www র ফাঁদে
www র ফাঁদে
কালাম স্যার ওই মোটকা ভুঁড়িআলা গজেন্দ্রর কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে ফেলে গিয়েছিল দরজার কাছে । আমি টুক করে তুলে নিজের কাছে চাবিটা রেখে বসে গেছি বাবলির কাছে । যতক্ষন সিগন্যাল না পাই চাবি খুলে তো বেরোতে পারবো না । বাবলির কাছে জেনে নেওয়াই ভালো আসলে সেদিন কি হয়েছিল । বাবলিকে জানালাম যে কিভাবে খবরে বাবলির নামে মিথ্যা খবর পরিবেশেন করা হচ্ছে এবং সেটা শুনেই আমি নিজেকে জড়িয়ে ফেলি এই তদন্তে । বাবলি আমাকে জানতে চায় তার বাবা ঠিক আছে কিনা । আমি ওকে আশ্বস্ত করি আর এটাও জানাই যে ওনার সাথে আমি নিজে দেখা করে এসেছি । বাবলি আমাকে জানায় ওর কয়েক দিন ধরেই সন্দেহ ছিল কোম্পানির কার্যকলাপে । একটা বড় অর্ডারের জন্য চুলের চাহিদা পূরণ করতে একটা মারাত্মক ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে দিচ্ছিল ওরা হেয়ার অয়েলে । ওই ক্ষতিকর কেমিক্যাল মাথার স্ক্র্যাপে ক্যান্সারের সৃষ্টি করবে ।
ত্বকের মতো চুলেও আমরা তেল বা শ্যাম্পু যাই মাখি, চুল তা শুষে নেয়। তাই সে সব তেলে যদি কোনও ক্ষতিকর উপাদান থেকে যায়, চুল সেটাও শুষে নেয়। ফলে চুলের তো বটেই, স্ক্যাল্পেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়।
এসএলইএস , প্যারাবেন জাতীয় রাসায়নিক যৌগ তো ছিলই সঙ্গে একটি কৃত্রিম চীনা যৌগ ব্যবহার করা হচ্ছিল তেলের মধ্যে যেটি দ্রুত চুলের বৃদ্ধি করতে পারে সঙ্গে চুল অস্বাভাবিক ভাবে পড়বেও । একটা তেলের সাথে আর একটা ফ্রি , এই বিজ্ঞাপন দেখে তেলের বিক্রিও বাড়ে প্রথমে । তবে এভাবে দ্রুত কোন বড় অর্ডার সম্পন্ন করা যাবে না বুঝে গজেন্দ্র বাবু একটি প্ল্যান কষেন। উনি কিছু মেয়েকে অপহরণ করে এই আমতার গুদামে রাখার প্ল্যান করেন । মেয়েদের উপরে যথেচ্ছ ভাবে রাসায়নিক যৌগ সরাসরি ব্যবহার করে উইগের অর্ডারের চুল আদায় করে নেওয়া যাবে । অবশ্য এতে মেয়েগুলির স্ক্র্যাপ ততদিনে নষ্ট হয়ে যাবে তাই ওদের আর রেখে লাভ নেই । তো দালাল মারফত ওদের অর্গ্যান বেচে দিয়েও গজেন্দ্র বাবু কিছু লাভ করবেন । বাবলির ডিউটি ছিল স্টোরে , সেদিন কাজ শেষ হতে রাত হয়ে যায় । বাবলি আটো ধরবে বলে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে একটা ট্রান্সপোর্ট এর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে । প্রথমে ও অতটা পাত্তা দেয়না । গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে অটোর অপেক্ষা করতে করতে বাবলির কানে এলো মেয়েদের গোঙানির শব্দ । বাবলি দেখে গোঙানির শব্দের উৎস গাড়িটা । প্রথমে ভয় ভয় লাগলেও , ও এগিয়ে গিয়ে গাড়ির ডালাটা টানে। লক ছিলনা তাই সেটা খুলে যায় আর বাবলি দেখে গাড়িতে কয়েকটি মেয়ে মুখ , হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে । বাবলি দেখেছে গাড়ির চালক ওদের অফিসের ভিতরে গেছে । বাবলি সিধান্ত নেয় পুলিশে খবর দেবার । ফোন করতেই যাবে এমন সময় ওকে পেছন থেকে কেউ একটা জোরে ধাক্কা দেয় । বাবলি ও গাড়ির ভিতরে পড়ে যায় । ও দেখতে পায় ওদের ম্যানেজার এসে হাজির হয়েছে ওখানে । বাবলি ম্যানেজারকে বলে ওকে আর এই মেয়েদের ছেড়ে দিতে । ম্যানেজার ওকে জানায় কেন মেয়েদের এখন খুব প্রয়োজন এবং এখন এই মেয়েদের সাথে বাবলিকেও নিয়ে যাওয়া হবে । কারণ ও সব জেনে গেছে তাই ওকে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ পুলিশি হাঙ্গামা । আর বাবলিকে মেরে ফেলার থেকে ভালো ওর মাথার জমিতে চুলের চাষ করিয়ে নিয়ে ওর অর্গ্যান বেচে লাভের মুখ দেখা । বাবলি শুনেছিল ম্যানেজার ফোনে গজেন্দ্র বাবুর সাথে কথা বলছিল । আর হয়ত তখনই ওর নাম দিয়ে এই অপহরণকে পরিচালিত করার সিদ্ধান্ত নেয় ওরা ।
কালামকে গজেন্দ্র জানায় টাকাটা নিয়ে সে যেন সোজা বেরিয়ে যায় এখনার কোন খবর যেন বাইরে না যায় কারণ তাতে কালামের জন্য বিপদ বাড়বে বই আর কিছু না । কালাম ইতিমধ্যে সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছে । কালামের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে গোটা টিম আসছে এদিকেই । কালাম গজেন্দ্রর কাঁধে হাত রেখে বলে , এত অবিশ্বাস করলে চলে গজেন্দ্র বাবু ? টাকা পেয়েছি ব্যাস মুখে কুলুপ দিলাম ।
কালাম গাড়ির দিকে একবার এগিয়ে গিয়েই দ্রুত চিলের মত ঘুরে আসে আর গজেন্দ্র বাবুর মাথায় নিজের বন্দুকটা চেপে ধরে । ওখানে থাকা গুন্ডা গুলো এতক্ষন মদের বোতল আর তাস নিয়ে ব্যস্ত ছিল । হঠাৎ করে বিপদ দেখে তারা ছুটে এলো কালামের দিকে । কালামের হাতের বন্দুকের নল এখন গজেনের মাথায় । সে ভয়ে ছেলেদের ওখানেই দাঁড়িয়ে যেতে বললো । কালাম ওদের বললো হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে পিছন দিকে হাত মুড়িয়ে মাটিতে বসে যেতে । গজেন্দ্র কালামকে আরো টাকা দেবার কথা বলে যাতে কালাম ওকে ছেড়ে দেয় । কালাম গজেন্দ্রকে বলে সে একজন ইনভেস্টিগেটর অফিসার আর তার টিম ও কাছাকাছি চলে এসেছে । ইতিমধ্যে একটা গুন্ডা যে পেচ্ছাপ করতে একটু ঝোপের দিকে গিয়েছিল সে সবটা দেখে বুঝে যায় যে বিপদ সামনে । তাই বন্দি মেয়েদের ঢাল করে বাঁচার চেষ্টা করে ছেলেটা ছুটে যায় গুদামের দিকে । কিন্তু এই আশঙ্কা আগেই কালাম করেছিল তাই সে গাড়ির কাছে গিয়ে হর্নটা একবার দিয়ে সিগন্যাল দিয়েই দিয়েছিল বন্যাকে । বন্যা সিগন্যাল পেয়ে তাড়াতাড়ি মেয়েদের নিয়ে দরজা খুলে পিছনের দিকে সেফ সরিয়ে নিয়েছিল । গুন্ডাটা গুদামের কাছে যেতেই বন্যা ওর উপরে পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে । গুন্ডা কিছু করবে তার আগেই একটা থান ইটের বাড়ি এসে পড়ে ওর মাথায়। মাথা ফেটে ওখানেই পড়ে থাকে গুন্ডাটা । বন্যা এবার বেরিয়ে আসে গজেন্দ্রর সামনে । কালাম বন্যাকে দেখিয়ে গজেন্দ্রকে বলে , দেখুন গজেন্দ্র মেয়েদের মাথায় শুধুমাত্র চুল চাষ হয়না , বুদ্ধিও চাষ হয় । এই বন্যা আইচ নামক মেয়েটি আপনাদের পোলপান্ডা খুলতে সবথেকে বেশি কাজ করেছে । নিজের গয়নার টাকা দিয়ে ফোন কিনেছে যাতে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে ও উইগ রহস্যের জাল খুলতে পারে । কে বলেছে চুলেই নারী ? কে বলেছে নারী গয়নার লোভী ?
দরকার পড়লে নারী সব পারে সেটা খুব কাছ থেকে দেখলাম বন্যা আপনার জন্য ... অসংখ্য ধন্যবাদ ।
ইতিমধ্যে টিম চলে এসেছে , সকলকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো । গজেন্দ্র এন্ড সন্স কোম্পানিকে সিল করা হলো । ম্যানেজার সহ আরো কয়েক জনকে ধরা হলো । বাবলির নামে যা মিথ্যা রটনা হয়েছিল সেটাও কালাম নিজে দায়িত্ব নিয়ে ঘোচালো । বন্যার খবর এখন দিকে দিকে । অপহরণ হওয়া মেয়ে গুলোকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে । বন্যার বুদ্ধিতে তাড়াতাড়ি কাজটা করতে পারায় কোন মেয়ের মাথাতেই কেমিক্যাল প্রয়োগ করার সুযোগ পায়নি ওরা । তাই কারো কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই । বাই ওয়ান গেট ওয়ান বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে যারা গজেন্দ্র এন্ড সন্স এর তেল কিনেছে তারা এখন ঘনঘন নিজেদের কান মুলছে এই ফ্রির প্রতি লোভ করার জন্য । বন্যাকে হাবলদার থেকে প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে ।
এতো গেল উইগ রহস্যর খবরাখবর তবে আমি বন্যা আইচ মায়ের কাছে তিনটে গাট্টা খেয়েছি কারণ আমি গয়নার টাকা চুরি করে মোবাইল কিনেছি । মা বলছে এতদিন স্মার্টফোন ছিলনা বলেই আমি প্রমোশন পেলাম । এবার নাকি এই স্মার্টফোন আমার মাথা খাবে । মাকে কি করে বোঝাই যে জিনিসকে আমরা যেভাবে ব্যবহার করবো তার ফল তেমনই মিলবে । ভাগ্যিস প্রমোশন পেয়েছি তাই মায়ের তালপাতার পাখার বাড়ি থেকে বেঁচে গেছি আমি । এর মধ্য একটা ভালো ও অবিশ্বাস্য খবর কালাম আমাকে প্রপোজ করেছে । আমাকে ও বিয়ে করতে চায় । ভাবতে পারিনি এত সুন্দর রাজপুত্র লিখে রেখেছে আমার জন্য ঈশ্বর । ভেবেছিলাম মা আপত্তি করবে ভিন জাতের ছেলে বলে কিন্তু বিনয়ী কালামকে দেখে আর ওর সাথে কথা বলে মায়ের এই ভিন জাত ব্যাপারটা খুব খাটো মনে হয়েছে । মা রাজি আমাদের বিয়ে দিতে । এখন অপেক্ষা কখন আমি কালামের সাথে শুভ দৃষ্টি করবো আর কুবুল হে বলবো । আরে বিয়েটা তো দুবার হবে নাকি ! দুজনের দুরকম রীতিনীতি মেনে ।।
ইন্টারনেট আমাকে রাতারাতি সেলিব্রেটি বানালো , প্রমোশন দিল আর সবথেকে সেরা একটা মনের মানুষ ও পেলাম যে বন্যা আইচের রূপ না মনটা দেখে তার হতে চাইলো । থ্যাঙ্ক ইউ হানি বানি ইন্টারনেট আর আমার প্রিয় পানুলাল । যা শালা ভুলেই গেছি ওকে আমার একটা ট্রিট দেওয়া বাকি আছে ।।
