STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics Others

4  

Nityananda Banerjee

Classics Others

সংশপ্তক অষ্টম অধ্যায়

সংশপ্তক অষ্টম অধ্যায়

6 mins
291

অষ্টম অধ্যায়

ক্রণিক বা একিউট যাই হোক না কেন সব পর্য্যায়ের ব্লাড ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল কেমোথেরাপির সাথে শরীরতন্ত্রের বিক্রিয়ায় শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ প্রভাবিত হয় ।

লিভার, কিডনী, হার্ট, চক্ষু ইত্যাদি যাতে সক্রিয় থাকে ডাক্তারবাবু সেজন্য ঘনঘন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেন । তবে যা সচরাচর বলেন না যে দীর্ঘদিন কেমো ব্যবহারের ফলে রোগীর শরীরে যৌন-চাহিদাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। 

দীপুর ক্ষেত্রেও তা একই রকম প্রযোজ্য। প্রায় তিনমাস হয়ে গেছে দীপু ওরালি কেমো নিচ্ছে। এতে তার শরীরের আনুষঙ্গিক প্রতিক্রিয়া সচল থাকলেও প্রাকৃতিক আহ্বান তার কাছে বাহুল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। রূপসা যুবতী। দেখতে শুনতেও অপ্সরা না হলেও মিষ্টি চেহারা। তার ভেতর যে চাহিদা রয়েছে তা মেটাতে দীপু অনিচ্ছুক। 

এভাবে আরও ছয়মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেল ।দীপুর দিক থেকে কোন সাড়া না পেয়ে রূপসা নিরামিষ ভোজনে আসক্ত হয়ে পড়ল । আমিষ জাতীয় খাবার - সে শুনেছে - নাকি যৌনতা বৃদ্ধি করে। শাকাহারী এবং ফলাহারী হলে এ সবের ঝঞ্ঝাট থাকে না। দীপু অসুস্থ । তাকে বিরক্ত করা উচিত নয় ভেবে রূপসা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংযম রক্ষা করবে। পূজো আচ্চা আর বাচ্চাটা নিয়ে খুব সুখেই ছিল । এদিক দিয়ে তার আদর্শ হলেন তারই কাকাশ্বশুর নীলেশরঞ্জন বাপুলি। 

পেঁয়াজ রসুন মাছ মাংস ডিম ছোঁয় না। ঐন্দ্রিলাদেবীও বিধবা। তিনিও নিরামিষাশী। কিন্তু নীলেশবাবু এবং দীপু ওরা দুজনই আমিষ খাবার খুব পছন্দ করেন ।

রূপসা রান্না করে দেয় ঠিকই ; নিজে খায় না।

একদিন খাবার টেবিলে রূপসাকে মাংস নেয় নি বলে নীলেশবাবু জিজ্ঞেস করলেন - ও মা ! বৌমা ? তুমি মাংস নিলে না ?

- না কাকাবাবু, আমার খেতে ভালো লাগে না ।

তখন ঐন্দ্রিলা দেবী বললেন - ব্রত-টত কিছু নিয়েছ নাকি?

- ধরে নিন তাই মা। আমাকে আমার মত থাকতে দিন।

বেশ চলছিল এইভাবে। মাঝেমাঝে দীপুর উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারবাবুর কথামত নিকটবর্তী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়খ হত; আবার ঠিক হয়ে গেলে বাড়িতেই থাকত । এছাড়া প্রতিমাসে ডাক্তারবাবুর কাছে যাওয়া তো কৌলিক হয়ে গেছে।

খরচপত্র বেশ হচ্ছে। এতদিন নীলেশের জমানো টাকাতেই চলছিল । যত দিন গড়ায় রথাভাব আসে । নীলেশবাবু ই সি এল সদর দপ্তরে যোগাযোগ করলেন জোড়বাংলার জমিটা অধিগ্রহণের ব্যাপারে কর্তাদের অভিমত জানতে।

ওনারা জানেল খুব শীঘ্রই নোটিশ পেয়ে যাবেন। সি এম ডি এখন দিল্লি গিয়েছেন। ফাইল তাঁর টেবিলে দেওয়া আছে। সাইন হলেই আপনার কাছে নোটিশ যাবে।

- স্যার , আমি তো সড সময় বাড়িতে থাকি না। তাই নোটিশে সময় দেওয়া থাকবে তো ?

- এক মাস সময় থাকে। আপনি নিশ্চিত থাকুন । নীলেশবাবু অফিস থেকে বেরিয়ে বাস ধরবেন বলে একটা রিকশায় চাপলেন ।

এমন সময় একজন ব্যক্তি হাঁফাতে হাঁফাতে এসে তাঁকে ধরলেন ।

- বলি ও দাদা !

নীলেশবাবু রিকশা থামিয়ে বললেন - আমায় কিছু বলছেন ?

- তো আর কাকে বলছি ? এখানে আপনি আর রিকশাওলা ছাড়া আর কে আছে ? বলি, একটু নেমে আসুন না। কথা ছিল।

- বলুন।

- ও ভাবে বলা যাবে না। টপ সিক্রেট।

- টপ সিক্রেট ! তাও আবার আমার সাথে ?

- আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনার সাথে। বলছি আপনার ফাইল সাহেবের টেবিলে যায় নি !

- মানে ? ওনারা তো বললেন সাহেবের টেবিলে রাখা আছে !

- মোটেই না । আপনার জমির মূল্য হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ লাখ। অঙ্ক দেখে ওদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। বলছি কি, আপনার কি খুব তাড়া আছে ?

- না, তেমন কিছু না । তবে--

- সে তাড়ার কথা বলছি না । বলছি ওই টাকা পাবার জন্য কি আপনার তাড়া আছে ?

- আজ্ঞে হ্যাঁ, তা একটু আছে বৈকি !

- পাবেন না । আপনার ফাইল যে পাল্লায় পড়েছে; তা'তে অদূর ভবিষ্যতে তো কি ----

ভয় পেয়ে গেলেন নীলেশবাবু । তাহলে তো ভারি বিপদ।

বললেন - এ কি কথা বলছেন মশাই ? মিছিমিছি আমার সাথে এমন খেলা খেলবেন কেন ?

- রাইট ! খেলা ! আপনি ঠিক ধরেছেন। ওই খেলাটাই হচ্ছে। ই সি এলে এখন এটাই রেওয়াজ । 

- আমার জমি না নিলে তো কোম্পানীর ক্ষতি । 

- হুম্ , কিন্তু তাদের তো লাভ । যতক্ষণ না আপনি পার্সেন্টেজ না দিচ্ছেন ; আপনার ফাইল নড়বে না - এমনকি হারিয়েও যেতে পারে ।

- তা হলে উপায় !

- সেই কথা বলতেই তো এসেছি। দেখুন আমি তো ওনাদের মত উঁচু পদের চাকুরে নই। একজন সামান্য পিওন মাত্র । ওনাদের কথায় উঠি বসি। তো বলছিলাম,

আপনি কি শীগগীর টাকা পেতে চান ?

- হলে ভালো। 

- তাহলে আপনি এক কাজ করুন। আমার সাথে আসুন । আপনাকে কনফারেন্স রুমে ওনাদের সাথে মিলিয়ে দেব । তারপর কথা বলে ঠিক করে নেবেন। কিন্তু ---

- আবার কিন্তু কি ?

- আমার পাওনাটা এখানেই দিতে হবে।

- কত !

- বেশী না হাজার দশেক দিলেই হবে।

- কিন্তু এখন তো আমার কাছে টাকা নেই। তাহলে কাল আবার আসব। আপনার নং টা দিন। যোগাযোগ করে নেব। 

- ৯৭৬৫৪...

নং লিখে নিলেন নীলেশবাবু। তারপর বাসে করে বাড়ি ফিরলেন।

বাড়িতে এসে হাত মুখ ধুয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে দীপুকে বললেন সব ঘটনা।

দীপু বলল - ওরা সব ফ্রড । ওদের পাল্লায় পড়ো না। মাসখানেক অপেক্ষা করে দেখ কি হয় । তারপর ভাবা যাবে।

- কিন্তু এদিকে তো টান পড়েছে ? সংসার চলবে কি করে ?

ঐন্দ্রিলা দেবী বললেন - আমার গয়নাগুলো কি জন্য আছে ? অত ভেবো না ঠাকুরপো। 

- বৌঠান! ওগুলো যে আমাদের পিতৃপুরুষের সম্পদ। যুগ যুগান্ত কাল ধরে ধারাবাহিকভাবে হাতবদল হয়ে আসছে।

- আরে ওগুলো বলছি না। তোমার দাদা যেগুলো দিয়েছিলেন !

- তাও নিতে পারব না, বৌঠান। আমার পৌরুষত্বে আঘাত লাগবে। তার চেয়ে দীপু যা বলেছে সেইভাবেই দেখি।

বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দিন দশেক পরে দীপুর মামাতো ভাই ( বড়মামার ছেলে ) অম্বরীশ খবর নিয়ে এল নোটিশ ইস্যু হয়ে গেছে । 

অম্বরীশ বছর ত্রিশের যুবক। ই সি এল হেড কোয়ার্টারে সি এম ডির পি এ । যাবতীয় ফাইল প্রথমে সে ফলো আপ করে। তারপর সি এম ডি সাইন করেন। এমনিতে ছেলেটি মন্দ নয় । তবে প্রভাবশালী জনের সান্নিধ্যে থাকায় মোটা রকমের আমদানি হয় । একবার তো ই ডির খপ্পরেও পড়েছিল । সি এম ডিই সেবার বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। আর সাধারণ মধ্যবিত্তের ঘরে যেমন ঘটে আর কি ! চাকরি পেয়েছ তো বিয়ে থা' করে নাও। তাই খুব কম বয়সে বিয়ে করে সন্তানের বাবাও হয়ে গেছে। বয়সে যদিও দীপুর চেয়ে ছোট ।

- আরে অম্বরীশ ! এতদিন পর হঠাৎ এলি বাবা ?

ঐন্দ্রিলাদেবী বললেন ।

- হ্যাঁ বড়পিসি । তোমরাও তো যাও না । আর যখন এই নোটিশের ব্যাপারটা জানলাম ; নিজেই চলে এলাম খবর নিয়ে । নোটিশ হাতে করে আনতে পারতাম । কিন্তু অফিসিয়ালি আসুক এটাই চাই। তোমরা তো বড়লোক হয়ে গেলে গো পিসি। শুধু টাকা নয় একটা ভালো চাকরিও তো পাবে কোম্পানীতে । 

- তাই নাকি ? তাহলে বৌমাকে দিয়ে দেব চাকরিটা। দীপু তো বেকার নয় । বৌমা লেখাপড়া জানা মেয়ে। ভালো পাশ দিয়েছে। যোগ্য চাকরিই পাবে ।

অম্বরীশ বলল - বাড়ির বউ চাকরি করবে কি গো পিসি ?

লোকে কি বলবে !

- গুলি মার লোকের মুখে। 

- শোন না আমি কি বলছি ?

- কি বলবি নতুন কথা ? বলবি তো চাকরিটা দিয়ে দি তোর ভাইকে - এই তো ?

- ভুল বলছ পিসি। ভাইয়ের জন্য বলছি না। তাতে তো তোমাদের কোন লাভ নেই । বরঞ্চ লোকসান। তার চেয়ে চাকরিটা বিক্রি করে দাও। মোটা টাকা পাবে। আমার একটা ক্যাণ্ডিডেট আছে । তাহলে অথা বলব।

নীলেশবাবু যেন হাতে স্বর্গ পেলেন । অম্বরীশকে বললেন- ঠিক আছে। ঠিক আছে। এসেই পড়েছ যখন ক'টা দিন না হয় থেকেই যাও। তোমার ভালো লাগবে আর আমরাও একটু আনন্দ পাবো।

অম্বরীশ বলল - দীপু কেমন আছে ? মা খবর নিতে বলেছেন।

- চিকিৎসা চলছে। তা হ্যাঁরে, দীপুর আবর নিতে এসেছিস নাকি ধান্দায় এসেছিস বল দেখি নি ?

ঐন্দ্রিলা দেবী পাল্টা প্রশ্ন করলেন ।

- দু'টোই । নির্লজ্জ ভাবে অম্বরীশ জবাব দিল ।

( ক্রমশ)




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics