www র ফাঁদে পর্ব 2
www র ফাঁদে পর্ব 2
মা কুলুঙ্গি থেকে সকালে একটা টিনের কৌটো বের করলো । বাবা থাকতে ওটা নিয়ে দুধ আনতে যেত খাটালে । এখন দুধের বালাই নেই , কৌটোটা এখন মায়ের তিজরি । মা তীক্ষ্ণ নজরে সাত বার গুনে গুনে আমাকে স্বর্ণকারের রশিদ দেখে সাত হাজার একশো বাইশ টাকা দিল । আমি মাস গেলে মাইনে পাই কেটেকুটে বারো হাজার । ঘুষের গন্ধ নেই কারণ হাবলদারকে কেউ ঘুষ দেয়না । আমাকে মা যাওয়া আসা আর টুকটাক খরচ বাবদ হাতে দেয় পাঁচশো টাকা । যাওয়া আসতেই ওই টাকা খরচে যায় । শখ এই বন্যা আইচের জীবনে নেই তাই পাঁচশো টাকা দিয়েই চলে যায় । চা পানি ওই স্যারের সাথে ঘুরতে ফিরতে ফ্রীতেই মিলে যায় এটাই যা রক্ষে । মা মুখটা একিয়ে বেঁকিয়ে বললো , বন্যা টাকাটা হারাবি না । এটা স্বর্ণকারকে দিয়ে জিনিসটা নিয়ে আসবি । আর হ্যাঁ বোকার মতো কাউকে জানাবার দরকার নেই ।
আমি তো জানি টাকাটা দিয়ে আমি কি করবো তাই মাথা হিলিয়ে মায়ের কথায় সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে এলাম । আমি অলরেডি জিম থেকে বাবলির ফোন নাম্বার ও ঠিকানা জোগাড় করে ফেলেছি । টাকাটা নিয়ে রওনা দিলাম নাগেরবাজার দিকে । একটা ছোট মোবাইলের দোকানে ঢুকে গেলাম । বুকটা ঢিপ ঢিপ করছে , এই প্রথম মায়ের বিরূদ্ধে গেলাম । দোকানদার আমাকে দেখেই একগাল হেসে বললো , দিদি কি লাগবে ?
আমি একটু ইতস্তত হয়ে বললাম ফোন কিনব একটা ।
ছেলেটা নানান ধরনের ফোন বের করে তাদের ফিচার্স বোঝাতে লাগল আমাকে । ওর কোন আইডিয়াই নেই যে আমার কি বাজেট আর ফোনের ব্যবহার সম্পর্কে আমি আসলেই কতটা বিজ্ঞ !
আমি একটু গলা ঝেড়ে বললাম , দাদা .. দাদা .. শুনুন আমার বাজেট নেই বেশি । ওই হাজার সাতেক । আমার বেশি উন্নত ফোনের প্রয়োজন ও নেই । কেবল গুগল করবো ব্যাস এটুকু হলেই হবে ।
দোকানকার একটু বিরক্ত হলো মনে হয় । সে জানালো সাত হাজারে তেমন কিছু একটা ভালো ফোন হবে না । নতুন ফোন যাতে ইন্টারনেট চলে হয়ে যাবে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু । তবে ভালো হবে না সেগুলো । তাই দোকানকার আমাকে বললো যদি আমি সেকেন্ডহ্যান্ড ফোন কিনি তাহলে সাত হাজারে আমি একটা ভালো ফোন পাব ।
আমার তাড়া আছে তাছাড়া বেশি কিছু বুঝিও না ফোনের । স্ব উপার্জিত অর্থ চুরি করে এনেছি । অনেক কিছু ভেবে দোকানকারকে বললাম ওই পুরোনো ফোনটি দিতে । দোকানকার জানালো ফোনটার নতুনে দাম প্রায় বাইশ হাজার । তবে পুরোনো বলে উনি সাত হাজারে দেবেন । কিনে নিলাম নীল ফোনটা । আড়াইশো টাকার রিচার্জ করলাম নেটের জন্য । বোতাম ফোনটা থেকে সিম খুলে লাগিয়ে নিলাম স্মার্টফোনে । বোতাম ফোনটা ব্যাগে রেখে নতুনটিকে নিয়ে রওনা দিলাম বাবলির বাড়ির দিকে ।
যেতে যেতে ফোনটা নেড়েচেড়ে দেখছিলাম । কি সুন্দর ফোন ! যেন এই তৈরি হয়ে এলো ! কার এত বোকা বুদ্ধি শুনি যে এত সুন্দর ফোনটা বেচে দিয়েছে ? হাতে কুলায় না ফোনটা এত বড় । পিছনের দিকটা নীল রঙের ঠিক যেন আয়না । আমি তেমন ব্যবহার জানিনা তাই ভয়ে ঘাঁটতে পারছি না । থানার পাশে চায়ের দোকানের পানুলাল ফোনের ওস্তাদ । ওকে ধরে আজই সব শিখে নেব । বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে ধাতানি খেতে হবে এটা ভেবেই হাত পা ঘেমে উঠছে । হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেছি লক্ষ্যে । একটা কালো আলকাতরা মাখানো দরজা ঠেলে ঢুকলাম । ছোট একটা এক কমারার বাড়ি । উঠানে দাঁড়িয়ে ভাবছি নক করবো তখনই একজন বৃদ্ধ বেরিয়ে এলেন । আমাকে দেখে বললেন , কি চাই ?
আমি বললাম , নাগেরবাজার থানা থেকে আসছি আমি বন্যা আইচ ।
লোকটা একটু কুঁকড়ে গেল । আমাকে হাত নেড়ে বললো , আমরা কিছুই জানিনা । বাবলি নেই এখানে ।
আমি বললাম , আপনি বাবলির বাবা ?
লোকটা : হ্যাঁ আমিই হতভাগ্য বাবা ।
আমি বললাম , কাকু আপনি বলুন বাবলিকে বন্যা এসেছে । কথা দিচ্ছি আমি ওকে বদনাম থেকে বের করে আনবোই ।
লোকটা বললো , পুলিশ তো বাড়ি সার্চ করে গেছে । আবার কিসের ঝামেলা শুনি ?
আমি নরম হয়ে বললাম , আমি বাবলিকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি কাকু । আমাকে পুলিশের লোক ভেবে লুকাবেন না । খুলে বলুন কাকু প্লিজ ।
চিন্তায় ডুবন্ত লোকটা যেন একটু খড়কুটকে আশ্রয় করে বাঁচতে মরিয়া । লোকটা ধীর গলায় বললো , ওকেও তুলে নিয়ে গেছে । আমতাতে ওদের ডেরা । মেয়েটাকে বাঁচাবার কোন পথ রাখেনি ওরা । একদিকে পুলিশ , অন্যদিকে ওই পরচুলা কোম্পানির হুমকি ।
ওদের দরকার গোড়া থেকে চুল । আর সেই চুল পেতে ওরা ব্যবহার করছে কয়েকটা মেয়েকে । তাদের মাথায় তেল লাগিয়ে চুল বাড়িয়ে আবার সেই চুল তুলে নিয়ে উইগ বানাচ্ছে । ঠিক যেন ধান মাঠে বীজ দিয়ে ধান ফলানো ।
আমি বুঝলাম বাবলিকে ইচ্ছা করে আইনি জালে জড়িয়ে দিয়েছে কেউ । যাতে ও পালাতে না পারে । কিন্তু এত কিসের চাহিদা উইগের যে এভাবে ডেসপারেট হয়ে উঠেছে কোম্পানি ?
আমার অফিস টাইম অলরেডি পেরিয়ে গেছে । তাই ছুটলাম থানার দিকে । পানুলালকে নিয়ে একবার বসতে হবে আজ । আমাকে ভেদ করতেই হবে এই উইগ রহস্য । তার জন্য আমাকে জানতে হবে অনেক সূত্র যা উইগের ব্যবসার বিষয়ে আমার ধারণা স্পষ্ট করবে । আর তারজন্য দরকার ইন্টারনেটর অন্তর্জাল ।।
চলবে
