৪৫০ প্রজাতির গাছে মোড়া রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে কখন যে আচ্ছন্নতা গ্রাস করে, তা যেন ঠাওরই হয় না। নিউ আলিপুরদুয়ার বা আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শুরু হয় যাত্রাপথ। যাত্রাপথের মাঝে বনদপ্তরের ছাড়পত্র নিলে তবেই মেলে জয়ন্তী গ্রামে ঢোকার অধিকার। বর্তমানে তিনদিনের জন্য দেওয়া হয় ছাড়পত্র আর অবশ্যই তার জন্য জমা দিতে হয় স্বল্প আনুকূল্য। সঙ্গে সরকারি পরিচয়পত্র আর ছবি থাকা একান্তই বাধ্যতামূলক। 

১৯৮৩ সালে দেশের ১৫ তম ব্যাঘ্রপ্রকল্প হিসেবে মান্যতা পায় বক্সা অরণ্য। প্রায় ৩১৫ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই সুবিশাল অরণ্য আজও উত্তরবঙ্গের সম্পদ। ৪৫০ প্রজাতির বৃক্ষ, প্রায় ১৫০ প্রজাতির অর্কিড এবং ১০টি প্রজাতির বাঁশগাছের দেখা মেলে এই অঞ্চলে। যে স্থানের এতো বৈচিত্র, তা তো সত্যিই স্বর্গরাজ্য। জীববৈচিত্রেরও খামতি নেই এতটুকু। বনদপ্তরের হিসেবে ২৮৪ রকমের পাখি, ৭৩ টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ৭৬ প্রজাতির সাপের দেখা মেলে এখানে। যাদের মধ্যে চিতা, বাইসন, বন্য শুকর, বন্য কুকুর, হাতি, কাঠবেড়ালি, গাউর, চিতল হরিণ অন্যতম। যদিও ব্যাঘ্রপ্রকল্প হলেও বর্তমানে বাঘের অস্তিত্ব সম্বন্ধে বনদপ্তরের হাতে কোনো প্রামাণ্য নথি নেই। পর্যটক বা স্থানীয়দের চোখেও পরে না ভারতীয় বাঘের রাজসিক চলাফেরা। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজ্যের বনদপ্তর উদ্যোগী হয়েছে নিকটবর্তী অসম রাজ্য থেকে ৬ টি বাঘ আনতে। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানসম্মত প্রজননের মাধ্যমে অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা বাড়িয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার ব্যাপারে রাজ্য কতটা উদ্যোগী হয়, সেটাই এখন দেখার। 


জয়ন্তী ভ্রমণে দুই বা তিনদিন বরাদ্দ করলে সব দ্রষ্টব্যগুলো দেখা সম্ভব। প্রথম দিন দুপুরে লোকাল গাড়ি ব্যবস্থা করে ঘুরে নেওয়া যায় 'চুনিয়া ওয়াচ টাওয়ার', জঙ্গলের মধ্যে কয়েকটি সল্ট পিট্ (যে স্থানে বিকেলের পর লবন দেওয়া হয় বনদপ্তরের তরফে, এবং বিভিন্ন পশুরা সেখানে জিভ ছোঁয়াতে আসে)। এই সল্ট পিট্গুলিতে বিকেলের পর আলো আঁধারি পরিবেশে হাতি, বাইসনের দর্শন পাবার সম্ভাবনা প্রবল। কথায় কথায় বলে রাখি, গোধূলির পর আলো আঁধারির মায়ারাজ্যে জঙ্গল এক অনন্যতা পায়। সেই সৌন্দর্য ও নিস্তব্ধতা শহরের মানুষের কাছে স্বপ্নের থেকে কোনো অংশেই কম নয়। পৃথিবী যেন চারপাশে সবুজ পাহাড়ের মাঝে অরণ্য ছড়িয়ে রেখে অহরহ ডেকে চলে সেই মাদকতার স্বাদ নিতে। জীবনের শেষ পর্যায়েও মানুষ ভুলতে পারে না সেই সুখস্মৃতির অনুভূতিগুলো। 


পরেরদিন ভ্রমণ শুরু হতে পারে কাছেপীঠের জায়গাগুলো দিয়ে। সবকটি জায়গার মধ্যে অন্যতম হলো 'বক্সা দুর্গ'। বক্সা পাহাড়ের মাথায় ২৮০০ ফুট উচ্চতায় বর্তমানে ভগ্নপ্রায় এই দুর্গ আজও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ও তিব্বত থেকে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য এই দুর্গ ব্যবহৃত হয়। ভুটান রাজার হাত থেকে কোচ রাজার দখলে আসে এই ঐতিহাসিক দুর্গ। তারপর সময়ের সাথে ব্রিটিশদের হাতে যায় দুর্গের কতৃত্ব। সেই সময়েই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দি রাখতে এই নির্জন দুর্গের অবস্থানগত সুবিধাকে কাজে লাগে তারা। বক্সা পাহাড়ে ট্রেক করে দুর্গে ওঠার অনন্য অভিজ্ঞতা পর্যটকদের মনে স্থায়ী ভাবে জায়গা করে নেয় সারাজীবনের জন্য। মাঝপথে পড়ে অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ি জলাশয় 'পোখরি লেক'। অজস্র হিংস্র মাগুরের নিশ্চিন্ত আস্তানা এই লেক। জলের ওপরে কোনো খাবার ফেললে বিলক্ষন টের পাওয়া যায় তাদের রাজকীয় অবস্থান। তবে প্রতি মুহূর্তে নির্জনতা আর বন্য পশু দেখা পাবার সম্ভাবনা যে পর্যটকমনে এক উত্তেজনার পারদ বোনে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 


ট্রেক করার আর এক ঠিকানা হলো মহাকাল মন্দির। জয়ন্তী নদীর গা ঘেঁষে ভুটান সীমান্তে পাহাড়ের মাথায় আধ ঘন্টার ট্রেকিংএ পৌঁছনো যায় মহাকাল গুহায়। এছাড়াও নদীর ধারে অবসর সময়ে বসে থাকাও যেন প্রকৃতির আশীর্বাদ। সারাবছর খুবএকটা জলের দেখা না মিললেও বর্ষাতে ভরে থাকে জয়ন্তী নদী। তবে অক্টোবর থেকে মার্চই হলো ডুয়ার্স ভ্রমণের জন্য আদর্শ। 


বক্সা অরণ্যের ভিতর দুরকম ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে বনদপ্তরের সৌজন্যে। একটি হলো জঙ্গলের 'বাফার এরিয়া' পরিদর্শন আর একটি হলো 'কোর এরিয়া' ভ্রমণ। কোর ভাগে যাবার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনদপ্তরের জিপসি গাড়ি ভাড়া করতে হয় আগেই। হাতে গোনা গাড়ির ব্যবস্থা থাকার কারণে দিনের দিন গাড়ি পাবার নিশ্চয়তাও পাওয়া যায় না। তাই রিসোর্ট বা হোটেলের তরফ থেকে আগেরদিন গাড়ি ভাড়া করে রাখাই নিরাপদ। তবে ঘন অরণ্যে মোড়া মায়ারাজ্য বক্সায় এই ৩ ঘন্টার জিপসি ভ্রমণটি আলাদা করে দাগ কাটবে তা বলাই বাহুল্য। নিস্তব্ধতার ঘেরাটোপে নিজের নিঃস্বাস নেবার শব্দকেও দূষণের পর্যায়ে ফেলতে পারেন পর্যটকগণ। শুধুমাত্র ক্ষণে ক্ষণে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে ধনেশ পাখির চিৎকার। অসীম স্তব্ধতার আড়ালে এ যেন এক মোহলৌকিক শব্দ। আর চলার পথে আপন খেয়ালে হেঁটে যাওয়া হাতি বা বাইসনের পাল দেখার দুর্লভ অভিজ্ঞতা তো সারাজীবন ভোলার নয়। 


সপ্তাহখানেক ডুয়ার্স ভ্রমণের মধ্যে ২-৩ দিনের বক্সা-জয়ন্তী ভ্রমণ পর্যটকের জন্য সেরা ঠিকানা হতে পারে। তবে ভ্রমণকালে অবস্থানগত বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য কিছু নগণ্য সমস্যা দেখা দিলেও জয়ন্তীকে প্রকৃতই ডুয়ার্সের রানী সম্বোধন করতে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীই এক মুহূর্তও সময় নেন না। ঘরের কাছেই সুন্দরী হিমালয়ের কোলে যে এমন স্বপ্নের গন্তব্য থাকতে পারে, তা হয়তো কারোর পক্ষেই অগ্রিম ভেবে রাখা সম্ভব নয়। বাংলার মাথার মুকুটে আজও এ এক অনন্য পালক ও হারিয়ে যাবার ঠিকানা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract