Priyanka Banerjee

Abstract Tragedy Others

3  

Priyanka Banerjee

Abstract Tragedy Others

গিফট্ বক্স।।

গিফট্ বক্স।।

4 mins
171


ধীর পায়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অপুর ঘরে ঢুকলো দুর্গা। আজই সেই দিন। গিফট্ বক্সটা খুলবে দুর্গা। আলমারির লকারের মধ্যে এতদিন ধরে বন্ধ থাকা একটা গোপন কিছু বেরিয়ে আসতে চলেছে দুর্গার সামনে। কিন্তু সেটা কি?

             লকার খুলে সেই গিফট্ বক্সটা হাতে নিল ও। একটা খুবই সাধারণ বাক্স। তার ওপর লেখা আছে,"আজ থেকে ঠিক দশ বছর পর এই দিনেই, এই বক্সটা খুলিস। তার আগে নয়।" এই লেখাটা দশ বছর আগে যখন দুর্গা দেখেছিল তখনই মনে মনেই অপুকে কথা দিয়ে দিয়েছিল যে দশ বছর আগে কোনো ভাবেই এই বাক্স সে খুলবেনা। গিফট্ বক্সটা হাতে নিয়ে চোখের কোণে জল এসে গেল ওর। এতদিন পর আজ আবার যেন অপুর হাতের স্পর্শ অনুভব করল ও। ঝাপসা হয়ে আসা দুটো চোখেই বাক্স মোরার কাগজটার ভাঁজগুলো কোনো রকমে দেখে খুলতে শুরু করলো ও। দুচারটে ভাঁজের পরই বেড়িয়ে এলো একটা কার্ডবোর্ডের বাক্স। মনের ভিতরটা ওলটপালট হয়ে যেতে থাকে দুর্গার। খুব ধীরে ধীরে, কাঁপা কাঁপা হাতে বক্সটা খুললো ও। ওর মধ্যে যা রয়েছে তা সবই দুর্গার জিনিস। এমন কিছু জিনিস যা নিয়ে দশ বছর আগে অপুর সাথে ভীষণ ঝগড়া হতো, তারপর সেই সব জিনিস অপু যে কোথায় লুকিয়ে দিত তা হাজার খুঁজেও দুর্গা আর পেত না। আজ সেগুলো হঠাৎ এর মধ্যে দেখে চমকেই উঠলো দুর্গা।

                     বাক্সটার মধ্যে শুধু যে এই জিনিস গুলোই আছে তা নয়, আছে একটা প্রায় লাল হয়ে যাওয়া, চার ভাঁজ করা কাগজ। হাতে সেটা তুলে নিয়ে খুব আসতে আসতে কাগজের ভাঁজ খুলে ফেললো। এমনি অমনি কাগজ সেটা নয়, একটা চিঠি। এমন একটা চিঠি যেটা দুর্গাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছে। চিঠিটা দেখেই দুর্গার এতক্ষণের ঝাপসা হয়ে আসা চোখ দুটো থেকে দুফোটা জল তার গাল বেয়ে নেমে এসে ঝড়ে পড়লো চিঠির উপর। চিঠিটা তার ভাই অপুর লেখা। বেশি কিছু না ভেবেই চিঠিটা পড়তে শুরু করলো দুর্গা। তাতে লেখা আছে -

"স্নেহের দিদি,

                তোর সাথে প্রণামের সম্পর্ক তো কখনোই ছিল না, তেমন আজও নেই, তাই স্নেহের কথাটাই ব্যবহার করলাম। কতদিন তোকে সামনা সামনি দেখিনি বলতো! তবে আমি ভালই আছি। আমাকে নিয়ে চিন্তা করে কষ্ট পাশ না তুই। আগের চেয়ে এখন তো বেশ অনেকটাই শক্ত হয়ে গেছিস, এবার অন্তত নিজেকে নিয়ে ভাব। দেখছিস! এত কথা বলতে বলতে আসল কথাটাই বলতে ভুলে গেছি। হ্যাপি বার্থডে। খুব ভালো থাক, সুস্থ থাক, আনন্দে থাক। আমার চিঠিটা পড়ে আবার কেঁদেকেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলিস না যেন, তাহলে আমার হবু জামাইবাবুটা আবার ভিরমি খাবে। শোন, আমার হবু জামাইবাবুকে বেশি বকাবকি করিস না কোনো কারণে, মাথা ঠাণ্ডা রাখিস। তোর তো আবার সেই ছোটবেলা থেকেই মাথাটা অত্যাধিক গরম।

                তোকে বেশ মিস করি জানিস! সব সময় মনে হয়ে তোর সঙ্গে আবার ঝগড়া করি। আবার তোকে বিরক্ত করি। তুই রেগে গিয়ে আমার কান মুলে দিবি। প্রতিবছর আজকের দিনটাতে এমন মন মরা হয়ে থাকিস যে আমার একদম ভালো লাগেনা। তোকে ছুঁতে না পারলেও, তোকে আগের মত জড়িয়ে ধরতে না পারলেও আমি তো সব সময় তোর কাছেই আছি, তাও কেনো কষ্ট পাচ্ছিস? কষ্ট পাশ না। দুর্গা কষ্ট পেলে অপু কি করে ভালো থাকবে বল? তোকে শক্ত হতে হবে, অনেক দূর তোকে এগিয়ে যেতে হবে, মা বাবার স্বপ্ন, নিজের স্বপ্ন সব পূরণ করতে হবে। ভয়ে পেলে কিংবা ভেঙে পড়লে তো চলবে না, আমি তো থাকলামই তোর সাথে। আরে বাবা, মানুষ মারা গেলে তার দেহটাই তো খালি নষ্ট হয়ে যায় আর স্রিতিগুলোতো থেকেই যায়। সেগুলোকে আঁকড়ে ধরে কি ভালো থাকা সম্ভব নয়? সেবার ভেবেছিলাম যে অপারেশনের পর সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু ডাক্তার কাকু জবাব দিয়ে দিল, আর আমার ফিরে আসা হলো না। আমার হাতে যে বেশি সময় নেই সেটা আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, তাই তো এই চিঠিটা লিখে, তোর যেই জিনিসগুলো আমার কাছে ছিল সেগুলো এই বক্সটার মধ্যে দিয়ে দিলাম। নিশ্চই ভাবছিস যে দশ বছর পর কেনো এটা খুলতে বললাম! আমি জানতাম যে তোর শক্ত হতে সময় লাগবে, ধাতস্ত হতে সময় লাগবে, তাই এই দশ বছর আমিই তোকে দিলাম। এখন তুই আগের চেয়ে অনেকটাই শক্ত, তবে পুরোপুরি নয়। তোকে পুরোপুরি শক্ত হতে হবে, আর শক্ত না হয়েই বা তুই যাবি কোথায়? আমি তো তোর সঙ্গেই আছি। এবার থেকে যে সমস্ত চিন্তাভাবনা তোকে কষ্ট দেবে যে সমস্ত প্রশ্ন তোকে এগিয়ে যেতে বাধা দেবে, তাদের সবকটাকে এই গিফট্ বক্সটার মধ্যে বন্ধ করে নিজে আনন্দের সাথে জীবনে এগিয়ে যাবি। আমি তোকে নাহয় একটু দূর থেকেই দেখবো, পরের জন্মে আবার আমরা ভাই বোন হয়েই জন্মাব, আবার দুষ্টুমি করবো, আমি জানি। তুই ভালো থাকিস, মা বাবাকে ভালো রাখিস, আর আমি তো তোর সাথে, তোর মনে আছিই।

          

                                             ইতি,

                                                   অপু।"

চিঠিটা পড়া শেষ করে সেটা বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে দুর্গা। ও জানে না যে এ কান্না মনের মাঝে অপুকে খুঁজে পাওয়ার অনন্দের, অপুর ওপর হওয়া অভিমানের, নাকি অপুকে দশ বছর আগে হারানোর কষ্টের। দুর্গা আজ শুধু এইটুকু জানে যে সব অপু আর দুর্গারা দুজন দুজনের জীবনের সবচেয়ে বড় গিফট্। অপুরা কখনো তাদের দুর্গাকে কষ্ট পেতে দেয় না। তারা সবসময় তাদের দূর্গাদের পাশে থাকে। যেমন দুর্গার অপু আজও তার সাথেই আছে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract