সতীত্ব
সতীত্ব
আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা | রাজস্থানের মরু অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম কুলধারা | ধূ ধূ প্রান্তর বালিয়ারী আর রুক্ষতা নিয়েই সৃষ্টি এই গ্রাম | এতই রুক্ষ যে চাষাবাদ সে ভাবে হয়ই না | শিক্ষার আলো তখনও সেভাবে গ্রামে পৌঁছে ছিল না | সমগ্র গ্রামের জীবন যাত্রা নির্ভর করে ছিল হস্তশিল্পের ওপর , ঘাঘড়া চোলির কাজ , কাঁচের চুড়ি, পাথরের তৈরী বাসন এই ধরনের কাজ হতো | যেমন সাধারণ এই গ্রাম, তেমনি অকিঞ্চিতকর সাধারণ এই গ্রামের মানুষ | এই হস্তশিল্পই গ্রামের প্রধান জীবিকা, যার সাথে নারী পুরুষ উভয় জড়িত |
গ্রামেরই একধারে বাস রশি মাঈজির | দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তথাকথিত স্বচ্ছল সংসার | স্বামী বীরেন্দ্র গ্রামের মুখিয়া | দুই ছেলে করণ আর কুশ ভীষণ একগুঁয়ে আর জেদী | বড় ছেলের বিয়ে হয়েছে আজ চার বছর , কিন্তু বাচ্চা হয়নি|
অনেক ঠাকুর স্থান ঘুরেছে , অনেক দৈব মানত করেছে শেষে রশি সিদ্ধান্ত নেয় বড় বৌ কমলকে গ্রামের মন্দিরের পুরোহিতের কাছে রেখে আসবে যতদিননা তার বংশের প্রদীপ জ্বলে |
যেমন চিন্তা তেমন কাজ | পুরোহিতের ওপর আর কেউ কিছু কথা বলার অধিকার দেখাত না | তাই দিনের পর দিন পুরোহিতের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কমল আত্মহত্যা করে |
এটা হচ্ছে সে যুগের কাহিনী , যখন মেয়েরা সাবলীল ভাবে পাঠ্য পুস্তকে ব্যাঙের প্রজনন তন্ত্র পড়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না | এটা ছিল সেই পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা যারা চোদ্দ বছরের মধ্যেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতেন|
যাই হোক রশির আপদ বিদায় হয়েছিল| সে কিছুদিনের মধ্যেই তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল , এবং বিয়ের রাতে নিয়মানুযায়ী তার মেয়ে অম্বার ভার্জিনিটি পরীক্ষা করেছিল রশির পয়সা ওলা ঘরের জামাই | সাদা চাদরে ছেলে মানুষ অম্বাকে নিয়ে নিজের পৌরষত্ব জাহির করেছিল নতুন জামাই কুণাল | ছোট থেকে গাছে চড়া , সাঁতার কাটা , গ্রামের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত দাপিয়ে বেড়ানো মেয়ে অম্বা , সাদা চাদর নিজের রক্তে রাঙিয়ে কুমারিত্ব জাহির করতে পারেনি | অম্বার আর শ্বশুর ঘর যাওয়া হয়নি| অথচ বীরপুরুষ কুণাল তৈরী হয়েছিল পরের ছমাসের মধ্যে আবার নতুন কোনো কুমারী মেয়ের সতীত্ব পরীক্ষা করতে | আর রশি অসহায়ের মতো দেখেছিল তার বৌমা কমলের মতই তার মেয়েও গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে|
দুটি নারীই আগুনের তাপে পুড়ে যায়নি , পুড়েছিল অপমানে |