আত্মা
আত্মা
আমার নাম আকাশ চৌধুরী, আপাতত বেকার।আজ বাইরে শীত পড়েছে তাই রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ রাতের বেলা কেউ আমার দরজায় কড়া মাড়ছে। আমি বিরক্তির স্বরে বললাম কে.... কে.... কোন উত্তর এলো না, শেষমেষ ঘরের আলোটা জ্বেলে। ঘড়ির দিকে তাকালাম তখন প্রায় রাত ১টা । এরপর দরজাটা খুলে দেখলাম বিমল এসেছে , এই ফাঁকে তোমাদের বলে রাখা ভালো বিমল আমার কলেজের বন্ধু তার পুরো নাম "বিমল সেন" বিমল আমার একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিল।
বিমল যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন তার বাবা মারা যায় সেই থেকে বিমল এবং বিমলের মা একা থাকে।সে যাই হোক বিমলকে ঘরে আসতে বললাম ঘরে এসে বসল কিন্তু আমার সাথে কোনো কথা বলল না আমি নিজের মতন বলতে লাগলাম সবাই ভালো আছে কিনা কাকিমা অর্থাৎ বিমলের মা কেমন আছে। এই কথাটা শুনেই বিমলের চোখ ছল ছল করে উঠলো। আমি বিমল কে খুব তোড়জোড় করে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। সে আমাকে বলল গত পরশুদিন তার মা মারা গেছে। আমি শুনে খুব কষ্ট পেলাম, বিমল কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো এরপর আমাকে একটা ঘটনা বলল,বিমলের মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বিমলের বাড়িতে নাকি সব অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ হয় রাতের বেলা। আমার শুনে ব্যাপারটা হাস্যকর মনে হলেও বিমলকে আশ্বাস দিয়ে বললাম কাল তার বাড়ি যাবো। বিমানের থেকে জানতে পারলাম তারা এখন কলকাতায় থাকে সেই রাতে আর ঘুম হল না বিমলের সাথে গল্প করতে করতে কখন সকাল হয়ে গিয়েছে টেরও পাইনি।
পরেরদিন স্নান খাওয়া-দাওয়া সেরে দুপুর 12 টার ট্রেন ধরলাম, ট্রেন থেকে নেমে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি। বিমলের বাড়ি যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা 5 টা। বিরাট বড় বাড়ি বাড়ির সামনে বাগান পিছনে একটি ছোট্ট পুকুর আছে। বিমলের মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বিমল একজন চাকরকে রেখেছে তার নাম "রামু"। বিমলের সাথে এই বাড়ির সম্বন্ধে নিয়ে গল্প করতে করতে দেরি হয়ে গেল। বিমলের থেকে জানতে পারলাম বিমল এটা এই সবে কিনেছে একজন ব্যবসায়ী কাছ থেকে। গল্প করতে করতে রামু কাক রাত ১০ টায় খাবার দিয়ে দিল,আমরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি এবং বিমল একঘরে শুলাম ব্যাপারটা দেখবার জন্য। তখন প্রায় রাত দুটো ঘুমের আধো-আধো চোখে ঘড়িটা ঠিক দেখতে পারলাম না।
কেউ যেন বেলকনি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি ব্যাপারটা দেখবো ঠিক তাই জন্য লাইট জ্বালালাম কিন্তু লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে পায়ের শব্দ ভ্যানিশ হয়ে গেল। আমার খুব ভয় হতে থাকলো, ভয়ে আমরা ঘামে স্নান করে গেলাম।আমরা ঘুমাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুম আসলো না কিছুক্ষণ পর আমাদের দরজায় কেউ কড়া মারছে। তার মধ্যে আমি বিমল কে বললাম রামু কাকা নয়তো? বিমল বলল সে রাতেই বাড়ি চলে যায়। কেউ যেন করা বেড়েই চলছে তাই ভয় ভয়ে ভয়ে কে.... কে.... করলাম ।
কিন্তু কারো শব্দ পেলাম নামনের মধ্যে কিছুটা সাহস নিয়ে দরজা খোলার প্রস্তুতি নিলাম প্রথমে মানা করলেও সেখানে তার সাহস নিয়ে নিল। আমি প্রথমে ঘরের লাইট জ্বেলে দরজা খুললো দরজা খুলতেই কেমন যেন ঠাণ্ডা হাওয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো। এর পর শুনতে পেলাম কেউ যেন আমাদের ঘরের গন্তব্যে দৌড়ে আসছে। এক স্ত্রী তারা পচা-গলা শরীর নিয়ে, আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আমরা ভয়ে ভয়ে দৌড়াতে বিমল আমার সাথেই দৌড়চ্ছিল কিন্তু কখন ভ্যানিশ হয়ে গেল মালুম পরলনা। এরপর দৌড়াতে দৌড়াতে পায়ের সাথে কিছু হোঁচট খেলাম নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি বিমল শুয়ে আছে তার বুকে যেন ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে এরপরেও আমি দৌড়াতে লাগলাম........
পরের দিন সকালে বাড়ির বাগান থেকে বিমল আমাকে ডেকে তুলল, আমরা দুজনেই রাতের কথাটা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। আমি বিমল কে বললাম এই বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে একটু অন্য বাড়ি দেখতে, এই কদিন না হয় আমার বাড়িতেই থাকবে। সেই কথা অনুযায়ী আমরা দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে বেড়াতে বেড়াতে যাবো ঠিক সেই সময়ে আমাদের দোরগোড়ায় এক সাধু বাবা এসে হাজির। কিছু না বলেই বিমলকে ডেকে বলল এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে তার কারণ এই বাড়িতে নাকি আত্মাদের বাস।

