নববর্ষের রাত
নববর্ষের রাত
তখন আমার বয়স ২০ কি ২৫ তখনো স্কুলের চাকরিটা পাইনি , কোনমতে পেট চালানোর জন্য টিউশনি করতাম। নববর্ষের দিন এক ছাত্রের বাড়ি নিমন্ত্রণ ছিল বলতে পারো বাংলার বছরের শুরুতে এক ছোটখাটো পিকনিক। ছোটবেলা থেকেই টাইম এর ব্যাপারে খুব পাংচুয়াল তাই সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ছাত্রের বাড়িতে হাজির, গিয়ে দেখি রান্নাবান্না কিছুই হয়নি । এরপর রান্নাবান্না শেষ হতে প্রায় রাত ১১.৩০ বেজে গেল।খাওয়া-দাওয়া গল্পগুজব সাড়তে সাড়তে প্রায় রাত ১টা ।দাদা বৌদি কয়েকবার তাদের বাড়ীতে থাকার কথা অবশ্য বলেছিল কিন্তু সেটি আর হলো না কারণ পরদিন এক চাকরির ইন্টারভিউ সেজন্য টাইম মতন পৌঁছতে হবে । এত রাতে আর মেইন রোডে না গিয়ে শর্টকাট রাস্তায় বেছে নিলাম বলতে পারো জঙ্গলের রাস্তা সেখানে লোক যাতায়াত করে না বললেই চলে।"লোকমুখে এই রাস্তার এক কাহিনী শোনা যায় এই রাস্তা নাকি অভিশপ্ত রাস্তা লোকজন বলাবলি করে এ রাস্তা দিয়ে গেলে কোনো না কোনো বিপদ অবশ্যই ঘটবেই" ছোটবেলা থেকেই আমার এই সব ভুতুড়ে জিনিসের প্রতি বিশ্বাস নেই তাই নির্ভয় এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম রাস্তাতে একটাই ল্যাম্পপোস্ট তাও জলে নেবে।আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম আমার ঠিক বাঁ পাশে এক বটগাছ তাও প্রায় ৪০-৫০ বছরের তো হবেই বটগাছ থেকে সারি সারি ঝুড়ি নেমেছে রাস্তাটা প্রায় জঙ্গল বুঝতেই পারছে এই রাস্তাতে আমার মতন কারো জলদি না থাকলে তেমন কেউ আসে না। আমি হেটে চলছি হঠাৎ কানে এল বটগাছে ওপার থেকে এক শিশু কান্নার আওয়াজ কয়েকবার কে... কে... করলেও কোন উত্তর এলোনা মনে মনে ভাবলাম এত রাতে কোন শিশু এই জঙ্গলে কি করতে পারে ব্যাপারটা খুঁটিয়ে দেখার জন্য মোবাইলটা বের করে ফ্ল্যাশ লাইট জলিয়ে বটগাছটার পিছনে গিয়ে দেখি কেউ নেই নিজেকে খুব বোকা মনে হল কারণ এত রাতে কোন শিশু এই জঙ্গলে কি করবে। মনের ভুল ভেবে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি হঠাৎ সামনে দেখি এক শিশু আমাকে জানো তার পিছন পিছন আসার জন্য ডাকছে তখন আমি কোন কিছু না ভেবে শিশুটির হেল্প করার জন্য পিছু নিলাম , সেই শিশুটি একটা নির্জন ভাঙ্গা বাড়িতে প্রবেশ করলো । আমিও তারি সঙ্গে ভাঙ্গা বাড়িতে প্রবেশ করলাম কয়েকবার জোরে জোরে হাঁক দিলাম কেউ আছে ... কেউ আছে.... কিন্তু কোন উত্তর এলো না। অগত্যা পিছন ঘুরে হাঁটতে আরম্ভ করব ঠিক সেইসময় আমি অনুভব করলাম আমার ঘাড়ে কেউজন আষ্টেপিষ্টে তার হাতের থাবা বসিয়েছে । পিছন ঘুরতে খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও পিছন ঘুরে যা দেখলাম তাতে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম , এক আধ পচা গলা শরীর তার দুর্গন্ধে আমার গা শিউরে উঠলো কিছুতেই তার হাত আমার ঘার থেকে সরাতে পারলাম না। সামনের দিক থেকে কয়েকটা অশরীরী আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসছে....চোখ খুললো সকালবেলা এক বৃদ্ধা ডাকে সেই বৃদ্ধাটা আমাকে জিজ্ঞেস করল আপনি এখানে কি করছেন? উত্তরে কাল রাতে সব ঘটনা খুলে বললেন "বৃদ্ধাটি বলল এই বাড়ি প্রায় সাত বছর কার বাড়িটি ছিল এক বণিকের সে তার স্ত্রী এবং একটি ছেলে থাকতো । ছেলেটা এক car দুর্ঘটনায় মারা যায় ছেলে মৃত্যুর পর পুত্রের শোকে মা বাবা ও বেশিদিন বাঁচেনি"... আজও সেই বাড়িতে এবং রাস্তাটিতে এরকম ঘটনা প্রায় প্রায় শোনা যায় । কেউ কেউ বলে মাঝরাতে নাকি বীভৎস কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।