Yagnasani Mukherjee

Romance Tragedy

3  

Yagnasani Mukherjee

Romance Tragedy

অপ্রকাশিত ভালোবাসা

অপ্রকাশিত ভালোবাসা

6 mins
229


সবার জীবনেই ভালো বাসা আসে কখনো না কখনো কারুর ক্ষেত্রে সেটা টিকে যায় কারুর ক্ষেত্রে সেটা খোনস্থাই আবার কেউ সেটা প্রকাশ করার আগেই সবটা শেষ হয়ে যায়। কথা টা শুধু হলো ভালোবাসা হারায়না মানুষ গুলো সরে যায়।


                          মিমি ও ঈশান এর গল্প টাও ঠিক তেমনি ! মিমি একটি খুব মিষ্টি মেয়ে । পড়াসোনা নাচ গান আঁকা কবিতা সবেতেই সে ভালো। সে এক বরই আলহাদি মেয়ে বাপ মায়ের। মিমি বড়ো হয় এক ছোট্ট শহরের কোলে । সকল কেই সে খুব তাড়াতাড়ি নিজের করে নিতে পারে , খুব সহজেই সবার আপন হোয়েও ওঠে সে। ছোট্ট বয়েস থেকে এটাই তার সব যে বড়ো হাতিয়ার বলা যায় , কিন্তু এই হাতিয়ারি যে তার কোনো দিন তার গলায় দড়ি হয়ে উঠবে সেটা সে কোনো দিন কল্পনাও করতে পারেনি ।

                    বছর টা বোধয় ২০১৮ মিমি তখন সবে স্কুল ফাইনাল দিয়েছে ফল ও প্রকাশিত হয়নি । মিমি তখন সুইট সিক্সটিন । ভরা যৌবন রূপ লাবণ্যের সাগর তখন সে। এই বয়সেই সবাই দুনিয়া কে রঙিন নজরে দেখে, প্রেম জোয়ারে হাবু ডুবু খায় । মীমিও তার ব্যাতিক্রম নয়।


মিমির সাথে আলাপ হয় রাতুলের ফোনের মাধ্যমে । যদিও সে ঈশান কে বিক্তগত ভাবেও চিনতো কিন্তু তারা কোনো দিন ই পরস্পর কে সামনাসামনি দেখেনি । রাতুল বয়সে মিমির চেয়ে অনেকটাই বড়ো। সেও তখন পড়াশুনা করছে । তাদের প্রায়ই কোনো না কোনো বিষয় কথা হতো হোয়াটসাপ এর মাধ্যমে। খুব কম সময় ই তারা একে অপরকে চিনতে শুরু করে একে ওপর কে বন্ধু বলে মনে করে। ঈশান সব চেয়ে প্রিয় দুটি গুণ যা মিমির খুব পছন্দের ছিল সেটা হলো ফটোগ্রাফি ও বেহালা বাজানো ।


মিমির বাইরের দুনিয়ার কোনো আবহাওয়ার সাথেই পরিচিত নয় । আবেগের বশে ভাসে সে শুধু ঠিক ভুল জ্ঞান তার তখনও হয়ে উঠেনি। প্রেম কখন তার জানলা দিয়ে মনের অন্তরালে বাসা বানিয়েছে সে টা টের টুকু পায়নি। সিগ্রই তার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় । সে যা নিয়ে পড়তে চেয়েছিল তাতে তার ফলাফল ভালো না হাওয়ায় তাকে কিছু টা অনিচ্ছাকৃত ই অন্য বিষয় নিয়ে একদস শ্রেণী তে ভর্তি হতে হয়।


                           ঈশান কে সে তার সব মনের কথাই বলতো। সে জানায় সেটাও। ঈশান অবশ্য তাকে সব সময়ই উৎসাহই দিতো। তখন ও সে বুঝেই উঠতে পারেনি কোনো দিন তাকে সে মনের অন্তরে এনে ফেলবে। সেটা সে চায়নি কখনো । বয়স এর দোষ তাকে ঠিক সেই জায়গাতেই টেনে আনে। একটু একটু করে সে ঈশান কে ভালো বাসতে শুরু করে শুরু টা ভালো লাগা দিয়ে হলেও ক্রমশ সেটা এক অন্য আকার নেওয়া শুরু করে। এটাকে সে একান্ত মনের ভুল বলে বার বার অবহেলা করে দেয়।

সে সবার সাথে সব বিষয় কথা বললেও এই বিষয় সে কারুর কাছে কথা বলেনা মূলত ভয় টাই কারণ। সে তার ব্যাক্তিগত জীবন কারুর সাথে ভাগ করতে চায়না।

দিন কাটতে থাকে সে আস্তে আস্তে বুঝতে পারে সে ঈশান কে ভালো বাসে । সে জানতো ভালোবাসা তার ভাগ্যে নেই সে যাকে ভালো বাসে সেই তার জীবনের থেকে দূরে সরে যায়।


জীবনের পথ বরই কর্কশ। হাটতে গেলে কাঁটা পায়ে ফুকবেই । ভালোবাসা ঠিক গোলাপের মত দেখতে সুন্দর হলেও বড্ড কাঁটা। ঈশান কে তার মনের কথা জানানোর কোনো রাস্তাই নেই তার কাছে। ইতি মধ্যে ঈশান ব্যাঙ্গালোর চলে যায় তার ডিগ্রী বাড়াতে। মিমিও তার উচমধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে।


                      দেশে এক নতুন মৃত্যু বাহক জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। সারা দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয় মৃত্যু মিছিল আটকানোর জন্য। ঈশান অন্য শহরে। মিমি তাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত । দেখা না হলেও সম্পর্ক তৈরি হয় এটাও ঠিক তমনি । শুধু মিমি তাকে ভালো বাসলেও ঈশান তাকে ভালো বসেনি কোনো দিন । একতরফা প্রেম ছিল তাদের। বরই কঠিন এই একতরফা প্রেম এক অতিরিক্ত যন্ত্রণা দায়ক মৃত্যু কে মিমি বরণ করেছে নিজের ভিতরে।


মিমি মনে মনে কল্পনার জোয়ারে ভাসতো সে আর ঈশান ঘুরতে গেছে কোনো হোটেলে তারা একসাথে কিছু খাচ্ছে হটাত ঈশান তাকে বলে উঠে আচ্ছা তুই কি আমায় লাইক করিস ? ... চোখ নামিয়ে মিমি বললো একটু একটু। ঈশান তার দিকে প্রেমের দৃষ্টি তে তাকিয়ে, এই সব ই মিমির কল্পনা মাত্র কোনো দিনও সেটা সত্যি হতে পারেনা। তবুও মিমি এই কল্পনা নিয়েই বাঁচতে ভালো বাসে সে আশা রাখে ঈশানের সাথে তার দেখা হবে কোনো একদিন । ঈশান ও ঐদিকে একই আসায় বাঁচে।

ঈশান আর মিমির প্রিয় খাবার বিরিয়ানি আর মিষ্টি । মিমি প্রায়ই ঈশান কে বলে ঈশান দা একদিন খাওয়াও এত আছিভমেন্ট এর পরেও একটা ট্রিট ও তহ দিলেনা । ঈশান তাকে ব্যাঙ্গালোর আসার খরচা দিয়ে দিতে চায় বলে তুই চলে আয় নতুন রান্না শিখেছি কিছু তোকে রান্না করে খাওয়াবে সারা রাত গল্প করবো । তার পর ঘুরতেও যাবো উফফ কি মজা হবে! । মিমি ঈশান দুজনেই জানতোনা তাদের এই কল্পনা সত্যি হবার নয় কোনো দিনও। তাদের ভাগ্য কে আলাদা করে দেওয়া হবে কেউ টা টের ও পায়নি। তাদের বছর বছর এর করা পরিকল্পনা এক নিমেষে শেষ হয়েযায় ।


                        মিমি একদিন শুনতে পায় ঈশানের বিয়ের ঠিক হয়েছে। কলকাতার কারুর সাথে। তবে কি সব সপ্ন শেষ আর কি তবে মনের কথা বলা হবেনা । মিমি ভেবেছিল এই বৈশাকেই তাকে তার কোনো ভায়োলিন এর টিউন যখন সে পাঠাবে বলে দেবে যে তাকে মিমি ভালো বাসে। এক নিমেষে সে গোটা পৃথিবীটা শূন্য হয়ে যেতে দেখে পায়ের তোলার মাটি যেনো আর নেই সেখানে। সব সপ্ন মিথ্যে ? এত তারাতারি কেনো করছে বিয়ে টা ঈশান । ভালোবেসে তহ করছেনা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করছে আর একটু অপেক্ষা করলে মিমি হয়তঃ বলেই দিতো সেই সময় টুকু ঈশান দিলনা । মিমির দুঃস্বপ্ন এততারাতারি  সত্যি হবে সে সেটা ভাবেনি।


মিমি কারুর সামনে তার দুঃখ প্রকাশ করতে না পেরে চুপ করেই রইলো । ঈশান কে মেসেজ করে শুনলাম তোমার বিয়ে ! টা কবে করছো বিয়ে টা ? উত্তর আসে সামনের বছর ? তোকে কিন্তু বিয়ে তে আসতে হবে ঈশান বলে উঠলো । মনের মধ্যে জমেছে একরাশ মেঘ আধার হোয়ে এলো তার ছোট্ট মুখ খানি। সে যে বলতে চেয়েছিলো ঈশান কে সে ভালো বাসে। তার বিয়ের খবর তাকে খুব একটা খুশি করেনি । একবছর বাকি বিয়ে হতে কিন্তু এই বিয়ে সে কোনো মতেই আটকাতে পারবে না । বার বার তার মনে হয় এই বিয়েটা কোনো ভাবে যদি সে আটকে দিতে পারে তবে সে তার মনের কথা শিখার করে নেবে ঈশান কে সে অন্য কারুর হতে দেখতে চায়না।


               বাইরে ঘন মেঘ ঝড়ো হাওয়া ঘরের জানলা দিয়ে ঝর এর হাওয়া ঘরকে এলোমেলো করছে । ঘরের দরজা বন্ধ মিমি এর চোখ ভিজেগেছে জল গড়িয়ে পড়ছে তার গাল চুইয়ে । সে জানে এই বিয়ে আটকাবেন । তার সপ্ন অধরাই থাকবে । তবুও তার মন মানছেনা । চোখের জলে জামাটা ভিজে গেছে । বাড়িতে কেউ নেই । সে একাই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে । বাইরে হঠাৎ তীব্র বৃষ্টি। তার মনেও জলপাত বাইরেও তাই ঠিক যেনো আকাশ ও তার দুঃখ ভাগ করে নিচ্ছে। তবে কি আর কোনো দিনও বলতে পারবে না মিমি যে সে ঈশান কে ভালো বাসে ? এটাই তার মানে সব শেষ হবার ইঙ্গিত ঈশান কে সে আর কাছে কি পাবে না কোনো দিনও? ঈশান কে সে একটা কংগ্রতুলেশন জানিয়ে ফোন টা রেখে দিয়ে আবার আনমনা মনে বলতে থাকে ঈশান এই বিয়ে টা তুমি করো না প্লিজ এই বিয়ে টা তুমি করনা।


পাশ থেকে তার ফোনে গান বাজছে :- তোর হয়ে যেতে চাই পারবো কি আমি বল তোর হয়ে যেতে চাই........ আর ম্যায় কিশি অর কা টু কিসি অর কি কাইসে হ্যায় জি রাহে ঝুঁটি ইয়ে জিন্দেগি গানের মাস আপ। ডাইরির পাতা জুড়ে ঈশান কে নিয়ে সাজানো সপ্ন গুলো আস্তে আস্তে ভিজে যাচ্ছে তার চোখের জলে ঝড়ো হাওয়া পাতা গুলো ওলটপালট করে দিচ্ছে বার বার।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance