।।নিজের জগৎ।।
।।নিজের জগৎ।।
গোল চাকতির পেটের কাছ থেকে স্পটলাইটে মত আলো ঠিকরে বেরিয়ে মেঝের উপর আরেকটা গোল চাকতির তৈরি করেছে। এরপরই উপরের গোল চাকতিটার একটা অংশ জানলার মত খুলে গেলো। একটা মৌমাছির মাথার মত মাথা বেরিয়ে এলো সেখান থেকে। তবে মৌমাছির মত অত ছোট মাথা নয়। এটা বেশ বড় মাথা। তারপর একটা ভীষন সরু হাত হাতছানি দিয়ে ডাকলো বিছানায় শুয়ে থাকা পিকলাইকে।
মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে গেলো পিকলাই। ও জানে যে বোজো ওকে আজ চাঁদের দেশে নিয়ে যাবে। তাই বোজো এসেছে ওকে নিয়ে যেতে। ওকে ডাকছে। ওর ভালো লাগেনা এই একঘেয়ে স্কুল আর পড়াশোনা। ভালো লাগে না এই একঘেয়ে রাস্তা ঘাট, লোকজন। ছয় বছরের পিকলাই ঠাকুমার কাছে শুনেছে কোনো এক বুড়ি নাকি ঝাঁটার বাড়ি মেরে চাঁদকে ওই উপরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারপর নাকি পরে সেই বুড়িমা চাঁদে গিয়ে চরকায় সুতো কাটে। ওর খুব ইচ্ছে সেই বুড়িমা কাছে বসে চাঁদের দেশের গল্প শুনবে। তাই আগের রাতে বোজোর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর সে তার চাঁদে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। আর বোজো ওকে আজ নিয়ে যাচ্ছে।
গোল চাকতিতে উঠে চাঁদের দেশে পারি দিল ওরা দুজন। চাকতি উড়তে উড়তে চলতে লাগলো গাঢ় নীল আকাশ আর তারার রাজত্বের মধ্যে দিয়ে। কি সুন্দর! চারিদিকে কত নতুন নতুন পিকলাইয়ের না জানা গ্রহ! মহাকাশযাত্রির পোশাক পরে একটা সময় পিকলাই বোজোর হাত ধরে নেমে পড়লো চাঁদের দেশে।
চাকতির ভিতর থেকে বেরিয়ে অবাক হয়ে গেলো পিকলাই। পা যে মাটিতেই পড়ছে না! উড়ছে সে, শরীর হালকা, পাখির মত। উড়ে বেড়াতে লাগল তবে ঘটলো এক অন্য ঘটনা, যতবারই সে বোজোকে সেই বুড়িমাকে দেখতে বলে সে ততই ওকে চাঁদের গায়ে বড় বড় গর্ত ও পাহাড়ের মত উঁচু উঁচু ঢিবি দেখিয়ে গেলো। কোথায় বুড়ি মা! কোথায় চরকা! কোথায় চাঁদের দেশ! পিকলাইয়ের এসব দেখতে একদম ভালো লাগছে না। এর থেকে তো তার দেশ অনেক সুন্দর, তার স্কুল তার বন্ধু, সব সবকিছু খুব সুন্দর। এখানে কি এগুলো! না আছে লোক না কিছু। এবার থাকতে না পেরে বোজোকে সে বলেই বসলো -
" এগুলো কি দেখাচ্ছো আমাকে? এখানে তো কিছুই নেই! আমার ভালো লাগছে না এখানে; তুমি আমাদের দেশ দেখনি? কত্ত সুন্দর!"
বোজো বললো -
" আমার কিন্তু আমাদের দেশটাই বেশি প্রিয়। আমার সব টুকু এখানেই। যেখানে আমার বন্ধুরা থেকে। তোমার বন্ধুরা তোমার দেশে, তুমি ফিরে যাও পিকলাই, তোমার নিজের দেশে। "
পিকলাইয়ের মন খুব খারাপ হয়ে গেলো। খুব মনে পড়ছে নিজের দেশে মা বাবার কথা, বন্ধুদের কথা। ও ঠিক করলো ও ফিরে যাবে। ভাসতে ভাসতে বোজোর সাথে হাত মেলালো। আস্তে আস্তে শরীর হালকা হয়ে ফিরে যেতে লাগলো নিজের জগতে। শুনতে পেলো মায়ের গলা...