সরস্বতী পুজোর আগের রাত্রিটি
সরস্বতী পুজোর আগের রাত্রিটি
ছেলেবেলা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে দুর্গাপুজোর চারটি দিন। আপামর বাঙালির কাছে শ্রেষ্ঠ উৎসব।বড্ড বর্ণময় ও কোলাহল পূর্ণ চারটি দিন পুজোকে কেন্দ্র ক'রে।
তবে বিদ্যালয়ে পড়ার সময় সরস্বতী পুজোর আগের দিনটি এখনও পর্যন্ত স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। আজীবন ভুলতে পারব না, আজও স্মৃতিমেদুর।
রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে পড়ার সূত্রে শৈশব থেকেই কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে মানুষ হওয়ার সুযোগ ঘটেছিল। তখন খারাপ লাগলেও পরবর্তীতে প্রতিটি পদক্ষেপে বুঝতে পেরেছি এর অপরিসীম গুরুত্ব। বিদ্যালয়ের মধ্যে নিয়মের বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না। বড্ড অনুশাসন ছিল প্রতিটি ছত্রে ছত্রে। কিন্তু সরস্বতী পুজোর আগের রাত্রিটি বিদ্যালয়ের মধ্যে জাগার ছাড়পত্র ছিল বিদ্যালয় কতৃপক্ষের। আর বাড়ি থেকেও বিশেষ আপত্তি থাকত না সেই রাত্রিটি বাড়ির বাইরে থাকার ব্যাপারে।
আমরা সেই রাত্রিকে নিজেদের মতো সাজিয়ে
নিতাম বিভিন্ন কর্মসূচিতে আগে থেকেই। কত দুষ্টুমি ভরা সেই রাত্রি, যার স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াই এই বয়সেও!
প্রথমেই মনে পড়ে যায় বোঁদে তৈরির কথা ও কাহিনী। সরস্বতী পুজোর দিন প্রসাদে খিচুড়ি, লাবড়া আর বোঁদে দেওয়ার রীতি চালু ছিল বহুকাল ধরেই। তাই আগের দিন রাতেই সব তৈরি করে রাখা হতো, যাতে পরের দিন সকালে সকল ছাত্রছাত্রীদের প্রসাদ বিতরণ করা যায় সময় মতো।
আমরা রাত জেগে অনুসন্ধিৎসু চোখে তাকিয়ে থাকতাম হালুইকরের কাজে। তারপর বিদ্যালয়ের পাঁচিল টপকে চুপিচুপি বাইরে রাতের অন্ধকারে এলাকা দেখা! মুক্তির লক্ষ্যে সেই আনন্দের মজাই আলাদা।
এছাড়া সেই রাতে প্যাণ্ডেল গোছগাছ করা থেকে শুরু করে নিজেদের মধ্যে চোর পুলিশ খেলা; কোনোটাই ভুলতে পারিনি। সারা রাত ধরে হইচই করে কখন যে ভোরের আলোয় আকাশ ফর্সা হতে শুরু করত তা বুঝতেই পারতাম না!
মনের চিলেকোঠায় সমুজ্জ্বল সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ ও গন্ধ আজও।