শিপ্রা চক্রবর্তী

Tragedy Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Tragedy Others

তারার খোঁজে

তারার খোঁজে

2 mins
244



জানিস বুলি আজ আমি একা দাঁড়িয়ে আছি ছাদে, তারা ভরা আকাশের নীচে। ছাদ থেকে আশেপাশের রাস্তাগুলো কেমন শুনশান লাগছে, একটাও লোক নেই রাস্তায়, স্ট্রীট লাইটের আলোকে ঘিরে কিছু পোকা ভিনভিন করছে, আর রাস্তার কুকুর গুলো থেকে থেকে ডেকে উঠছে করুন সুরে। জানিস বুলি আজ আমার আর ভয় করছেনা একটুও!!! আজ বাড়ি ভর্তি কত লোক, তবুও..... আমার...... আনন্দ...... হচ্ছেনা!!!! সবাই কাঁদতে কাঁদতে তোকে বাড়ি থেকে নিয়ে চলে গেল, আর তুইও কি.... সুন্দর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওদের সাথে চলে গেলি!!!! 


এত করে ডাকলাম তাও সাড়া দিলিনা!!!! আমার সব ভয় কেমন উড়ে গেছে জানিস বুলি!!! এক্ষুনি তোর দেহটাকে পুড়িয়ে বাবা বাড়ি ফিরেছে, সবাই বলছিল তাই শুনলাম, আচ্ছা তোর খুব কষ্ট হয়েছে তাইনা বুলি!!! মায়ের এখনো জ্ঞান ফেরেনি, সবাই বলছে তুই ঐ..... দূর আকাশের তারা হয়ে গেছিস, আমাদের সবাই কে ফেলে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিস। সবাই বলছে তুই..... আর আমার সাথে খেলবিনা, মারামারিও করবিনা। তুই যখন চুপচাপ শান্তিতে........... ঘুমাচ্ছিলিস......... সবাই কাঁদতে কাঁদতে তোকে ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এসে শুয়িয়ে দিল,আমি সবাই কে বললাম, এই তোমরা আমার বুলিকে এইখানে শোয়ালে কেন???? আমার কথার কেউ কোনো উত্তর দিলনা, আমি তোকে কত করে ডাকলাম এই বুলি.... বুলি.... ওঠ,তবুও তুই উঠলিনা!!!! আমি তো.... তাও বললাম আমার সব খেলনা তোকে দিয়ে দেব, আর কোনদিনও তোর সাথে মারামারি করবোনা তাও... তুই উঠলিনা!!  কেন তারা হয়ে গেলি তুই??? আমি এখন কার সাথে খেলব??? প্লিজ.... বুলি ফিরে আয়, প্লিজ ফিরে আয়। আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকব বুলি!!!!


আস্তে আস্তে সূর্য পূর্ব আকাশের কোন থেকে উঁকি দিয়ে নতুন দিনের শুরু করছে, রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে চাঁদ, তারারা লুকিয়ে পড়েছে, ভোরের আলো ফুটে উঠছে, ল‍্যাম্প পোষ্টের আলো গুলোও নিভে গেছে। কিছু পাখি ভোর হওয়ার আনন্দে গান ধরেছে, আর ছাদের কার্নিশের এক কোনে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে ছোটো পিকলু কেউ জানেনা!!!! 


"সময় চলিয়া যায় নদীর 

স্রোতের প্রায়", 


সময় সময়ের মত বয়ে চলে, সেই দিনের পর পার হয়েগেছে ছ..... ছটা.... মাস। পিকলু বোন বুলিকে হারিয়ে আজ একা.... হয়ে গেছে। পিকলু যেন দুষ্টুমি করতে, খেলতে ভুলে গেছে, আর এই আঘাত পিকলুকে অনেকটা বড় করে দিয়েছে, মা বাবাও কেমন যেন হয়ে গেছে, প্রতিদিনই কাঁদে পিকলু সেটা লক্ষ্য করেছে, কিন্তু কিছু বলেনা। পিকলু রোজ রাতে ছাদে গিয়ে হাজার হাজার তারার ভিড়ে বুলিকে খুঁজতে থাকে, মনের কথা বলতে থাকে, আর যখন কোন তারা খসে পড়ে, তখন মনে মনে আনন্দ পায় এই ভেবে যে বুলি আজও ওর কথা শোনে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy