সোনালী ক্ষেত
সোনালী ক্ষেত
ট্রেন লাইন থেকে দেখা যাচ্ছে সোনালী ক্ষেত। হাওয়ায় খুশিতে দুলছে কৃষকের আশা। কৃষক যতোই কষ্ট করেই ফসল ফলাক ফসল তাদের হয় না। যেমন বাবা যতোই তার মেয়েকে ভালবাসুক মেয়ে চিরকাল বাবার থাকে না। কৃষক তার সোনার ফসলের সঠিক মূল্য কোন দিনই পায়না। পোকা ধরা ফসল মতো শ্যামলীকে সস্তা দরে বিয়ে করে নিলো পরিমল। এখন শহরের চলে যাচ্ছে শ্যামলী নিয়ে।
নেশা ক্ষনিকের আনন্দ , প্রেম তো একটা নেশা।বাবাইদার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করেও সরিয়ে রাখতে পারিনি ও। তার ফল স্বরূপ ওর সাদা বমি হচ্ছিলো কিছু দিন ধরে, শরীর টাও খারাপ হয়েছিল অন্যরকমের । ও কিছু বোঝার আগেই ওর মা ওকে মারধর করলো খুব বললো" জিজ্ঞেস করল মূখপুড়ি কোথায় মুখপুড়িয়েছিস।"
বাবাই দার নামটা ও মুখ আনে নি। বাবাইদা বলছিলো শহরে নিয়ে গিয়ে সব কিছু ঠিক করে নেবে। কিন্তু ও ওর ভালোবাসার প্রথম চিহ্নকে নষ্ট করতে চাইছিল না , কিন্তু তবুও মেনে নিতো হয়তো বাবাইদার প্রস্তাব। গত বছর টম্যাটোর দাম যখন পঞ্চশ পয়সা কিলো দিতে চাইলো মহাজন তখন বাবাই দা ওই টম্যাটো জমিতে নষ্ট করে দিলো । ওরা খুব হিসাবি বললো " একটা রোজ দিতেই তো পয়সা চলে যাবে ওর থেকে থাক জমিতে পরে নষ্ট হোক জমির ফসল ওতে জমিতে সার হবে।"
সাধারণ কৃষকরা এটা করতে পারে না। বাবাই দা ওকে বুঝিয়ে ছিলো কম দামে ফসল না বেঁচেছে মহাজনদের বেশি দামেই কিনতে হবে। কিন্তু ফসল রাখার মতো জায়গা আর বন্দবস্ত থাকে না বলেই তো কৃষকরা কম দামে ফসল কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। শ্যামলীকে বাবাই দা বিয়ে করতে চায় কিন্তু আর কিছুইটা সময় চাই। কিন্তু কলঙ্ক নিয়ে শ্যামলী জীবনটাকে রাখতে পারবে কি করে? বাবাই দার মা বাবা গত দুই বছর আগে মারা গেছেন। বাবাইদাকে আর ওর জমি দেখাশোনা করে শ্যামলীর পরিবার একটু সুখের সন্ধানে পেয়েছে। বাবাই দা এখন পড়াশোনা করছে। আরো পড়তে চায়। তাই ও শ্যামলীকে বিয়ে করতে পারবে না।
চাষার ঘরের মেয়ে শ্যামলী জীবনটাকে সে অন্যভাবে দেখেছে। প্রতিবছর খেতে যে ভালো ফসল হবে তেমন কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ভালো ফসল ফললেও লাভ হয় না। কারণ তখন ফসলের দাম মেলে না। ভালোবাসা নামে বিছানায় সঙ্গী হয়েছে বলেই যে জীবন সঙ্গী হিসেবে জায়গা পাওয়া যাবে এমনটা হবার কথা নয় সেটা শ্যামলী বুঝতে পেরে গেছে। বাবাই দাকে চাপ দিলে বাবাই দা, শহরে পালিয়ে যেতে পারে। বিপদে পরবে ওর পরিবার। চাষের জমি ও পাবে না। জমিটা না হয় আছে কিন্তু চাষের খরচ জোগাড় করতে পারবে না ওরা। ওর একার জন্য এতো মানুষকে বিপদে ফেলতে পরবে না ও।
কানাঘুষা শুনে সেইদিন শ্যামলীর পরিমল কাকু হাজির ওর বাবার কাছে। বাবার থেকে বছর দুয়েক ছোট। এ গ্রামের মানুষ। চাষী নিজের জমি ছিলো, ওর কিন্তু অনিয়মিত আয় , জীবনের সব চাহিদা স্বপ্ন মেটাতে পরতো না। আগে মানুষ চাষ বাস করে চালিয়ে নিতো কারণ পেটের ভাত জোগাড়ে করতে পারলেই হতো। আজ অনেক বাড়তি চাহিদা এসে জীবনে। তারপর একদিন গ্রাম ছেড়ে শুধু নয় রাজ্য ছেড়ে চলে গোল উনি । এখন লক্ষী মুখ দেখেছে কৃষক থেকে শ্রমিক হয়।
পরিমল কাকুকে আর কাকু বলতে না করতেই বুঝতে পেরেছিল শ্যামলী বুঝতে পারলো এখন গল্প নতুন মোর নেবে। চাষার মেয়ে তাই ও জানে বিপদে পড়লে কম দামেই বিক্রি করতে হয় ফসলকে। শ্যামলীকে বৌ করে নিয়ে যাচ্ছে পরিমল এ গ্রাম ছেড়ে। পিছনে পড়ে রইলো ওদের গ্রামের সোনালী ক্ষেত ক্ষনিকের আনন্দ। পরিমল বাবু ভালো মানুষ। শিল্প অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে বাবা হবার ক্ষমতা নেই আর। তাই শ্যামলীকে বিয়ে করে খুশি। শ্যামলী সোনালী ক্ষেত ও ওর নিজের দাম নির্ধারণ করতে পারে না ওর দাম নির্ধারণ করে পরিমল বাবাইদের মতো পুরুষরা। ও শস্য ক্ষেতের জমি মতো ফসল ফলানো ইচ্ছেটাও নির্ভর করছে কৃষকদের ইচ্ছের ওপর।
,,,