টেলিফোন
টেলিফোন
বর্ষাকাল সবে সবে শুরু হয়েছে তাই কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি হয় বোঝাই যায় না। এমন একদিন সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে তা অফিস কামাই করে সারাটাদিন বাড়িতেই বসে রইলাম রাতে হরিদা খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা করে চলে গিয়েছিল ।"এই দেখো গল্পে গল্পে আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি আমার নাম আকাশ.... আকাশ সেন এই কলকাতায় এক বেসরকারি জবের এর জন্য ফ্ল্যাটে থাকি" সে যাই হোক গল্পে ফেরা যাক
রাতে খেয়ে শুতে শুতে প্রায় দশটা বাজল সময়টা ঠিক মনে পড়ছে না অনবরত বৃষ্টি হয়েই চলছে হঠাৎ টেলিফোন টা বেজে উঠল ফোনটা তুলতেই মা কি জানো আমাকে কেঁদে কেঁদে বলার চেষ্টা করছে আমি বলতে যাবো কি হয়েছে? হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল আর বেশী দেরী করলাম না তখন প্রায় ১ টা কাঁধে ব্যাগ আর রেনকোট টা পড়ে বেরিয়ে পড়লাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে রাস্তায় এক হাঁটু জল তার মধ্যে রিক্সার দেখা নেই, অগত্যা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি ঠিক সেই সময় কোত্থেকে এক রিস্কাওয়ালা এসে নাকি নাকি গলায় জিজ্ঞেস করলেন আঙ্গে বাবু আপনি কি স্টেশনে যাবেন? আমি বললাম হ্যাঁ যাবো! বলতেই রিস্কাওয়ালা ও বলল উঠুন উঠুন আমার ওই দিকেই বাড়ি । স্টেশনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে কিছু দুরে গিয়ে পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখি রিস্কাওয়ালা উধাও এত তাড়াতাড়ি কিভাবে একটা রিক্সা যেতে পারে এইসব চিন্তা করতে করতে স্টেশনে গিয়ে দেখি স্টেশন প্রায় মিনিট খানেক লেট তাই এক কাপ চা নিয়ে খাচ্ছি ইতিমধ্যে ট্রেন চলে এলো চট জলদি ট্রেনের কামরায় উঠে দেখলাম কামড়াতে শুধু আমি একাই বসে আছি। ট্রেন চলতে শুরু করল ইতিমধ্যে ঘুমের তন্দ্রাভাব চলে এসেছিল ঠিক এমন সময় ঘুমের চোখে দেখলাম কেউ যেন ট্রেনের কামরার দরজা থেকে ঝাঁপ মারলো তাড়াতাড়ি করে দরজায় কামড়াতে গিয়ে দেখি কেউ নেই। আর ঘুম হলো না ভাবতে লাগলাম ট্রেনের কামরায় আমি একাই ছিলাম কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না এইসব চিন্তা করতে করতে স্টেশন চলে এল স্টেশন থেকে নেমে দেখলাম রাত ৩ টে প্রায় ছুঁই ছুঁই। স্টেশনে গাড়িঘোড়া না থাকায় হাঁটতে শুরু করলাম হঠাৎ দেখি সেই রিস্কাওয়ালা আমাকে বলছে বাবু কোথাও যাবেন ? আমার যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল কলকাতা থেকে এতদূর তাও রিস্কা নিয়ে কিভাবে আসা সম্ভব ! হঠাৎ সেই রিক্সাওয়ালা টা পৈশাচি হাসি হাসতে লাগলো এবার একটু রিস্কাওয়ালার বর্ণনায় আসা যাক লোকটা একটা চাদর গায়ে দেওয়া ছিল তাই মুখটা বোঝা যাচ্ছে না হাতগুলো অনেকটা ফ্যাকাশে গতিক সুবিধার নয় দেখে দৌড়াতে শুরু করলাম দেখি লোকটা রকেট স্পিডে রিসকা চালিয়ে আমার পিছন দিক থেকে আসছে দৌড়াতে দৌড়াতে
সব জিনিস ধীরে ধীরে খলসা হয়ে গেল আমার ফ্ল্যাটে কোনদিন কোন টেলিফোন ছিল না তবে টেলিফোন এলো কোথা থেকে ? দ্বিতীয়তঃ আমি রাতে ঘুমানোর আগে ফোন সুইচ অফ করে ঘুমাই তাহলে মা ফোন করবেই কি করে ? আমি দৌড়াতে দৌড়াতে এক পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম দেখলাম রিস্কা ওয়ালা টা তার রিস্কা থামিয়ে এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে নাকি নাকি কণ্ঠে বলতে লাগল এবার তুই কোথায় যাবি.. পরদিন চোখ খুললো গ্রামের বাড়ির সকালে পাড়ার কাকুর morning work করতে গিয়ে আমাকে নাকি রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়। টানা তিন দিন জ্বর এরপর ফ্ল্যাটে ফিরি। মা বাবাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলিনি বাড়ি ফিরে যেই টেবিলে টেলিফোন টা ছিল সেই টেবিলটা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলাম একটু টেবিলের বর্ণনাটা দিই " টেবিল টা ছিল অনেকটা আলমারির মতন এবং সেখানে তালামারা থাকতো " অদ্ভুতভাবে ফ্লাটের মালিক একমাত্র সেই টেবিলটি রেখে গিয়েছিলো এবং বলেছিল কোনদিন তালা খোলার চেষ্টা না করা এবং সেই টেবিলে আমিষ জাতীয় কোন জিনিস না খাওয়া । এই কথাগুলো যখন কাকু অর্থাৎ ফ্লাটের মালিক কে জানালাম তখন আমাকে বলল তুমি একটু চিন্তা করে দেখো তো তুমি কিছু আমিষ জাতীয় জিনিস খেয়েছিলে কিনা? একটু ভাবতেই মনে পরল এক সপ্তাহ আগে কার ঘটনা অফিসের প্রচণ্ড চাপ কম্পিউটারে বসে বসে কাজ করছি হরিদা সেই টেবিলে খাসির মাংস আর ভাত রেখে গিয়েছে আর সেই দিনে সেখানে আমি খেয়েছিলাম । এই কথা বলতেই কাকু পরের দিন এক তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যায় সেই তান্ত্রিকটি একটা তাবিজ দেয় আর তারপর থেকেই কোনদিন এই রকম ঘটনা আমার সাথে ঘটেনি । সেই রাতের ঘটনা আজও আমার কাছে ধোঁয়াশা।
_____________

