তোমার সাথে বেধেছি আমার প্রাণ
তোমার সাথে বেধেছি আমার প্রাণ
পর্ব-২
লেখনীতেঃ হুমায়রা জান্নাত মীম
" ম্যামসাহেব, আপনি যে মেয়েটার খোজ নিতে বলেছিলেন তার সম্পর্কে খোজ নিয়েছি।" তাহেরা বেগমের বিশ্বস্ত কর্মচারী ফারদিন আহমেদ বললেন।
ইজি চেয়ারে বসে থাকা তাহেরা বেগম নিজের চশমা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে বলেন, তাহলে বল দেখি।
তাহেরা বেগমের আদেশ পেয়ে ফারদিন বলতে শুরু করলেন, মেয়েটার নাম হুমায়রা ইসলাম মীম। সবাই মীম নামে ডাকে। মেয়েটা এবার এস.এস.সি পরীক্ষা দিচ্ছে। বয়স ষোল বছরের মতো। আমাদের গ্রামের এক মুদি দোকানদার মিজান ইসলামের বড় মেয়ে মীম। যেমন রূপে তেমন গুণে। পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরকন্নার কাজও দক্ষ হাতে সামলাতে পারে। দেখতেও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। মিজানের মতো এক গরিব দোকানদারের ঘরে এমন একটা মেয়ের থাকায় সবাই বলে এ যেন গোবরে পদ্মফুল।
এবার ফারদিনকে থামিয়ে তাহেরা বেগম বললেন, থাম। বাকি তথ্য এখানে আছে?
" আজ্ঞে, ম্যামসাহেব।"
" মেয়েটার ছবি আছে?"
" জ্বি, ম্যামসাহেব। "
"ঠিক আছে তুই এখন যা পরে দরকার হলে ডাকবো।"
" আজ্ঞে, ম্যামসাহেব।"
ফারদিন বেড়িয়ে গেল।
তাহেরা বেগম মীমের একটা ছবি বের করে ভালো করে সেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেন, সত্যিই তুমি গোবরে পদ্মফুল!
★ পেশেন্ট দেখা শেষ করে কেবল চেম্বারে এসে বসেছে তুহিন। বসতেই দেখে ফোন বাজছে। স্কিনে লেখা উঠেছে-Dadi is calling.
সেটা দেখে তুহিন মুচকি হেসে কলটা ধরে সালাম দেয়। তারপর বলে, কেমন আছো দাদি?
ফোনের ওপাশ থেকে তাহেরা বেগম সালামের জবাব দিয়ে বলেন, ভালো আছি দাদুভাই। তুই কেমন আছিস?
" আলহামদুলিল্লাহ। শরীর কেমন আছে তোমার?"
" এই আল্লাহ রেখেছে একরকম। দাদুভাই, তুই কি বিজি আছিস?"
" না, আপাতত নেই। কেন? কোন দরকার?"
" তোর সাথে একটু কথা ছিল। "
" বলো।"
" দাদুভাই,আমি তোর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেছি।"
" মেয়ে দেখা শুরু করেছো মানে?"
" মানে তোর জন্য পাত্রী খোজছি। দেখ,দাদুভাই তুই না করতে পারবি না। বিয়ের বয়সটা তো পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনই বিয়ের উপযুক্ত সময়।"
" ওকে, দাদি।রিলেক্স। আমি না করছি না।আসলে আমিও এবার বিয়েটা করে নেওয়ার কথা ভাবছিলাম। বয়স তো হলো। এরপর পাত্রী পাবো না।"
" ইশ, বললেই হলো। আমার দাদুভাই এক রাজপুত্র। এমন রাজপুত্রের মতো জামাই পাওয়ার জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকবে।"
তাহেরা বেগমের কথা শুনে তুহিন মুচকি হেসে বলে, হয়েছে হয়েছে দাদি। আমাকে আর বাটারিং করতে হবে না।"
" ওসব বাটারিং ফাটারিং আমি বুঝি না। শুন, তোর জন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করে রেখেছি।মেয়েটা যেমন রূপে তেমন গুণে। মেয়েটার আচার-আচরণ খুব ভালো।শুধু একটাই সমস্যা মেয়ের বাড়ি গরিব। "
" আমি তোমায় বলেছি তো দাদি, আমার কাছে ধনী গরিব ম্যাটার করে না। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সমান।"
" আমি জানি তো আমার সোনা। দাড়া তোকে মেয়েটার ছবি পাঠাচ্ছি। দেখে বল তো পছন্দ হয়েছে কি না।"
" আচ্ছা, পাঠাও।"
তুহিন তাহেরা বেগমের ছোট নাতি। শোয়েব হোসেন আর শায়লা বেগমের ছোট ছেলে। বয়স এবার ২৫ হয়েছে। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। তুহিনরা দুই ভাই। বড় ভাই হলো তন্ময়। সে বাবার ধানের ব্যবসা সামলায়। সে গ্রামেই থাকে। তুহিন পেশায় একজন ডাক্তার। সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সিনিয়র সার্জন এবং প্রফেসর। ছাত্র হিসেবে তুহিন খুবই পরিশ্রমী ছিল। সেজন্য কম বয়সে এত সফল হয়েছে।তুহিন প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রামে আসে। ওখানে ওর চেম্বার আছে। সেখানে সে গ্রামের লোকেদের ট্রিটমেন্ট করে। শনিবারে সকালে ফিরে যায়।
মেসেজের আওয়াজে তুহিন সজাগ হয়।এতক্ষণ সে আজকের কাজ নিয়ে ভাবছিল। তুহিন ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা ছবি ওর হোয়াটসঅ্যাপ এ তাহেরা বেগম পাঠিয়েছেন। এটাই পাত্রীর ছবি। ছবিটা ডাউনলোড হওয়ার পর তুহিন ছবিটা দেখে থমকে যায়। এমন মায়ামাখা মুখ সে আগে কখনো দেখে নি। মুগ্ধ হয়ে ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, তুমি আদোও মানুষ নাকি জান্নাত থেকে আসা কোনো হুরপরী!
চলবে....
গঠনমূলক মন্তব্য চাই। এতে গল্প তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবো।

