Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

4  

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational

সংশপ্তক ( ঊনবিংশ অধ্যায়)

সংশপ্তক ( ঊনবিংশ অধ্যায়)

5 mins
363


ঊনবিংশ অধ্যায়

মানুষের মধ্যে পাপবোধ বোধ করি থাকে না ; যতটা থাকে পূণ্যের গরীমা । 

সহমর্মিতা বা সহানুভূতি কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকজনের অন্তরে খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে ।

কথা হচ্ছিল অম্বরীশকে নিয়ে । কিন্তু বলে না - কথার পিঠে কথা যতখুশি চাপিয়ে দেওয়া যায় । সেই মহীরুহ গগনচুম্বী হলেও ভেঙে পড়ে না।

অম্বরীশের তিনমাসের জেল হল । সুতরাং চাকরিও গেল । এখন ওর বাড়িতে কেবলই হাহাকার । 

ঐন্দ্রিলাদেবী মনে মনে খুশি হয়েছেন ঠিকই; কিন্তু যতই হোক ভাইপো বলে কথা। কিছুটা মনোকষ্টেও ভুগছেন ।

এমনই অসময়ে একদিন অম্বরীশের বাবা কালাচাঁদ বাবু হঠাৎ এসে হাজির হলেন বোনের বাড়িতে।

দাদাকে দেখে ঐন্দ্রিলাদেবী খুব খুশি হলেন। কিন্তু দীপু বা নীলেশবাবু ঠিক ততখানি অসন্তুষ্ট হলেন। মুখে কিছু বললেন না ঠিকই; তবু কুশল বিনিময়টুকু সেরে নীলেশবাবু বেরিয়ে গেলেন। দীপু ও রূপু প্রণাম সেরে চলে গেল উপরের ঘরে। ঐন্দ্রিলাদেবী বললেন - কেমন আছো বড়দা ?

- দেখতেই তো পাচ্ছিস ! অম্বরের চাকরি চলে গেছে, এখন তো জেল খাটছে। আমারও শরীর ভেঙে পড়েছে। তোর বৌদি চলে যাবার পর থেকেই আমিও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম । কিন্তু অম্বরের এই হাল দেখে আর চুপ থাকতে পারছি না । বলছি, তোরা তো এখন অনেক টাকার মালিক ! কিছু যদি সাহায্য করতে পারিস তো গাঁয়ে একটা মুদির দোকান দিতাম । বুঝতেই পারছিস সংসারের অভাব । রোজগারপাতি নেই, খাবারে টান পড়েছে। 

ঐন্দ্রিলাদেবী শুনছেন কথাগুলো । মনে করার চেষ্টা করছেন তাঁর দূরবস্থার দিন অর্থাৎ দীপুর বাবা গত হবার পর এমনই কিছু সাহায্যের প্রত্যাশায় যখন বিধবা হয়েও দু'হাত পেতে ভিক্ষে চেয়েছিলেন - তখন এই বড়দাই তাঁকে কি ভাবে অপমান করে পত্রপাঠ বিদেয় করে দিয়েছিল ।

তিনি কোন কথা বলছেন না দেখে কালাচাঁদ বাবু বললেন - কি রে চুপ করে গেলি যে ? কিছু তো বলবি ?

- আমি আর কি বলি বড়দা ! আমার হাতে তো কিছু নেই যে তোমাকে তুলে দেব !

- সে কি রে ! বাড়ির গিন্নি তুই । তোর কথায় সংসার চলে। শুনেছি তোর কথার উপর আর কেউ কথা বলে না !

- সে একদিন ছিল বটে ! এখন দিনকাল পাল্টেছে। সংসার বড় হয়েছে। বাড়িতে ছেলের বউ এসেছে। এখন কি আর আগের মত সহজেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ? তা-ছাড়া ঠাকুরপো !

- কে ? নীলেশ ? আরে ও তো একটা আস্ত বোকা। ভালোমানুষি দেখিয়ে অধবার জীবন বেছে নিল । 

- চুপ কর দাদা । ওনার মত মানুষের জন্য এখনও আমরা বেঁচে বর্তে আছি। ওনাকে নিয়ে কোন কথা তুমি বলবে না । এমন দেবতুল্য দেবর পাওয়া সবার ভাগ্যে জোটে না ।

- তাই বুঝি ? তাহলে যা শুনতাম বা এখনও মাঝেমধ্যে শুনি সেটাই দেখছি ঠিক ।

- কি শুনেছ বল তো ?

- তোদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। নইলে কভ বয়সে স্বামী হারিয়েও তুই এমন থাকিস ?

- চুপচাপ বাড়ি থেকে চলে যাও। এতদিন তো কোন সম্পর্ক রাখনি; আজ ভিখিরি হয়েছ বলে সাহায্য নিতে এসেও সেই জঘন্য বুলিগুলো ছাড়তে পারনি। ভালো কথা বলছি, কেউ আসার আগে তুমি এখান থেকে চলে যাও। তোমাদের সঙ্গে তো কোনদিন কোন সম্বন্ধ ছিল না। তবে আজ কেন সম্পর্কের দোহাই দিতে এসেছ ?

- রেগে যাস কেন বল তো ? বড় দাদা হিসেবে কি এক আধটু শাসনও করতে পারি না ?

- না পারো না, আর বড় দাদা? কার বড় দাদা ? কেই বা বড় দাদা ? ও সব সুড়সুড়ি দিয়ে তুমি আমার মন গলাতে পারবে না। এখন মানে মানে বিদেয় হও। চা জল কিছু খাবে যদি তো বল বৌমাকে বলি এনে দিতে।

- না থাক। আমি খেতে আসিনি। দুর্দিন শুরু হয়েছে মানে এই নয় - চিরকাল থাকবে। যাক গে । চলে তো যাবই। তোর ঘরে কি থাকতে এসেছি ? কিছু দিবি কি ? সাহায্য ?

দেখ সোজা সাপটা বলি, যা দিবি এমনিই দিবি, কেন না আমি ধার চাইতে আসিনি। শোধ দিতে পারব না।

- একটি কানাকড়িও দেব না । আমাকে দিয়েছিলে ? গলাধাক্কা ছাড়া আর কিছু ?

- দেখিস বাপু, গলাধাক্কা দিসনি। আমি চলে যাচ্ছি । এই বুড়ো বয়সে গলাধাক্কা সইতে পারবনি।

কালাচাঁদ বাবু প্রস্থান করলেন। বলে গেলেন - এ দিন চিরকাল থাকবে না রে। ভগবান ঠিক দেখছেন।

- হাঁ তো। তিনি দেখেছেন বলেই তো তোমাকে এখানে পাঠিয়েছেন ! যাও যাও, আর কোনদিন এমুখো হয়ো না।

দীপুরা এবার নীচে নেমে এল। রূপসা বলল - মা , টেনশন নিও না। শরীর খারাপ করবে । 

ঐন্দ্রিলা দেবী বললেন - তুমি তো জানো না মা, কি কষ্টটাই না ওরা দিয়েছিল । ধন্যবাদ দি ঠাকুরপোকে। যে দিনরাত এক করে আমাদের বুক দিয়ে আগলে রেখেছে।

রূপসা বলল - জানি মা। কাকাবাবু না থাকলে, এতদিন আমরা কোথায় ভেসে যেতাম কে জানে !

- সেই ঠাকুরপোকে নিয়ে কেউ কুকথা বললে আমি তো সইব না । তাতে যেই হোক; দীপু হলেও নয় ।

দীপু বলল - মা ! ও সব ছাড়ো । কাকাবাবু তো অনেকক্ষণ বেরিয়েছে - এখনও ফিরছে না কেন ? আমি কি একটু দেখে আসব ?

- পারবি ? যা তবে কাছাকাছি দেখে আয় ।

দীপু বেরিয়ে গেল । রূপসা বলল - মা! একটু চা করে নিয়ে আসি। ভালো লাগবে।

ঐন্দ্রিলাদেবী মৌন থাকলেন ।

দীপু হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মোড়ের কাছে আসতেই দেখতে পেল কাকাবাবু আর বড়মামা মিলে কি সব কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। একটু দূর থেকে ওদের কথা শুনতে লাগল ।

বড়মামা - এতে আর কি হবে নীলু ? ভেবেছিলাম লাখখানেক পেলে একটা মুদির দোকান খুলে সংসার চালাব । পাঁচ হাজারে কি হবে ? এটা দিয়ে তোমিকে আর মহানুভব হতে হবে না। তুমিই রেখে নাও।

- আরে রাখুন মশাই। কাজে লাগবে।

- এতে তো কিছুই হবে না । খামোখা ঋণ।

- ঋণ ? কে বলেছে আপনাকে ঋণ দিচ্ছি। আপাতত এটা রাখুন। বৌঠানের সাথে কথা বলে কিছু একটা বন্দোবস্ত করা যাবে।

দীপু ডাকল - এই যে কাকাবাবু এখান ! বাড়িতে সকলে চিন্তা করছে।

- হাঁ রে দীপু। বাজার আনতে বেশ দেরি হয়ে গেল । এদিকে তো দেখছি তোর বড়মামা চলে যাচ্ছেন। ভাবলাম খানাপিনা জম্পেশ হবে। তাই সকাল সকাল বাজার করতে বেরিয়ে গেছি। 

তারপর কালাচাঁদ বাবুকে বললেন - চাট্টি খেয়েই যাবেন। আসুন।

কালাচাঁদ বাবু বললেন - না, বাড়িতে প্রচুর কাজ রয়েছছ। এখন আসি।

বলে একটা বাসে চেপে পড়লেন।

দীপু বলল - এটা কি করলে কাকাবাবু ?

- কোনটা ?

- বড়মামাকে টাকা দিতে গেলে কেন ? জানো, মায়ের সাথে কত কথা কাটাকাটি হয়ে গেথে। মা একরকম মামাকে বিদায় করে দিয়েছেন।

- বুঝি রে দীপু। আমরা যে ভুক্তভোগী ! দুঃখ আর কষ্টগুলো আমাদের যে বড় আপন !

- এত আবেগপ্রবণ হলে চলে না কাকাবাবু। বাস্তবটাকে মেনে নিতে হয়।

- শোন আমি লোকটা বরাবরই আবেগের তাড়নায় চলি। কিন্তু যে আমাকে আঘাত দেয় তার উপর একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।

- বুঝি না বাপু । তোমাকে চিনতে আমার এখন আরও সময় লাগবে।

ওরা কথা বলতে বলতে বাড়ির দিকে রওনা দিল ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics