Rohit Patra

Abstract

4.0  

Rohit Patra

Abstract

সরলরেখা

সরলরেখা

2 mins
338


রাস্তায় সেদিন কিছু জ্যান্ত লাশ দেখলাম। অবাক হবার মত কারণ বা অনুভূতি কোনোটাই আমার নেই। বাকি সকলের মতই আমিও তাদের রোজ দেখি, রোজ ভাবী ছোটো এই লাক্সারি জেলখানার জানলা থেকে। একই তাদের যাবার রাস্তা ফেরার পথও একই। সকাল থেকে সন্ধ্যা অসাড় দেহগুলো কে বয়ে নিয়ে চলেছে বোঝার মত। তাদের চোখ এ ক্লান্তি দেখি না, মুখে উল্লাস দেখি না। অদৃষ্টের মরীচিকা টানছে তাদের বারংবার অনাহুতের মত। মাঝে মাঝে দ্বন্দ্ব লাগে। গোঙানি কিংবা চিৎকারের নিস্তব্ধ-শূন্যতা-বিদীর্ণ-করা কিছু ভারাক্রান্ত শব্দ কানে আসে। তারপর আবার সব চুপ। দোকানে দোকানে ভিড় জমে, ভিড়ের মাঝে চোখ হারিয়ে ফেলে সররৈখিক দৃষ্টি। এত আলোতে ঝাপসা দেখায় সব, সব কিছু কেমন অন্ধকার লাগে। রঙিন চশমা পড়ে আবার চেষ্টা করি দেখার। নতুন লাগে জগৎটাকে। চশমা খুলে আবার একই গৎ। তাই ভয় লাগে। অন্ধকার গ্রাস করবে আমাকে।


ভাবতে ভাবতে কেটে যায় রাত ভোর। আজও দেখি একই দৃশ্য। তবে আজ দেখা যায় নতুন কিছু মুখ। তারা মৃত নয়, প্রাণোচ্ছল। দৃষ্টি আজ তাদের দিকেই। সরলরেখার ধার ধারছে না চোখ। তাদের উদ্দাম গতি, বেপরোয়া ছন্দ বক্ররেখা তে ম্রিয় মান। থামানো যাচ্ছে না তাদের। দুর্নিবার তাদের পিপাসা। লাইন দিয়ে চলা লাশগুলো তাকিয়ে দেখছে তাদের। হাত বারাচ্ছে তাদের দিকে কি এক নিস্তেজ লালসায়। তাদের দলে টানতে চাইছে যে ওদের। আবার ভয় লাগে। ওইটুকু প্রাণ, কতই বা তার তেজ, হয়ত বক্ররেখা য় ট্যানজেন্ট এঁকে দেবে আবার। পিলসুজের ওপর রাখা ধুকতে থাকা প্রদীপের আলোটা অজান্তেই নিভে যাবে। চোখ ঢেকে ফেলি। আজ রাতে আর ঘুম হয়না।


কাল কি হবে সেই চিন্তায় ঘামতে থাকি মাঝরাতে। ঝিঁঝিঁ পোকার গানকেও নিশির ডাক মনে হয়। ভোর বেলা তে আবার গিয়ে বসি সেই গরাদ ধরে। দেখি আজও তারা এগিয়ে চলেছে অদম্য গতিতে। আশ্বস্ত হয় মন।


ঠিক তখনই তাদের সামনে দেখি আদর্শের সুউচ্চ দেয়াল। ওপরে দাড়িয়ে আছেন ভগবান। তাদের বলছে বারংবার ভেঙে ফেলো এই পাঁচিল। এগিয়ে এসো। আমি তোমাদের সাথে আছি। পাঁচিল ভাঙতে পারে না তারা। আদর্শের দেয়ালে মাথা ঠুকে রকাক্ত দেহগুলো কে গিলতে আসে লাশগুলো। দেয়ালটা আর দেখা যাচ্ছে না। নেই সেই ভগবানও। শুধু সেই সরলরেখার দৈর্ঘ্য বাড়ে। দেয়াল ভরে ওঠে পোস্টারে, কয়েকটা নিয়ন আলো ভেঙে পড়ে। বারুদের করুণ গন্ধ আর নিকোটিনের পাক খাওয়া ধোয়ায় আবার আচ্ছন্ন হয় শহর। গলির মোড়ে মান্ধাতার আমলের বাবলুদার চায়ের দোকানে আরেক রাউন্ড চা ফোটে। ডিগ্রিধারী বিজ্ঞরা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করে। রেডলাইনের মেয়েরা খুঁজে নেয় তাদের উষ্ণতার নতুন আশ্রয় কে। চাপা পড়ে একটা ভিখারী গাড়ির নিচে। সবাই কেমন হাসছে। ফোন হাতে সবাই রিপোর্ট করতে ব্যাস্ত ফেসবুকে, টুইটারে। লাইভ আপডেট এ সব দেখে মা তার মেয়েকে বুকে চেপে ধরে।

কুড়ি ফোটে আমার সাধের সন্ধামালতিতে। আকয়ারিয়ামের মাছটা আজ ছটফট করছে না গাঁজার ধোঁয়ায়। চিৎকার আর অন্ধকারের মাঝে মুখ ঘুরিয়ে পড়তে বসি আমি আলো জ্বেলে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract