শেষের চিঠি
শেষের চিঠি
স্নেহের প্রিয়তমা;
আমার আদর নিস আর আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার চাদর জড়িয়ে রাখিস শেষবারের মতো। হ্যাঁ শেষবার, কারণ এই চিঠিটা যখন তোর হাতে পড়বে, আমি ততক্ষনে ধরিত্রিমাতার কোলে চিরদিনের মতো শুয়ে থাকব, ঠিক যেমন পথশ্রমে স্রান্ত পথিক বটগাচ্তলে শান্তিতে বিশ্রাম নেয়।
না কিছুই বলার নেই তোকে। বাকরুদ্ধ আমি আজ। আমাদের প্রেমের এই করুন পরিণতিতে হয়ত মলিন হবে আমাদের মনের সাজ। একসাথে সুখে শান্তিতে সংসার করার সপ্ন যে দেখেছিলাম দুজনে, হাতে হাত ধরে, প্রকৃতির করাল দৃষ্টিতে সেই সংসার ভেঙে খান খান। যতই চেয়েছি এক হতে, পারিনি, সম্ভব হয়নি। কেনো? তার উত্তর আমার কাছে নেই। তোর কাছেও থাকবে আশা করিনা। কারণ তুই আর আমি তো একই ছিলাম। একই বৃন্তের দুটি কুসুমের মতো। একই দেহের দুটি চোখের মতো।
জানিস সবাই বলে পৃথিবীটা সুন্দর। ভুল। পৃথিবী সুন্দর হতে পারেনা।কারণ সে সবাইকে সমানভাবে রাখতে পারেনা, তা সে সম্পদের দিক দিয়ে হোক, কিংবা সৌন্দর্যের দিক দিয়ে হোক, অথবা সম্মানের দিক দিয়ে হোক। ভুল বকছি ভাবলি? নাহ রে, ভাব একবার যে বিশ্বের দরবারে তো ফার্স্ট ওয়র্ল্ড আর থার্ড ওয়ার্ল্ড ভেদাভেদ আছে। জীবন্ত মনুষ্যসমাজেই তো জাতপাত, ধর্মর ভিত্তিতে ভেদাভেদ আছে। আসল সুন্দর হলো মৃত্যু। কোনোদিন দেখেছিস কি চিতার আগুনে পোড়ে ধনী বা গরীবের মৃতদেহ আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে?সেজন্যই মৃত্যু সুন্দর।
যাক , আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। গলার কাছে খুব পোড়াচ্ছে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে আমার কণ্ঠ। লেখা এঁকেবেকে যাচ্ছে। ওই যে দেখা যাচ্ছে তেনাদের ,আমাকে নিতে এসেছে। আর বেশি বলবনা।ভাল থাকিস। সুস্থ থাকিস।
আলবিদা, টাটা।
একটাই প্রশ্ন থাকবে শেষে তোর কাছে। আমরা প্রেম করে কি ভুল করলাম? না ভুল করে প্রেম করলাম? জবাবের অপেক্ষায় থাকব।
ইতি: তোর অভিশাপ।