Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Sayantani Palmal

Classics

3  

Sayantani Palmal

Classics

তাহাদের প্রতিশোধ

তাহাদের প্রতিশোধ

9 mins
890


উফফ! ইন্ডিয়ান রেলওয়েকে প্রণাম করতে ইচ্ছে করছে প্রীতির।পাঁচঘন্টা লেট করার পর এখন বলছে ট্রেন আর যাবে না লাইনে জল জমে গেছে। ডক্টর রায়ের ওপর যা রাগটা হচ্ছে না প্রীতির। আর দুটো দিন পরে রামপুরা থেকে গেলে কী ক্ষতি হয়ে যেতো? প্রীতিকে তাহলে এভাবে আজ আসতে হতো না। ডক্টর রায়ের এই তাড়াহুড়োর কারণটা অবশ্য বোঝে প্রীতি। তিন বছর এই অজ পাড়া গাঁয়ের গ্রামীণ হাসপাতালে থাকার পর শহরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তাই তর সইছে না।তাছাড়া তাঁর বদলি হিসেবে একটা মেয়ে আসছে দেখে বোধহয় ভয় পেয়েছেন যদি প্রীতি জয়েন না করে তাহলে তিনি আটকে যাবেন।অবশ্য প্রীতির মা,বাবা আপত্তি করেছিলেন যথেষ্ট কিন্তু প্রীতি নাছোড়বান্দা। আসলে ছোট থেকেই প্রীতি ডানপিটে। ভয় শব্দটা ওর ডিকশনারিতে অণুবীক্ষণিক হরফে লেখা আছে বোধহয়। ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট, খেলাধুলোতেও ভালই। ডক্টর রায় কাল চার্জ হ্যান্ডওভার করবেন প্রীতিকে। ট্রেন ঠিক সময়ে চললে বেলা চারটের সময় প্রীতি রামপুরা স্টেশনে নেমে যেত। ওখানে হাসপাতালের কর্মী বিমানবাবু আর সিনিয়র নার্স বিভাদির ছেলে মাদলের তাকে নিতে আসার কথা ছিল। আজ রাতটা বিভাদির বাড়িতেই কাটাবে প্রীতি এরকমই ঠিক আছে। কাল ভোরে দাদা-বৌদি দিল্লী থেকে ফিরলে বাবা-মা এসে প্রীতির কোয়ার্টার গুছিয়ে দিয়ে যাবেন কিন্তু সেসব তো পরের কথা এখন প্রীতি এই ঝড়বৃষ্টির রাতে এই নিমহাটি স্টেশন থেকে রামপুরা যাবে কি করে? ফোনে নেটওয়ার্ক নেই যে বিমানবাবুকে বা অন্য দের ফোন করবে। ট্রেন থেকে নামতেই ঠান্ডা হাওয়া ঝাপটা মারলো প্রীতির চোখে মুখে। ট্রেনের বেশিরভাগ যাত্রী স্টেশনে রয়ে গেল। যদিও যাত্রীর সংখ্যা অল্পই ছিল। স্থানীয় লোক যে কয়জন ছিল তারাই স্টেশনের বাইরে এলো। এদের কারুর গন্তব্য নিমহাটি গ্রাম তো কেউ যাবে পাশের গ্রাম জামতলা। রামপুরার যাত্রী কেউ নেই। এদেরই একজন বললো, “ম্যাডাম, আপনার যদি সাহস থাকে তাহলে রামপুরা যাওয়া কোনও ব্যাপার নয় এখান থেকে। পরের স্টেশনই তো রামপুরা। একটা শর্টকাট রাস্তা আছে রামপুরা যাওয়ার মাঠের মধ্যি খান দিয়ে। সেই রাস্তার মুখ পর্যন্ত আমিও যাবো। আপনাকে রাস্তাটা ধরিয়ে দিতে পারি নাহলে স্টেশনেই কষ্ট করে রাতটা কাটিয়ে দিন। “ সাহসটা প্রীতির চিরকালই বেশি। ব       মোবাইল ফোনের টর্চটা জ্বালিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রীতি।চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। আজ অমাবস্যা না হলেও কালো মেঘে এমন আকাশ ছেয়ে আছে যে অকাল অমাবস্যা সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার দুপাশে ঝোপঝাড়, ক্ষেত, গাছপালা। লোকটা বলে দিয়েছে রাস্তার শেষে রামপুরা হাই স্কুলের বিল্ডিং দেখা যাবে। সেটা পার হলে প্রাইমারি স্কুল আর প্রাইমারি স্কুলের ঠিক পরেই যে ছোট্ট হলুদ রঙের দোতলাবাড়িটা সেটাই বিভাদির বাড়ি। ওনার স্বামী ওই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। সমগ্র প্রকৃতির মধ্যে কেমন একটা গা ছমছমে ভাব। চারিদিকে নিস্তব্ধতার চাদর । সর্বগ্রাসী নির্জনতা বিরাজ করছে। জন মনুষ্যহীন এই প্রান্তরে অন্য যে কেউ হলে তার বুক কাঁপত কিন্তু প্রীতি অন্য ধাতুতে গড়া। সে নির্ভীক চিত্তে এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ প্রীতি অনুভব করলো সে বোধহয় রাস্তাটা গন্ডগোল করে ফেলেছে। শহুরে মানুষের পক্ষে এই রাতের অন্ধকারে মাঠের রাস্তা ঠিক করে যাওয়া খুব মুশকিল তায় আবার একদম অচেনা জায়গা। প্রীতি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। চারিদিকে চোখ চারিয়ে দেখার চেষ্টা করল। অন্ধকারের মধ্যেও সহসা একটু দূরে লক্ষ্য পড়লো একটা ঝুপড়ি মতো ঘর, পাশে একটা মোটা গাছ যার কাণ্ডটা শুধু আছে। সেদিকে দেখতে দেখতেই প্রীতির নজরে এলো সেখানে কিছু মানুষজন নড়াচড়া করছে। তাদের কাছে হ্যারিকেন, লন্ঠন জাতীয় আলোও আছে মনে হলো। এই ধূ ধূ প্রান্তরে মানুষের অস্তিত্ব অনুভূত হতে প      ঝুপড়িটা পার হয়ে দুপা এগিয়ে যাবার পর প্রীতি একটা চালা ঘর দেখতে পেলো আর এটাও বুঝতে পারলো সে একটা শ্মশানে এসে উপস্থিত হয়েছে। যাদের সে দূর থেকে দেখেছিল তারা শ্মশান যাত্রী। নাহ, প্রীতির ভূত-প্রেতে কোনো ভয় নেই তাই সে নির্দ্বিধায় শ্মশান যাত্রীদের কাছে পৌঁছে “ দাদা, শুনছেন। আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। রামপুরা যাবো। “ প্রীতির গলার আওয়াজে শ্মশান যাত্রীরা ঘুরে তাকালো তার দিকে। নাহ, কোনও অশরীরি অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই প্রীতির কারণ এরা সত্যিই শ্মশান যাত্রী আর এদের সাথে আছে কালু ডোম। কিন্তু কখনও কখনও অমানুষের চেয়ে মানুষ অনেক বিপদজনক, অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয় । শ্মশানে বেশি লোক নেই কালুকে বাদ দিলে আর মাত্র ছয় জন, রাখু, লালা, পদা, বিশু, গদাই আর সান্টু। এই নামগুলো থেকে নিমহাটি আর তার আশেপাশের লোকজন যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে কারণ হেন কোনও নীচ কাজ নেই যেটা এরা করেনা আর মাথায় রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় দিন দিন এরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। পেটে একটু কারণ বারি পড়ে গেলে তো এরা শয়তানের চেয়েও নিষ্ঠুর , শ্বাপদের থেকেও হিংস্র হয়ে ওঠে। এরা শ্মশানে এসেছে পদার আশি বছর বয়সী মায়ের মৃতদেহ নিয়ে। মায়ের মুখাগ্নি করার আগে ছেলে শোকের তাড়নায় বন্ধুদের নিয়ে বোতলের পর বোতল শেষ করে মনের কষ্ট লাঘব করছে। এদের সাথে কালু ডোমও যোগ দিয়েছে। সেও প্রা“ ওহ, হ্যালো দাদা, শুনছেন। আমি রামপুরা হসপিটালের নতুন ডাক্তার। ট্রেনের গন্ডগোল হওয়ায় আমাকে এই রাস্তায় আসতে হলো আর রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি।” দাদা ডাকটা অপাত্রে প্রয়োগ করলো প্রীতি। এদের কাছে নারী মানে শুধুই একটা শরীর যাকে সম্ভোগ করে নিজের কাম-লালসার ক্ষুধা নিবৃত্তি করা যায়। প্রীতির কথাগুলো কারুর কানে ঢুকছিল না, নেশাতুর চোখগুলো শুধু দেখতে পাচ্ছিল সাড়ে পাঁচফুট উচ্চতার জিন্স আর ফুলস্লিভ টপ পরা এক নারী শরীর। “ গুরু আমি যা দেখছি তুমিও কি দেখতে পাচ্ছ? “ জড়ানো গলায় পদা রাখুর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে। “ হ্যাঁ বে পদা। তোর মাটা মরে গিয়ে আমাদের কপাল খুলে দিল মনে হচ্ছে।” “যা বলেছ গুরু এক্কেবারে ডবকা শহুরে মাল। দেখতে একদম হিরোইন। এমন মালের টেস্ট পাইনি ক“ যা বলেচু, আমার ত এখনই প্যান্টের দড়ি ঢিলা হয়ে গেল বে। খিক খিক খিক।” শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো লালএদের কথাবার্তা কানে ঢুকতেই প্রীতি নিজের ভুলটা অনুভব করতে পারলো। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মস্তিষ্কের কোষে কোষে বিপদ সংকেত পাঠালো যত দ্রুত সম্ভব পালাতে হবে এখান থেকে। প্রীতি পেছন ফিরে দৌড়তে আরম্ভ করলো। বরাবর স্কুলের অথলেটিক্স চ্যাম্পিয়ন থেকেছে সে। কিন্তু রেসের ট্র্যাক আর অচেনা জায়গার এবড়োখেবড়ো মাঠ এক নয়। একটা গর্তে পা ঢুকে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল সেই ঝুপড়িটার কাছাকাছি এসে। ওদিকে শয়তানগুলো ক্ষুধার্ত হায়নার মতো ছুটে আসছে। প্রীতি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে পিঠ থেকে ব্যাকপ্যাকটা খুলে ফেলল। এই অচেনা জায়গায় রাতের অন্ধকারে পালিয়ে বাঁচতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না আর শয়তানগুলোও খুব কাছে চলে এসেছে। প্রীতি পাল্টা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হলো। এতজনের সঙ্গে একলা পারবে কিনা জানে না কিন্তু তাও নিজের অধিত বিদ্যার প্রয়োগ করে যতক্ষন লড়াই করা যায় করতে হবে তাকে। “ ওই স..শালা, মামনি ক্যারটে জানে মনে হচ্ছে। আমাদের সাথে লড়বে মামনি। এসো না লড“ বড্ড গরম জামাটা খোলো না সোনা। খ্যাক খ্যাক খ্যাক। “ মানুষের হাসি যে এত কদর্য হতে পারে ধারণার বাইরে ছিল প্রীতির। 

ভোঊঊঊঊঊঊঊঊঊঊ……………….। অপার্থিব এক আওয়াজে কেঁপে উঠলো এই শ্মশান ভূমি। মেঘ সরে গিয়ে একফালি চাঁদ উঁকি দিচ্ছে সেই স্বল্প আলোয় সবার সাথে প্রীতিও দেখলো ঝুপড়িটার সামনে আটপৌরে করে শাড়ি পরে খোলা চুলে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার পাশে একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে জিভ বের করে। তাদের দুজনেরই চোখদুটো যেন জ্বলন্ত আগুনের গোলা। “ কে? কে তুই? “ তোতলানো গলায় জিগ্যেস “ আমাকে ভুলে গেলি শয়তান? এত তাড়াতাড়ি?” হিসহিস করে উঠলো সেই নারী মূর্তি। কথায় বলে শয়তানের শয়তানি কখনও কমে না। এরই মধ্যে রাখু প্রীতির কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রীতি প্রমাদ “ যা লাল্টু যা। “ মালকিনের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল লাল্টু। উড়ে এসে রাখুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে টুঁটি কামড়ে ধরলো। প্রীতি অবাক হয়ে দেখল রাখুর বন্ধুরা কুকুরটাকে ধরতে যাচ্ছে কিন্তু ধরতে পারছে না যেন কুকুরটা ওখানে নেই। হওয়ার সাথে যুদ্ধ করছে ওরা। রাখুর মুখ থেকে আঁ আঁ চিৎকার বেরিয়ে আসছে। বিস্ময়ের তখনও অবশিষ্ট ছিল। আসার সময় যে মাথা ন্যাড়া গাছটা দেখেছিল প্রীতি সেটা এখন মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় এটা বট গাছ ছিল। কালু আর গদাই পালাবার চেষ্টা করতেই একটা বটের ঝুরি লম্বা হয়ে এসে ওদের গলাদুটো পেঁচিয়ে ধরলো। যতক্ষণে ওদের গলার ফাঁস আলগা হলো ততখনে ওদের প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেছে, চোখদুটো ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। কুকুরটা রাখুকে শেষ করে সান্টুকে ধরেছে। রাখুর টুঁটি ছেঁড়া নিষ্প্রাণ দেহটা চিৎপাত হয়ে পড়ে রয়েছে। লালা, পদা আর বিশু বটের ঝুরির মরণ আলিঙ্গন ছাড়াবার জন্য নিষ্ফল প্রচেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে ওদের শরীরগুলো নিস্তেজ হয়ে গেল। নিমহাটি শ্মশানে এসেছিল একটা মৃতদেহ তা“ দিদিমণি, দিদিমণি তাড়াতাড়ি উঠুন। “ আস্তে আস্তে চোখ খুলল প্রীতি। ঘটনার অভিঘাতে ওর মতো শক্ত মনের মেয়েও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। “কে? কে আপনি? “ “ আমি এখানকারই লোক। আপনি তাড়াতাড়ি চলুন এখান থেকে নইলে লোকজন এসে গেলে বিপদে পড়ে যাবেন। “ প্রীতি দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে পড়লো। লোকটা তো ঠিকই বলছে। “আমার সঙ্গে আসুন।” প্রীতির ব্যাকপ্যাকটা লোক টা হাতে নিয়েছে। ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহগুলোর দিকে একঝলক তাকিয়ে প্রীতি তাড়াতাড়ি লোকটিকে অনুসরণ করে। একটু যাবার পর প্রীতি বলে,” আমার গলা শুকিয়ে গেছে, জল খাব। “ “আর একটু দিদিমণি, ওই সামনের বাঁকটা ঘুরে গেলে আর লোকজন এলেও দেধকধক করে বোতলের সব জলটা শেষ করে দেয় প্রীতি। এতক্ষনে একটু ধাতস্থ হয়েছে সে। এই লোকটাকে অন্ধের মত অনুসরণ করাটা কি ঠিক হচ্ছে তার? “ আপনি এত রাতে এখানে কি করতে এসেছিলেন? “আমি একটা কাজে রামপুরা যাচ্ছিলাম। শ্মশানের দিকে গন্ডগোলের আওয়াজ পেয়ে গেলুম উদিকে। “ ওখানে যে মেয়েটি ছিল সে কোথায় গেল? আর কুকুরটা? গাছটাও আবার ন্যাড়া হয়ে গেল কি করে? “ এক নিঃশ্বাসে প্রশ্ন করে চলে প্রীতি। ভীষণ অস্থির লাগছে ওর। “ ওরা প্রতিশোধ নিতে এসেছিল আবার ফিরে চলে গেছে। “ শান্ত গলায় বলে লো----মানে?কি বলছেন আপনি আমি কিছু বুঝতে পারছি না। প্লিজ খুলে বলুন দাদা।

----আমার মতো সামান্য মানুষকে দাদা বলে ডাকলেন যখন তখন শুনুন। ওই কালু ডোমের আগে এই শ্মশানের ডোম ছিল মাধব। স্বভাবে কালুর একদম উল্টা। ওই ঝুপড়িটায় মাধব ওর বউ চাঁপাকে লিয়ে থাকতো। খুব ভালোবাসাবাসী ছিল দুজনের। মড়া পুড়ায় বলে কি আর মন নাই। আর ছিল অদের পুষা কুকুর লাল্টু। চাঁপা ওই বটের ছায়ায় বসে ঝুড়ি বুনতো আর বলত মোর তো শ্বশুর-শাউড়ি নাই এই বট গাছটাই মোর শ্বশুর-শাউড়ি। চাঁপার বাপও ছিল ডোম তাই শ্মশানের ধারে থাকতে উয়াকে ভয় লাগত নাই। খুব সুখে ছিল গো অরা। তারপর একদিন চাঁপার খুব জ্বর উঠলো। মাধব রামপুরা হাসপাতালে খোঁজ লিতে গেল ভত্তি করবে বলে কিন্তু রায় ডাক্তার তো আদ্ধেক দিন থাকেই নি। সেদিনও ছিল নি। মাধব তখন জামতলা গেল মণি ডাক্তারের কাছে ওষুদ লিতে। জামতলা ইখান থিক্যা চার মাইল দূরে। চাঁপা ঘরে একা। ওষুদ লিয়ে ফিরে মাধব দেকলো ওই রাখুৱা বিশুর ঠাকমার মড়া লিয়ে বসে আছে। মাধব কে দেখে চাট্টি গালমন্দ কল্লো। মাধব যেই বল্লো চাঁপাকে ওষুদ খাই দিয়ে কাজ শুরু করবে ওমনি মাধবকে মারতে আরম্ভ কল্লো। মাধব বুজল এদের সাথে পারবেনি তাই ঘরে আর ঢুকার চেষ্টা না করে তাড়াতাড়ি কাজ সারতে লাগলো। মাধব তখনও বুজেনি অরা তার কি সব্বনাশ করেছে। কাজ সেরে মাধব ঘরে ঢুকে দেখলো পুরা ঘর লন্ডভন্ড। চাঁপার শরীরটা থিক্যা রক্ত বারায়ে সারা বিছনা ভিজে গেছে। চাঁপার শরীরে একটা সুতাও নাই। সারা শরীরে আঁচড় কামড়ের দাগ। মাধব বুজতে পাললো চাঁপার জ্বরে বেহুঁশ শরীরটাকেও জানোয়ারগুলা ছাড়েনি, সবাই মিলে চাঁপাকে…..। এত অত্যাচার অসুস্থ শরীরটা লিতে পারেনি। চাঁপা তার মাধবকে ছেড়ে চইলে গেছে। বাইরে তখন জানোয়ারগুলা খ্যাক খ্যাক করে হাসছিল।মাধব পাগলের মতো কুড়ালটা লিয়ে বেরি এসছিল কিন্তু এতগুলা শয়তানের সাথে পারেনি মাধবকে পিটিয়ে আধমরা করে দেয় অরা।সেই রাতেই মাধব ওই বটের ডালে গলায় দড়ি দেয়। লাল্টু তিনদিন না খেয়ে দেয়ে এক নাগাড়ে কেঁদে গেছল তারপর লাল্টুও ওই বটের তলায় মরে পড়ে থাকে। লাল্টু মরার দিন রাতেই বিষ্টি-----ওহ! মাই গড! আই কান্ট বিলিভ! মানুষ এত খারাপ হয়! আর আজ যা দেখলাম আমি!   প্রীতির কোনও কিছুই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।-----দিদিমণি আর একটু গেলেই রামপুরা ইস্কুলের গেট পায়ে যাবেন। আর একটা কথা দিদিমণি, রায় ডাক্তারের মতো শুধু পালায় যাবেন নি এই গরিব লোকগুলানের কথা ভেবে একটু কষ্ট করে থাকবেন, সেদিন রায় ডাক্তার থাকলে হয়তো চাঁপার এই সব্বনাশ হতো নি।এলুম আমি। গলা ধরে আসে লোকটির।

-----আপনি আর যাবেন না?

-----না দিদিমণি আমার কাজ শেষ। অরা মোর অপেক্ষায় আছে।----কারা?

আরে লোকটা কোথায় গেল!প্রীতি অপার বিস্ময়ে দেখলো দূরে মাঠের মধ্যে সেই নারীমূর্তি তার পোষ্য কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর প্রীতির অচেনা পথ প্রদর্শক তাদের সাথে গিয়ে যোগ দিল।অচেনা বন্ধুর পরিচয় বুঝতে আর বাকি রইলো না প্---আপনি কি প্রীতি সেন? নতুন ডাক্তার বাবু?

---হ্যাঁ।

----আমি মাদল।

প্রীতিকে স্টেশনে না পেয়ে। ট্রেনের খবর শুনে টুনে অনেক খোঁজাখুঁজির পর শেষ চেষ্টা হিসেবে এই রাস্তায় খুঁজতে আসছিল ওরা। ওদের সাথে এগোবার আগে একবার পেছন ফিরে তাকালো প্রীতি । নাহ, কেউ নেই । তারা চলে গেছে অনন্ত সুখের দেশে।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sayantani Palmal

Similar bengali story from Classics