STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational Others

4  

Nityananda Banerjee

Classics Inspirational Others

সংশপ্তক ( পঞ্চম অধ্যায় )

সংশপ্তক ( পঞ্চম অধ্যায় )

5 mins
219

সংশপ্তক পঞ্চম অধ্যায়

হসপিটাল থেকে যাত্রা করে দীপুরা যখন ট্রেন ধরত হাওড়া স্টেশনে এসে টিকিট কেটে প্লাটফর্মে ঢুকছে মাইকে তখন ঘোষণা হচ্ছে Your attention please, 12339 UP Howrah-Dhanbad Coalfield Superfast Express will leave platform No 12 at 1720 hours.

দীপু চট করে প্লাটফর্মের ঘড়িটা দেখে বলল - কাকাবাবু ! Hurry up. হাতে আর মাত্র দু'মিনিট । আমদের কম্পার্টমেন্ট ইঞ্জিন থেকে চার নম্বর। 

- ঠিক আছে রে বাবা। লেজটা পেলেই হবে । উঠে পড়ব। তারপর ভেতরের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ঠিক পৌঁছে যাব নির্দিষ্ট জায়গায় । এত ভেবে কি হবে ? আর এক ঘন্টা পর অগ্নিবীণাও আছে।

ট্রেনে উঠতেই ট্রেন ছেড়ে দিল । আজ বৃহস্পতিবার । ট্রেনে ভীড় খুব বেশী। অবশ্য ওদের এসি ক্লাস। ভীড়ের কারণ দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম ঘেঁষা জায়গাগুলোতে বৃহস্পতিবার দোকানপাট বন্ধ থাকে। এদিন ওসব এলাকার ব্যবসায়ীরা কলকাতায় আসে মাল কিনতে। ট্রাক লোড করে দিয়ে ওরা আবার ফিরতি ট্রেনে বাড়ি আসে। এসি ক্লাস বলে ভীড় নেই। নীলেশবাবুর যেন গায়ে বাতাস লাগল । বেশ ভালো লাগছে তাঁর। মনে হচ্ছে কয়েকটা টাকা না বাঁচিয়ে এসিতে ওঠাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

- কত ভাড়া নিল রে দীপু ?

- দুটো টিকিটে সাতশ' ষাট টাকা ।

- বলিস কি রে ? এত ভাড়া‌? জানলে তো সাধারণ ক্লাসেই উঠতাম।

- হুমম , তারপর নতুন করে তোমার শরীরটাও খারাপ হোক আর কি ? তাহলেই ষোলো কলা পূর্ণ হয়ে যেত।

নীলেশবাবু দীপুর পিঠে হাত বুলিয়ে বলেন - আমাকে তুই বড্ড ভালবাসিস না রে ?

- দেখ কাকাবাবু ; তুমি ছাড়া আমাদের আর কে আছে বল ? 

- বড় কষ্ট হয় রে দীপু ! বৌঠান যখন বলেন তাঁর পাচ- পাঁচটা ভাই থাকতেও তারা কোন খবর নেয় না ।

- ও তুমি ওদের কথা আর বলো না ! সেদিন ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার সময় বড়মামাকে দেখেছি স্টেশনে। রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে বাড়ি যাচ্ছিলেন হয় তো। আমিকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন। আমার মনে হয়েছিল মামা বলে ডাকি। কিন্তু সাহস হল না। মা বারণ করেছে তো !

- কি দরকার আছে বাপু অতশত ভাবার ! আমি আছি না ! আমিই তোর কাকা, তোর মামা, তোর দাদা, এমনকি তোর....

- বাবা ! হ্যা বাবাই তো ! জন্মের পর নিজের বাবাকে তো দেখিনি। যা দেখেছি ছবিতে। আমি তো জানতাম তুমিই আমার বাবা। মনে পড়ে, যখন ছোট ছিলাম; বন্ধুরা সব বাবা বাবা বলে ডাকত। সেই দেখে বাড়ি এসে মাকে বলেছিলাম মা! আমার বাবা কই ? জানো, মা তোমাকে দেখিয়ে বলল ঐ তো তোর বাবা, কাকা, মামা, দাদা। ওইইতো সব। তোর যা ইচ্ছে হবে তাই বলে ডাকবি। 

নীলেশের চোখ দুটো জলে ভরে গেল । বৌঠান ! বৌঠান গো ! পরের জন্মেও ভগবান যেন আমাদের এইরকম সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়ে রাখেন।

মন পাল্টাতে দীপু বলল - কাকাবাবু একটু গরম গরম কফি খেলে মন্দ হয় না ।

- আচ্ছা, আমি নিয়ে আসি।

দীপু নীলেশের হাত টেনে বলল - বোসো তো ! কফি এখানেই আসবে। দেখছ না এখন সিঙাড়া, কচুরী, ঝালমুড়ি এসেছে। এবার চা কফিও আসবে ।

- সিঙাড়া খাবি দীপু ?

- না গো । তুমি খাবে তো খাও। আমি এক ঠোঙা ঝালমুড়ি খাই।

- তবে দুটোই নে। আমিও সিঙাড়া খাব না।

দু প্যাকেট ঝালমুড়ি কিনে ওরা খেতে লাগল । হঠাৎ নীলেশের মনে হল লেবুর আচার মাখিয়েছে মুড়িতে। খপ করে দীপুর ঝালমুড়ির ঠোঙাটা কেড়ে নিয়ে নিজেরটা সমেত বাইরে ছুঁড়ে দিলেন।

অবাক হয়ে দীপু শুধোল - এটা কি হল ?

- বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। জানিস ওতে লেবুর আচার মাডানো আছে। 

দীপু বলল - ওরে বাবা ! ঠিক করেছ।নাও কফি এসে গেছে। কফি খাও।

পাশের সীটে বসা এক ভদ্রমহিলা ওদের কথাবার্তা শুনছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন - আপনার লেবু খাওয়া বারণ কেন ?

নীলেশবাবু বললেন - ও কিছু নয়। ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ খায় তো ? হোমিওপ্যাথিতে টকজাতীয় কিছু খেলে নাকি ওষুধে কাজ দেয় না।

- কে বলেছে ? ভদ্রমহিলা বললেন - আমিও তো হোমিওপ্যাথি খাই। আমাকে তো এ সব বলা হয়নি ?

- তা' আর আমরা কি করে জানব ম্যাডাম ?

ভদ্রমহিলা বললেন - আশ্চর্য্য ব্যাপার।

নীলেশবাবুরা চুপ করে গেলেন।

ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি পৌঁছে হাত পা ধুয়ে যখন বসলেন তখন রাত আটটা বেজে দশ। চা পান করে নীলেশবাবু ডাক্তারবাবু যা যা বলেছেন সব বৌঠানকে জানালেন। রূপসা বলল - মা! আমরাও যাবো। দশ দিন আমরা বাড়িতে থাকতে পারব না। 

ঐন্দ্রিলা দেবী বললেন - তুমি তো ঠিকই বলছ বৌমা। কিন্তু কলকাতায় আমরা থাকব কোথায় ?

নীলেশবাবু - সে ব্যবস্থা করে দেব বৌঠান। 

- কি করে ?

- শুনেছি হসপিটালের নিজস্ব গেস্ট হাউস আছে। হসপিটালের খুব কাছেই। বাইরের পেশেন্টদের এটেণ্ডেন্টরা ওখানে থাকে। খরচা যা হবে দেখা যাবে। সত্যিই তো ! দশ দশটা দিন গ্রামের বাড়িতে কি থাকা যাবে ? আমি এটা ভেবেছি। তাই কথাও বলে এসেছি।

গেস্ট হাউসের ম্যানেজার মি: অনির্বাণ কুণ্ডু বলেছেন ওই গেস্ট হাউস ফরেনারদের জন্য করা হয়েছে। ফাঁকা পড়ে থাকলে আপনাদের দিয়ে দেব।

ঐন্দ্রিলা দেবী বলেন - যদি ফাঁকা থাকে !!

- না না বৌঠান । আজ অব্দি কোন ফরেন পেশেন্ট কোন ডাক্তারকে বুক করেনি। তার মানে এখন ওটা ফাঁকাই থাকবে।

- যদি না থাকে ?

তখন দীপু বলল - অসুবিধা হবে না। কাছেপিঠে অনেক প্রাইভেট গেস্ট হাউস আছে। তখন শ্রাবণী গেস্ট হাউসে বুক করে দেওয়া যাবে। তা-ও যদি না পাওয়া যায় তো অনেক বাড়ি রয়েছে তারা রুম ভাড়া দেয় । তাদের কোন একটা নিলেই হবে।

এতক্ষণে ঐন্দ্রিলাদেবী আশ্বস্ত হলেন । পরের দিন কাজের মাসীকে বললেন - শোনো বাছা। পরশু আমরা সকলে কলকাতা যাচ্ছি দশ এগারো দিনের জন্য । তোমার উপর ঘরবাড়ির দায়িত্ব দেব।

সে এক কথায় রাজী হয়ে গেল। বলল - রাতে আমি ছেলেকে নিয়ে ওই রুমে শুয়ে পড়ব। তোমাদের কোন চিন্তা নেই। নিশ্চিন্তে আসতে পারো।

নীলেশবাবু বললেন - গোরু বাছুরের যত্ন নিও কিন্তু!

- সে তোমাকে বলতে হবে না । সব দেখব। 

রূপসা ছেলের খাবার, ঔষধপত্র, জামা প্যান্ট, ওয়াইপার, হগিস সব রেডি করে রাখল । 

গাঁয়ের মোড়ল হরিপদ মণ্ডল এসে বলল - তোমরা কি কালই যাচ্ছ ?

নীলেশ বললেন - তুমি ঠিকই শুনেছ খুড়ো। কালই যাচ্ছি। 

- তা' কতদিনের জন্য যাচ্ছ !

- কেন বল তো ? কতদিন লাগবে ঠিক জানি না ; তবে দু'চারদিন তো মনে হয় থাকতে হবে ।

- বেশ বেশ। এদিকের কিছু বন্দোবস্ত করেছ ? আমার রাখালকে বলে দিয়েছি ও তোমাদের গোরু বাছুরগুলো সারাদিন মাঠে চরাবে। পরিবর্তে গোরুর দুধটুকুন ও নিবে। 

- দরকার হবে না খুড়ো । আমরা ব্যবস্থা করে নিয়েছি। আর আমাদের এই মুহূর্তে কোন দুধেল গাই নেই। 

হরিপদর মুখটা ম্লান হয়ে গেল ! তাচ্ছিল্যের সুরে বলল - অ ।

রাতে সকাল সকাল খাওয়া দাওয়া সেরে সকলে তাড়াতাড়ি যে যার শুয়ে পড়ল । ভোরবেলায় ট্রেন। এতগুলো লোকের রেডি হতে সময় লাগবে । সেজন্য দেওয়াল ঘড়ি এবং নিজের নিজের মোবাইলে ভোর চারটেয় এলার্ম দিয়ে রাখল ।

ফকির চাঁদকে বলা আছে গোরুর গাড়িতে স্টেশনে পৌঁছে দেবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics