Rohit Patra

Abstract Tragedy Others

4.0  

Rohit Patra

Abstract Tragedy Others

শোভনা

শোভনা

4 mins
358


আজও ভিখারী টা বসে আছে রাস্তার ধারে। অবিন্যস্ত চুল, এক মুখ পরিচর্যাহীন রুক্ষ দাড়িতে এলোমেলো ভাব স্পষ্ট। ছিন্ন ভিন্ন সেই ধুলোয় ধূসর জামা আর ঘষা লেগে আবছা স্পষ্ট নীল রঙের সিল্কের প্যান্ট গায়ের সাথে লেগে আছে কোনমতে। শয়ে শয়ে লোক কেউ ফিকে হাসছে কেউবা টোন কেটে চলে যাচ্ছে সামনে দিয়ে। অনেক কথার কোলাহলে অপনিতে মত্ত সেই ভিখারী মাথা দোলাচ্ছে এদিক থেকে ওদিক এ। কিছুতেই ফারাক পড়েনা তার। অবাক সেই চোখে বার বার সে পৃথিবীটাকে দেখে। চোখ বুজে কি যেনো ভাবে। এত কিছুর মাঝেও অবিকৃত আছে তার সেই পাগলামো মেশানো অনাবিল হাসিটা। 


এভাবেই দেখে আসছি তাকে, তা আজ বছর পাঁচেক হলো। কোনোদিন ও তাকে বিসন্ন দেখিনি আমি। করুণা হয় দেখে, মায়া হয়। সাহায্য করতে মন চায় কিন্তু নিজের ও অবস্থা ওই নুন আনতে পান্তা ভাতের মত। ইচ্ছা থাকলেও উপায় কই। চায়ের দোকানের পাশে সেভাবেই বসে কেটে যায় সারাদিন তার। চা এর দোকানের হারু জেঠু তাকে কটু কথা শোনায় না। বরং তার জন্য সকাল সন্ধ্যা ডিম পাউরুটি আর চা সাজিয়ে রাখে। কখনও খায় কখনও রাস্তার কুকুরকে খাওয়ায়। লোকে দেখে আর নাক সিটকায় " যত্ত সব আদিখ্যেতা"।


মুখে তার কথা নেই, চোখে তার জানার অসীম অদম্য আগ্রহ। শুধু একই কথা আওরে চলে " আজও এলোনা তো। আমাকে কথা দিয়েছিল সে। মিথ্যে বললো?" পরমুহূর্তেই আবার নিজের কথা খণ্ডন করে বলে ওঠে " না না সে ঠিক আসবে। " আমার কানে কথা গুলো ভেসে আসে মাঝে মধ্যে ফ্যাক্টরি থেকে ফেরার সময়। পাগলের প্রলাপ আর কি। কারোর অত সময় নেই মাথা ঘামানোর।


আমার বাড়ি থেকে মিনিটখানেকের হাঁটাপথ সোনাগাছি অবধি। খারাপ ভাববেন না আমাকে। তবে শোভনা বলে একটা মেয়েকে চিনি। খুবই নিষ্পাপ ওর দৃষ্টি। ফেরার সময় কোনো কোনো দিন দেখা হয় ওর সাথে। আলতো হাসে আমাকে দেখে। আমি মাথা নিচু করে চলে যাই। ওকে আমার খারাপ লাগে না। কিন্তু সাহস করে কথা বলা হয়ে ওঠেনি।

জীবনটা বড্ড সররৈখিক। একঘেয়ে কাজ থেকে ফিরে ক্লান্ত অবসরে আজে বাজে গল্প লিখি। টিভি দেখার ইচ্ছা হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। তাই অগত্যা সাদা পাতা কালি করি। অনেক আবেগ জাগে, বিদ্রোহী কবিদের মত মনে হয় এক পৃথিবী লিখবো আমি। যে লেখা পড়ে রক্ত ফুটবে, পাথরের চোখে জল গড়াবে। এসব ভেবেই রাত কেটে যায়, হাসি পায় নিজের অলীক কল্পনায়, কখনও চাঁদনী রাতে নেশা করে ভীমরতি জাগে, ভেতরের দেবদাস কেদে ওঠে। নাহ অ্যাক্টিং করার সখ টা তাতিয়ে দিয়ে যায়। " জানো শোভনা সিনেমায় কাজ পেলে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখতে নিয়ে যাবো তোমাকে। তোমার জন্য স্পেশাল করে..." প্রলাপ বকতে বকতে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিছানা থেকে গড়িয়ে পরেছি। মাথার কাছের অ্যালার্ম ঘড়িটা বারোটা পাঁচ বেজে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ব্যাটারি কিনে আনতে ভুলে যাচ্ছি রোজ। আজকে মনে করে আনতে হবে। দেখাশোনার কেউ নেই। মুখের সামনে দুটো খাবার ধরার ও নেই কেউ। নাহ্ আজকে সাহস করে কথা বলবো শোভনা র সাথে। সাত পাঁচ ভেবে বাড়ি থেকে বেরোতে তখন 1টা। আবার গালাগাল শুনতে হবে বড়ো বাবুর থেকে। অভ্যাস হয়ে গেছে এসব।


কাজ সেরে হেঁটে আসছি। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। ল্যাম্পপোস্ট গুলো মাথা হেট করে রাস্তার ঘোলা জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখার চেষ্টা করছে। গাছের পাতা নিশির ডাক শুনে গুমরে রয়েছে। কয়েক টা নেরী কুকুর আকাশের দিকে তাকিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছে নিজেদের। রাস্তা আজ নিঝুম। কিছুটা দূরে দাড়িয়ে সেই ভিখারি টা। তাকে এখানে দেখে অবাক হলাম। নেতাজির একটা মূর্তির দিকে তাকিয়ে আবারো সেই এক কথা শুনলাম তার গলায়। "এখনো সে এলোনা তো" ।


বাড়ি ফিরে আসি। নেশা করার ইচ্ছা নেই আজকে। লোকটার কথা ভাবতে ভাবতে মন থেকে শোভনা র চিন্তা বিলীন হয়। লোকটার পরিবার বলে কি কেউ নেই? ও কি জন্ম থেকেই পাগল নাকি ওর জীবনের কোনো অজানা গল্প এই শহরের কংক্রিটের দেয়ালে ধাক্কা খেতে খেতে খোঁড়া হয়ে গেছে? হয়ত অনেক কিছু বলার থাকলেও শোনার মত কেউ নেই। আকাশে অল্প মেঘ। ধ্রুবতারা যেন পথভ্রষ্ট মাতালের মত আজ। সূর্যের অবসরে আলো ছড়াতে অপেক্ষমান তারারা নিস্তেজ হয়ে আসছে।


ঘুম ভাঙল তখন বাজে বিকাল চার টে। কালকেও ব্যাটারি কিনতে ভুলে গেছি। নিজের স্মৃতিকে বার কয়েক্ ধিক্কার দিয়ে বেরোলাম বাড়ি থেকে। কাজ আর হবে না আজকে। শোভনা র বাড়ির কাছে আসতেই ভিড় দেখলাম বিস্তর। ব্যাস্ত হয়ে ছুটে গিয়ে দেখলাম তার দেহটা পড়ে আছে নিথর, রক্তাক্ত। জামা কাপড় সব ছিন্ন ভিন্ন। সবাই তার নগ্ন মৃত দেহটাকে আবার ধর্ষণ করছে চোখের চাউনিতে। কিছু ভদ্র পোশাক পরা ধর্ষক হাত বাড়াচ্ছে। "বেশ হয়েছে মরেছে মাগীটা। সোনাগাছির মাল এসব বুঝলে। এদের সাথে এসব হবে না তো কার সাথে হবে? "


ভিড়ের মাঝে নানা বিষ বাক্য ভেসে আসে কানে। শোভনা র দেহের পাশে চোখে পড়ে আরো একটা লাশ। সেই ভিখারীর। হাঁ করে জিজ্ঞাসু চোখে বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে। তার সেই ছেড়া জামাটা ঢেকে রেখেছে মেয়েটার উর্ধাঙ্গ। কানে আসে মেয়েটাকে বাঁচতে গিয়েই নাকি...


আর সহ্য করতে পারি না। দৌড়ে পালাই সেখান থেকে।


তারপর মাসখানেক... বোধয় বছরখানেক কেটে গেছে। নাম ধরে আর ডাকা হয়নি আমার। ভিখারী তার জবাব পায়নি। না পেয়েছে শোভনা তার বিচার। বুজে যাওয়া সিগারেট টা আবার জ্বালাই। নেতাজির মূর্তির চোখে কি... নাহ্ । টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বসার জায়গা টা আমার বাঁধা ধরা হয়ে গেছে। যন্ত্রের চিৎকারের মাঝে বিরবির করে বলে উঠি " কই এলো না তো সে আজও।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract