তোমার সাথে বেধেছি আমার প্রাণ
তোমার সাথে বেধেছি আমার প্রাণ
পর্ব-৩
লেখনীতেঃ হুমায়রা জান্নাত মীম
** " কি রে পাত্রী পছন্দ হলো?" ফোনের ওপাশ থেকে বললেন তাহেরা বেগম।
তুহিন মুচকি হেসে বললো, পাত্রী তো মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর।
" প্রস্তাব নিয়ে যাবো?"
" না, এখনই না। আমি তো কাল গ্রামে আসছি। এসে এই বিষয়ে কথা বলবো।"
" আচ্ছা, তুই আয়। সামনাসামনি এ বিষয়ে কথা বলবো।"
" দাদি, এখন তাহলে রাখছি। পেশেন্ট দেখতে হবে।"
" আচ্ছা, রাখ।"
ফোন রেখে চেয়ার থেকে এপ্রোন নিয়ে গায়ে দিয়ে স্থেথোস্কোপটা গলায় ঝুলিয়ে চেম্বার থেকে বেড়িয়ে গেলে তুহিন।
★★ আজ মীমের এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ। যাক, শান্তি। এবারের এস.এস.সি পরীক্ষা নিয়ে যা প্রবলেম হয়েছিল! প্রথমে এপ্রিল, তারপর এপ্রিল থেকে জুন। সিলেটের বন্যার জন্য শেষ মুহূর্তে এসে স্থগিত করে পরে সেপ্টেম্বরে। অবশেষে পরীক্ষাটা হলো। মীম তো জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে টেন থার্ড ইয়ার নাম দিয়েছিল। বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয় মীম। তারপর একটা বিশেষ দরকারে ওর এক বন্ধবীর বাড়িতে যায়। ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়। পথে ওর আরেক বন্ধবী মাইশার সাথে দেখা হয়। পথে একজন সাথী পেয়ে মীম বেশ খুশিই হলো। কারণ এই রাস্তায় ও বেশি আসে না। না আসার প্রাণপন চেষ্টা করে। আজ বাধ্য হয়ে এসেছে। এইদিকে ও আসে না তার কারণ হলো সজীব। সজীব এলাকার মেম্বারের ছেলে। একটু বখাটে টাইপ। যদিও সেরকম গুন্ডা না। কিন্তু রাস্তা-ঘাটে দাড়িয়ে থাকে মেয়েদের বিরক্ত করার জন্য। গ্রামের মেয়েরা এর ভয়ে এদিক দিয়ে আসে না। মেয়ের বাবারাও কিছু বলতে পারে না মেম্বারের ভয়ে। আর মেম্বার ছেলের ভালোবাসায় অন্ধ। একমাত্র ছেলে বলে।
যাইহোক, মীম আজ আবারও দেখতে পায় চায়ের দোকানে সজীব বসে আছে। বেশ কিছুদিন আগে সজীব মীমকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু মীম রাজি হয় নি। সে ভালো করেই জানে সজীব কিরকম। কিন্তু প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় মীম বোকা মেয়েদের মতো ঠাস করে সজীবের গালে চড় বসিয়ে দেয় নি। কারণ জানে এটা ওর জন্যই বিপদের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।এসব করলে পরিস্থিতি আউন্ট অফ কন্ট্রোলের হয়ে যাবে। তাই সে ঠান্ডা মাথায় সম্মানের সাথে সজীবনকে বুঝিয়ে না করেছিল। কিন্তু সজীব না কিছুতেই মেনে নেয় নি। রাস্তায় পেলে মীমকে ভীষণ বিরক্ত করতো। তাই সে এই রাস্তা দিয়ে আসা বাদ দিয়েছিল।
সজীবকে সামনে চায়ের দোকানে বসে থাকতে দেখে মাইশা বললো, মীম, সজীব তো ওখানে বসে আছে। যদি আজ আবার বিরক্ত করে। কি করবি?
মাইশা সব জানে কারণ ওর সামনেই সজীব মীমকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল।
মীম আমতা আমতা করে বলে, আল্লাহ ভরসা বোন। না গিয়েও তো উপায় নেই। চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে যাবো।
" তাই করি।"
মীম আর মাইশা নিঃশব্দে চলে যেতে চাইলেও সজীব ওদের দেখে ফেলে৷ সে মীমকে দেখে উঠে এসে মীমের সামনে এসে বলে, আজকে তোমায় পাইছি চান্দু। কত দিন পালাবে।শেষে তো তোমায় আমার জালে ফাসতেই হবে।
মীম সজীবের কথা পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে চাইলে সজীব ওর হাত ধরে। তা দেখে মীমের ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠে। সে হাত ছাড়ানোর জন্য মোচরাতে মোচরাতে বলে, হাত ছাড়ুন। প্লিজ হাত ছাড়ুন।
" শেষ বারের মতো বলছি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যা। নাহলে আজ আমি তোর কি অবস্থা করি তুই দেখবি।"
মাইশা সজীবকে আটকাতে গেলে সজীব মাইশাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।
মাইশা চিৎকার করে লোকজনকে ডাকতে থাকে। কিন্তু এত লোক থাকা সত্ত্বে দিনের বেলা একটা মেয়ের সাথে একটা ছেলে অসভ্যতা করছে সেটা দেখে কেউ এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলো না। সবাই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এটাই আমাদের সমাজ!
মীম হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু সজীবের সাথে পেরে উঠছে না। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সম্মান হারানোর ভয়ে। হঠাৎ সজীবের পিঠে কেউ খুব জোরে আঘাত করে আর সজীব "আহ" বলে চিৎকার করে মীমের হাত ছেড়ে দিয়ে ছিটকে মাটিতে পড়ে। আচমকা এমন ঘটায় সবাই অবাক হয়ে সেই আঘাতকারীর দিকে তাকায়। মীম তাকিয়ে দেখে সেখানে..........