রাতের আঁধার
রাতের আঁধার
পরশু বিশ্বকর্মা পূজা তাই তিন বন্ধু মিলে (আমি, সাগর আর কৌশিক) ঠিক করলাম সন্ধ্যার দিকে পাশের গ্রামে বিশ্বকর্মা পুজো দেখতে যাবো । সেই কথা অনুযায়ী ৫টা নাগাদ সাগর আমি কৌশিক মিলে বেরিয়ে পড়লাম পাশের গ্রামের উদ্দেশ্যে আমাদের গ্রাম থেকে পাশের গ্রাম ১ঘন্টার পথ যেতে যেতে প্রায় ৬টা ঠাকুর দেখতে দেখতে ঘড়িতে ৮:৩০পেরিয়ে কখন নটার কাটায় পৌছাইছে তা আমাদের মালুম নেই। সাইকেল নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথে রওনা দিলাম গ্রামের আলোর ব্যবস্থা থাকলেও সড়কপথ গুলিতে এখনো আলো আসেনি তাই এখন চাঁদের আলোয় ভরসা তিন বন্ধু মিলে গল্প করতে করতে যাচ্ছি হঠাৎ ব্রেক কষলো কৌশিক ওর দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমারও ব্রেক কষলে সাগর বলে উঠলো কিরে এই ফাঁকা রাস্তায় আবার থামলি কেন? উত্তরে: কৌশিক বলল এত রাতে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে? "আসলে আমাদের গ্রামে যাওয়ার দুটি রাস্তা অন্য রাস্তা দিয়ে গেলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ২ঘণ্টা এ রাস্তা দিয়ে গেলে ১ ঘন্টা রাস্তাটার বর্ণনা অনেকটা এইরকম দুই ধারে আমবাগান মাঝে পাকা রাস্তা কিন্তু রাতের বেলা রাস্তা দিয়ে কেউ যায় না বললেই চলে লোকমুখে শোনা যায় অনেক বছর আগে নাকি এই বাগানে লোকেরা আত্মহত্যা করত সেই থেকে এখনও লোক জনেরা দিনের বেলাও বাগানে যেতে ভয় পায়"
আমি আর সাগরের আবার ভূত প্রেতাত্মা এইসব বিশ্বাস করিনা।
সাগর কৌশিকে বলল_ ছি: কৌশিক তুই নাকি সাইন্স এর স্টুডেন্ট তুই এগুলো জিনিস কে বিশ্বাস করিস ছি: এই বলে সাগর বলল চলত কিছু হবে না । আমরা তিনজন গল্প করতে করতে যাচ্ছি আমবাগান রাস্তাটায় ঢুকতে যাব ঠিক সেই সময় কৌশিক বলল ফিরে গেলে হতো না? এই শুনে সাগর রীতিমতন রেগে গিয়ে বলল তুই কি যাবি.... এরপর আমরা রাস্তার দিকে এগোচ্ছি চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক তার মধ্যে আম গাছ গুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে চারিদিকে এক নিস্তব্ধতা পরিবেশ তার মধ্য দিয়ে আমাদের সাইকেল এগিয়ে চলছে। হঠাৎ আমরা লক্ষ্য করলাম সাদা কাপড় পরা এক অবয়ব হেরিকেন হাতে নিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে অদ্ভুত ভাবে । কয়েকবার সাগর কে.. কে.. করে ডাকলেও কোন উত্তর এলো না আমি বললাম আরে চলত কোন পাগল হবে হয়তো । এই বলে আমরা তিনজন এগচ্ছি কিন্তু আমরা যত এগোচ্ছি সেই অবয়ব একবার রাস্তার বাঁ দিক একবার ডান দিক একবার বাঁ দিক ডান দিক , আমরা যতই এগচ্ছি মনে হচ্ছে তার গতির আরো বেরেই চলছে কারন একটা মানুষ কখনই এত জোরে হাঁটতে পারবে না এই দেখে আমাদের গলা কাঠ হয়ে এসেছে খানিকটা সাহস জাগিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম কে... কে....। এর পর আমাদের সাথে যা হলো তা আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম সে অবয়ব টি আমাদের দিকে তাকাতেই মনে হল পিঠের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল সেই অবয়ব টির বর্ণনাটা অনেকটা এই রকম তার চোখ বলতে শুধু সাদা অংশটা যা দেখে মনে হচ্ছে শরীর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে গোটা শরীর ফ্যাকাশে আর তাঁর মুখ থেকে অনবরত রক্ত বেরিয়ে চলছে এই দেখে আমরা সাইকেলের গতি বাড়িয়ে কোনরকমে বাড়ি ফিরলাম তারপর মা কে সব ঘটনা খুলে বললাম । পরদিন আমাদের এক চেনা-পরিচিত ওঝা ডেকে আনলেন আমাকে দেখে তিনি তিনি একটা মাদুলি দেন এবং বলেন কোন দিন যেন এটি না খুলি এবং ওই রাস্তা তে কোন দিন যাতে না যাই।
পরবর্তীতে পাড়ার এক দাদুর থেকে জানতে পারি অনেক বছর আগে এক মহিলা ওই রাস্তাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে তারপর থেকে নাকি রাত দশটার পর ওই রাস্তায় এরকম ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়।

