Aritra Das

Classics

4  

Aritra Das

Classics

শেষের শুরু - অধ্যায় ২

শেষের শুরু - অধ্যায় ২

4 mins
667


[পূর্ব প্রকাশিতের পর]


...আমাদের লক্ষ্য বেশ কয়েকটি। প্রথমতঃ ওদের প্রাচীর অধিকার এবং প্রাচীরের ওপর অবস্থিত নজরদার কেন্দ্রগুলিকে নিষ্ক্রিয় করা যাতে ওরা কোন বিপদ-সংকেত পাঠাতে না পারে। দ্বিতীয়তঃ ওদের ‘আলোকবর্তৃকা’র সমস্ত সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র যেখানে যেখানে মজুত রাখা থাকে সেই জায়গাগুলিতে হলুদ ঢ্যাঁরা কেটে রাখা আছে; এই জায়গাগুলিকে অধিগ্রহণ করতে হবে, দরকারে ধ্বংস করতে হবে। তৃতীয়তঃ ওদের উড়োজাহাজগুলিকে ধ্বংস করতে হবে এবং উড়োযান অবতরণ কেন্দ্রটির সংকেত ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে দিতে হবে।”


-“তাহলে আমাদের পরিকল্পনা কি হওয়া উচিৎ?”


-“একটু সবুর কর মিতে, এটাই বলতে যাচ্ছিলাম। হনুমন্ত ও কয়েকজন সঙ্গী তাঁরা বিকালের দিকে প্রাচীরের মাথায় চড়ে বসে থাকবে। ভাবখানা এমন হবে যেন কয়েকটি দলছুট বাঁদর বসে রয়েছে তাদের সঙ্গীদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে। মাঝে মধ্যে তারা মুখ দিয়ে আওয়াজও করবে, যাতে রাক্ষসদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে। এরপর অন্ধকার হয়ে গেলেই আরো কয়েকশো মানুষ চড়ে বসবে প্রাচীরে। তারপর শুরু হবে অভিযান। প্রাচীরে এবং নজরদারি খিলানগুলিতে যত রাক্ষস থাকবে তাদের বধ করতে হবে প্রথমেই; নিঃশব্দে, যাতে কোন আওয়াজ না বেরোয়। হনুমন্ত, এটা কিন্তু তোমাকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন আওয়াজ না হয়, নাহলে ভিতরকার প্রহরীরা সতর্ক হয়ে গেলে আমরা সদলবলে সবাই শেষ।”


-“আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন প্রভু। প্রত্যেকটি অংশগ্রহণকারী মানুষকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। রাক্ষসরা নড়বার সুযোগও পাবে না। আকষ্মিক ও নিশ্চিত মৃত্যু বিধান করা হবে তাদের জন্য।”


-“বেশ। একবার কার্য সমাধা হয়ে গেলে ওরা সিঁড়ি ঝুলিয়ে দেবে ওপর থেকে। এতে করে আমরাও প্রাচীরের ওপর উঠতে পারব। এরপর যেসব অঞ্চলগুলিতে প্রহরা আছে সেসব জায়গাগুলিতে আমি সৈন্যক্ষয় করতে থাকব নিঃশব্দে, তোকে প্রহরা দেওয়ার জন্য। হনুমন্ত ও একপাল মানুষকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে এই নীল ঢ্যাঁড়া দেওয়া জায়গাগুলিতে তোরা অবস্থান করবি। ফলে ‘আলোকবর্তৃকা’-দের সরঞ্জাম রাখবার জায়গাগুলি অধিকৃত হয়ে থাকল। বাকি কয়েকজন মানুষ,তারা এরপর নিঃশব্দে প্রবেশ করবে উড়োজাহাজ বন্দরে। প্রত্যেক উড়োজাহাজের নীচে রেখে দিয়ে আসবে একটি করে সময়-কন্দুক। তোরাও ততক্ষণে ওদের অস্ত্রাগারগুলিতে ‘সময়-কন্দুক’ স্থাপন করে রাখবি যাতে মোটামুটি একই সময়ে সব বিস্ফোরণ একই সাথে ঘটে। বিস্ফোরণ ঘটবার পর অবশ্য মুখোমুখি যুদ্ধ।”


-“কিন্তু এই পরিকল্পনা যদি ব্যর্থ হয়ে যায়?”


-“তবে সন্মুখ যুদ্ধ! এছাড়া আর কিছু করণীয় নেই।”


-“তোর কি মনে হয় দাদা, এই যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হব?”


একথায় বীরভদ্র খানিক্ষণ সস্নেহে তাকালেন লক্ষণের দিকে। তারপর তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললেন-


-“জীবনের প্রথম যুদ্ধ, একটু ভয় লাগছে, তাই নারে মিতে? আমারও ভয় করছে, কিন্তু একই সঙ্গে কাজ করছে কর্তব্যবোধ। আর তার সঙ্গে যুক্তি। এখানে লড়াইটা আধুনিকতা বনাম আদিমতা। সংখ্যাতত্ত্বের দিক দিয়ে আমরা এগিয়ে, প্রযুক্তির দিক দিয়ে ওরা। কাজেই পরিকল্পিত ভাবে এগোতে হবে। সমস্ত সমর পরিকল্পনা সবসময়েই কার্যকর হয় না, কিছু তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মোট কথা, ওদের সুবিধাজনক অবস্থানগুলির ওপর আমরা যদি প্রথমেই কব্জা করে নিতে পারি, তাহলে আমাদের জয় নিশ্চিত। তাছাড়া, যেটা প্রথমেই বলেছি; ওরা দেবতাদের মনে করে ওদের মূল প্রতিদ্বন্ধি। মানব বা গন্ধর্বরা যে সংঘবদ্ধ আক্রমণ করতে পারে তা ওদের ধারণার বাইরে। হনুমন্তের সংবাদ অনুযায়ী প্রাকারের ওপর প্রহরীর সংখ্যা কম; সবারই নজর মূলতঃ আকাশের দিকে। মানবরাও যে ওদের শত্রু এটা বুঝতে বুঝতেই ওরা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের দরকার ওদের বুঝে উঠবার আগেই ঝটিতি আক্রমণে ওদের বিপর্যস্ত করে ফেলা। রাক্ষস মানেই কিন্তু অপরাজেয় নয়। মনে আছে তো কথাটা?”


চকিৎে লক্ষণের মনে ভেসে উঠল রাজা জনকের সেই বিখ্যাত উক্তি।


দুদিন পরেই এক রাত্রিকালে, রাক্ষস-দূর্গ ‘নালক’ ঘিরে ফেলল বীরভদ্র ও লক্ষণের অধীনস্থ মানবসেনারা।


**********************************************************************


-“কিছু দেখতে পাচ্ছিস দাদা এই অন্ধকারে?”


-“না রে!”


-“তোর এই ‘মায়া-চোখ’ দিয়েও কিছু দেখা যাচ্ছে না?”


শুলিন যাওয়ার আগে একটা অদ্ভুত ‘চোখ’দিয়ে গেছিলেন বীরভদ্রকে। রাত্রিকালের নির্নিমেষ অন্ধকারের মাঝেও এই চোখ দিয়ে সামনের দৃশ্য একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব অবধি পরিষ্কার দেখা যাবে। এটিকে প্রথমে চোখে এঁটে নিয়ে তারপর একটা বড় পুঁতিতে একবার চাপ দিলেই সামনের দৃশ্য অন্ধকারে পরিষ্কার ফুটে উঠবে। পরিষ্কার ঠিক নয়, কিরকম যেন একটা সবুজাভ দৃশ্যের মত হয়ে যাবে ব্যাপারটা; অনেকটা দিনের বেলায় একটা পাতলা সবুজ পর্দার মধ্য দিয়ে বাইরের দৃশ্য যেমন দেখতে লাগে ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। ঐ একই পুঁতিতে দ্বিতীয়বার যদি চাপ দেওয়া হয় তাহলে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত যেকোন উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীদের দেহ থেকে নির্গত হওয়া তাপ অনুযায়ী সেই প্রাণীর অবয়ব সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়। এইরকমই অদ্ভুত সে চোখ! লক্ষণ আদর করে তার নাম দিয়েছেন ‘মায়া-চোখ’। প্রথম যে দৃশ্যে চারিদিক সবজেটে হয়ে গিয়ে অন্ধকারেও বস্তুকে দৃশ্যমান করে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাতপাখির দৃষ্টি’। আর দ্বিতীয় যে দৃষ্টি উষ্ণশোণিতবিশিষ্ট প্রাণীর রক্তের গরম ভাপ পড়ে তার দেহের আবছা অবয়ব ফুটিয়ে তোলে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অজগরের দৃষ্টি’। এই ‘মায়া-চোখ’-এর কথাই লক্ষণ বলছেন এখন। চোখটিকে সক্রিয় করে একবার সামনের দিকে তাকালেন বীরভদ্র। নাহ! কিছু বোঝা যাচ্ছে না দূর থেকে।


সময় পেরিয়ে যাচ্ছে হু হু করে। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই অপেক্ষায় থাকলেন তাঁরা। লক্ষণ দৃশ্যতই বেশ অধৈর্য্য হয়ে পড়েছেন। সুগ্রীব পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন সামনের দিকে। চিন্তিত হয়ে পড়লেন বীরভদ্র, কোথাও কোন বিপদ হল না তো?


এরপরেও বেশ কিছুক্ষণ পর প্রাচীরের গা থেকে ভেসে এল হনুমন্তের সংকেত। এই ডাকের মানে হল, রাস্তা পরিষ্কার! আর দেরি না করে সদলবলে এগিয়ে গেলেন বীরভদ্র। প্রাচীরের কাছে এসে খুঁজে পেলেন ঝোলানো সিঁড়িগুলি। বীরভদ্র, লক্ষণ, সুগ্রীব, ঋক্ষবান ও অঙ্গদ- একে একে সবাই উঠে এলেন ওপরে ঝোলানো সিঁড়িগুলি বেয়ে। বাকিরা কেউ কেউ তাঁদের অনুসরণ করল, কেউ বা আবার প্রাচীরগাত্র বেয়ে উঠে এল ওপরে। অসম্ভব এদের শারীরিক সক্ষমতা! ওপরে উঠে এসে দেখা হল হনুমন্তের সঙ্গে। পারষ্পরিক অভিনন্দনের পর এবার শুরু হল দ্বিতীয় পর্যায়।...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics