তাতাইয়ের পিকনিক(তাতাইয়ের গল্প2
তাতাইয়ের পিকনিক(তাতাইয়ের গল্প2
"এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো।
চাঁদের পাহাড় দেখতে পাবো
ওই চাঁদের পাহাড়…"
---- এই তাতাই চাঁদের আবার পাহাড় হয় নাকি রে?
---- ধুরর বোকা, চাঁদের পাহাড় তো রূপকথার গল্পে থাকে। সত্যি আবার হয় নাকি!
---- হুমম। কিন্তু আমরা তো নদীতে যাচ্ছি তাহলে পাহাড়ের গান করছেন কেন মিস?
---- সত্যিই তো, চল জিজ্ঞেস করি মিসকে।
---- মিস মিস (একসঙ্গে) আচ্ছা মিস আমরা তো নদীতে যাচ্ছি তাহলে পাহাড়ের গান কেন গাইছি?
---- সত্যিই তো তাতাই আর দিঠি। তোমরাই একটা নদীর গান করো নাহয়।
---- নদীর গান! উমম…
---- আমি জানি আমি জানি।
---- তাহলে শুরু করো তাতাই।
---- আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু…(সুর করে)
আজ তাতাইদের ভারী আনন্দ। এই প্রথম স্কুল থেকে তাদের পিকনিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতদিন তারা বড় দাদাদিদিদের পিকনিকে যেতে দেখতো; ছোট বলে তাদের কখনও নিয়ে যাওয়া হয়নি। কিন্তু এ বছর হেডমিস বলেছেন তাতাইরাও পিকনিকে যাবে, তবে বড়দের মত দূরে কোথাও যাবে না। তারা এই কাছেই কাঁসাই নদীর পাড়ে পিকনিক করবে। দূরে কোথাও না যাওয়া হোক, তবুও বাড়ির লোকেদের ছেড়ে বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যাচ্ছে ভাবলেই তাতাইয়ের ভেতরে কেমন একটা অন্যরকম উত্তেজনা হচ্ছে। নিজেকে কেমন বেশ বড় বড় লাগছে। আজ পিকনিক বলে সবাই খুব আনন্দে আছে। তাতাইরা আজ স্কুল ড্রেস পরেনি, সবাই রঙ বেরঙের জামা পরে এসেছে। আরতি মিসও আজ একটা প্লাজো পরেছেন, রিকিয়া মিস পড়েছেন র্যাপার আর টপ। রাজীব স্যার এর সুশান্ত স্যারও রঙচঙে গেঞ্জি আর জিন্স পড়েছেন। এমনকি তাদের স্কুল বাসের ড্রাইভার কাকুও আজ ইউনিফর্ম না পড়ে একটা বেশ ফুলফুল ছাপ দেওয়া জামা গলিয়েছেন গায়ে। সব মিলিয়ে বেশ একটা পিকনিক পিকনিক আমেজ এই বাসের ভেতর।
★★★★★
---- বাচ্চারা শোনো আমরা এখন তোমাদের কাউন্ট করে করে বাস থেকে নামাবো। তারপর তোমরা রাজীব স্যারের পেছন পেছন আমাদের যে জায়গাটায় পিকনিক হবে সেখানে লাইন দিয়ে চলে যাবে।
আর একটা কথা শোনো বাচ্চারা, আমাদের না বলে তোমরা একা একা কোত্থাও যাবে না। টয়লেট পেলেও কোনো ম্যাম বা স্যারকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। ওকে?
---- ইয়েস স্যার। (সমস্বরে)
বাস থেকে নেমেই মনটা ভালো হয়ে গেল তাতাইয়ের। কি সুন্দর নীল জল। রোদ পড়ে চিকচিক করছে। চারিদিকে ঝাউ গাছের সারি, বালির ওপর কত পাখি এক জায়গায় বসে মিটিং করছে।
---- কত্ত জল!!!
---- এখন জলের কি দেখছিস রে তাতাই; বর্ষাকালে এখানে এলে আমাদের কাঁসাইয়ের চেহারা হয় দেখার মতন। নদীকে কি সুন্দরী লাগে তখন।
---- তাহলে স্যার বর্ষাকালে পিকনিক করলে কেমন হয়?
---- ধুরর বোকা। বর্ষাকালে আবার কেউ পিকনিক করে নাকি?
---- কেন স্যার?
---- ধর বর্ষাকালে পিকনিকে এসে খেতে বসলি চিলি চিকেন আর ফ্রায়েড রাইস, এদিকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এসে তোর চিলি চিকেন হয়ে গেল চিকেন স্ট্যু তখন কেমন হবে বলতো!
---- ইশশ…
---- হেহে… আর তাছাড়া তখন এই সব জায়গা নদীর পেটের ভেতর চলে যায়। পিকনিক করার জায়গাই পাবি না।
---- নদীরও পেট থাকে!!!
---- আরে আরে ওই দেখো ওই দেখো…
রাজীব স্যার তাতাইকে কোনো জবাব দেওয়ার আগেই চেঁচিয়ে উঠল মিমো। সবার মিমোর ইশারা লক্ষ্য করে তাকিয়ে দেখলো নদীর বুকে কয়েকটা নৌকো ভাসছে। দূর থেকে নৌকগুলোকে দেখে তাতাইয়ের মনে হল কতকগুলো জলহস্তী যেন জলে গা ডুবিয়ে বসে আছে।
---- এগুলো কি মাছ ধরার নৌকো স্যার? জিজ্ঞেস করল রিম।
বেশ খুঁটিয়ে নৌকোগুলোকে দেখে স্যার বললেন,
---- সব কটা নয়। ভালো করে খেয়াল করে দেখ যেগুলো মাছ ধরার নৌকো সেগুলোর গায়ে জাল ঝুলছে; আর অন্যগুলো তো এমনি নদীর বুকে বোটিং করার জন্য।
---- তাহলে স্যার আমরাও বোটিং করব?
চোখগুলো চকচক করে উঠল অভির।
---- একদম না। হেড ম্যামের কড়া নির্দেশ বাচ্চাদের নিয়ে বোটিং করা যাবে না।
গম্ভীর গলায় বললেন স্যার।
হতাশ হয়ে গেল অভি,
---- কেন স্যার?
---- আরে নদীর মাঝে বোটিং করতে গেলে মাথা ঘুরিয়ে যেতে পারে, তখন একেবারে ঝপ করে নদীর জলে পড়ে গেলে কি হবে বলতো!
আর তোরা দেখ না আমরা কেমন গেমস খেলি এখানে। তখন দেখবি বোটিং করতে আর ইচ্ছেই করছে না।
★★★★★
---- এই অভি খেলবি না?
---- নাহ।
---- কেন রে? আর তুই এমন রেগে রেগেই বা কথা বলছিস কেন?
---- স্যার আমাদের মিছি কথা বললেন রে তাতাই। স্যার ভাবলেন বাচ্চা ছেলে কিছু বোঝে না।
---- কি নিয়ে রে?
---- বোটিং করা নিয়ে।
---- কেন কেন?
---- নদীর বুকে বোটিং করার যে এডভেঞ্চার তা যদি জানতিস তাহলে এ প্রশ্ন করতিস না।
---- কি বললি? কি চার?
---- উফফ তাতাই… চার নয় এডভেঞ্চার,মানে…
ওফ অতো মানে বোঝাতে পারব না তবে শুধু জেনে রাখ খুব দারুণ জিনিস ওটা।
---- তুই কি করে জানলি?
---- কেন জানবো না? আমার এক মাসির বাড়ির কাছে সুবর্ণরেখা নদী। নৌকায় করে নদী পেরিয়ে যেতে হয়। তাই আমার অভিজ্ঞতা আছে। ওসব মাথাটাথা কিচ্ছু ঘোরায় না।
---- এই তোরা দুজন কি করছিস রে?
কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে এলো মিমো, দিঠি আর রিম
---- এই যে অভি দেখ না রাগ করে বসে আছে।
---- কেন?
মিমোদের সবটা বলল তাতাই। গম্ভীর মুখে পুরোটা শুনল ওরা তিনজন।
---- ইশ এবার কিন্তু আমারও খুব লোভ লাগছে রে।
বলে উঠল রিম।
---- বলিস কিরে?
---- হ্যাঁ রে। দূরের দিকে তাকিয়ে দেখ, ওই তো দুটো বাচ্চা নৌকায় বসে আছে।
---- ওদের সঙ্গে তো বড়রাও আছে।
---- আরে ওরা তো বাচ্চা, আমরা ওদের থেকে বড়।
---- কিন্তু আমাদের স্যার ম্যামরা যেতে দেবে না যে।
---- এটা কিন্তু ভারী অন্যায়। আজ এতো ভীড় এখানে যে খেলেও ঠিক পোষাচ্ছে না। এরচেয়ে আমাদের বোটিং এ নিয়ে গেলে খুব মজা হত কিন্তু।
---- তোরা যদি সত্যিই যেতে চাস তাহলে বল। কিছু একটা প্ল্যান করতে হবে।
অনেক্ষণ পর গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে উঠল অভি।
---- কি প্ল্যান করবি? এই স্যার ম্যামরা জানতে পারলে কিন্তু…
---- উফফ তাতাই তুই একটা ভীতুর ডিম। তোকে দলে নেবোই না। তুই এখনও বাচ্চা রয়ে গেছিস।
---- এই কে বলেছে আমি ভীতু। আমার কিন্তু খুব সাহস।
---- এতই যদি সাহস তাহলে আমাদের প্ল্যানে রাজি হচ্ছিস না কেন?
---- প্ল্যানটাই তো বললি না এখনও।
---- বলছি শোন, …………………………..
★★★★★
---- স্যার আমরা টয়লেট যাবো।
সুশান্ত স্যারের কাছে গিয়ে কথাটা পাড়ল তাতাই, অভি আর মিমো। স্যার আন্তক্ষরি খেলছিলেন, ওদের কথা শুনে উঠে এলেন ওদের সাথে। ওর যেখানে পিকনিক করছে তার থেকে অনতিদূরেই পাবলিক টয়লেট। মিমো আর অভিকে সেখানে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে দাঁড়ালেন স্যার। একটু পরে সেখানে এলো রিম আর দিঠি।
---- স্যার আপনি এখানে? রিকিয়া মিস তো আপনাকে খুঁজছিলেন।
---- আচ্ছা আমি যাচ্ছি একটু পরে।
---- মিস বললেন খুব দরকার।
---- কিন্তু তাতাইরা টয়লেটে আছে, ওদের না নিয়ে যাবো কিভাবে?
---- আমরা এখানে দাঁড়াচ্ছি স্যার। ওরা বেরোলে পাঁচজন একসাথে চলে যাবো।
---- কিন্তু…
----- এই তো স্যার সামনেই তো। ওই তো আমাদের দলটাকে দেখা যাচ্ছে।
---- আমরা তো এখন বড় হয়ে গেছি স্যার, ওইটুকু রাস্তা ঠিক যেতে পারব
গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলল রিম।
স্যার হেসে বললেন,
---- আচ্ছা। সোজা ওখানেই ফিরে যাবে কিন্তু। অন্যদিকে যাবেনা।
বাধ্য মেয়ের মত ঘাড় নাড়ল দিঠি আর রিম।
স্যার একটু দূরে চলে যেতেই দরজায় টোকা দিল রিম। এক এক করে টয়লেট থেকে বেরিয়ে এলো তাতাইরা। তারপর গুটিগুটি পায়ে পাঁচজনে চলে গেল টয়লেটের পেছন দিকে। এখনে টয়লেটে আড়াল পড়ে যাওয়ার জন্য ওদের আর দেখতে পাবেনা স্যারেরা। এরপরেই চোঁ চোঁ করে দৌড় লাগাল পাঁচজন। কোনদিকে যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে খেয়ালই রইল না ওদের। বেশ খানিকটা দূর ছুটে এসে থামল ওরা।
---- এই আমরা কোথায় যাচ্ছি?
সন্দিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করল তাতাই।
---- সেটাই তো। এখানে তো নৌকা দেখা যাচ্ছেনা।
বলল রিম।
অভি আগের মতোই গম্ভীর গলায় বলল,
---- আগে ছুটে ছুটে একটা নিরাপদ দূরত্বে আসা দরকার ছিল। এবার আমরা খুঁজবো কোথার থেকে নৌকো ভাড়া করতে হয়।
---- কিভাবে খুঁজবি?
---- কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখি।
এই যে কাকু শুনছেন, বলছি বোটিং এর জন্য নৌকা কোথায় পাবো?
যে ভদ্রলোককে দেখে প্রশ্নটা করেছিল দিঠি তিনি অদ্ভুত দৃষ্টিতে একবার দেখলেন ওদের। তারপর বললেন,
---- তোমাদের বাড়ির লোক কোথায়?
---- হেঁ হেঁ ওই যে ঐদিকে আছে।
আমতা আমতা করে বলল মিমো।
---- আচ্ছা। আমি ঠিক জানিনা, তবে মনে হয় ঐদিকে গেলে মাঝিদের দেখা পাবে।
---- আচ্ছা।
এই বলে ভদ্রলোকের দেখানো পথ অনুসরণ করে এগিয়ে গেল পাঁচ খুদে। কিছু দূর যাওয়ার পর ওরা দেখলো দুদিকে দুটো রাস্তা চলে গিয়েছে, একটা গিয়েছে ব্রিজের তলা দিয়ে আর একটা এমনি সোজা রাস্তা।
---- কোনটা দিয়ে যাবি বলতো?
---- আমার মনে হয় ব্রিজের তলার এই সরু রাস্তাটা দিয়েই যাওয়া ভালো। ওখানেই নিশ্চয় নৌকা বাঁধা থাকবে যাতে টুক করে জলে ডুবে যেতে পারে।
বলল রিম।
---- তবে তাই চল।
সায় দিলো অন্যরা।
বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েও নৌকার চিহ্ন মাত্র দেখতে পেলো না ওরা। এদিকে যত এই পথে এগিয়ে আসছিল তত লোকজনের সংখ্যা কমছিল রাস্তায়। এইখানটা তো একেবারে জনশূন্য।
---- এই আমার মনে হচ্ছে আমরা ভুল পথে চলে এসেছি,নয়তো এতোক্ষণে একটাও নৌকার দেখা পেলাম না কেন?
বলে উঠল তাতাই।
ওর কথায় সায় দিল দিঠি,
---- তাতাই ঠিক কথাই বলছি। চল নৌকা চড়ে আর কাজ নেই, আমরা ফিরে যাই সবার কাছে। আমার না কেমন ভয় ভয়ও লাগছে এবার।
---- হ্যাঁ রে তাই চল। ওরাও নিশ্চয় আমাদের খোঁজা শুরু করে দিয়েছে এতক্ষণে। খুব বকুনি খেতে হবে এবার।
বলল মিমো।
সবাই একমত হয়ে এবার যেই না পেছন ঘুরছে অমনি পেছন থেকে যেন একটা আর্তনাদ ভেসে এলো। চমকে উঠল ওরা। আবার পেছন ফিরল সবাই। চারিদিকে ইতিউতি তাকাতে তাকাতেই ব্যাপারটা প্রথম নজরে পড়ল রিমের, সে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। দেখলো একটু দূরেই কয়েকটা বাঁশ সারি দিয়ে পোঁতা রয়েছে, আর প্রতিটা বাঁশের মাথায় একটা করে লাল পতাকা। আর ওই বাঁশগুলোর ওপাশেই একটা ওদের বয়সী ছেলে চিৎকার করছে, ছেলেটার পা'দুটো হাঁটু অবধি ঢুকে গিয়েছে ওখানের জল কাদা বালির মধ্যে। ওখান থেকে বেরোবার জন্য ছটফট করছে ছেলেটা।
---- ওখানে কি রাক্ষস আছে নাকি রে?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলল রিম।
---- রাক্ষস নয়, এলিয়েন…
বলে উঠল অভি।
ছেলেটাকে দেখতে দেখতে আচমকা তাতাইয়ের মনে পড়ে গেল কয়েক মাস আগেই মা বলছিল কাঁসাইয়ের চরে কিছু জায়গায় নাকি চোরাবালি আছে, ওই বালিতে পা দিলেই নাকি মানুষ ডুবে যায়। এটাই কি তবে সেই চোরাবালি!
ছেলেটা ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে ওই জলকাদার ভেতর। সাহায্যের জন্য ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করছে সে। তাতাইয়ের মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেল। বিকেলে ফেরার সময় বেশি ঠান্ডা লাগবে বলে মা একটা লম্বা স্টোল দিয়ে দিয়েছিলেন ওর ব্যাগে। ব্যাগ থেকে চটজলদি স্টোলটা বের করে ফেলল তাতাই। তারপর এক ছুটে চলে গেল ওই বাঁশগুলোর কাছে। চিৎকার করে উঠল দিঠি,
---- যাসনা তাতাই ওই এলিয়েনটা তোকেও গিলে ফেলবে।
---- এটা কোনো এলিয়েন নয়, চোরাবালি। তোরাও আয় প্লিজ। ছেলেটাকে বাঁচাতে হবে আমাদের।
---- চোরাবালি? সেটা কি?
---- পরে বলবো সব। তোরা জলদি আয়।
তাতাইয়ের ডাকে ছুটে গেল ওর বন্ধুরা। তাতাই স্টোলটা লম্বা করে তার একপ্রান্ত ছুঁড়ে দিল ছেলেটার দিকে,
---- এটা শক্ত করে ধরে নাও।
ছেলেটা কোনোমতে হ্যাঁচড়প্যাঁচড় করে ধরতে পারল সেটা। এরপর তাতাইরা ওদের সর্বশক্তি দিয়ে অন্যপ্রান্তটা ধরে টানতে লাগল। কিন্তু ওদের পুঁচকে শরীরে কতই বা ক্ষমতা! তবুও ওরা প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু তারপরেই হঠাৎ করে ওরা টের পেল দুটো বড় বড় হাত এসে যোগ দিয়েছে ওদের সঙ্গে। এবার খানিক্ষণের চেষ্টাতেই অবশেষে চোরাবালি থেকে মুক্ত হল ছেলেটা। একজন মহিলা এসে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন।
আর যে ভদ্রলোক তাতাইদের সাথে হাত লাগিয়েছিলেন, তিনি ওদের হাতগুলো ধরে নিয়ে বললেন,
---- কি বলে তোমাদের ধন্যবাদ দেব জানিনা। তোমরা না থাকলে আমার ছেলেটা…
উফফ ভাবতে পারছিনা আমি। আসলে আমার বুকান খুব জেদি। এই ঠাণ্ডাতে আইসক্রিম খাবে বায়না ধরেছিল, কিনে না দিতেই ছুট লাগিয়েছিল এদিকে। তোমরা ভাগ্যিস এখানে ছিলে, নয়তো আমরা খুঁজে পেতে পেতেই…
---- কিন্তু তোমরা এখানে কি করছ?
জিজ্ঞেস করলেন আরেকজন ভদ্রলোক। একটা ঢোঁক গিলল তাতাই, তারপর আস্তে আস্তে সবটা খুলে বলল ওনাদের। বুকানের বাবা সব শুনে বললেন,
---- তোমরাও কিন্তু ভীষণ অন্যায় করেছো। এসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমাদের।
★★★★★
বুকানের বাবা সেদিন ওদের সঙ্গে করে পৌঁছে দিয়েছিলেন সবার কাছে। এদিকে ততক্ষণে ওদের খুঁজে না পেয়ে হুলুস্থুলুস কান্ড বেধে গিয়েছিল। যদিও বুকানের বাবা স্যার ম্যামদের সবটা বলে অনুরোধ করেছিলেন ওদের বেশি বকাবকি না করতে কিন্তু তাও এরপর ওদের ভাগ্যে যা ঘটেছিল তা লিখতে গেলে আরেক ইতিহাস হয়ে যাবে।