আবার দেখা
আবার দেখা
সিতারার আজ তিন বছর হয়ে গেলো নিখিলের সাথে বিচ্ছেদের । সিতারা ঘুম থেকে উঠে নিখিলের ফটো ফ্রেম তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে । উঠে পরলো । সিতারা আর নিকিলের প্রেম টা বলতে গেলে ওদের কলেজ থেকে ,ওরা একসাথে বিজনেস কলেজে পড়ত লাইব্রাবে তে গিয়ে বই পড়ার নেশা দুজনেরই খুব আর দুজনেই খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিল কলেজের। বই পড়তে পড়তেই প্রেম কিছু টা বই এক্সচেঞ্জ করতে করতে মন টাও দেওয়া নেওয়া হতে গেছিলো তাদের। নিখিলের ওপর কলেজের অদ্দেক মে ফিদা ছিল । কম মে চেষ্টা করেনি নিখিল কে পাওয়ার কিন্তু নিখিলের চোখ সেই সিতারার ওপর থেকে শরে যায়নি কখনোই। সিতারা ক্যাম্পাস থেকে ইন্টার্ন এর পর জব পেয়ে যায় সিকিমের একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পািতে চীফ এক্সিকিউটিভ হিসাবে। নিখিল পরলো দোটানায় দে না চায় সিতারা যাক না চায় সিতারা চাকরিটা ছাড়ুক। অনেক কষ্টে সিতারা তাকে মানিয়ে নিয়ে পারি দেয় সিকিম ।
এক নজরে দেখে সিকিমের প্রেমে পড়ে গেলো সিতারা সিতারা সবসময় ভাবত পাহাড়ের বুকে একটা নিস্তব্ধ এলাকায় একটা ঘর ঠান্ডা কনকনে । মানিয়ে নিতে সিতারার একদমি সময় লাগলোনা ।
ফোন টা বেজে উটলো - যে ছিল তোমার সোপনো চারিনি ইই ই ই .............
সিতারা বাথরুম থেকে হাত বের করে ফোন টা তুলল
- hello sweet heart
- hi dear . Pouche toh ekta phone korbi naki !! 😠
একটু রেগেই গেছিলো নিখিল
- নাহ্ রে করা হয়নি এখানে এসেই অফিসে জইন করে ডকুমেন্ট সাইন করে বাড়ি ফিরে একটু স্নান করছি ।
- তাই? চান করছিস ( গলা টা একটু ঝেড়ে নিয়ে)
তাহলে একটু ভিডিও কল কর। দেখি কিভাবে ময়ূর এর মত চান করিস
- ধাট ফালতু ছেলে একটা । তুই কোনো দিনও বদলাবিনা । অসভ্য একটা
বেশ কিছু কথা বলে সিতারা ফোন টা রেখে দিল। স্নান সেরে টোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে ভিজে চুল থেকে জল বয়ে নিচে নেমে পা চুইয়ে পড়ছে। একটা মিরোর সেলফি তুলে পাঠিয়ে দিলো নিখিল কে । ওপাশে নিখিল এইসব দেখে উত্তেজনা বেড়ে উঠে মনে। তার সিতারা কে কাছে পেতে বড্ড মন চায়। অনেক দিন এই করে কেটে গেলো সিতারা আস্তে আস্তে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে কম ই কথা হতে লাগলো ।নিখিল সিতারার অনুপস্থিতি টা মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারতনা । নিখিল এর জন্মদিনের ঠিক আগের দিন সিতারা তাকে না জানিয়েই শহরে ফিরল সারপ্রাইজ দেবে বলে , কিন্তু বাড়িতে গিয়ে যা দেখলো সেটা তার নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো। নিখিল অন্য একটু মেয়ের সাথে বেডরুম এ । সিতারা কে দেখে সে টলতে টলতে উঠে পড়ে , মেয়ে টা চলে যায় জামা কাপড় পরে কোনো রকমে । জ্ঞান ফেরে নিখিল এর প্রায় সকাল ঘুম দেওয়ার পর সিতারা ঘরের কোণে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে । তখনই অনেক ঝামেলা অশান্তির পর সব শেষ।
সবই কি শেষ ..........সিতারার সম্পর্ক শেষ হলেও নিখিল কে সে ভালো আজও বাসে। তিনটে বছর ঘুরলেও সিতারা তাকে ভুলিয়ে উঠতে পারেনি। চান সেরে টোস্ট হতে নিয়ে সে অফিসার গাড়ি টা নিয়ে অফিস রওনা দিলো। অফিসে পৌঁছে হটাৎ ই একজনের সাথে ধাক্কা লেগে সে ছিটকে পরে যায় মাটিতে । ছেলেটার গায়ে হাতে থাকা কফি টা তার ছলকে পড়ে ।
- উফফ স্টুপিড দেখে চলতে পারেনা দিলো আমার ব্র্যান্ডেড শার্ট টা নষ্ট করে।
- দেখে আমি না আপনি চলেন না আপনি তহ আমার যাওয়ার পথে........ এ এ মানে তুই এখানে?
- আরে সিতারা !
একটু অস্তির হয় সিতারা এইভাবে তাকে ঠকিয়েছিল যে সে তার সামনে আবার! সিতারা তাকে এড়িয়ে চলে যায় উপরে । কাজ শেষে অফিস এর ফাইল নিয়ে বস এর ঘরে যায় সে।
- স্যার আমি সব প্রজেক্ট শেষ করে নিয়েছি । আমি তাহলে আসি?
- আরে দাঁড়া দাঁড়া দেখেনি
চেয়ার টা রোটেট করে বসলো নিখিল।
- কেনো এসেছিস এখানে?
- কেনো জায়গা টা তোর নাকি । এই কোম্পানি টা টুক ওভার করেছি। ভালো করেছিনা ? জানিস শোন একটা কথা বলি অফিসের সবাই সবার বাড়ি চলে গেছে।
সিতারা ফাইল টা ছুড়ে ডেস্ক এ রেখে ওখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেও নিখিল তাকে আটকে নেয় । কিছুটা কর করেই নিখিল তার ঠোঁটের দিকে ঝুঁকে তার ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট বসিয়ে স্বর্গ উপভোগ করে অনেক দিন পর। সিতারা তাকে ধাক্কা মেরে দূরে ঠেলে দেয় ।
- পাগল হয়েছিস নাকি কি করছিস এইসব
চোখ দিয়ে দুই বিন্দু জল গড়িয়ে পরলো তার গেল অব্দি । নিখিলের চোখ সেটি এড়ায়নি ।
- কাঁদিস না প্লিজ । দেখ আমিও জানি তুই আমায় ভালো বাসিস , আর তুইও জানিস আমি তোকে ছাড়া কোনোদিন কাউকে ভালো বাসতে পারিনি । যেটা হয়েছিল সেটা একটা অ্যাকসিডেন্ট । নেশার ঘোরে কি হয়ছে কি হয়নী সেটা নিয়ে ....... ছেড়ে চলে গেলি ? ভাবলিনা আমি কি নিয়ে বাঁচবো ! এখানে এসে ভেবেছিলাম তোকে সারাদিন খাটিয়েই মারবো কিন্তু তোর ডেস্ক এ গিয়ে যা দেখলাম তারপর তোকে কিছু বলার ইচ্ছা ই হলনা । আমাদের একসাথে পড়া প্রিয় বইটা আজও তোর টেবিল এ রাখা বই টা খুলতেই এই ছবিটা মাটিতে পড়ে গেল ।
একটা ছবি হাতে নিয়ে সিতারা কে দেয় নিখিল ।
- আমাদের 2ন্ড অনিভর্সারির ছবি এটা । মুভ অন হবেনা তোর দ্বারা এটা আমি আগেই জানতাম যদিও!
- দেখ আমি ফিরে যেতে চাইনা । টেবিলটার ওপর বসলো সিতারা চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে বাইরে ঠান্ডা হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে ঘরটাকে একটা শীতল ঘরে পরিণত করছে । নিখিল একটু কাছে এসে সিতারার কানের পাশে তার চুল গুলোকে আটকে কানে কানে বলল
- উইল ইউ ম্যারি মি?
সিতারা থমকে উঠলো । এরম টা যে হবে সে ভাবতেও পারেনি সে নিখিল কে এই বছর গুলোয় ক্ষমা করে দিয়েছিল কিন্তু তারা যে একসাথে আবার এটা সে প্রত্যাশাও করেনি।
- কিন্তু !
- কোনো কিন্তু নয় ।
আংটি টা পকেট থেকে বার করে পরিয়ে দিল সিতারা কে ।
- আর ছেড়ে যাসনা প্লিজ
- নাহ্ যাবনা আর।

