STORYMIRROR

Humayra Jannat Mim

Abstract Romance

3  

Humayra Jannat Mim

Abstract Romance

কোনো একদিন

কোনো একদিন

5 mins
196

লেখনীতেঃ হুমায়রা জান্নাত মীম


আজ দুই মাস হলো নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে রুপা। এস.এস.সিতে ভালো রেজাল্ট হওয়ায় সে তার স্বপ্নের কলেজে পড়ার চান্স পেয়েছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে তার সহপাঠীদের সাথে, তার বেশ ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে। স্যার-ম্যাডামদেরও এখন একজন প্রিয়ভাজন সে। কলেজে এসে পড়াশোনা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা-আনন্দ করে বেশ ভালোই কাটছে রুপার দিন। একদিন টিফিন টাইমে সে ক্যান্টিনে গিয়েছে একটা চিপস কিনতে। চিপস কিনে আসছিলো রুপা। হঠাৎ জিসান তার সামনে এসে তার পথ আটকায়। জিসান রুপার ক্লাসমেট। রুপার মতোই একজন ভালো স্টুডেন্ট। ক্লাসে তার বেশ নাম-ডাক। তবে রুপার সাথে তার সেরকম কোনো সম্পর্ক নেই। জাস্ট পড়াশোনার ক্ষেত্রে ক্লাসে যতটুকু কথা বলা প্রয়োজন ততটুকু। রুপা বাইরের ছেলেদের সাথে মিশে না। তার কোন ছেলে বন্ধু নেই। জিসানকে এভাবে সামনে এসে দাড়াতে রুপা একটু অবাক হয়ে বললো, জিসান, কিছু বলবি?

" হ্যাঁ, রুপা তোর সাথে কিছু কথা ছিল।" লাজুক স্বরে বলে জিসান।"

" হ্যাঁ, বল। আমি শুনছি।"

" এখানে না। প্লিজ দুতালার ফাঁকা ক্লাসটাতে আসবি?"

জিসানের কথা শুনের রুপা কিছুটা ভয়ে পেয়ে যায়। তা দেখে জিসান বলে, ওই তুই ভয় পাস না আমি তোর সাথে জাস্ট কথাই বলবো। প্লিজ রুপা, আমার কথাগুলো শুন।

" কি এমন কথা জিসান যেটা এখানে বলা যায় না?"

" খুবই দরকারি। প্লিজ চল।"

" আচ্ছা, আমরা কলেজের গার্ডেনে কথা বলতে পারি। "

" কিন্তু ওখানে তো ক্লাস ওয়ানের স্টুডেন্টরা খেলছে।"

" তো খেলুক। ওরা খেলবে। আর তুই তোর কথা বলবি। তোর দরকারি কথা বুঝার মতো বুঝ ওদের এখনও হয়নি।"

আসলে রুপা চাইছে না কোন একা জায়গায় জিসানের সাথে যেতে। তাই গার্ডেনটাই বেস্ট হবে।

" আচ্ছা, চল।"


রুপা ও জিসান গার্ডেন যায়। 

" এবার বল কি বলবি।"

রুপার কথা শুনে জিসান নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। তা দেখে রুপা বলে, কি হলো বল?


জিসান এবার লাজুকস্বরে বলা শুরু করে, আসলে রুপা, আমি তোকে ভীষণ পছন্দ করি। কিভাবে কখন যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি। আই লাভ ইউ রুপা। তুই আমার গার্লফ্রেন্ড হবি?


রুপা জিসানের কথা শুনে থ হয়ে গেছে। সে অবাক হয়ে বললো, আসতাগফিরুল্লাহ! এসব তুই কি বলছিস জিসা? এসব বলাও গুনাহ।


" আমি তো তোকে ভালোবাসি রুপা"


" এটা ভালোবাসা নয় জিসান। এটা শয়তানের ধোকা। তুই যে প্রেমের কথা বলছিস সেটা হলো হারাম রিলেশন। যেটা আল্লাহ হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বিয়ের আগে প্রেম হারাম। দেখ ভাই, আমরা এখানে পড়তে এসেছি। যাতে আমরা লাইফে কিছু করতে পারি। এখন আমরা কলেজে এসে যদি এসব করি তাহলে আমরা আমাদের পড়াশোনায় কনসেনট্রেট কিভাবে করবো? আর তুই বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা কর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমবয়সী প্রেম বিয়ে অব্দি যায় না। যেতে পারে না। তাহলে কি লাভ প্রেম করে? তুই শয়তানের ধোকার মধ্যে পড়তে যাচ্ছিস জিসান। এসব ভালো না। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। আমি তোর কথায় রাজি হতে পারছি না। "

" আমি তোকে ভালোবাসি রুপা।" কাতরস্বরে বলে উঠে জিসান।


" তুই যদি আমায় ভালোবাসিস তাহলে তুই কখনো আমায় প্রেমের প্রস্তাব দিবি না জিসান।তুই যদি আমায় ভালোবাসিস তাহলে কথা দে এসব প্রেমে জড়াবি না। মনোযোগ দিয়ে পড়বি। আব্বু-আম্মু অনেক আশা নিয়ে আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। আমাদের উচিত সেটাকে সম্মান করা। তুই যদি আমায় ভালোবাসিস তাহলে আল্লাহর কাছে মোনাজাতে আমায় চাইবি। আমি তোকে রিজেক্ট করছি না জিসান। আমি তোকে বুঝাচ্ছি। প্লিজ তুই মন খারাপ করিস না। আমরা যদি একে-অপরের প্রতি কল্যাণকর হই তাহলে একদিন আমরা মিলবো। আল্লাহ আমাদের মিলাবেন। জীবনে চলার পথে কোনো একদিন হয়তো আমরা একসাথে হবো নিজেদের প্রিয়জন হয়ে। ততক্ষন নাহয় অপেক্ষা রইলো। আসি রে।" এই বলে রুপা আর কিছু না বলে চলে যায়। 

আর জিসান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো। এরপর থেকে জিসান খুব শান্ত ও পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে গিয়েছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি ইসলামিক অনেক বই ওর হাতে দেখা যায় । জিসানের মেধা ভালো থাকলেও সে পড়াশোনায় ছিল অমনোযোগী। রুপা জিসানের পরিবর্তন দেখে মনে মনে খুব খুশি হয়। যাক, ওর কথা তাহলে জিসান পজেটিভলি নিয়েছে। তবে সেদিনের পর থেকে জিসান রুপার সাথে কোন কথা বলে নি। দেখা হলে এড়িয়ে যেত। দেখতে দেখতে দুজনেরই কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেলো। জিসানের চান্স হলো রাবিতে। আর রুপার চান্স হলো বুয়েটে। দুজনে দুইদিকে চলে গেল।


দেখতে দেখতে কেটে গেল পাঁচ বছর। রুপা এখন একজন ইঞ্জিনিয়ার। রুপার বাবা-মা রুপার বিয়ের জন্য পাত্র খুজছেন। অনেক সন্ধান করার পর একজন ভালো পাত্র পেয়ে গেলেন। তারা রুপাকে দেখতে এসেছেন। পাত্রকে দেখে রুপা চমকে গেল। খুশিতে চোখে ভিড় করলো আনন্দের অশ্রু। তবে তা বাইরে আসতে দিল না। দুজনের বিয়েতে রাজি থাকায় দুই পরিবারের সম্মতিতে সেদিনই তাদের আকদ হয়ে যায়। রুপাকে ও তার বরকে নিজেদের মধ্যে সময় কাটানোর জন্য আলাদা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুজনে নিরব। এত বছরের জমে থাকা কথাগুলো যেন মুখে এসে আটকে গেছে। নিরবতা ভেঙে রুপার বর বলে উঠে, আমায় চিনতে পেরেছিস রুপা?


রুপা কেঁপে উঠে।এত বছর পর সেই ব্যক্তির কন্ঠস্বর শুনে। সাথে এটা ভেবে সে এখন তার স্বামী। রুপা তার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি তোকে ভুলি নি জিসান। 


হ্যাঁ, জিসানই রুপার স্বামী। জিসানের সাথেই রুপার বিয়ে হয়েছে। তখন জিসানকে দেখেই রুপা চিনতে পেরে গিয়েছিল। তাই সে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।


" আজ থেকে তুই আমার স্ত্রী।" বলে উঠে জিসান। তার এই বলাতে এক প্রকার অধিকারবোধ রয়েছে।


" আমাকে এখনও ভালোবাসিস?"রুপা।

" ভালোবাসি বলেই সূদুর রাজশাহীতে গিয়েও তোকে ভুলতে পারি নি। তোর জায়গায় কাউকে বাসানোর কল্পনাও করতে পারি নি। প্রতিটি মোনাজাতে আল্লাহর কাছে তোকে চেয়েছি। আড়ালে থেকে তোর খোজ-খবর নিয়েছি। আজ যখন নিজের পায়ে দাড়িয়েছি তখন তোকে আমার করার সুযোগটা হারাতে পারলাম না। ছুটে এলাম তোকে নিজের করতে।" 


" এত ভালোবাসিস আমায়?"

" হুম, অনেক ভালোবাসি রে। সেজন্য সেদিন তোর কথা ফেলতে পারিনি। পড়াতে, দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে মনোযোগী হয়ে উঠি। তোকে দেখলে এড়িয়ে চলতাম। কারণ নিজের মনকে সামলাতে পারতাম না শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে। হারামভাবে তোকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছে জাগত। তখন বয়সটাও ছিল সেরকম। থ্যাংক ইউ রে সেদিন কথা বলার জন্য।"


" আমি তোকে বলেছিলাম না জিসান, আমরা যদি একে-অপরের জন্য কল্যানকর হই তাহলে কোনো একদিন ঠিক একসাথে হবো। আল্লাহ আমাদের একসাথে করবেন । দেখ, আজ তা সত্য হলো। আমরা একসাথে হয়েছি।"


" হ্যাঁ, রুপা সেই কোনো একদিন এসেছে । আল্লাহ আমাকে ফিরিয়ে দেন নি। " এই বলে থামে জিসান। তারপর বললো, আমায় ভালোবাসবি রুপা? বেশি না একটু ভালোবাসলে হবে।

জিসানের এই কথায় এক ধরণের ভালোবাসাময় আকুতি মিশে ছিল। যা রুপার প্রেমময়ী হৃদয় উপেক্ষা করতে পারে নি। সে জিসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ভালোবাসবো। অনেক ভালোবাসবো। আর তুই নাহয় আমায় ভালোবাসতে শিখাবি!


রুপার কথা শুনে জিসানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। তার এত দিনের অপেক্ষা, ত্যাগ আজ সার্থক। সত্যি, আল্লাহ কখনো কাউকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেন না। নিজের প্রেয়সীকে আজ বুকের মধ্যে পেয়ে ভালোবাসায় তাকে কাছে টেনে নিল জিসান!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract