JAYDIP CHAKRABORTY

Classics

2  

JAYDIP CHAKRABORTY

Classics

সময়–অসময়

সময়–অসময়

14 mins
860



(১)  

টেকন্ ফর গ্র্যানটেড, ধরে নিয়েছে। জানে শ্বশুর শাশুড়ির ঘাড় আছে, ফেলে রেখে গেলে ঠিক সামলে দেবে। এতো বড় একটা ডিসিশন, আমাদের সাথে একটা আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করল না। কথাটা বলতে বলতে টিভির রিমোট হাতে নিয়ে ভলিউম বাটন প্রেস করে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে স্টার জলসায় চোখ রাখল মনীষা।  

আরে, প্ল্যান করে কিছু করেছে নাকি? অসাবধানতার ফল। এখন ওগড়াতে না পেরে, বাধ্য হয়ে গিলতে হচ্ছে ওদের। টিভির দিকে চোখ রেখেই মনীষার কথার উত্তর দিল বিকাশ।  

না গো, মনে মনে ইচ্ছে একটা নিশ্চয়ই ছিল। নইলে এখন কত কিছু মেডিসিন বেড়িয়েছে। নিজেরা না চাইলে কিছু হয় নাকি? একটাকে কোনও রকমে সামলে এনেছি। এখন ক্লাস সেভেন। নিজেরটা নিজেই সামলাতে পারে। তাই বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলব, সেই ভাগ্য কি আমাদের আছে? ওনারা আরেকটা এনে হাজির করছেন। শরীরে কি আর আগের মত জোর আছে। অর্ধেক সময় তো বিছানা ছেড়েই উঠতে পারি না। একগুচ্ছ ওষুধ খেয়ে কোনও রকমে টিকে আছি।  

অনেকক্ষণ ধরেই গ্রিল ধরে বাইরে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে প্রগতি। শীতটা ভালোই পড়েছে। একবার বেল বাজিয়েছে। টিভির আওয়াজ আর নিজেদের কথাবার্তার জন্য সে শব্দ কানে যায়নি মনীষা, বিকাশের। তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে এখন কানে শোনার ক্ষমতাটাও কমে আসছে ওনাদের। প্রগতিও দ্বিতীয় বার বেল না বাজিয়ে কান পেতে শ্বশুর শাশুড়ির কথা গিলছিল। তবে এই সময়ে আরেকটি সন্তান নেওয়ার প্ল্যান ওদের ঠিক ছিল না। অভিরণের ওভার কনফিডেন্সের জন্য আজ এটা ঘটেছে। অঙ্কটা অবশ্য ঠিকই করেছিল অভিরণ। তবে প্রগতির পিরিয়ড এখন আগের মত ছক বাঁধা নিয়মে হয় না। বছর খানেক ধরে প্রায়ই সেই ডেট পিছিয়ে যায়। একবার তো দিন দশেক পিছিয়েছিল। সেবার বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও। কাউকে না জানিয়েই প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট কিনে, রিপোর্ট নেগেটিভ দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছিল। তাই এবারে প্রথম দিকে অতটা পাত্তা দেয়নি প্রগতি। আর অফিস ও বাড়ির নানা ঝামেলায় কদিনের জন্য ব্যাপারটা মাথা থেকে উড়েও গিয়েছিল। বেশ কিছুদিন পরও যখন পিরিয়ড শুরু হল না, তখন বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল প্রগতি। তবে সঠিক সময়ে সঠিক জিনিস মনে পড়ে না। তাই প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট কিনতেও আরও কদিন দেরী করে ফেলল ও। এবারে চিন্তাটা স্থায়ী ভাবে বাসা বাঁধল। টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ। আর ঠিক এই সময়ে অভিরণও অফিসের কাজে রাঁচি গিয়ে বসে আছে। ফোনেও এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছিল প্রগতি। কিন্তু কখনো অভিরণের ব্যস্ততা, কখনো ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা, কখনো প্রগতির নিজের ব্যস্ততার জন্য সেইভাবে এটা নিয়ে আলোচনা করা হয়ে ওঠেনি। অভিরণ বাড়ি ফেরার পরেও ওরা দুজনে ডাক্তারের কাছে যেতে আরও কদিন লাগিয়ে দিল। বাড়ির পরীক্ষায় ভরসা কম। আবার ল্যাব টেস্ট করালেন ডক্টর অবলম্বন বিশ্বাস। হ্যাঁ, সত্যিই প্রগতি প্রেগন্যান্ট। অ্যাবরসান করাতে চাইলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলতে হবে। প্রায় মাস দুয়েক ধরে যাকে শরীরে বহন করছে, তাকে মেরে ফেলতে মন চাইল না প্রগতির। আর অভিরণেরও প্রগতির সিদ্ধান্তে একমত। অপরিকল্পিত হলেও যে শিশুটি ওদের কোল আলো করতে চাইছে, তাকে জোর করে সরিয়ে দিতে হলে বিবেকে কোথায় যেন একটা খোঁচা মারে। তাই আবার মা হতে চলেছে প্রগতি।  

এবারে একসাথে দু-তিনবার বেল বাজাল প্রগতি। বিকাশ এসে তালা খুললেন। কারো সাথে কোনও কথা না বলে দোতালায় নিজের ঘরে চলে গেল ও। নিষ্ঠা ম্যাথ স্যারের হোম ওয়ার্ক নিয়ে বসেছে। ম্যাথ, সাইন্স ও ইংলিশের জন্য টিচার রয়েছে। বাকি সাবজেক্ট গুলো নিজেই পড়ে ও। তাছাড়া নিজের যাবতীয় কাজ নিজেই সামলায় নিষ্ঠা। শুধু তাই নয়, বাড়ির অনেক খুঁটি-নাটি কাজ সামলে দেয় ও। পরিস্থিতি মানুষকে অনেক তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী করে দেয়। তবে অফিস থেকে এসে প্রায় প্রতিদিনই মেয়েকে নিয়ে বসে প্রগতি। মেয়ের প্রয়োজনের থেকেও নিজের আত্মতুষ্টির তাগিদটাই বেশী। মোবাইল আর ব্যাগ থেকে কিছু ওষুধ বের করে টেবিলে রেখে মেয়ের পাশে বসল প্রগতি। নিষ্ঠা অঙ্ক করতে করতেই আর চোখে দেখে নিলো।    

- কার ওষুধ গো?

- আমার।

- কেন? তোমার কি হয়েছে? 

- তেমন কিছু না। শরীরটা দুর্বল তো। তাই ডক্টর আঙ্কল কিছু ওষুধ খেতে বলেছে।

কথাটা ঠিক বিশ্বাস-যোগ্য মনে হল না নিষ্ঠার কাছে। মার কথার কোনও উত্তর না দিয়ে অঙ্কের খাতায় মন দিল ও। 

তোকে কতদিন বলেছি না ওভার রাইটিং করবি না। এটা ৫ না ৩ কারো বোঝার সাধ্য আছে? মেয়ের পাশ থেকে উঠে বাথরুমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রগতি। মায়ের কথার কোনোরকম প্রতিবাদ না করে, ফাইভকে থ্রি বানানো সংখ্যাটা কেটে তার পাশে স্পষ্ট করে থ্রি লিখল নিষ্ঠা। 

বেডরুমের সাথেই অ্যাটাচ বাথ। প্রগতি টয়লেটে চলে গেলে নিষ্ঠা এক লাফে খাট থেকে নেমে টেবিল থেকে মায়ের ওষুধ আর মোবাইলটা নিয়ে আবার নিজের জায়গায় ফিরে এলো। ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট প্রভৃতি ওষুধ প্রেসস্ক্রাইব করেছে ডক্টর অবলম্বন বিশ্বাস। গুগুল খুলে মায়ের ওষুধের নাম দিয়ে সার্চ দিল। একটু ঘাটাঘাটি করেই নিষ্ঠা জানতে পাড়ল যে এগুলো সাধারণত প্রেগন্যান্ট ওমেনকেই দেওয়া হয়। গতবছরই স্কুলে সাইন্স ক্লাসে ম্যাম ওদের পিরিয়ড নিয়ে বুঝিয়েছে। আর এটা বোঝাতে গিয়ে প্রেগনেন্সি সম্পর্কে একটা হালকা আভাসও দিয়েছেন উনি। তাছাড়া প্রগতিও মেয়েকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট নলেজ শেয়ার করেছে। আর কয়েক মাস আগে নিষ্ঠার পিরিয়ডও শুরু হয়েছে। তাই ঐ ওষুধগুলো কিসের জানার পর পুরো ব্যাপারটাই ওর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। বাবা রাত করে বাড়ি এসেও মার সাথে কি আলোচনা করে, আর নিষ্ঠা সামনে থাকলে কেন সেই ডিসকাশন বন্ধ করে দেয়, দাদাই ঠাম্মা, মাকে নিয়ে রাত দিন কি আলোচনা করে, সবটাই আজ জানতে পেরেছে নিষ্ঠা। 

বাথরুমের কলের শব্দ বন্ধ হয়েছে। প্রগতির চুড়ির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত হাত, মুখ মুছছে। একটু পড়েই গায়ে নাইটি জড়িয়ে বেড়িয়ে আসবে। ওষুধ আর মোবাইলটা এক লাফে যথাস্থানে রেখে আবার অঙ্ক খাতায় চোখ রাখল নিষ্ঠা। 

কিরে, ঐ অঙ্কটা এখনো করছিস? এই একটা প্রব্লেম সাম করতে ১৫ মিনিট লাগে? বেশ ঝাঁজিয়ে উঠল প্রগতি। 

মা, আমাদের বাড়িতে কি ছোট্ট বেবি আসছে? আমি কি দিদি হচ্ছি?  

হঠাৎ এই প্রশ্ন? প্রগতির সারা মুখে বিস্ময়। কিছুক্ষণ থেমে তারপরে আবার প্রশ্ন, এসব কথা তোমাকে কে বলল?

কে আর বলবে? ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট, এসব ওষুধ কখন মেয়েরা খায়, আমি বুঝি জানি না?

প্রগতির মুখ ফ্যাকাসে। ঠিক যেন পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে।  

ও, স্কুলে বন্ধুদের সাথে অফ পিরিয়ডে বুঝি এই আলোচনা হয়? 

স্কুলের বন্ধুদের থেকে জানতে যাব কেন? আর ওরা যা জানে, তার ম্যাক্সিমামই ভুল। আমিই বরং ওদের সঠিক ইনফরমেশন দিই। আমি গুগুল থেকে জেনেছি।

একদম চুপ হয়ে গেছে প্রগতি। এই এক হয়েছে গুগুল। এক সমুদ্র জ্ঞান নিয়ে বসে আছে। যে যা প্রশ্ন করছে, তার নিখুঁত উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। তাই নিষ্ঠাদের কাছে অজানা, অধরা কিছুই নেই। আর এরা তো টাইপও করে না। ভয়েস সার্চ করে নিজেদের মনের সকল প্রশ্ন জেনে নেয়। প্রগতিদের সময় এসব সুবিধে ছিল না। তাই বড়দের উত্তরের ওপরই নির্ভর করতে হত। প্রগতি তো অনেক বড় হয়েও জানতো যে হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে শিশুদের কিনে আনা হয়। হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের লোকেরা সেই শিশু কোথা থেকে পায়, সে প্রশ্ন প্রগতির কখনও মাথায় আসেনি। 

মা, আমাদের এই নিউ বেবির জন্য কি দাদাই, ঠাম্মার কোনও প্রবলেম হবে?

কেন? প্রবলেম হবে কেন?  

না আজ সকালে রাগ, রাগ গলায় তোমাকে নিয়ে ঠাম্মা দাদাইকে কি সব বলছিল। তাই ভাবলাম ...

আরে ওসব কিছু না। আসলে দাদাই,ঠাম্মার তো বয়স হয়েছে। দেখলে তো দাদাই কদিন আগেই নার্সিংহোম থেকে ঘুরে এলো। আর ঠাম্মাকে তো দেখছই কেমন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটে, হাই প্রেশার। তাই তোমাকে যেভাবে ওনারা বড় করেছেন, এই নিউ বেবিকে কি সেভাবে বড় করতে পারবেন? এইসব ভেবেই একটু চিন্তায় আছেন ওনারা। 

ও, এই ব্যাপার? এসব নিয়ে তুমি কিচ্ছু ভেবো না মা। আর দাদাই,ঠাম্মাকেও চিন্তা করতে না কর। আমি আছি তো। আমি তো এখন বড়ই হয়ে গেছি। আমি আমার ভাইকে ঠিক সামলে নেব। ভাইকে স্নান করিয়ে দেব। খাইয়ে দেব। ভাইয়ের সাথে খেলব। কি মজা হবে বলত। একা একা একদম বোর হয়ে যাচ্ছি।   

প্রগতি, নিষ্ঠার চুলে বিলি কেটে বলল, তুই একাই সব সামলে নিবি? তা তুই জানলি কি করে, যে তোর ভাই হবে?

জানি। খাট থেকে নামল নিষ্ঠা। তারপর মাকে জড়িয়ে, তলপেটে কান রেখে বলল, এই তো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, আমার ভাইটা হাই তুলছে। 

ও তুই স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিস না? পাকাবুড়ি একটা। নিষ্ঠাকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিলো প্রগতি। 

অভিরণ অনেকদিন পর আজ একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছে। হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিয়ে প্রগতিকে ও বলল, আজ বাবা-মার সাথে খাব। একসাথে খাওয়া মানে তো ওসব নিয়ে আলোচনা। তাই নিষ্ঠাকে আগেই খাইয়ে দিল প্রগতি। নিষ্ঠা প্রগতির মোবাইল নিয়ে দোতালায় ওদের বেড রুমে গেম খেলায় মেতে উঠেছে। একতলার ডাইনিং রুমে ওরা চারজন। বিকাশ আর অভিরণ খেতে বসেছে। মনীষা ওদের পরিবেশন করছে। ফ্রিজ থেকে মাছের বাটিটা বের করে মাইক্রো-ওভেনে গরম করছে প্রগতি।  

তাহলে তোরা কি ঠিক করলি? ডাল দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে প্রসঙ্গটা তুলল বিকাশ। এখন আর ঠিক করার কি আছে? এখন শুধু অপেক্ষা, আর বাচ্চাটা যেন সুস্থ ভাবে পৃথিবীর মুখ দেখতে পারে, তার জন্য সবরকমের প্রিকশন নেওয়া। একটু তরকারি দাও তো মা। 

সেসব তো ঠিকই আছে। কিন্তু প্রগতি কি ডেলিভারির পরেও এই চাকরিটা কন্টিনিউ করবে? কথা বলতে বলতে হাতায় পাঁচমিশালী তরকারী নিয়ে অভিরণের পাতে চালান করে মনীষা। 

ডেলিভারির পর প্রায় পাঁচ-ছয় মাস তো ম্যাটারনিটি লিভেই থাকবে। তারপরের কথা  পরে ভাবা যাবে। তাছাড়া সবসময়ের জন্য একজনকে তো রাখতেই হবে। অভিরণের বক্তব্য।

কাতলা মাছের বাটিটা টেবিলে রাখল প্রগতি।- ফ্যামিলি মেম্বার বাড়ছে, খরচ বাড়ছে, চাকরি ছাড়লে হবে? তাছাড়া লোন রয়েছে। আমার মাইনের বেশিরভাগ টাকা তো ওই লোনের ই.এম.আই মেটাতেই চলে যায়। 

অভিরণ প্রগতিকে মাছ দেওয়ার ঈশারা করল। প্রগতি অভিরণকে পাতে একটা গাদার পিস, আর শ্বশুরের পাতে পেটির পিস দিল। - আপনি বসে যান না মা। আমি দিয়ে দিচ্ছি।

- ওদেরকে তো দেওয়া হয়েই গেছে। দুজনে একসাথেই বসে যাই। একসাথে তো খাওয়া হয়ই না। 

অনেকদিন পড়ে উইকডেতে একসাথে খেতে বসেছে ওরা। অভিরণ রোজই রাত করে ফেরে। বিকাশ ও মনীষার অতো রাত করলে চলে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু নিয়মের বাঁধনে শক্ত করে বাঁধতে হয় নিজেকে। প্রগতি নিষ্ঠাকে ওর দাদাই, ঠাম্মার সাথে খাইয়ে ওদের দুজনের খাবার দোতালায় নিয়ে যায়।  

এই রান্নার মাসীটি এতো তেল দেয় না! মাছের টুকরো গুলো যেন তেলে সাঁতার কাটছে। মাছের ঝোল দিয়ে ভাত মাখছে অভিরণ। 

- কাজের লোককে দিয়ে তো আর বাড়ির লোকের মত কাজ হয় না। স্নেহ, মমতা, যত্ন, আন্তরিকতা, এগুলো কি আর পয়সা দিয়ে কেনা যায়? আমাদের ভয় বা আশঙ্কাটা এখানেই। নইলে বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে, এতো আনন্দের কথা। এর মধ্যে সংশয়ের জায়গা কোথায়? সংশয়টা নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে। নইলে নিষ্ঠাকে তো আমি আর তোর মা-ই বড় করেছি। তোদের আর কতটুকু পেয়েছে ও। কিন্তু এখন নিজেদেরই সামলাতে পারি না। 

মাছের ল্যাজা খাচ্ছে মনীষা। স্বামীর কথার একটু বিরতি হতেই সে কথার লেজ ধরলেন উনি। আর বাচ্চা সামলানো কি মুখের কথা। চাকরীটা তুমি ছেড়েই দাও প্রগতি। আয়া দিয়ে কি বাচ্চা মানুষ করা যায়? টাকা পয়সা নিয়ে খুব সমস্যা হবে না। তোমাদের নতুন ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিয়ে দেবে। আর তোমার শ্বশুরের পেনশন তো আছেই।

- তাহলে অভি চাকরিটা ছাড়ুক না। সন্তান তো দুজনেরই। আর অভির থেকে আমি কম কিছু মাইনে পাই না। 

অভিরণ বেসিনে, কুলকুচি করছে। প্রগতির কথাটা শুনে মুখ ভর্তি জল নিয়েই ওর দিকে তাকাল। চোখ দিয়েই অনেক কিছু বলার চেষ্টা করল ও।  

হ্যাঁ, তুমি অফিস করবে, আর অভি চাকরি ছেড়ে বুকের দুধ খাইয়ে ছেলে মানুষ করবে। যতসব ছেলেমানুষি কথা। মনীষার গলায় উত্তেজনা।

মায়ের ফোন নিয়ে নিচে নেমে এসেছে নিষ্ঠা। ফোন, মাসী-মনি ফোন করেছে।

দে, আমাকে দে। বেসিনের পাশে ঝুলন্ত তোয়ালেতে হাতটা মুছে, ফোন ধরল অভিরণ। নিষ্ঠা মনীষার কোলে গিয়ে বসেছে। 

- আঃ নিষ্ঠা, ঠাম্মার পায়ে ব্যথা জানো, তবু তুমি কোলে গিয়ে বসেছ? তুমি কি সেই ছোট্টটি আছো? 

- আরে থাক না, প্রগতি। ওর একটু ঠাম্মার আদর খাওয়ার শখ হয়েছে। অসুবিধে হলে তো আমিই বলব।

অভিরণ শালীকে তার দিদির শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করে, প্রগতিকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করে বোনের সাথে কথা বলবে কিনা। প্রগতির ইশারার বক্তব্য বুঝে, তোমার দিদি পড়ে ফোন করছে, বলে ফোনটা কেটে দেয়। নিষ্ঠা তৎক্ষণাৎ বাবার হাত থেকে ফোন নিয়ে দোতালায় ছুট লাগায়। অভিরণ, প্রগতিও মেয়ের পথ অনুসরণ করল। মনীষা বাথরুমে ঢুকল। আর বিকাশ মুখ হাত ধুয়ে, “তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি” গাইতে গাইতে একতলায় নিজেদের বেডরুমের দিকে এগোল।


(২)

প্রগতি এ বছর চল্লিশে পড়েছে। বয়সটা গর্ভধারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেশী। আর এই বেশী বয়সে মা হওয়ার জন্য ওকে অনেক বেশী সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। একটা বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে চলতে হচ্ছে। ঘন ঘন ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছে। সুগার, প্রেশার, থাইরয়েড প্রভৃতি নিয়মিত চেক করছে। ১৬ সপ্তাহে ব্লাড টেস্ট, আর ১৮ সপ্তাহের মাথায় আরেকবার ইউ.এস.জি করলেন ডঃ বিশ্বাস। সব রিপোর্ট নিয়ে ডক্টর অবলম্বন বিশ্বাসের চেম্বারে ঢুকল প্রগতি। আজ অভিরণ আসতে পারেনি। অফিসের কাজে আটকে গেছে। সব রিপোর্ট খুতিয়ে দেখে, ব্লাড প্রেশারটা চেক করল ডঃ বিশ্বাস। ১৪০/৯০। প্রেশারটা হাই-এর দিকে। বরাবরই ওর ব্লাড প্রেশার একটু হাই-এর দিকেই থাকে। তবে এইজন্য ও কোনও প্রেশারের ওষুধ খায়নি কখনো। আর গর্ভধারণের কারণে মায়ের রক্তচাপ বাড়ার একটা আশঙ্কা থাকেই। কপালে ভাঁজ ফেলে ডঃ বিশ্বাস বললেন, বাকি সব তো ঠিকই আছে, তবে এই ব্লাড প্রেশারটা বেশ সমস্যার। এটাকে মেডিসিনে কন্ট্রোলে আনতে হবে। না হলে মা ও বাচ্চার ওপর এর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।

চেম্বার থেকে বেড়িয়ে বাইরে এসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল প্রগতি। আকাশটা কেমন মুখ ভার করে রয়েছে। এপ্রিল মাস সবে পড়েছে। তাতেই বেশ গরম। সামনের দিনগুলো সে প্রগতিকে বেশ কষ্ট দেবে, তা ও সহজেই অনুমান করতে পারছে। একটা টোটো ধরে বাড়ি ফিরল প্রগতি। আজ যে ওর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা আছে, তা সকালে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে ও মনীষাকে বলেছে। তবুও প্রগতি বাড়ি ফেরার পর মনীষা, বিকাশ ওকে কোনও প্রশ্ন করল না। প্রগতিও ওনাদের সাথে কোনও কথা না বলে দোতালায় উঠে গেল। সমস্ত রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন রেখে বাথরুমে ঢুকল ও। বেড়িয়ে দেখে নিষ্ঠা ওর ইউ.এস.জি প্লেটটা আলোর সামনে ধরে দেখছে। এক বকা দিল প্রগতি। কি করছ তুমি এগুলো নিয়ে।

- দেখছি বেবিটা কত বড় হল। একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমার ভাইটাকে।

- তোমার সবেতেই পাকামি। ইংলিশ স্যারের হোম-ওয়ার্ক হয়েছে।

প্রায় কমপ্লিট। একটু বাকি আছে। আবার বই-এর পাতায় মন দিল নিষ্ঠা। 

রাতে অভিরণ বাড়ি ফিরে প্রগতিকে ডাক্তারের কথা কিছু জিজ্ঞাসা করল না। এমন কি ডাক্তারের কাছে যেতে না পারার জন্য সরিও বলল না। সারাটা মাথা জুড়ে অফিস ঢুকে আছে। সারাটা দিন দম ফেলার সময় পায়নি ও। ফরেনর ক্লায়েন্ট এসেছে। তাদের নিয়ে সারাদিন মিটিং, কনফারেন্স আর তাদের এন্টারটেইন করেই  সারাটা দিন কেটেছে। প্রগতি নিজের থেকেও কিছু বলল না।   

রাতে শুয়ে নিঃশব্দে কেঁদে বালিশ ভেজাল প্রগতি। পাশে শুয়ে অভিরণ সশব্দে নাক ডাকছে। নিষ্ঠা হওয়ার সময়ের কথা খুব মনে পড়ছে প্রগতির। বিয়ের পরেই সন্তান  চায়নি ওরা। বছর দু-এক ওরা নিজেদের মত করে কাটিয়েছে। সেই সময় মনীষার তির্যক কথা প্রগতিকে খোঁচা দিত। বিয়ের এতো বছর হয়ে গেল, এখনো নাতি-নাতনীর মুখ দেখলাম না। পাশের বাড়ির মেয়েটির তোমার পরে বিয়ে হয়েছে। এখনি গর্ভবতী হয়ে গেছে। দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নাও। কথাগুলো এখনো কানে বাজে প্রগতির। আর ওর প্রেগন্যান্ট হওয়ার খবর শোনার পর ওকে বেশ কেয়ারে রেখেছিলেন উনি। কাঁচকলা, ডুমুর, থোড়, লাউ, লাল আটা, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, ছোলা, মুসুরি ডাল, আপেল, লেবু, আখরোট, কিশমিশ, বাদাম, দুধ, ছানা, পনির কতকিছুই না খাইয়েছিলেন ছেলের বৌকে। আর প্রতিটি মুহূর্তে উপদেশ। এটা কর, ওটা করো না। অভিরণও তখন বেশ অ্যাকটিভ ছিল। প্রগতি যখন যেটা চেয়েছে, তা শত কষ্ট হলেও এনে দিয়েছে। সব-সময় বৌকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করেছে। আর এখন! এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমের অতলে তলিয়ে গেল প্রগতি।  

(৩)

অভিরণ অফিসের কাউকেই এই খবরটা এখনো বলেনি। কাউকে বলার প্ল্যানও নেই। ডেলিভারির সময় ক-দিন কিছু একটা বলে ছুটি নিয়ে নেবে। কিন্তু প্রগতির তো সে উপায় নেই। ও কিছু না বললেও ওর শরীরই সব বলে দিচ্ছে। প্রগতির অফিসে অনেক টেবিলেই এখন ওকে নিয়ে মুখরোচক আড্ডা হয়। কাজের মাঝে রিফ্রেশমেন্ট।

- প্রগতি ম্যাডাম তো আবার নিচের তলায় ভাড়া বসিয়েছে।

- এই বয়েসেও দাদার দম আছে বলতে হবে। 

- নিজেই করেছে, নাকি সাব কন্ট্রাক্টে দিয়ে দিয়েছে দ্যাখো। 

- সাব কন্ট্রাক্ট! তা তুমি খোঁজ-খবর রাখতে পারতে তো। কন্ট্রাক্টটা তাহলে তুমিই পেয়ে যেতে।

হঠাৎ প্রগতি এসে পড়ায় আড্ডা ভঙ্গ হল। 

হাতের কাজটা কমপ্লিট করে, বসের ঘরে ছুটি চাইতে গেল প্রগতি। বসের মুখে বেশ চিন্তার ছাপ। 

- নতুন প্রোজেক্টটা তোমাকে দিয়ে লিড করাবো ভেবে ছিলাম। এখন অন্য কাউকে ভাবতে হবে।

- প্রোজেক্টটা তো শুনেছি অনেক বড়, বেশ কয়েক বছর ধরে চলবে। আমি তো ছয় মাসের জন্য লিভে যাব।  

- কাউকে একবার দায়িত্ব দিলে সেটা কি তুলে নেওয়া যায়। তোমরা এতো সিনিয়র হয়ে এমন সব ডিসিশন নাও! সব কিছুর একটা সময় আছে, বয়স আছে। যাক, এখন এসব বলে কিছু লাভ নেই। টেক কেয়ার। নিজের যত্ন নিও। হোপ ফর দ্যা বেষ্ট।

বসের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে ওয়াশরুমে গেল প্রগতি। মুখে চোখে জল দিয়ে নিজের সিটে এসে বসল। শরীরে একটা অস্বস্তি হচ্ছে। একটানা চেয়ারে বসে থাকা বেশ কষ্টকর। প্রগতির শরীরে আসা নতুন অতিথি, দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার নড়াচড়া করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। সে অনুভূতি সবসময় সুখের নয়। কয়েকবার পাঁজরে খোঁচা দিয়ে প্রগতিকে বেশ কষ্ট দিয়েছে এই অতিথি। শারীরিক, মানসিক দুই দিক দিয়েই এখন একটা যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে ও। বাড়ি চলে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে ওর। কিন্তু এখন বাইরে যা রোদ। অফিসে এ.সি তে রয়েছে, তাও শান্তি। অনেক সময়েই এখন নিজেকে ভীষণ একা লাগে প্রগতির। আশেপাশের মানুষগুলো থেকেও যেন নেই। খুব কাছে থাকলেও তাদের নাগাল পাচ্ছে না ও। বাবা-মার কাছে গিয়ে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে কয়েকদিন। কিন্তু এই মুহূর্তে আসানসোল গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। আর বাবা-মার পক্ষেও এই ঝামেলা সামলানো অসম্ভব। একটা ক্যাব বুক করে অফিস থেকে বিকেল বিকেলই বেরিয়ে পড়ল প্রগতি।       

(৪)

প্রগতি নিজেকে সামলিয়ে, অফিস সামলিয়ে বাড়ির অনেক নিয়মিত কাজই এখন আর করতে পারছে না। আর তাতে তৈরি হচ্ছে অনেক সমস্যা। মনীষা, বিকাশের ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ২-৩ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে, সে ওষুধ আসছে না। অভিরণকে ফোন করে বলে দেওয়া সত্ত্বেও কখনো ও ভুলে যাচ্ছে। কখনো বা এতো রাত্রে ফিরছে যে ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিষ্ঠা অনেক দিনই স্কুল বাস মিস করছে। কখনো বা স্কুল রুটিন-এর কোনও বই নিয়ে যেতে ভুলে যাচ্ছে। ঘর-দোর অনেকই অগোছালো থাকছে। অভিরণ অফিস যাওয়ার সময় কোনোদিন রুমাল পাচ্ছে না, কোনোদিন মোজা বা গেঞ্জি। চাকরী করেও প্রগতি ঘরটাকে কতটা সামলিয়ে রাখতো, এখন তা পরিষ্কার ধরা পড়ছে। ৩০ সপ্তাহ যেতেই প্রগতির শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ল। অফিসে চেয়ারে পা ঝুলিয়ে বসার ফলে পা বেশ ফুলে গেছে। অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিল ও। ৩২ সপ্তাহের মাথায় বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হল। অভিরণ তখন অফিসে। মনীষা ও বিকাশ পাড়া প্রতিবেশী ডেকে, সবাই মিলে ধরাধরি করে নার্সিং-হোমে ভর্তি করল প্রগতিকে। অভিরণ খবর পাওয়া মাত্রই অফিস থেকে সরাসরি নার্সিং-হোমে পৌঁছল। পৌঁছেই ডঃ বিশ্বাসের সাথে দেখা করল ও। ডঃ বিশ্বাস বললেন প্লাসেন্টা সেপারেশন হচ্ছে। ব্লাডের ব্যবস্থা করুন। ইমারজেন্সি সিজার করতে হবে। নইলে বাচ্চা শেভ করা যাবে না। ডাক্তারের কথামতই কাজ হল। বন্ডে সই করল অভিরণ। শীর্ণকায় পুত্র সন্তানের জন্ম দিল প্রগতি। ওজন মাত্র ১ কেজি ৫০০ গ্রাম। এন.আই.সি.ইউ তে রাখা হল বেবিকে। সময়ের আগেই পৃথিবীতে আনা হয়েছে পৃথিবীর এই নতুন অতিথিকে। পৃথিবীতে টিকে থাকার শক্তি তার এখনো হয়নি। তাই এই অজানা অচেনা পরিবেশে বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পাড়ল না এই সদ্যজাত। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিরতরের জন্য স্থির হয়ে গেল ও।

আকাশে জমাট-বাঁধা কালো মেঘ ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস বহন করছে। কিছুক্ষণ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হওয়ার পর বজ্রপাত সহ ভারি বৃষ্টি নামল। আর বৃষ্টিটা অনেকদিনের গুমোট আর অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টায় মাতল।

ইসস্ বৃষ্টিটা নামার আর সময় পেল না! আমার ভাইটা কিভাবে আসবে বলতো মাসিমনি? কথাটা বলে বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে থাকল নিষ্টা। নিষ্ঠার মাসিমনি আজ সকালে এসেছে। ওর কাছে নিষ্ঠাকে রেখে বিকেলে নার্সিংহোমে গেছে মনীষা ও বিকাশ। অভিরণ তো সারাদিন ওখানেই আছে। নিষ্ঠা ওর ছোটবেলার সরষে বালিশ, কোল বালিশ ডিভান থেকে খুঁজে বের করে ভাই-এর বিছানা করেছে। আর ভাই এলে ওর সাথে কি কি করবে ভেবে চলেছে। খুব জোরে একটা বাজ পড়ে নিষ্ঠার ভাবনাটাকে নষ্ট করে দিল। ভয় পেয়ে ওর মাসিমনিকে জড়িয়ে ধরল ও।        

নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে আছে প্রগতি। চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে যাচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে বিকাশ আর অভিরণ। মনীষা বেডের পাশে থাকা চেয়ারটাতে বসে প্রগতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বিকাশ বলল, ভেঙ্গে পড় না বৌমা। আমারা আছি তো। সময় ঠিক অসময়কে কাটিয়ে দেবে। আসলে আমরা প্রত্যেকে এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যে সবাই সবাইকে ভুল বুঝছি। কোনটা সময়, আর কোনটা অসময় গুলিয়ে ফেলছি।

বিকাশ মনীষাকে ঈশারা করলে ওরা দুজনে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। বেডের পাশে থাকা চেয়ারটাতে বসে প্রগতির হাতটা ধরল অভিরণ। কারো মুখে কোনও কথা নেই। এতোটা প্রস্তুতি নিয়েও নতুন অতিথিকে রাখতে পারল না প্রগতি। অতিথি বুঝতে পেরেছিল যে, সে এলে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে প্রগতিদের। তাই নিজে থেকেই সরে গেল।  

অনেকক্ষণ বৃষ্টির পর কালো মেঘ সরে আলো ফুটেছে আকাশে। অন্ধকারকে ভুলিয়ে দেওয়ার আলো। নতুন পথ খুঁজে দেওয়ার আলো। আর সেই নতুন পথ ধরেই আবার যাত্রা শুরু করবে প্রগতি, অভিরণরা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics