সং সেজে থাকা
সং সেজে থাকা


১…
পড়াশোনার জন্য মিলি তার পিসির বাড়ি এসে আছে। পিসির সংসার খুব সুন্দর । মিলির পিসির সংসারে থাকেন, দেবল দা, রুমেলা বৌদি, তার পিসি ও পিসেমশাই । হঠাৎ একদিন সকালে উঠে মিলির রুমেলাকে দেখে বেশ অসুস্থ মনে হয় । রুমেলার হাত দিয়ে দেখে গায়ে জ্বর বেশ ভালোই এসেছে ।মিলি টেম্পারেচার চেক করে দেখল, প্রায় একশ এক। ঐ শরীরেই রুমেলা সকালে উঠে কোনোমতে চা বসিয়েছে। সবাই চা এর জন্য অপেক্ষা করে আছে। চা এর টেবিলে দেবল আদর করে রূমেলার হাত ধরতেই চমকে উঠে বলল "তোমার তো গায়ে জ্বর, মা তুমি একটু আজ রান্না করবে?" মিলি দেখে তার পিসি রুমেলার দিকে না তাকিয়ে বললেন "হমম করতেই পারি, কিন্তু তোর তো আবার পছন্দ হয় না?" রুমেলা মৃদু স্বরে বলল, "আহহ কি কর, দেবল, আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব।" মিলির খুব খারাপ লাগে,কিন্তু সে কলেজে যাবে,তাই হেল্প করতে পারে না। কোথাও যেন মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করতে থাকে তার। দিনের শেষে ঘরে ফিরে মিলি দেখে বৌদি ঐ শরীর নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, সবাই আহা করলেও মানুষটাকে যত্ন কেউ করছে না। মেয়েদের এরম করাই উচিত ইসব ভেবেই সে নিজেই নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করে।
বেশ কিছুমাস পরের ঘটনা:
অগ্রহায়ণ মাসের শেষ, শীতটাও পড়বো পড়বো করছে।একটা শিরশিরে অনুভূতি। সিজন চেঞ্জের এই সময়টায় মিলির পিসি বেশ কাবু হয়ে পড়েন ঠান্ডা লেগে। গায়ে জ্বর না থাকলেও ভালোই ঠান্ডা লেগেছে তাঁর । রুমেলা শশব্যস্ত হয়ে দুবেলা তার চা, গরম খাবার, চিকেনস্টু সব কিছুর যোগান দিয়ে চলেছে। এমনকি পায়ে গরম তেল মালিশ করেও দিয়েছেন। বড় অবাক হয় মিলি। কিসের টানে বৌদি এসব করছে অজানা তার কাছে, অথচ বৌদির শরীর খারাপে এক কাপ চাও কেউ করে দেয়নি। তার নিজের মনেই প্রশ্ন হয়, "আচ্ছা এর নাম কি সংসার? যেখানে সবাই সং সেজে থাকে।"
২…
বিজন অফিস আসার আগের মুহূর্তে দেখল মিনতি তার টিফিনটা দিয়ে একটু হেসে আবার রান্না ঘরে ঢুকে গেল। মনে মনে বিরক্ত হয়, কোথায় বৌকে একটু আদর করবে, কিন্তু এই সংসারে সেই উপায় নেই। কষ্ট হয়, সে আপন মনেই বলে "সেই কাকভোর থেকে উঠে মেয়েটা সবার রান্না করে ,সব কিছুইর খেয়াল রাখে, অথচ কতো শান্ত ।" সত্যি সে খুব ভাগ্যবান। মিনতি মুখ ফুটে কিছু চায় না। বিজনের বোন ইন্দ্রাণীর বিয়ের পরেই তার বাবা মা মিনতিকে ঘরে আনেন বৌমা করে। বিজন ঠিক করে , অফিস থেকে ফেরার পরে আজ অনেকটা সময় কাটাবে মিনতির সাথে। বিকেল বেলাতে, বিজন ঘরে ফেরার পর দেখে, তার মা গল্প করছে পাশের বাড়ির কাকিমার সাথে। তিনি তার বোনের বরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তার জামাই তার মেয়েকে কিভাবে কেমন করে সাহায্য করে, এইসব বলতে বলতে তার মায়ের মুখটা আনন্দে ঝলমল করছে। সে আসতে আসতে রান্না ঘরে যেতেই দেখে, মিনতি দাঁতে দাঁত চেপে হাত টা কলের তলায় ধরে আছে। সে গিয়ে দেখে গলগল করে রক্ত পড়ছে মিনতির হাত দিয়ে, সবজি কাটতে গিয়ে কেটে গেছে বঁটিতে। বিজন তার মাকে ডাকতেই, সান্ত্বনা দেবার পরিবর্তে তার মা বলেন "বৌমা,কিভাবে কাজ কর?একটা কাজ কি ঠিক করে করা যায় না?এবারে সবজি কে কাটবে?আমার হাঁটু ব্যাথা আমি তো বসে কাটতে পারব না।" বিজন মাকে শান্ত করার জন্য বলে "আমি কেটে দিচ্ছি মা। ওর হাতটা আগে ড্রেস করব, ও কিছু করতে পারবে না এই হাত নিয়ে।" ব্যঙ্গের হাসি হেসে তার মা বলেন "এই কদিনেই ভেড়া হয়ে গেলি? বউ এর হাতের পুতুল। স্ত্রৈন নাকি তুই?" মিনতি নীরব, তার চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ে। বিজনের খুব অবাক লাগে । বড্ড অচেনা তার কাছে সব কিছু আজ। সত্যি সবাই এরম সং সেজেই থাকে।
৩…
সদ্য টিন এজ পার হওয়া সমিতা ওরফে সিমি আজ হট প্যান্ট পরে বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছে। আয়নার দিকে একটা চুমু ছুঁড়ে বলে "ইউ আর টুউউ হট"। পার্স নিয়ে বেরোতে গিয়ে মা এর মুখোমুখি হয় সে। যদিও তার উদ্ধত স্বভাবের জন্য সে কাউকে পরোয়া করে না। বেশ কড়া গলায় মিসেস ঘোষ বলেন "এই অশালীন পোশাকে কোথায় যাচ্ছ তুমি। দিন দিন বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছ । অসভ্যতা করছো কেন বলতো?" বিকৃত মুখে জবাব দেয় সিমি "আই এম এডাল্ট মম। ডোন্ট বি সিলি। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি জাস্ট লাইক ইউ। ইউ নো মম, ইউ আর সাচ এ ফ্রিক।" বড় অসহায় লাগে মিসেস ঘোষের নিজের আত্মজার মুখে এরম কথা শুনে ।
কিছুদিন পরের ঘটনা__
বাইরে বেড়াতে যাবার উপলক্ষে মিসেস ঘোষ তার প্রিয় বান্ধবীর উদ্যোগে কিছু সালোয়ার সুট বানিয়ে আনেন, তিনি শাড়ি পরতেই অভ্যস্ত। সিমি বেশ অবাক হয় সালোয়ার দেখে, তার মা শাড়ি ছাড়া কিছুই পরেননি। তথাকথিত আধুনিকা সিমি বলে "মা তুমি এসব পরবে নাকি? তোমাকে শাড়িতেই বেশী মানায় কিন্তু । এই বয়সে এইসব পরে কি লোক হাসাবে নাকি?" মিসেস ঘোষ বড়ো অবাক হয়ে যান, মেয়ে যে মনে মনে এত পুরাতনপন্থী তা তিনি ভাবতেও পারেননি। আধুনিকতা যে বেশে নয়, মনে আনা উচিত তা সিমির অজানা ।