Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Classics Others

5  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Classics Others

ট্রেন যাত্রা ( পর্ব - পাঁচ)

ট্রেন যাত্রা ( পর্ব - পাঁচ)

6 mins
737


আজ দিন দুই হলো এসে পৌঁছেছি আসামে, সাথে এসেছে কোম্পানির CEO আর উনার ছেলে। কোম্পানির কোন কাজে তা জানিনা,তবে আমাকে একরকম নির্দেশ দিয়ে এনেছেন।তবে কেন তা এখন বুঝেছি। আচ্ছা খুলেই বলি কথাটা।

আমি যেদিন ভেবেছিলাম এটাই আমার অফিসের শেষ দিন, সেদিন আমার শেষ দিন হয়নি। আমি এসেছিলাম ঠিকই কিন্তু ফিরে যেতে পারিনি। কারণ আমার গলার মালা আর তার সাথে থাকা লকেট। হ্যাঁ সেই লকেট দেখেই অসুস্থ হয়ে পড়েন C.E.O Sir. ডাক্তার পর্যন্ত ডাকা হয়, তিনি সুস্থ হয়ে উঠে বসতেই খোঁজ করেন আমার। অবশ্য আমি উনার মাথার কাছেই বসে ছিলাম।তারপর অনেক প্রশ্ন করেন, কোথা থেকে লকেটখানি পেয়েছি।

আমি প্রথমে হতবিহ্বল হয়ে যাই। বলব কি বলব না বুঝতে পারিনা। কারণ যেভাবে পেয়েছি সেটা বললেও বিশ্বাস করবেন না যে তিনি তা আমি জানি।

" কি চুপ করে আছো কেন মৃণাল?"

আমি বলি " কুড়িয়ে পেয়েছি। "

" কোথায়, কবে?"

" ট্রেনের কামরায়,ট্রেন যাত্রার সময়, এই তো সপ্তাহ দুই হবে। "

" মাত্র সপ্তাহ দুই?"

" হ্যাঁ.. "

তিনি কি একটা ভাবতে শুরু করলেন।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পরে বললাম "আপনি বিশ্রাম নিন, আমি আসি এখন। "

আমি তারপর উঠে চলে যাওয়ার সময় পিছু ডাকলো আমাকে।

" মৃণাল তুমি আমাকে মিথ্যা বললে না তো।"

আমি থমকে দাঁড়িয়ে বললাম " না, সবই সত্যি.. " আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললেন " আচ্ছা তুমি যাও।"

আমি চলে এলাম। বাড়ি ফিরে সেই রাতেও একই স্বপ্ন দেখলাম। সেদিনও সকালে অনেক দেরি করে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। আজও স্বপ্নে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারিনি। সকালে উঠে মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা হলো। আমি কোনো মতে স্নান সেরে, পুজো সেরে বেড়িয়ে পড়লাম অফিসের উদ্দেশ্যে, অফিস থেকে ততক্ষণে অনেকবার ফোন এসে গিয়েছে।

আমি অফিসে পা দিতেই CEO sir আমাকে ডেকে পাঠালেন। আজকে উনাকে অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে।

" কি মৃণাল তোমার অফিস আসতে দেরি হলো কেন? তুমি তো দেরী করার মেয়েনা। মিটিংটায় তোমার থাকা উচিত ছিল, ক্লাইন্টও তোমার খোঁজ করছিল।"

আমি এর উত্তরে কি বলব জানিনা। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন "তোমার মুখ শুকনো দেখাচ্ছে, তুমি ঠিক আছো তো? "

আমি শুধু মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ জানালাম।

তারপর কি একটা ভেবে আমাকে বললেন " বলছি তোমার মালাটা একটু দেখা যাবে? "

আমি ফাঁপড়ে পড়লাম, খোলা যাচ্ছেনা মালাটা। কালকেও চেষ্টা করেছিলাম। মনে হচ্ছে যেন এঁটে বসেছে।

আমি জানি খোলা যাবে না, তবুও চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।

তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন " না খুলতে চাইলে থাক।"

আমি বুঝলাম স্যার ভেবেছে মিথ্যা কথা বলছি।

আমি লজ্জিত হয়ে পড়ে বাধ্য হয়ে আমার সহকর্মীকে ডাকলাম, সে এসেও ব্যর্থ হলো সাধারণ এই কাজটি করতে। এবারে তিনি যে অবাক হলেন বুঝলাম। আমার সহকর্মীকে যেতে বলে আমাকে থাকতে বললেন। সে চলে যেতেই আমি বললাম " কেটে ফেললে হয় না মালাটা?"

তিনি প্রায় চমকে উঠে বললেন " কি বলছো তুমি, কখনোই না।"

তারপর আমাকে সামনে রাখা চেয়ারে বসার জন্য ইঙ্গিত করলেন।

আমি বসতেই তিনি বললেন " মৃণাল তুমি আমাকে সবটা সত্যি বলোনি। আমি জানতে চাই, তুমি বিশ্বাস করে বলো আমাকে ।"

আমি মাথা নিচু করে রইলাম। কি বলব বুঝতে পারলাম।

" বলতে না চাইলে থাক, তবে আমাকে বলতে পারতে তুমি।"

আমি মাথা উঁচু করে স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম "আমি বলব না বলে বলিনি, তা কিন্তু নয় স্যার আসলে কথাটা কি করে বলব বুঝতে পারিনি, তাই বলিনি। আজগুবি মনে হবে আপনার। "

" না আজগুবি ভাববো না,তুমি নিশ্চিন্তে বলো মৃণাল, আমি সবটা বলো, কিছু বাদ দিও না।"

আমি এবারে বলতে শুরু করলাম আমার সাথে যা যা ঘটনা ঘটেছে। তবে আমাকে অপমান করতে গিয়ে বিভিন্ন মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার কথাটা বাদ দিলাম। আমি নিজেই ঠিক বুঝতে পারিনি বিষয়টা। ঘটনাগুলো বাস্তব না সমাপতন। তিনি আমার মুখে সবটা শুনে কি বুঝলেন কে জানে? তারপর আগের মতো কাজে মন দিলাম। সপ্তাহ খানেক আগে বললেন কি একটা কাজে রাজ্যের বাইরে যেতে হবে। কোথায় তা আমাকে বলেন নি। আমিও জিজ্ঞেস করিনি। আগেও উনার সাথে গিয়েছি বিভিন্ন কাজে। উনি অন্যান্য মানুষের মতো নন। সন্তানের মতো স্নেহ করেন আমাকে। নিয়ে এসেছেন এই জায়গায়। জায়গাটার নাম আমি গোপন রাখছি। ভেবে নিন সুন্দরপুর। জানি নামটা আপনাদের ভালো লাগল না। কিন্তু জায়গাটা এতো সুন্দর আমি বলব।

আমি জায়গাটা চিনি। খুব ভালো করেই চিনি, সব মিলে যাচ্ছে আমার স্বপ্নে দেখা স্থানটির সাথে। আমি একা একা হাঁটতে শুরু করলাম। ধীর পায়ে হেঁটে আমি স্বপ্নে দেখা বাড়িটার সামনে এসে পৌঁছালাম। আমি দরজা খুলতে গেলাম, তারপর আর মনে নেই। আজ জ্ঞান ফিরে দেখি আমি একটা ঘরে শুয়ে রয়েছি। চারিদিকে কাউকে দেখতে পেলাম না। পাশে রাখা মোবাইলটা খুলতে বুঝলাম একটা দিন আমার নিজের অজান্তেই কেটে গিয়েছে।

আমি বাইরে বেড়িয়ে আসলাম, তখন ভোরের আলো সবে ফুটেছে। কি অসাধারণ লাগছে চারিদিক। যেন সবুজের সমারহ, আমরা একটা বাংলোতে রয়েছি। দূরে সবুজ প্রান্তর যেন গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি খালি পায়ে হাঁটতে শুরু করলাম। পায়ের তলায় নরম ঘাস। খুব ভালো লাগছিলো, মনে হচ্ছিল এমন ভোরের সাক্ষী আমি আগেও রয়েছি। পায়ে পায়ে হেঁটে বাংলোর পেছনে এসে দাঁড়ালাম, সবুজ চা বাগান। এখন শান্ত হয়ে আছে,আর কিছুক্ষণ পরে প্রাণচ্ছোলে জেগে উঠবে।

আমি দাঁড়িয়ে এমন করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছি কে জানে। পেছনে একটা ডাক শুনে পেছনে ফিরে দেখি Junior CEO প্রতীম বাবু।

" আপনি এখানে দাঁড়িয়ে, কেমন আছেন এখন? "

" আমি ভালো আছি, ঘুম ভেঙে গেল তাই।"

" কাল বড্ড ভয়ে ভয়ে কেটেছে আমাদের জানেন।"

আপনার কাছে এর উত্তর নেই। তাই কথাটা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম " স্যার আছেন কেমন? "

" ভালো আছে বাবা, তবে কাল উনার বড় উন্মাদনায় কেটেছে, আপনাকে বেশ স্নেহ করেন উনি।"

"আমি জানি, আচ্ছা বলছি যে কাজে আসা হয়েছে, আমার অসুস্থতার কারণে সেটার কোনো ক্ষতি হয়নি তো।"

"দেখুন আমরা কি কাজে এসেছি সেটা বাবা ছাড়া কেউ জানেন না।"

" আচ্ছা একটা প্রশ্ন করতে পারি? "

" হ্যাঁ করেন না, আপনি বুঝি আমার করা খারাপ ব্যবহারটা ভুলতে পারেননি, আমি সেজন্য আগেই দুঃখ প্রকাশ করেছি। এখনো বলছি আমি দুঃখিত। "

" না না, তা নয়। আসলে আমি বলতে চাইছি আপনাদের কোম্পানি তো পোশাকের, হঠাৎ চা বাগানে!... "

" ও এই কথা,আপনি হয়তো জানেন না আমাদের পুরনো ব্যবসা চা ছিল। আমার ঠাকুরদা তার বন্ধুর সাথে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আমার বাবা কোলকাতায় কাপড়ের এই ব্যবসাটা শুরু করে। আর আমার কাকা এই ব্যবসাটা দেখে এখন।"

" ও আচ্ছা " বলে চুপ করে গেলাম। আমার সাথে কি সম্পর্ক এই স্থানের, কি বা আমার বসের বুঝতে পারলাম না। তবে কিছু একটা সম্পর্ক রয়েছে তা অনুভব করলাম। কাল ঘুমের মধ্যে অনেক কিছু দেখেছি, তবে জায়গাটা চিনতে পারিনি। অনেক মানুষের মুখ। একটা বাড়ি, খুব সুখের, চাঁদের হাট।

" কি ভাবছেন?"

" না কিছু না।"

" চলুন বাংলোতে ফিরি। একটু চা খাই, নইলে মাথা খুলবে না।"

আমি সম্মতি জানিয়ে ফিরে আসলাম উনার সাথে। দেখি আমার Boss প্রত্যয়বাবু বসে চা খাচ্ছেন, আমাদের বাংলোয় ঢুকতে দেখে বললেন " তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?"

" এই তো সামনে বাবা, উনি আগেই উঠে গিয়েছিলেন।"

" তা কেমন আছো মৃণাল?"

" ভালো আছি স্যার, কালকে আপনাদের বড় বিরক্ত করেছি তাই না?"

" আরে কি বলছ তুমি মা, তুমি জানো না তুমি আমাকে কি ফিরিয়ে দিয়েছ, কাল মনে হলো ফিরে পেয়েও হারালাম।"

আমি ঠিক কথাটার মানে বুঝতে পারলাম না। প্রশ্নভরা চোখে চেয়ে রইলাম।

তিনি আমাকে ডেকে পাশের চেয়ারখানি দেখিয়ে বল্লেন " বসো, বসে প্রাতঃরাশ সেরে নাও, আমার সাথে বেরোতে হবে একটু, কিছু জানানোর আছে..."

আমি জিজ্ঞাস্য মনে রেখেই বসলাম সেখানে...


চলবে...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics