Priyanka Banerjee

Abstract Tragedy Others

3  

Priyanka Banerjee

Abstract Tragedy Others

।। টান।।

।। টান।।

3 mins
222


"গাড়ি, বাড়ি, টাকা, পয়সা কি নেই! সব আছে। গাড়ি থেকে প্রায় টাকা ওড়াতে ওড়াতে যাওয়ার মতন ক্ষমতা রাখেন। লোকের সাথে কথা বলতে বলতে অটো হাসিতে ফেটে পরা, মনে আনন্দ না থেকে হয়ে নাকি! টাকা পয়সা থাকলে সব হয়ে বুঝলে, সব হয়ে! এখনো দেখো গাড়ির পাশে কেমন দাঁড়িয়ে! আনন্দ তো চলকেচলকে পড়ছে! "


মিসেস বসু তার প্রতিবেশী মিসেস সেনকে এই কথা বলে খানিক মুখ বেঁকালেন। বোঝাই যায় যে এই ধনী ব্যাবসায়ী হালদার বাবু এবার কাছে খুব একটা সুনজরের পত্র নয়। মিসেস বসুর কথা শুনে বেশ খানিক জোড়ে, বলা যায় হালদার বাবুকে খানিক শুনিয়েই মিসেস সেন বলতে শুরু করলেন -


"না না, মনে শান্তি আছে নাকি মনে! বাচ্চাটা হলো, সেতো হয়েই শেষ হয়ে গেলো। ভগবান সবাইকে সব সুখ দেয়না গো! সব দিলেও সন্তান সুখ দেয়নি। কি হবে এত টাকা পয়সা থেকে যদি একটা বাচ্চাই না থাকে!"


মিসেস বসু বললেন -


" সব অভিশাপ গো অভিশাপ, এত টাকা পয়সা থাকতেও কোথাও দান ধ্যান করবে না তাহলে অভিশাপ লাগবে ছাড়া আর কি হবে!"


কথাগুলো হালদার বাবুর কানে গেছে। গাড়িতে উঠে তিনি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতেই ভাবলেন -


 সত্যিই অভিশাপ, কিন্তু কেনো? সবাই কি আসল সত্যি জানে? সবাই কি জানে যে শহরের কোনো অনাথাশ্রম কিংবা কোনো বৃদ্ধাশ্রম নেই যেখানে তিনি প্রতি মাসে ডোনেশন দেয়না? সবাইকে জানিয়ে কি লাভ? কেউ তো বুঝবে না যে তার আর তার পরিবারের কষ্ট ঠিক কোথায় লুকিয়ে আছে! বাচ্চাটা মারা যায়নি, হসপিটাল থেকেই হারিয়ে গেছে। হালদার বাবুরা একটা সময় অবধি খোঁজা খুঁজি করেছিলেন। পুলিশ হেল্প পর্যন্ত নিয়েছিলেন, তবে কোনো লাভ হয়নি। তখন তারা যে পাড়ায় থাকতো সে পাড়ার লোকজন এমন কটাক্ষ করতে শুরু করে যে সেই শোক নিতে না পেরে হালদার বাবুর স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। 

       একটা ছেলে হয়েছিল হালদার বাবুর। চোখ - নাক সব একদম তার স্ত্রী নীলিমার মতন ছিল। একঝলক দেখার সুযোগ হয়েছিল তার, তারপরই সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। সেই একঝলকে দেখেছিলেন যে ছেলের ডান গালে তারই স্ত্রীর মতন একটা জন্মদাগ। আজও মনে পড়ে তার।

       মনের এই সব চিন্তা নিয়েই গাড়ি চুটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি হাইওয়েতে। হঠাৎই চোখে পড়লো একটা ডাস্টবিন, রাস্তার পাশে রাখা। না ডাস্টবিনের দিকে চোখ আটকায়নি, চোখ আটকেছে তার মধ্যে খাবারের সন্ধান করে দু - একটা টুকরো নিয়ে কারাকারি করতে থাকা দুটো বাচ্চা ছেলে। একজন কোমর পর্যন্ত একটা ডাস্টবিনের মধ্যে ঢুকে রয়েছে। আর একজন তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নোংরা আরও এদিকওদিক ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার সামনে হালদার বাবুর গাড়ি যেতেই, ডাস্টবিনের ভিতরের ছেলেটা কেমন যেন ছলছলে চোখে গালে হাত রেখে শুকনো মুখে তাকিয়ে রইলো গাড়ির দিকে। গাড়ির স্পীড কমিয়ে হালদার বাবুও তার দিকে তাকালেন। সেই চোখ, সেই নাক, এমন কি, হ্যাঁ! হ্যাঁ ঐতো সেই জন্মদাগ, তবে কি সে আজও... হায় ঈশ্বর! একি দেখলে তুমি! 

        ছেলেটাকে এইভাবে গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার সঙ্গী প্রায় চিৎকার করে উঠে বলে উঠলো -


" এই কি দেখছিস হা করে? তোর বাপের গাড়ি? তোকে নিয়ে এসেছে?" 


এই বলে ছেলেটা অট্ট হাসিতে চারিদিকের আবহাওয়াকে কাঁপিয়ে তুললো। ডাস্টবিনের ছেলেটা একইভাবে গালে হাত দিয়ে ছলছলে চোখে তাকিয়ে রইলো গাড়িটার দিকে। অন্যমনস্কভাবে একবার বলল -


" হ্যাঁ... আমার বাপের!"


কেঁপে উঠলো হালদার বাবুর বুকের ভিতরটা। শুধু নিজের মনেই একটা প্রশ্ন করলেন -


" সত্যিই কি তবে রক্তের টান!"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract