জাহেদী শিল্পী
জাহেদী শিল্পী
তুমি চলে যাওয়ার পর থেকেই বাজার থেকে শিল্পী হিসাবে আমার নামটা মুছে গেছে। বহু বছর হলো প্রর্দশনী করা হয়নি । বাংলায় ছবি কোনদিন ছবি বিক্রি হয়তো না। আর অসুস্থ বাবা মা ছেড়ে বাংলার বাইরে আর প্রর্দশনী করতে যাওয়া হয় নি। তাই আগের মতো অর্থ উপার্জন করতে পারছি না। অর্থনৈতিক ভাবে খুব দূর্বল। তুমি বলতে শিল্পীর কোন রাজনৈতিক রঙ হয় না। কিন্তু রাজনৈতিক দল দ্বারা সমাজ নিয়ন্ত্রিত। তাই আমাদের এই উদাসীনতা বোধহয় আমাদের বিপদে ফেলে দিচ্ছে।
তুমি জানো তো আমি কেমন মানুষ। যখন আমার দলটা সরকারে ছিলো তখন আমি কোন সুবিধা নেবার চেষ্টা করি নি। কারণ রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য , কখনো শুধু নিজের চেনা জানা মানুষকে পাইয়ে দেওয়া হতে পারে না। তার উদ্দেশ্য সত্যিকারের বদল সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশের। রাজনীতি থেকে আমি আজকালকার ভদ্রলোক মতো দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলাম। আসলে বুদ্ধিজীবী শব্দটাও আজকাল গালিগালাজের মতো শোনায়। তাই আরকি। নিজেকে শিল্পী বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে। সমাজের সত্যিকার ছবিটা তো আঁকাতে পারি না আজকাল ভাবনার রঙ তুলিতে।
এখন তো সরকার যে দলটা রয়েছে তাদের আমি ঘৃণা করি। তাই কিছু বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা আঁকা শিখিয়ে , কিছু বই আর পত্রিকার প্রচ্ছদ পেট চলাছি। তবে ভালো খবর চিত্রদির আমার একটা পুরনো ছবি একটা মান্টি ন্যাসেনাল কোম্পানি তাদের এবছরের ক্যালেন্ডার করছে। কিন্তু আমি পয়সা পায়নি কারন দরকারে সময় কিছু টাকা ধার দিয়েছিলো চিত্রাদি তাই ওটা আমি দিয়ে দিয়েছিলাম। তাই টাকা দিতে চাইলেও আমি নিই নি।
ছবিটা বিক্রির খবর পেতেই এ বছর আমার পাড়ার দূর্গা পূজার দায়িত্ব নেবার জন্য পূজা কমিটি এসেছিলো আমার কাছে। তুমি আমার কথা ভুলে যাবার চেষ্টা করছো তবু মনে করিয়ে দিই। সে বছর আমি আমদের পূজা মন্ডলের থিম রেখেছিলাম মেদিনীপুর পট শিল্প। কাজটা বিনা পয়সায় করেছিলাম। কারণ সৃষ্টিতে যে সুখ আছে তা টাকা দিয়ে কেনা যায়। টাকাতো শুরু আরাম আর সাচ্ছন্দ্য কিনতে পারে। কয়েকটা পুরস্কার পেয়েছিলাম। তবে সবচেয়ে বড় পুরস্কার ছিলো তুমি । আমার সাথে নিজে আলাপ করলে তুমি। প্রেম হলো বিয়ে করলাম আমরা। সে কোন কারণেই আমরা আলদা হই যে কয়েকটা দিন তুমি আমার সাথে ছিলেন আমিতো ভালোই ছিলাম। তুমি চলে যেতে জীবনের ছবিটা নষ্ট হয়ে গেছে। সব রং মুছে গেছে। থাক সে সব কথা।
আমি এই বছর পূজার দায়িত্ব নিলাম না। জানতো সেন্টু দা আমাকে কতো ভালোবাসে। আমাকে ও রাজি করাতে পারেনি। সংবাদ পত্র যে কথা বলেছি সেই কথা ঐ মন্ত্রীকেও মুখের উপর বলছি। দু র্গা পূজা নিয়ে রাজনীতি আমি মানাতে পারছি না। কিছু টাকা অনুদানের বিনিময়ে ক্লাবের মাথায় ক্লাবের ফিতে কাটা থেকে অনুষ্ঠান মঞ্চ ব্যবহার করে ওরা। এমন কি কে কোথায় স্টল দেবে সে গুলো নিয়ন্ত্রণ করার, বিরোধী ভীষন ভাবে আমি। এরা পূজার উৎসবটাকে রাজনৈতিক প্রচার পাবার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে ছাড়ছেন না। তুমি বলবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও তো দূর্গা পূজাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শক্তি সংগ্রহ, শক্তি প্রদর্শন এবং জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করতেন। কিন্তু এই সব নেতা মন্ত্রীরা তো নেতাজি মতো আদর্শবান না।এক কথায় আমি আজকালকার নেতাদের ঘৃণা করি। এরা রাজনীতিতে কোন আদেশের বা সেবা ভাবনায় আসে নি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের সম্পত্তি বৃদ্ধি এদের উদ্দেশ্য।
বর্তমান ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাই আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বারো হাজার টাকার চাঁদার বিল ধরিয়ে দিয়েছে। আমি পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছি। চাঁদা দিতে না হলেও বিভিন্ন ভাবে ওরা আমাকে বিরক্ত করছে। আমার বাড়ির চারপাশে চারটে মাইক লাগিয়ে গান বাজাচ্ছে জোরে জোরে। আমি আবার থানায় এসেছি।আইনি ব্যবস্থা নিতে।
আজ একটা বিষয় আবিষ্কার করে , তোমাকে চিঠি লিখছি। হয়তো আমাকে জাহেদী শিল্পী নামে প্রচার করছে ওরা। কিন্তু আমি নাস্তিক হলেও পূজা বিরোধী না। নাগারা, ঢোল , ডান্ডিয়া , প্যান্ডেল ,লোক সঙ্গীত, আনন্দের নাচ, নয় দিনের রঙিন একটি উৎসব,আলো, মেলা, খাবার আরো নানা কিছু। এটাই হলো সেই সময় যখন তুমি নিজেকে আবার নতুন করে খুঁজে পাবে। নতুন করে পজিটিভ শক্তি , নতুন উদ্দীপনা এবং আমরা আমাদের চারিত্রিক উন্নতি খুঁজে পাওয়ার সময় এই উৎসব। যা অনেক দারুন ভাবে আমরা উদযাপন করি ।
আমার নাস্তিকতা আর ধর্মীয় উৎসবের কোন বিরোধীতা নেই। আমি যদি কোরবানিতে পশুহত্যা বিরোধীতা করি সেটা আমার মানবীকতা , কখনো নাস্তিকতা নয়।নাস্তিক আমি কারণ আসমানী কিতাব কিংবা পুরুষ বা লোক দ্বারা কৃত নয়, অলৌকিক ধর্ম গ্রন্থ বলে কিছু হয়না। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সব কিছু মানুষের তৈরি। আমি মানি না কোন আজনা শক্তি বড় কর্তা হিসেবে আমাদের জীবন ভাগ্য, এ জগৎ সংসারের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।
ওরা আমার বিরুদ্ধে মোটামুটি ভাবে একটা প্রচার চালাচ্ছে আমি হিন্দু ধর্ম বিরোধী। কারণ দেব দেবীর আমি ব্যঙ্গত্বক ছবি আঁকেছি। আজ জাহেদী বলেই নাকি পূজা বন্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছি। কিন্তু আমিতো পূজা বন্ধ করতে বলি নি। আমি ঈশ্বরকে অস্বীকার করি বলে তোমাকে ঈশ্বরকে অস্বীকার করতে হবে এমন কথা আমি বলি নি।ঈশ্বরের কনসেপ্টটা মানুষের কল্পনা মোতাবেক বলে। তা নইলে বিশ্বে এতগুলো ধর্ম হয়। তোমরা প্রত্যেক দাবি করো তোমাদের ঈশ্বর কিংবা আল্লাহ এই পৃথিবী তৈরি করছেন। তিনিই সর্বশক্তিমান তার ইচ্ছেতেই সবকিছু হয়। যদি এ পৃথিবীতে তার দেখানো ধর্ম না মেনে মানুষেরা অন্য ধর্ম পালন করে। তাকে পূজা বা ইবাদত না করে অন্য ইশ্বর আল্লাহ পূজা ইবাদত করতে পারে। তাহলে আমি কেন পারবো না নাস্তিক হতে??
আসলে আমার ওপর নির্যাতন বিরুদ্ধে পুলিশের সাহায্য নেওয়ায় ওরা তেমন বিপদে পড়ে নি। এখন ঘটনায় নতুন মোর এসেছে। মহালয়া যেইদিন তোমাদের মতে দেবী শক্তির উত্থান হয়। নারী শক্তি অশুভ শক্তির ওপর জয় লাভ করেছে। সেইদিন আমাদের ক্লাবের কয়েকজন মাথা মিলে শর্মিলা দিদিকে ধর্ষণ করছে। পূজা কমিটির ঐ মানুষ গুলোকে এখুনি গ্রেফতার করা উচিত। যারা একটা মেয়েরে সন্মান হানি করে তাদের কি দূর্গা পূজা করার অধিকার আছে। আমি ধর্ম মানি না সত্যি কিন্তু একটুকু মানি এটা একটা সমাজ বিজ্ঞান। এর প্রতিটা সংস্কার মানুষকে শিক্ষা দেয়। দূর্গা পূজা নারীকে সম্মান করতে শেখায়। যদিও ধর্ষণ সব সময়ই অপরাধ । কিন্তু একটা মাটির নারীমুর্তিকে তুমি পূজা করবে, আর একজন রক্তমাংসের নারীকে ধর্ষণ করবে সেটা হয়না।
সমাজের মাথা হয়ে বসে থাকা ভদ্রলোকের মুখোশ পরা এইসব অসুর দমনের জন্য দুর্গা হয়ে তুমি কি এগিয়ে আসতে পারবে না? তুমি সব কিছু ভুলে এই জাহেদী শিল্পীর পাশে একটু দাঁড়াও না একবার।সমাজ নোংরা হয়েছে বলে চিল চিৎকারে না করে একে পরিষ্কার করতে হবে আমাদেরই। শর্মিলা দিদিকে সুবিচার পাওয়ানোর আইনি লড়াইটা তুমি লড়ে দাও একটু। জানি আমাকে তুমি ভালো বাসো না কিন্তু ঘৃণা করো। তোমার ঘৃণা একটা পুরুষকে। যারা নারীদের কোনদিন স্বাধীনতা দিতে পারে না মন থেকে। বিয়ে পরে আমি যেমন মালিক হতে চেয়েছিলাম তোমার। তাই পূরুষ তান্ত্রিক এই সমাজের বিরুদ্ধে তুমি আইনী লাড়াইটা লড়ে শাস্তি দাও ঐ অসুর গুলোকে।
,,,,,,,,,,,,,,