Drishan Banerjee

Thriller Crime

3  

Drishan Banerjee

Thriller Crime

সিল্ক-রুট সরগরম ৩

সিল্ক-রুট সরগরম ৩

6 mins
7.4K


পায়ে হেঁটে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সুইমিং পুল-ওয়ালা রিসর্টে পৌঁছে গেলো ওরা । নাম ড্রিমল‍্যান্ড। এখানেই বাকিরা উঠেছে। মৌ বলে সেই মেয়েটা সকালেই এখানে শিফট্ করেছিল। ঐ রিরর্টে কাল রাতে ও নাকি ভুত দেখেছিল।

 

আজ জিষ্ণুর ফাইনান্সার এসেছেন কলকাতা থেকে সকালেই। এখন দেখা হল দিঠিদের সাথে।মিঃ প্রকাশ মেহরা, সকালের দেখা সেই থলথলে মাংসের দলা, তার কণ্ঠলগ্ন সেই সুন্দরী। এতক্ষণে দিঠির মনে পড়লো এই মেয়েটির নাম জারিনা। সিনেমায় সাইড রোলে থাকে। বুঝতে পারে ও প্রকাশ-জিকে ধরে উপরে উঠতে চাইছে।

আলাদা পেয়ে জিষ্ণুকে জিজ্ঞেস করে জানলো পিয়াসের বৌদি,সেই বিবাহিতা মেয়ের রোলে জারিনাকে নেওয়ার কথা চলছে। এখনো ফাইনাল নয়। আসলে ওটা ছোট্ট রোল। আউটডোর নেই। কিন্তু এই প্রকাশজি বলছে ওকে একটু বড় রোলে নিতে। একটা নাচের দৃশ্য, আর যদি একটা এ্যাডাল্ট বোল্ড দৃশ্য করানো যায়। এ মেয়েটি বোল্ড রোল করেই উপরে উঠছে। তাই প্রকাশের সাথে চলেও এসেছে।

দিঠির গল্পে তেমন কিছু নেই। কিন্তু ফাইনান্সার আর প্রযোজকের চাপে পড়ে জিষ্ণু ভাবছে মিমির স্বপ্নে যদি এমন কিছু রাখা যায়। মিমি জানে ঐ মেয়েটি পিয়াসের বৌ, তাই গানের দৃশ্য থাকতেই পারে মিমির কল্পনায়। তবে বোল্ড সিনটা চাপ। দিঠি সব শুনে হেসে ফেলে। বলে-" এতে আবার চাপ কোথায়? একটু বদলে দে গল্প। যখন পিয়াস বলছে ওর বৌ বাচ্চা হবে বলে বাপের বাড়ি, মিমি রেগে গিয়ে এমন সিন ভাবছে। অথবা মেয়েটা মনে মনে এমন কিছু ভাবছে। আমার গল্পের শেষে আছে ঐ বৌদিও মনে মনে পিয়াসকে ভালবাসত। তাই ওটাও হতে পারে। "

জিষ্ণু সব শুনে দারুণ খুশি, তক্ষুনি যে ডায়লগ লিখছে তাকে ডেকে পাঠায়। দিঠির সাথে কথা বলিয়ে দেয়।

আজ পার্টি তে নায়ক নায়িকা সবাই মাতাল। দিঠিরা একটু পরে উঠে পড়ে। পরদিন ওদের সবার জুলুখ যাওয়ার কথা।

রাতের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় ভোরের বাতাসে বেশ শীত শীত ভাব। গাছের পাতা থেকে তখনো টুপটাপ জল ঝরছে। তবে মেঘ কেটে বেশ মিষ্টি নরম রোদ উঠেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দিঠিরা তৈরি হয়ে নিয়েছিল জুলুখের জন্য। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে দেখে সবাই একটু গম্ভীর। কিছু হয়েছে মনে হয়।

জিষ্ণুকে কোথাও না পেয়ে ওর আ্যসিস্ট্যান্ট কে অয়ন জিজ্ঞেস করলো "কি হয়েছে?" সে চারদিক দেখে বলে,-" আসলে কাল রাতে পার্টিতে জারিনা ম‍্যাডাম্ একটু বেশি ড্রিঙ্ক করে ফেলেছিল। আর তারপর ঐ অঙ্কনা ম‍্যাডামের সাথে একটা হাতাহাতি হয় আর কি। আসলে ঐ প্রকাশ স‍্যার জারিনা ম‍্যাডামকে নাকি নায়িকা করে দেবে বলেছিল। কিন্তু এখানে এসে ও জানতে পারে যে,ও সাইড রোল পেয়েছে। জৈন-জি ওদের থামায় এবং জারিনাকে ঠাণ্ডা করে। এ সব এই লাইনের গল্প দাদা। হামেশাই হয়। "

দিঠি মিটিমিটি হাসছিল। ফিল্মি ম্যাগাজিন গুলো বেশ ভালো খোরাক পাবে মনে মনে ভাবছিল।

 ব্রেকফাস্টের পর জিষ্ণুর দেখা পাওয়া গেল। দিঠিদের দেখে বলল -" তোরা ঘুরতে ঘুরতে আজ জুলুখ চলে যা, আমাদের দেরি আছে। রাস্তায় ঝরণা পড়বে একটা, ওখানে শুটিং হবে আজ। সন্ধ্যায় ঢুকে যাবো হোটেলে। মোট তিনটে গেস্ট হাউজ পাওয়া গেছে , তবে পাশাপাশি। একটায় তোরা,আমি,আমার কয়েকজন লোক, নায়ক নায়িকা আর ঐ জৈন থাকবে। প্রকাশ জি জারিনা আর কয়েকজন পাশের অন্য হোটেলে। বাকিরা আবার আরেকটায়। আসলে এই সব জায়গায় সব হোম স্টে-টাইপ। বড় রিসর্ট নেই বিশেষ। এই সব নায়ক নায়িকাদের আবার প্রচুর চাহিদা। "

দিঠি আর অয়ন বুঝতে পেরেছিল। দিঠি বলল,-" সে সব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। আমরা চললাম। তুই সাবধানে আসিস।"

 নদীর চরে একটা কাঁচা রাস্তা দিয়ে আজ গাড়ি নামিয়ে এনেছে ওদের ড্রাইভার। আজ অন্য গাড়ি , তবে ড্রাইভার সেই শালুই। কাঁচা রাস্তা কাল রাতের বৃষ্টিতে পিচ্ছিল, বেশ কসরত করে পাকদণ্ডি পথে গাড়ি চলছে। বেশ কিছুটা এভাবে ওঠার পর বড় পিচ্-রাস্তা পেল ওরা।

পাহাড়ে এ ভাবে ঘুরতে ভালো লাগছিল দিঠির। সামনেই একটা ছোট্ট শহর। মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট। পাশে বাচ্চাদের স্কুল হাসপাতাল কোয়ার্টার। ছবির মত সুন্দর সাজানো সব। কত রকম ফুলের গাছ, অর্কিড, পাতাবাহার। শহর ছাড়িয়ে আবার পাহাড় বেয়ে ওরা উঠে এলো রোংলি বাজারে।

রোংলিতে পারমিট বানাতে হয় সবার। রেশম পথের শুরু এখান থেকেই। এক সময় চীন দেশ থেকে রেশমের কাপড় চীনামাটির বাসন এসব পথেই আসত। আর এ দেশ থেকে মশলা, পাট, চিনি যেতো ওদেশে। ভাবতেই অবাক লাগে এই দুর্গম পথে মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে উটের পিঠে করে প্রতিকুল পরিবেশে এভাবে বানিজ‍্য হতো। এ পথ ধরে মানস সরোবর যেত তীর্থ যাত্রীর দল। বহু বৌদ্ধ ভিক্ষু এ পথে যেতো আসতো ধর্ম প্রচারে। স্থানে স্থানে ছিল বৌদ্ধ-গুম্ফা।যেগুলো আজও আছে।

শালু পারমিট অফিসে যেতেই দিঠিরা নেমে পড়ে বাজারে। কত চীনা জিনিসের দোকান। চারদিকে মোমোর গন্ধে ম-ম করছে, খুব সুন্দর সুন্দর কিউরিও শপ্। উলের জিনিস,জ্যাকেটের ছড়াছড়ি। এছাড়া প্রচুর বিলিতি লিকারের শপ্। দিঠি পায়ে পায়ে একটা উলের জিনিসের দোকানে যায়। বেশ দাম কম। ও মায়ের জন্য আর পাশের ফ্ল্যাটের বাচ্চাটার জন্য দুটো সোয়েটার নেয়। হঠাৎ ওর চোখে পড়ে জারিনা একটা দোকানে ঢুকছে। কালো জিন্সের উপর লাল টপ, মুখটা একটা স্কার্ফে ঢাকা, চোখে কালো চশমা। এক মুহূর্তের জন্য স্কার্ফটা সরে যাওয়ায় দিঠি চিনতে পারে ওকে। কি মনে করে দিঠি এগিয়ে যায়। ওটা কিউরিও শপ্, বেশ বড়।

ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে জারিনাকে দেখতে পায় না আর। অথচ মনে প্রবল কৌতূহল। একা একা কি কিনছে জারিনা। পুরো দোকানটা ঘুরে দেখলেও আসলে দিঠির চোখ মেইন দরজায়।

যদি জারিনাকে বেরিয়ে যেতে দেখে!!

দোকানের মেয়েটা জানতে চায় সে কি দেখবে? দিঠি এটা সেটা নেড়ে দেখে, এমন সময় চোখে পড়ে ভেতরে একটা দরজা, এক কাস্টমার সেটা দিয়ে বেরিয়ে আসে। দিঠি হঠাৎ বুদ্ধি করে মেয়েটাকে বলে সেখানে কোনো টয়লেট্ আছে কিনা। মেয়েটা ঐ দরজা দেখিয়ে দেয়। দিঠি ভেতরে ঢোকে। এটাও শো পিস আর কিউরিওতে ভরা। সামনে প্যাসেজ, ওধারে সিঁড়ি। দিঠি চারপাশে দেখে দু জন সেলসম্যান কাজ করছে। হঠাৎ ওর চোখ পড়ে সিসি টিভির মনিটারে। ও নিজেকেও দেখতে পায়। স্কিন বদল হতেই ও দেখে জারিনা একটা কাউন্টারে কিছু দেখছে। আবার স্কিনশট বদলায়। একটু পরে ও আবার জারিনাকে দেখতে পায়, হাতে একটা সুদৃশ‍্য ভোজালি। ভাল করে খেয়াল করে ওর সামনের শোকেসে চাইনিজ সব মূর্তি রাখা। বেশ দামি এবং রেয়ার। ও কাউন্টারে গিয়ে বলে ও একটা রেয়ার বুদ্ধের মূর্তি নিতে চায়। ছেলেটা বলে মূর্তি উপরে রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠেই এবার দিঠি জারিনাকে দেখতে পায়। ওর দিকে পিছন ঘুরে কাউন্টারে কিছু নিচ্ছে, সামনে একটা কাগজের বাক্স প্যাক করছে একটা সেলসগার্ল। জারিনা দাম দিয়ে বেরিয়ে যেতেই দিঠি কাউন্টারে যায় এবং হিন্দিতে বলে যে এই মাত্র ম‍্যাডাম্ যেটা নিলো অমন একটা তার চাই। মেয়েটা একটু হেসে বলে ওখানে সব ওয়ান পিস রেয়ার কালেকশন্। দিঠি বলে যে ওর কাছাকাছি কিছু যদি হয়, আসলে দিঠি শিওর নয় যে জারিনা কি কিনল। মেয়েটা কয়েকটা সুদৃশ‍্য ভোজালি বের করে দেয়। দিঠি নেড়েচেড়ে দেখে সব শোপিস, তেমন ধার নেই। একটা হাতে নিয়ে বলে ও কি এমনি কিছু নিয়েছিল ? মেয়েটা বলে যে ওর টা একটু ধারালো ছিল। অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। দিঠি একটা ছোট মূর্তি নিয়ে নেমে আসে। মাথায় ঘুরছে জারিনার অস্ত্রের কি প্রয়োজন!!

 

বাইরে এসে চারদিকে তাকিয়ে জারিনাকে আর দেখতে পায় না। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। যাক, রাতে তো ও জুলুখেই থাকবে। তখন না হয় বুদ্ধি করে জেনে নেবে।

 

অয়ন আর শালু দাঁড়িয়ে ছিল গাড়ির বাইরে। ও যেতেই ওরা আবার রওনা দিল। রাস্তায় সেই সুন্দর ঝরণা, যেখানে আজ শুটিং আছে। ইউনিটের কয়েকটা গাড়ি এসে গেছে। একটু দাঁড়িয়ে অয়ন কয়েকটা ফটো নিলো। টুরিস্ট আসছে যাচ্ছে। আবার এগিয়ে চলল ওরা। পথ আরও সুন্দর। মাঝে মাঝে মিলিটারি ক্যাম্প। কোথাও মেঘ এসে সব ঢেকে দেয়। কোথাও আবার মেঘের দল লুকিয়ে পড়ে ঝকঝকে রোদ্দুরের দেখা পেয়ে। বেশ কিছুটা ওঠার পর মেঘ গুলো কেমন নিচে চলে যায়। বেশ লাগছিল দেখতে। এ ভাবেই মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে ওরা পৌঁছে যায় একটা ছোট্ট ছবির মতো সুন্দর পাহাড়ি গ্ৰামে। শিল্পী যেন আপনমনে সাজিয়েছে এ গ্ৰাম। চারদিকে ছোটছোট রঙচঙে কটেজ। পাহাড়ি ঝরণা নেমেছে এঁকেবেঁকে। দূরে মিলিটারি ক্যাম্প রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। হ‍েলিপ‍্যাড একটা। পাহাড়ের কোলে বড় ফুটবল মাঠ। অয়ন আর দিঠি মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

অয়ন আজ ক্যামেরা বের করতেও ভুলে গেছে। আশেপাশের সব পাহাড়ের মাথায় সাদা সাদা বরফ। পাইন গাছ গুলো যেন ক্রীস্টমাস ট্রি। দিঠির মনে হয় এ এক অন্য দুনিয়া। সত্যি এতো সুন্দর জায়গা ছিল ঘরের এতো কাছে ও জানতোই না। লোকে বিদেশ ঘুরতে যায় আর কলকাতার এতো কাছে মাত্র একরাত ট্রেনে কাটিয়ে এই রূপকথার দেশে পাড়ি দেওয়া যায় কে জানত।

একটা বাগান ঘেরা গোলাপি রঙের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করায় শালু। বাড়িটা থেকে দুটি মেয়ে নেমে আসে। প্রথম মেয়েটার বয়স ষোল হবে। নাম বলল পিঙ্কি, এতো ফরসা যে দিঠি অবাক হয়ে যায়। আর গাল গুলো আপেলের মতো লাল। দিঠির ইচ্ছা করছিল একটু হাত লাগিয়ে দেখতে রঙ ওঠে কিনা।(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller