নন্দদুলাল বাবু
নন্দদুলাল বাবু
শীত সবে সবে পড়ছে । সত্যবতী অনেক জোরজার করে একটা রুম হিটার কিনিয়েছে । ব্যোমকেশ বলেছিলো , " সত্য এখানে অত ঠাণ্ডা পড়ে না গো ! "
" আ মোলো , কদিন আগে তোমার ফোনে একটা হোয়্যাটসঅ্যাপ এলো যে এবারে ওয়েদার এত্ত ভালো প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়বে ... "
" অজিত আমি সত্যের সাথে তর্কে পারবো না তুমি কিনিয়ে আনো যাও । "
সেদিন সত্যই রাত্রে প্রচণ্ড কনকন করছিলো বলে রুম হিটার চালালাম । আমি বললাম , " শুনলাম অনুকূল ডাক্তার ছাড়া পেয়েছে দু মাস হলো । "
" হ্যাঁ , তা তো একদিন পেতোই । "
" এখন আবার কী শয়তানি ফাঁদছে কে জানে ! "
" শোনো অজিত অনেককাল একই অপরাধীর সাথে লড়তে লড়তে এই সত্য অনুসন্ধানে মরচে পড়ে যাচ্ছে । দেখো , এর মাঝে আমার সত্যটাও কেমন বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে । শোনো সত্য , খোকা তো এখন বড়ো হলো , এবার একটু নিজের খেয়াল নাও । "
" হঠাৎ এত দরদ উথলে উঠলো যে ! " বলে সত্যবতী ।
" হঠাৎ কিছুই হয় না হে ... " কথা শেষ হলো না ব্যোমকেশের ফোনটা বেজে উঠলো ।
" হ্যাঁ ", " ও " , " আচ্ছা কবে থেকে ? " , " অজিত গেলে হবে না , এবার আমায় ? " এই ধরণের কথাগুলো শুনলাম এপার থেকে ।
" কী হলো ? " আমি বললাম ।
" আমাদের নন্দদুলালবাবুকে মনে পড়ে ? "
" হ্যাঁ ওই মানুষটাকে মনে থাকবে না । আমি প্রথম একা গিয়েছিলাম কোনো ঘটনায় । "
" হ্যাঁ উনি আবার নাকি তাঁর কাজ শুরু করেছেন । কোত্থেকে কোন এক নেশার দ্রব্য সংগ্রহ করে উনি কখনও শিশুর মতো , কখনও পরিণত আবার কখনও একদম বয়স্কের মতো ব্যবহার করছেন । এখন আবার ওনার অস্লীল লেখাগুলো একটি নিম্নমুখী চ্যানেল ফিল্ম করছে । ফলে নাকি ওনার পয়সারও অভাব হচ্ছে না । "
" আর এবার ওনাদের দাবি তুমি যাও , তাই তো ? "
" একদমই তাই । চলো বেরিয়ে পড়া যাক । "
বাড়ি গিয়েই হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে নন্দদুলাল বাবুর ছেলে ।
" আবার এসেছো তোমরা ? " ভারী গলায় বললেন নন্দদুলাল বাবু ।
ঠিক তারপরই হঠাৎ শিশুর গলায় জোরে কেঁদে উঠলেন নন্দবাবু ।
" আচ্ছা আপনার বাবা কি কোনো ওষুধ খান ? "
" দেখুন কোনো রোগ নেই ওনার কিন্তু তবু মাথাব্যাথা করছে বলে আমাদের বাড়ির নীচেই বসা গৌতম ডাক্তারকে দেখিয়ে ওষুধ নেন । এলোপ্যাথ ক্যাপসুল । প্লাস্টিকের ক্যাপে । "
" কোনোভাবেই ওই ওষুধ দেবেন না । আমি নিশ্চিত হতে তবুও এক পিস নিতে চাই । "
" হ্যাঁ এই তো নতুন এক পাতা আনা, একটা কেটে দিচ্ছি ... এই নিন । " বলে পকেট থেকে পাতা বের করে দিলেন নন্দবাবুর ছেলে ।
বাড়ি ফিরে ওই ক্যাপসুল খুলে ওষুধের গুঁড়ো বের করে ব্যোমকেশ দেখলো । " গন্ধ তো পুরো নেশার দ্রব্যের মতোই । " পরীক্ষা করিয়ে আমরা আরও নিশ্চিত হলাম ।
সেই রিপোর্ট নিয়ে নন্দবাবুর ছেলেকে দিয়ে ওই ওষুধ ও ডাক্তারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেরোচ্ছি দেখি প্রদোষ মিত্র তাঁর ভাই ও বন্ধু নিয়ে নীচের এক ঘরে যাচ্ছে ।
এক আধবার ডিটেকটিভ মিটসে দেখা হয়েছে ওঁর সাথে । ব্যোমকেশ ও প্রদোষ বাবু হাসিমুখে করজোড়ে এগিয়ে গেলেন একে অন্যের দিকে ।
" ফেলুবাবু , এদিকে কী ব্যাপার ? "
" আর বলবেন না । নীচের তলায় এক ডাক্তার সন্ধ্যেবেলা বসেন , খবর আছে এখান থেকে অদ্ভুত ড্রাগস পাচারের খবর আছে । ওই ড্রাগস নাকি ইচ্ছেমতো মানুষের ব্যবহার বিভিন্ন বয়সির মতো করে দেয় । নন্দবাবুর ছেলে খবর দিয়েছেন পুলিশে সন্দেহ হওয়ায় । আমার পার্সোনালি বিষয়টা ইন্টারেস্টিং লাগছিলো বটে তবে সুযোগ এসে পড়বে ভাবিনি । "
" ও এই ব্যাপার ! আপনি অনুকূল ডাক্তারকে চেনেন ? "
" হুমম না । "
" একদিন আসুন সন্ধ্যেতে কথা কওয়া যাবে । সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন । জানি না এই গৌতম সেই অনুকূল না তার কোনো চ্যালা । "
" হাইলি সাসপিসিয়াস " বলে উঠলেন রহস্য কাহিনীকার জটায়ু ।