STORYMIRROR

Yagnasani Mukherjee

Horror Thriller

5.0  

Yagnasani Mukherjee

Horror Thriller

টিকিট

টিকিট

7 mins
274

বয়স তখন 25 প্রায় 26 এর কাছাকাছিও বলা যায় মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করার পর অনেক গুলো জব হান্ট করে দু তিন জায়গায় অফার পাই। মনে বেশ দনও মনো ছিল কোনটা অ্যাকসেপ্ট করবো কারণ প্রায় প্রত্যেক তাই কাছাকাছি স্যালারি দিচ্ছে। ভাবতে ভাবতে হটাৎ ই ঘুম এসে যায়।

রাত প্রায় 12:34 হটাৎ ফোনের স্ক্রিন টা জলে উঠে সঙ্গে সঙ্গে বিপ করে নোটিফিকেশন এর শব্দ হয়। স্ক্রিন সুইপি করে আনলক করে দেখলাম একটা মেইল। একটু অস্বস্তি হলো এত রাতে কে মেইল করলো আবার। খুলে দেখে অবাক ই হলাম মেইল টা এসেছে হায়দ্রবাদ এর একটা হসপিটালের থেকে। তাদের ইয়ং একজন ডক্টর দরকার । বাকি কাজ তারাই বুঝিয়ে দেবে। মনে মনে বেশ খুশি হলাম । তবে মনের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা রয়ে গেলো । জইন করতে হবে তিন দিনের মধ্যে। প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করতাম ডাক্তারি পাশ করার পর। সেটা বন্ধ করতে হবে। রাত কাটতেই বাড়ির পরিচালক রমেশ জি কে বললাম কাকা আমায় যেতে হবে দেহেরাদুন আর প্র্যাক্টিস করবো না। বাড়ির দেখা সোনা করো কিন্তু আগের মতোই। কাকা বললো আচ্ছা সাহাব। ব্রেকফাস্ট করতে করতে এয়ারলাইনস চেক করে একটা হায়দ্রাবাদ টিকিট কেটে নিলাম।

ব্যাগ সব গোছানো হয়েছে । নিরঞ্জন এলে ওর সাথে দেখা করে তার পর রওনা দেবো একসাথে। নিরঞ্জন এই কটা বছর এ কোনো দিনও আমাকে একটুও ভেঙে পড়তে দেয়নি । সম্পর্কর শুরু থেকেই খুব নিজের দায়িত্ব পালন করছে আমার খারাপ সময় পিট চাপ রে উৎসাও দেওয়া থেকে মেডিক্যাল এ ভালো রেজাল্ট করা সবেতেই পাশে ছিল ওই একটাই মানুষ । ইভেন প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করার আইডিয়া টাও তারই ছিল।

নিরঞ্জন আসতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম চলো। ও সুটকেস টা নিয়ে ওর গাড়ির পিছনের ডিক্কি তে রেখে দিয়ে। গাড়ি টা স্ট্রাট দিলো। এয়ারপর্ট এ পৌঁছাতেই আনৌন্সমেন্ট ফ্লাইট এর। হাত ছেড়ে চলে যেতে বেশ কষ্টই হচ্ছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম --- সাবধানে থাকিস। নিজের যত্ন নিস কেমন। উত্তর এর সেরম কিছু পেলাম না হু ছাড়া। এগিয়ে গেলাম আমি ।পিছনে ফিরে দেখলাম এক দৃষ্টিতে নিরঞ্জন আমার দিকেই তাকিয়ে। মায়া হলো একটু।

হায়দ্রাবাদ পৌঁছে গিয়ে জইন করলাম সেই হসপিটাল টায়। বেশ বড়ো হসপিটাল ।বেসরকারি বলে কথা।যেমন মেজে চমকাচ্ছে তেমনি দেওয়াল গুলো। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় কাছের তৈরি ।

ভেতরে ঢুকে জইন করার পাপের ওয়র্ক করে সিড়ি নেবো ওপরে যাওয়া এমন সময় একজন পিছন থেকে ডেকে বললো ওই দিকে লিফট আছে ইউস করতে পারেন । পিছন ফিরে দেখি আমারই এক সিনিওর প্রায় 3 বছর আগে পাস করেছিল।

- " রাইনা বাসু" রাইট

আমি উত্তর দি - হ্যাঁ তুমিও এখানেই ডোক ইন্দ্রণেস।

- হ্যাঁ ওই আর কি।

- কিরম শুকনো শুকনো লাগছে তোমায় ।

- কেউ যত্ন নেবার নেই যে এখানে। জাসসি র সাথে সম্পর্ক শেষ হবার পর আর কেউ কপালে জোটেনি।

- হ্যাঁ ওই জেসিকা ছাড়া আর কারুর দিকে তুমি তাকাতেও না , নয় তো তোমার মত হ্যান্ডসাম এর পিছনে যে গোটা কলেজ লাট্টু ছিল সেটা তোমার চোখে পড়ত।

- যাকগে ছার এই সব থাকার কি ব্যাবস্থা করলি । হোস্টেল এ থাকবি না পিজি?

- ভেবে দেখিনি গো। তবে হোস্টেল এ অনেক রেস্ট্রিকশন পিজি তাই বেটার।

- আমি একটা পিজি তে থাকি ফ্ল্যাট ও বলা যায় রেন্ট খুব বেশি কিছু না তুই থাকতে চাইলে থাকতেই পারিস সেই ক্ষেত্রে আমরা রেন্ট সেয়ার করে নেবো। 3 বি এইজ কে।

ইন্দ্রনেস দার প্রস্তাব টায় রাজি হলে মন্দ হবেনা।

- আচ্ছা দাদা তাই হোক ।

নতুন জইন করেছি তাই কাজ টা বেশি নেই আজ একটু ওয়ার্ড গুলো ঘুরে দেখতে হলো আর কটা রুটিন চেক আপ পেসেন্ট দের। হসপিটাল তার পাশেই একটা ছোটো ওর লাগোয়াই একটা ছোটো ঘর আছে । ওই দিক তাই বোধয় মর্গ। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে যাবো হটাৎ একজন সুইপার বললো ওই দিকে যাবেন না ডাক্তার দিদি ওইটা তে মর্গ ছিল আগে এখন আর নেই ওটা শিফট করে এখন বিল্ডিং এর পিছনের দিকে করে দেওয়া হয়েছে। পর পর 5 জন ডাক্তার ওই খানে হারিয়ে যায় আর ঠিক তার 1 সবপাহ পর তাদের সবার মৃত্যু হয় ।

ভয় লাগলো একটু খুব ই অদ্ভুত ঘটনা। একই মাসে একই ভাবে 5 জন ডাক্তার এর অপ মৃত্যু।

কাজ প্রায় শেষ সই করে বেরিয়ে এলাম। ইন্দ্রণেস দা আগেই বাইরে অপেক্ষা করছিল । বেরিয়ে দুজন হাঁটতে হাঁটতে একটা এগ রোল কিনে খেতে খেতে ওর পিজি তেই গিয়ে উটলাম। সারাদিন এর ধকল জার্নি করে এতটা আসা । একটু স্নান সেরে জামা বদলে অভারসাইজ টি শার্ট পরে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে সোফা তে এসে বসলাম । ইন্দ্রণেশ দা কিচেনে । বেশ ভালো গন্ধ বেরোচ্ছে রান্নাঘর থেকে। চুল টা গোটাতে গোটাতে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি পানির বটার মাসালা হচ্ছে।

- আহা দাদা এইসব আজ রাতে আবার কি দরকার ছিল।

- চুপ কর তো একা একা থাকি অনেক কাল কিছু ভালো রান্না করিনি। কিছু টা ওই কেউ খেয়ে বলবেনা আঃ কি সুন্দর তাই করিনা আর কি আজ তুই আছিস অনেক কাল পর দেখাও হলো তাই রান্না টা করেই ফেললাম । কলেজে পড়তে তহ মাঝে মাঝেই রান্না করে আনতাম জেসি তুই অনিমেষ সব একসাথেই খাওয়া হতো। বেশ সুন্দর জীবন ছিল । এয়নি ওয়ে জেসিকা কেমন আছে রে? শেষ বার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল!

- শেষ বার!

- ই ইয়ে মানে এখনে আসার আগে । এমনিও মেয়েটা একবার ও না বলেই চলে গেছিলো।

চোখে একটু জল এলো মনে পড়ে গেলো এয়ারপর্ট এ নিরঞ্জন এর চোখ দুটো।

ডিনার শেষে কিছু খন আড্ডা দিয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেলাম। শুতেই ঘুম এসে গেলো।

পরের দিন ঘুম ভাঙলো ইন্দ্রনেশ দার দরজা ধাক্কা দেওয়ায়। চা খেতে বেরিয়ে পরলাম ।

আজ তুলনামূলক ভাবে কাজ টা একটু বেশি তবে কাজ না থাকলে বড়ো অলস হয়ে পরি। অনেক গুলো পেসেন্ট অ্যাটেন্ড করতে হচ্ছে আজ। কাজের ফাঁকে জানলা দিয়ে ওই ঘর টাকে বার বার দেখতাম। রোজ এই ভাবেই কাটত। একদিন মনে হলো মনের সব ভয় কাটিয়ে একটু গিয়েই দেখি গিয়ে। সন্ধ্যে তখন 7:56 হসপিটাল এর আদ্দেক স্টাফ বাড়ি চলে গেছে পরে আছি শুধু আমি রিসেপশনিস্ট কিছু সিস্টার আর ওয়ার্ডবয় । সোজা চলে গেলাম সেই জায়গায় দরজা ত খুলতেই যাবো এমন সময় একটা অ্যাম্বুলেন্স এর আওয়াজ , খুব ইমারজেন্সি, দৌড়ে গেলাম পেসেন্ট ভের মাথায় ভারী ছোট পেয়েছে রক্তে ভেসে যাচ্ছে জামা টা। শীঘ্রই তাকে নিয়ে অ্যাডমিট করে তাকে ও টি তে নিয়ে গেলাম সিস্টার একজনই ছিল তাকে নিয়েই শুরু করলাম উন্ড ক্লিনিং , পাল্স পাওয়া যাচ্ছেনা। মনে হয় বাঁচানো গেলেও পেসেন্ট কোমা চলে যাবার চান্স অনেক বেশি । অক্সিজেন নিচ্ছে না বোডি , ইলেক্ট্রো শক এও রেসপন্ড না করতেই বুজলাম সে আর অক্ষত নেই । 4 ঘণ্টার আগে কাউকে মৃত ঘোষণা করা যাবেনা । নিথর দেহটা র দিখে চেয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষন হুস ফিরল সিস্টার এর কথায়।

- ওনাকে ওটি থেকে শিফট করে দি পাশের ঘর এ ?

- হ্যাঁ

পাশের ঘরে তাকে শুইয়ে দিলো। আমি একটা টুল এ গিয়ে বসলাম । রক্ত জমে যাওয়া থেকে ক্লিন করার সময় চোখেই পড়েনি মেয়ে টার মুখটা, কি শান্ত স্নিগ্ধ মুখমণ্ডল , চুল গুলো এসে তার চোখে পড়ছে। বন্ধ চোখেও যেনো একটু অস্বস্তি র ছাপ। ওই নিস্পন্দন দেহে প্রাণ নেই কে বলবে ঠিক মনে হচ্ছে সে অঘোরে ঘুমাচ্ছে ঘুম ভাঙলেই সব আগের মত । ঘড়ির কাঁটায় ঠিক প্রায় সোয়া 11 টার কাছাকাছি। আমি দেহ কে মৃত ঘোষণা করে নিজের জামা বদলে নিলাম হাতে রক্ত টা ধুয়ে নিলাম। মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে দেহ আমিও গেলাম তার সাথে । একটা টিকিট নিয়ে পায়ে ঝুলিয়ে দিলো ওয়ার্ডবয় , 17 নম্বর টা উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে যেনো তার বুড়ো আঙ্গুলে ঝোলানো ওই টিকিট টায়। পাপের ওয়ার্ক করে বেরিয়ে লিফটে উঠলাম দেখি ইন্দ্রনেস দা ভেতরেই আছে। কেমন যেনো আজ অস্বাভাবিক বেশি ফর্সা লাগছে তাকে। সকাল অব্দি এতটাও অন্যরকম লাগছিলনা । গ্রাউন্ড ফ্লোর এর বোতাম টা টিপলাম ইন্দ্রণেস দার লাল ঠোঁট জোড়া দিয়ে কিছু অস্পষ্ট শব্দ বেরোলো আমি জিজ্ঞেস করতে বললো সেরম কিছু না। মাঝে একবার লিফট টা থামলো। একটি মেয়ে লিফটে উঠতে যাচ্ছিল আমি সঙ্গে সঙ্গে দরজা টা বন্ধ করে দিলাম তাকে ভেতরে আসা থেকে আটকানোর জন্য।

- এরম টা করার অর্থ কি রাইনা?

- কারণ ছিল তাই করেছি। তুমি দেখনি ওই মেয়েটি একটু আগেই মারা গেছে ও মৃত একটু আগেই আমি নিজে ওর ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়েছি ওর পায়ে টিকিট নম্বর 17 লেখা ছিল টিকিট টায় ।

- কিরম টিকিট

- আরে মর্গে মৃত দেহ দের ঠিক যেমন টা হয়

- ও তাই বুঝি , দেখ তঃ আমার পায়ের টিকিট টার মত নয় তো ।!!!!!!!!

ইন্দ্রনেস দার পায়ের দিকে তাকাতেই 15 সংখ্যার টিকিট দেখে আমি সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারাই।

পারের দিন চোখ খুলে নিজেকে হসপিটাল এর একটা বেডে পাই। কাল রাতে জ্ঞান হারিয়ে লিফটে পড়ার পর লিফট এর দরজা গ্রাউন্ড ফ্লোর এর আস্তে এক ভদ্র লোক আমায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে। পরে জানতে পারি ইন্দ্রনেস দা সেই 5 জন ডাক্তার এর একজন যে মারা গেছিলো খুব রহস্য ভাবেই আর এই রকম ঘটনা এর আগেও ঘটেছে এই খানে। টানা দুটো দিন আমি একটা মৃত আত্যমার সাথে একই বাড়িতে কাটিয়েছিলাম ভাবলেও ভয় লাগে। মর্গে যাই গিয়ে দেখি সেই 15 নম্বর টিকিট পায়ে ঝোলানো ইন্দ্রনেস দা র দেহ। বা হাতের ডান দিকটা করে টাটু তে জেসি লেখা । ঠাণ্ডায় দেহ টা সাদা হয়ে গেছে। ঠোঁট দুটি কি নিষ্প্রাণ। 

  নাহ্ এর পর আর সেই চাকরি কে করে। সেই দিনই রেসিগ্নেশন দিয়ে রাতের ফ্লাইট এই বাড়ি ফিরে আসি। নিরঞ্জন এসেছিল আমায় নিতে তাকে সব টা খুলে বলতে সে কিছু টা হেসেই উরিয়ে দিলো কিছু টা শুনলে। কিন্তু সেই টিকিট দুটোর নম্বর আমার মনে চিরও তোর গেঁথে গেলো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror