Riya Singh

Abstract Classics

4.5  

Riya Singh

Abstract Classics

শেষ ঠিকানা তুমি (পাঁচ)

শেষ ঠিকানা তুমি (পাঁচ)

6 mins
326


পরের দিন গুলো অয়ন্তিকার অনুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ওর হাবভাব লক্ষ্য করেই কাটাতে থাকলো ,এইভাবে প্রায় মাস ছয়েকের মধ্যেই অনু অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছিল আগের মতো গুটিয়ে রাখতো না , অল্প অল্প করে হলেও কিছু কথা বলতো ,একটু হাসতো দেখতো বা হাত দিয়ে ইশারা করে যেটা বোঝানোর চেষ্টা করতো সেটাই মুখ থেকে শব্দ বের করে কথা গুলো আসছিল। আর অনু সাধারণভাবে থাকতো পড়া না শুরু করলেও টুকটাক কিছু করতো যেমন পাখি কাগজ কেটে , অয়ন্তিকার দেখানো আঁকা ,কিনে দেওয়া রুমালে ডিজাইন করতো ,অনেক এমন অ্যাক্টিভিটির মধ্যে ওর খুশি গুলো ধরা পড়তো, অয়ন্তিকার ট্রিটমেন্টের জন্য অনু প্রায় আশি- নব্বই শতাংশ ভালো হয়ে গেছিল, আদর আর বড় বোনের মতো আগলে রাখার জন্য অনু যে ভরসার জোরে ভালো হয়ে যাচ্ছিল সেটা কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো ...


অতিরিক্ত আদর,যত্ন সময়ে যেকোন অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠে ভবিষ্যতে ভালো থাকে সেই কথাটাই বেশি করে অয়ন্তিকা পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে অনুর জন্য প্রযোজ্য। এইভাবে দুটো অচেনা মানুষের অল্প আলাপের বন্ধুত্বের মাধ্যমে অনুর চিকিৎসার দিনগুলো কাটলো বেশ ভালো মতোই , অয়ন্তিকার ও মনটা হালকা থাকতো এই ভেবে প্রথমে যে ভয়টা পেয়েছিল সেটা আর নেই। অরিন্দমের কথামতো ও সবকিছু অনুর পছন্দ করা জিনিস এনেছে, ওর পছন্দ মতো একদিন খাবার ও খাইয়েছে । ওর সাথে ওর মতো হয়ে দিনের পর দিন যেভাবে মিশেছে।

বেশ কয়েকদিন পর বাড়ীতে ফিরে এসে অরিন্দম অনু আর অয়ন্তিকা দুজনের মধ্যে বাড়িতে কাউকে দেখতে না পেয়ে শেষে রামু কাকা কে জিজ্ঞাসা করল, ওরা কোথায় ? আওয়াজ নেই কেন ?ডেকে আনো তো দেখি। না থাকলে এরা ঘর পুরো শান্ত !


রামু কাকা জানালো,


আপনি ছিলেন না ছোট সাহেব অনু মামণি অনেকদিন বেরোইনি তাই নতুন দিদিমণি ওনাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।


আমাকে না বলেই বেরিয়েছে মানছি সবে সুস্থ হবে একটু একটু করে তবুও আমাকে জানাবে না। একবার বললে কি বেরোতে দিতাম না আমি? নাকি অন্য কিছু প্ল্যান করছে মেয়েটা ! অহেতুক সন্দেহ অরিন্দমের মনে দানা বাঁধছিল। সবেমাত্র বন্ধুত্ব হয়েছে তাতেই এতোটা...


এসব ভাবতে ভাবতে অরিন্দম দেখলো ফোন বাজছে,ফোনের উপর ভেসে উঠছে লেখা মিস বসু কলিং। ফোনটা ধরে ওপাশে থেকে আওয়াজ এলো,


মিস্টার স্যানাল তাড়াতাড়ি আসুন একটু স্পন্দন নার্সিংহোমে প্লিস!


তড়িঘড়ি গন্তব্য তে পৌঁছে দেখলো অরিন্দম অয়ন্তিকা পায়চারি করছে,ওকে দেখতে পেয়ে বললো অনুর প্যানিক অ্যাটাক এসেছিল অজ্ঞান হয়ে গেছে ।আ...আমি বুঝতে পারছি না হুট করে কেন হলো ? অনেকটা রেসপন্স করছিল । টুকটাক কথাও বলতো, দু'জন আজ রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে হাঁটছিলাম সামনে কাউকে দেখে চেঁচিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।


মিস বসু আপনি এতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন কিভাবে হতে পারলেন? যখন আপনি নিজেই জানতেন ও সবে অনেকটাই রিকোভার করতে শুরু করেছে, আমাকে তো নিয়ে যেতে পারতেন বলেছিলাম তো যাবো কটা দিন সবুর করতে পারলেন এর মধ্যে বিপদ ঘটিয়ে ফেললেন আপনি! ( অরিন্দম)


অয়ন্তিকা একদৃষ্টিতে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে ছিল, ওর মুখে কটা দিন অয়ন্তিকা নাম শুনতেই অভ্যস্ত হচ্ছিল। আবার অচেনা প্রথমদিনের মতো মিস বসু নাম শুনে মুখটা নিচু করে নিলো । যত ই হোক সত্যি এটাই দোষ কোথাও গিয়ে ওর ই,ও না বেরোলে অনু আবার হসপিটালে ভর্তি হতো না। তাই কিছু বললো না চুপ করেই থাকলো। অনুর জ্ঞান ফিরতেই অরিন্দম ওকে আটকে দিয়ে নিজে ভিতরে ঢুকলো আর বলে গেল ও যেন অনুর সাথে দেখা না করে। অয়ন্তিকা বাইরেই বসে রইলো তাই জন্য,চলে যাওয়াটা এই মুহূর্তে ভালো দেখাবে না।


একদিন রেখে অনুকে ছেড়ে দেওয়া হবে, আসার পথে  অয়ন্তিকা আর অরিন্দম এর মধ্যে কোনরকম কথাবার্তা হলো না। ফেরার পর যে যার ঘরে চলে গেল, রামু কাকা অয়ন্তিকা কে খাবার দিয়ে গেল আর বললো খাওয়ার পর যেন ছোট সাহেবের সাথে দেখা করে ছাদে ডেকেছে। অয়ন্তিকা জানে অরিন্দম রেগে গেছে, এইমুহুর্তে তাই চুপচাপ কথাগুলো হজম করা নেওয়া ছাড়া ওর কাছে কোন বিকল্প নেই। হয়তোবা ওকে চলে ও যেতে হতে পারে ভাবনাগুলো এসেও ঘুরপাক খেতে লাগলো।


শুনছেন! মিস বসু আপনার ফিসটা দেওয়া হয়ে যাবে আমি কালকের মধ্যে ই পেমেন্ট করে দেবো, যত ই হোক একটু না অনেকটা হলেও আমার বোন ইমপ্রুভমেন্ট করেছে অল্ফ আর বাকিই সুস্থ হতে ,ওটা মেডিসিন কন্টিনিউ করলেই যাই হোক তাও সই। (অরিন্দম)


আমি টাকার পিচাশ নই মিস্টার স্যানাল, ওই টাকাটা আপনি রাখুন ভেবে নেবেন আপনার বোন কে ট্রিট দিলাম যেহেতু ওকে আমি নিজের বোন ই ভেবেছি এখনো ভাবি। রক্তের সম্পর্ক না হলেও মনের সম্পর্ক ও আছে ওর সাথে এটুকু দাবি করলাম এটা আশা করি এতো দিনে অর্জন করতে পেরেছি। ধন্যবাদ আপনাকে এই ব্যবহারের জন্য। ( অয়ন্তিকা)


  অয়ন্তিকার কথাগুলো শুনে খটকা লাগলো অরিন্দমের মনে। আদৌও কি মেয়েটাকে এরকম বলা ঠিক হলো! না বুঝে কি একটু রুড শোনালো। একদম না উনি দায়িত্ব পালন করেন নি যা করেছে ঠিক করেছে অরিন্দম ওর মন কে বোঝালো।


সেদিন রাতটা দুটো মানুষের অস্থিরতার মধ্যে গেল, একজন প্রতিজ্ঞা করলো আর যেন ওই দায়িত্ব জ্ঞানহীন মানুষের সাথে না দেখা হোক। আরেকজন মনের কোনে এক চিলতে অভিমান কে অভিযোগ ভেবেই সবকিছু মাটি চাপা দিয়ে কোনরকমে রাতটা পার করার তাড়ায় দু চোখ বন্ধ করলো।


খুব সকালে উঠে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো অয়ন্তিকা তারপর রামু কাকা কে ডেকে হাতে চাবি ধরিয়ে বেরিয়ে গেল অবশ্য যাওয়ার আগে বাড়িটাকে পিছুটান ভেবে পিছু তাকিয়ে সামনে এগোলো। সকালে উঠতে অরিন্দম অয়ন্তিকার কথা জিজ্ঞেস করার আগেই রামুকাকা জানালো সে চলে গেছে। অরিন্দম কথা বাড়ালো না চুপচাপ নিজের ঘরে রেডি হলো অনু কে ডিসচার্জ করে দেবে ওর জন্য নতুন সাইকোলজিস্ট খুঁজতে হবে। 


ঘরে নিয়ে আসার পর অনু সবার আগে অরিন্দম কে জিজ্ঞেস করলো,


দাভাই অয়ন্তিকা দি কোথায়? আমি ভালো হয়ে গেছি তার আগেই চলে গেল।কি ভালো রে দিদিটা রোজ আমার সাথে কথা বলতো জানিস। এই শোন না ফোন করে আসতে বলিস তো। এই দাদা কোথায় হারিয়ে গেলি?


উমম কিছু না, ও পরে আসবে ফিরে গেছে ওর বাড়িতে। তুই পরে কথা বলবি বনু। রেস্ট কর কেমন! 


বলে কোনরকমে কথাগুলো এড়িয়ে গেল অরিন্দম অনুর থেকে।


অনুর আপাতত এই মুহূর্তে কিছু মনে হয়নি সুস্থ হবে হয়েছে তাও দূর্বলতা রয়ে গেছে ওর মধ্যে। এদিকে অরিন্দম একপ্রকার পালিয়ে এলো বোনের থেকে। ওর কানে শুধু অয়ন্তিকার কথাগুলো বাজছে।


কেটে গেছে বেশ কটা মাস, সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথাবার্তা বলে অনুর সম্বন্ধে ওরা মন্তব্য করেছিল , আপাতত মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠেছে । কিন্তু মেডিসিন ডোজটা কন্টিনিউ করুক ওটা শেষ করতেই হবে আর পড়াশোনা চাইলে শুরু করতে পারে।ব্যস্ত থাকবে নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশলে ভিতরের‌ ভয়টা কাটবে।


 সেইমতো অনু আবার কলেজটা শুরু করলেও অরিন্দমের মনে কিসের অস্থিরতা ও নিজেও জানে না বরং এই কমাসে আরো কাছে ডুবেছে ।যেটুকু অবসর রাখতো ওটা বোনের সাথে বাদ দিয়ে রাখে না। আর অয়ন্তিকা ভালো আছে ,ভালোই থাকে মাঝে মাঝে রাতে ঘুমোনোর আগে দুটো চোখ ওকে ডাকে। সেইদিন টা ওর নির্ঘুম কাটে।


  এরমধ্যে একদিন কলেজ যাওয়ার পথে অনু দেখলো অয়ন্তিকাকে , স্কুটি চালিয়ে কোথাও যাচ্ছে। ওকে দেখে মনে হলো অনুর ওর দাদার কথাগুলো। অরিন্দম তো ওকে বলেছিল এখানে থাকে না মানে কলকাতার কাছাকাছি বাড়ি। তাহলে এখন কি করছে তাই কলেজ না গিয়ে ও অটো টাকে ওর পিছু নিতে বললো। যেহেতু অনু সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করে তাই রোজকার যাতায়াত এইভাবেই করে।


অয়ন্তিকাকে একটা নার্সিংহোমে ঢুকতে দেখে ও পিছনে এলো। একজন কে জিজ্ঞেস করতে বললো উনি একজন সাইকোলজিস্ট। কথাটা কোথাও গিয়ে অনু কে কিছু ভাবতে বাধ্য করলো। তাই সামনে থাকা রিসেপশনে জিজ্ঞেস করলো ওনার অ্যাপয়েনমেন্ট পাওয়া যাবে? 


না ম্যাম উনি প্রচুর বিজি থাকেন আপনি ট্রাই করুন এই মুহূর্তে হয়তো হবেনা। তবে কদিন দেরী হতে পারে। ( নার্স)


আমার এমার্জেন্সি আছে একটু দেখুন না। প্লিস ম্যাম। ( অনু)


সামনের মানুষ কাকুতি মিনতি করলে অনেকেই গলে যায় অনু ও সেটাই অ্যাপ্লাই করে ঠিক দু'দিন পরের দিনে অ্যাপয়েনমেন্ট পেল।


কোথায় গেছিলিস? শুনলাম কলেজ যাসনি তুই আজ।


অনু বাড়ি ফিরে অরিন্দম কে দেখে একটু অবাক হলো , সচরাচর ও এইসময় ফিরে আসে না। তাই উত্তর দিলো,


এমনিই ইচ্ছে হয়নি বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে ছিলাম। তুই এইসময় ট্যুর শেষ? কই বললি না তো আজ ফিরবি?


না ফিরলে তো জানতেই পারতাম না যে তুই আড্ডা দেবার জন্য নার্সিংহোমে যাস। (অরিন্দম)

(চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract