STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Classics Inspirational Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Classics Inspirational Others

টান.....

টান.....

4 mins
155


মখমলের চাদর বিছানো নরম তুলতুলে গদি যুক্ত পালঙ্কে শুয়েও ঘুম আসছেনা দীপেশের চোখে। যতবার চোখ বন্ধ করছে একটাই মুখ ফুটে উঠছে চোখের সামনে, আর মন বারবার প্রশ্ন করছে কাজটা ঠিক করলি তুই দীপেশ?কাজটা একদম ঠিক করলিনা! দীপেশের মন আর মস্তিষ্কের মধ‍্যে দ্বন্দ চলছে। দীপেশের পাশে শুয়ে আছে ওর বছর দুয়েকের ছেলে বাবাই, আর তার পরে মালতি। সুখ নিদ্রা দিচ্ছে। দীপেশ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

----দীপেশ মালতিকে ডাকতে লাগল, মলু এই মলু শুনছো.....?

---------মালতি বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল কি হল শুনছি বলো...?

----------দীপেশ বলে উঠল আচ্ছা কাজটা কি ঠিক হল করা?

------------মালতি এবার তেরেমেরে উঠে বসে বলল, তখন থেকে একই প্রশ্ন করে চলেছো কাজটা কি ঠিক হলো? কাজ টাকি ঠিক হলো? বলি কি ভুল হয়েছে? যা..... হয়েছে ঠিকই হয়েছে! যতসব রাত্রি বেলায় নাটক। তোমার ঘুম না.... আসলে চুপচাপ শুয়ে থাকো, আমার ঘুমটা নষ্ট করোনা। মালতি মুখ ঝামটা দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

দীপেশ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কপালে হাত রেখে চোখটা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল, আর দীপেশের চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল কত সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত, দীপেশ সারা ঘর ময় খিলখিল করে ছুটে.... ছুটে বেড়াচ্ছে, আর ওর মা.. পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে খাবারের থালা নিয়ে, আর বলছে..

-------'দীপু দাঁড়া বাবা দাঁড়া এইভাবে ছুটিস না......, আর একটা বৌ... বাকি আছে, সব বৌ খাওয়া হয়ে গেছে। হঠাৎ হাসতে হাসতে ওকে ধরে কোলে তুলে নিল ওর বাবা, আর মা ভাতের শেষ অংশটুকু মুখে ভরে দিল।

-------সাথে সাথে বাবা বলে উঠল " চাঁচা মোছা মায়ের বাছা"।

আর দীপেশ আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল। আর বাবা... মা দুজনে একসাথে হেসে উঠল। আরো টুকরো টুকরো সুখের স্মৃতি ভেসে উঠতে লাগল দীপেশের চোখে। হঠাৎ বাজ পড়ার ভীষণ শব্দে দীপেশের তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গেল, ধরপড় করে উঠে বসে জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখল অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়ে চলেছে। দীপেশের চোখ দিয়েও নোনা জল গড়িয়ে পড়ল প্রবল বেগে। দীপেশ ঘুমন্ত ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে স্নেহের পরশ দিয়ে বলল...

---------তোর বাবা এতটা নীচ হতে পারবেনা!কিছুতেই না.....! তাহলে কোনদিনও যে.তোর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবোনা সবসময় চোখ নামিয়েই কথা বলতে হবে।

************************************************

দীপেশ পালঙ্ক থেকে নেমে ঘরের জানলাটা টেনে দিয়ে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল চারটে বাজছে। দীপেশ আর সময় নষ্ট না করে বেড়িয়ে পড়ল গাড়ির চাবি নিয়ে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে । আকাশ কালো মেঘের চাদরে ঢেকে গেছে থেকে থেকে আকাশের বুক চিরে তীব্র আলোর ঝলকানি বেড়িয়ে আসছে, তারসাথে প্রবল মেঘের গর্জন, প্রকৃতি আজ তান্ডব নৃত‍্য শুরু করছে, সবকিছু শেষ করে তবেই বিরাম নেবে। দীপেশ গাড়িটা থামাল শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে যেখানে সকালে এসে ওর অন্ধ মাকে বসিয়ে রেখে চলে গেছিল একদল ভিখারির পাশে, এবং বলেছিল.

--------এখানে একটু বসো মা., আমি কাজ সেরে ফিরছি। 

দীপেশ গাড়ি থেকে নেমে ভিজতে ভিজতে ছুটল ভীতরের দিকে, কিন্তু যেখানে মাকে বসিয়ে রেখেছিল সেখানেতো কেউ নেই!! তাহলে কোথায় গেল? দীপেশ এদিক থেকে ওদিক পাগলের মত খুঁজতে লাগল। দীপেশের মনের মধ‍্যে মাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার ভয় জেঁকে বসল। দীপেশ হাঁটু মুঁড়ে বসে চিৎকার করে কেঁদে উঠল মাআআআআ..... বলে।

-----------ঠিক তখনই পিছন থেকে আওয়াজ ভেসে আসল, কে...... দীপু তুই এলি বাবা....?

------------দীপেশ ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।

-----------দীপেশের মা..... ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, কাঁদছিস কেন? ভয় পেয়েছিস? ভয়ের কি আছে আমি আছি তো..... কিছু হবেনা!!!!

--------দীপেশ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল তুমি ঠিক আছোতো মা......??? তোমার কি কষ্ট হচ্ছে কোথাও.....???

---------দীপেশের মা বলে উঠল, আমি ঠিক আছি বাবা, সবাই বলছিল তুই আমাকে এখানে ফেলে নাকি চলে গেছিস!!!! আর আসবিনা, আমি সবাইকে বললাম কখনও না..... আমার ছেলে ঠিক আসবে, কোন কাজে হয়তো আটকে গেছে।

---------দীপেশ কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল, আমাকে ক্ষমা করে দাও মা.....!!! আমি মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি....!!!

----------দীপেশের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, কি.... ভুল করেছিস বাবা???? আমি সবজানি, সব বুঝি, বৌ.... এর কথায় মাকে রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিলিস তাইতো...!!! কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেতে তো.... পারলিনা!!!! ফিরেই আসতে হলো। যা.... হয়েছে হয়েছে কান্না বন্ধ কর, আর কি..... রকম ভিজে গেছিস!!! ঠান্ডা লেগে জ্বর এসে যাবে তো...., বলে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিতে লাগল।

-----------দীপেশ বলে উঠল, রোজ রোজ বাড়ি ফিরে মালতির ঐ.... অশান্তি আমার আর সহ‍্য হচ্ছিলনা, তাই এই মস্ত বড় পাপ করে ফেলে ছিলাম। দীপেশ আর কথা না..... বলে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করল।

----------দীপেশের মা ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠল, কি..... হল প্রনাম করছিস যে....???

------------দীপেশ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল, আজ থেকে আমার আর একটা নতুন চলার পথ শুরু হল, তাই চলো বাড়ি.... ফেরা যাক।

দীপেশ মায়ের হাত ধরে সামনে এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসালো, বৃষ্টি তখন থেমে গেছে, চারিদিক জুড়ে পরিবেশ শীতল হয়ে উঠেছে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করছে। রাত জাগা পাখিরা ক্লান্ত শরীরে আপন আপন ঘরে ফিরছে। নতুন দিনে নতুন আলোকে সাক্ষী রেখে।






Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics