Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Classics Fantasy

তারানাথ তান্ত্রিক (১)

তারানাথ তান্ত্রিক (১)

2 mins
750


দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা-খড়্গপুর শাখার একটি ছোট্ট রেল স্টেশন - সিরজাম। দিন-রাতে গোটা ছয়েক প্যাসেঞ্জার ট্রেণ যাতায়াত করে এই স্টেশনের উপর দিয়ে। সবকয়টি ট্রেণ এখানে থামে। আমার বাড়ী এই স্টেশনের উত্তর দিকে মাইল দূ'য়েক দূরে। হেঁটে অথবা সাইকেলে যেতে হয় । কোন যানবাহন চলে না। আমার গ্রাম আর স্টেশনের ঠিক মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে একটি ছোটো নদী - তার নাম ডাঙরা। শুকনো খটখটে নদী। বর্ষার কিছুদিন বাদ দিলে সারাবছর নদীতে জল থাকেনা। তবে বালি খুঁড়ে অনেকেই জল নিয়ে যায়। এ বিষয়ে নদী কোন কার্পন্য দেখায় না। গ্রাম থেকে স্টেশনে আসতে এই নদী পেরোতে হয় । এজন্য সরকার বাহাদুর একটা সরু ব্রীজ করে দিয়েছেন। ইংরেজ আমলের ব্রীজ; মোটামুটি অক্ষতই আছে। ঐ দিয়ে গোরুর গাড়ি যায়। ব্রীজের খুব কাছেই একটা শ্মশান আছে। আশেপাশের গাঁ থেকে লোকজনেরা মড়া পোড়াতে ওখানে যায় । তা-ছাড়া কোন জনমনিষ্যির পা পড়েনা ওখানে। পাড়ে একটা আদ্যিকালের কালীমন্দির আছে। একটা প্রকাণ্ড বটগাছ ঐ মন্দীরকে ছায়া দেয়, ক্লান্ত পথিক খানিক বিশ্রাম নেয় । মন্দীরের পূজারী শ্রীযুক্ত রামচরণ ভট্টাচার্য্য মহাশয় আমাদের গ্রামের বাসিন্দা। নিত্যপূজার জন্য তিনি প্রতিদিন সেখানে যান।একদিন ভোর বেলায়- গরমের সময় তিনি ঐ মন্দীরে গিয়েছিলেন মা কালীর পূজো করতে। বটগাছের নীচে কাকে যেন দেখলেন। শ্বেত বসনে একান্তে ধ্যান করতে। ধ্যান ভাঙানো তো দূর, পরিচয় জানারও সাহস হল না তাঁর। মন্দীরে গেলেন, কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। কেউ কোথাও নেই,কাকে কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ফিরেই আসছিলেন; সেই ধ্যানরত মূর্তি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন - হে সুধী! কোন শঙ্কা কোরোনা। আমি মহাকাল, এখানে তোমার মায়ের পাশে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। ভেতরে প্রবেশ কর, দেখবে এক প্রস্তরলিঙ্গ শায়িত আছে। ঐ লিঙ্গ স্থাপন করে তার প্রাণপ্রতিষ্ঠা কর। এই মহাশ্মশান অতি পবিত্রভূমিতে পরিণত হবে।

মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনলেন ভট্টাচার্য ঠাকুর । মন্দীরে ঢুকে দেখলেন প্রস্তরলিঙ্গ। পুরোটাই স্বপ্ন ভেবে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। কোনরকমে নিজেকে সামলে মায়ের মূর্তির দক্ষিণ দিকে প্রতিষ্ঠা করলেন শিবলিঙ্গ। কোন আড়ম্বর নেই, ঢাক বাদ্যির শব্দ নেই। কিন্তু অলক্ষ্যে শুনলেন শঙ্খনাদ , উলুধ্বনী।

অজ্ঞান হয়ে গেলেন ভটচাজ ঠাকুর। আর কোনদিনই তাঁর জ্ঞান ফিরে এলনা। ঐ শ্মশানেই মা-বাবার কোলে চির আশ্রয় নিলেন।

তার বেশ কিছুকাল পর এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসীর আগমন হল সেথায়। মন্দীরটি ছিল একটা ছোটো টিলার উপর। তান্ত্রিক ঐ টিলার নীচে সুড়ঙ্গ কেটে গুহা বানালেন। ঐ গুহায় তিনি থাকতেন, আর হোম-যজ্ঞ, তন্ত্রপাঠ ,সাধন ভজন করতেন। ধর্মভীরু গ্রামবাসীগণ তাঁর সেবার ভার নিলেন।প্রতিদিন দু'বেলা শ্মশানে চিতা জ্বলত। কোথা থেকে এত মরা মানুষ আসত তা 'রীতিমত গবেষণার বিষয় । দূরদূরান্তের গ্রাম, এমনকি নিকটবর্তী শহরের লোকজনও আসত এই পূণ্যভূমিতে শেষকৃত্য করতে। দেখতে দেখতে স্থানটি যথারীতি বিখ্যাত হয়ে গেল । আর রামচরণ ঠাকুরের বংশধরেরা রীতিমত ধনী হয়ে গেল। 

(ক্রমশ)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics