শেষ ঠিকানা তুমি (দশ)
শেষ ঠিকানা তুমি (দশ)
অয়ন্তিকার বাবা এই ভেবে অবাক হলেন উনার এতবার বোঝানোর পরও এই মানুষটা কোন কথা শুনবো না আর রকম হঠকারিতা করে ফেললো। অয়ন্তিকার কথা শুনে নিজেদের ঘরে গিয়ে দেখলেন ভিতরের থেকে দরজা বন্ধ করা আছে।তাই একবার ধাক্কা দেওয়ার কথা ভাবার আগেই দরজা টা খুলে গেল।
এইরকম করে দুটো দিন কাটলো, অয়ন্তিকার মা ওদের কারোর সাথে কোন কথা বলেননি, নিজের মতো বাড়িতে সবরকম কাজগুলো করেছেন কোনরকম সাড়া না করেই। অয়ন্তিকার বাবা আর অয়ন্তিকা নিজেও আর কোনরকম কিছু বলার আপাতত প্রয়োজন নেই।
বাবি মা কিন্তু খুব রেগে আছে,কথা বলে একবার দেখলে হতো না? (অয়ন্তিকা)
থাক, নিজের কাজগুলো অনুযায়ী আপাতত ওর এটাই পাওনা ছিল। এই বলেও মেয়েকে থামিয়ে দিলেও মনে মনে উনিও চান কথা বলতে কিন্তু যে মানুষ অযথা কাজ করে তাকে বোঝাতে চাওয়া অসম্ভব!
বাবিই! কি গো চলো না মায়ের সাথে কথা বলি না,চলো না।
মেয়ের জেদে অয়ন্তিকার বাবা ওর মায়ের সাথে কথা বলতে রাজি হলেন। গিয়ে দেখলেন দুজনে মুখ গোমড়া করে উনি বসে আছেন,ঠিক দু পাশে দুজনে বসে অয়ন্তিকার মা কে বিরক্ত করতে শুরু করলে শেষে অয়ন্তিকার মা হেসে ফেলার পর সেদিনের মতোই সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে গেল।
কি রে মুখটা ওমনি করে রেখেছিস কেন? (অরিন্দম)
তো কি করবো নাচবো? (অনু)
এই রকম ছ্যাক করে উঠছিস কেন? কিছু কি হয়েছে? না মানে!(অরিন্দম)
দেখ দাদা, এইমুহুর্তে আমি খুব খুব খুবই রেগে আছি বুঝেছিস। তাই আপাতত আমি কথা বলতে চাই না প্লিস তুই যা ( অনু)
আচ্ছা আচ্ছা বাবা তুই রেগে আছিস পুরো আগুন হয়ে কিন্তু কার জন্য সেটা তো বলতে হবে নাকি এটাও কি বলা যাবে না?(অরিন্দম)
না যাবে না তুই সর এখানে থেকে এখন।(অনু)
ওহ এখন আমাকে দরকার নেই তাই না? এখন ওর কেন দাদাকে দরকার হবে ঠিক ঠিক। আচ্ছা যখন আসবে তখন দেখবে মজা।(অরিন্দম)
আমি এখন কিছু শুনতে চাই না তোর থেকে আমার এখন মনখারাপ ভালো লাগছে না।(অনু)
বলে দেখ হয়তো চেষ্টা করে দেখতে পারি মন ভালো করার তখন কিন্তু তোর ই লাভ ভেবে দেখ।
অরিন্দম এর কথা শুনে অনু কিছু একটা ভাবলো, তারপর বললো,
অয়ন্তিকা দি অনেকদিন আসেনি,ফোন তুলছে না রে তাই আর কি! এছাড়া কিছু নয়।
বোনের কথা শুনে অরিন্দম বললো,
আচ্ছা আমি যদি একবার ফোন করে বলে দেখি আর আসতে বলি তাহলে খুশি হবি তো?
তুই কি কেন ফোন করবি? তুই কি অয়ন্তিকা দির সাথে কথা বলিস? আমি তো দেখেছি তোরা একদিন ও কথা বলিস নি যেদিন থেকে আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি।(অনু)
সেরকম কিছু না আমি ব্যস্ত আর তোর অয়ন্তিকা দিও তো খুব ব্যস্ত সেই কারণে আর কি কথাই হয়না বেশি। এতো কিছু ভাবিস না ফোন নম্বর টা দে দেখি।(অরিন্দম)
তোর বন্ধু হয় তোর কাছে নম্বর নেই? আশ্চর্য ব্যাপার তো!
বোনের কথায় থতমত খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে একটা উত্তর দিলো অরিন্দম,
আরেহ ফোন থেকে ডিলিট হয়ে গেছে, খেয়াল নেই এখন মনে পড়লো তাই বললাম। তুই মনখারাপ করিস না বলেছে যখন ঠিক আসবে হয়তো কাজ আছে আমি একবার দেখবো ফোন করে দেখবো।
বোনকে এতো ভরসা দিয়ে বললেও অরিন্দম ভাবলো আদৌও কি অয়ন্তিকাকে ফোন করে কথা বলতে পারবে নাকি সেই ব্যবহার গুলো ফিরিয়ে দেবে।দেখা যাক একবার বলেই কথা ওপার থেকে যা আসবে সেই হিসেবে অরিন্দম পরের দিনগুলো আন্দাজ করে নেবে।রাতের দিকে একবার ফোন করবে ভেবে চেনা নম্বরে ফোন করে অরিন্দম,ওপাশ থেকে রিং হচ্ছে বেশ কয়েকবার রিং এর পরে ফোনটা রিসিভ হয়।
হ্যালো কে বলছেন? (অয়ন্তিকা)
এতো জলদি ফোনের নম্বর সাথে মানুষ টাকেও ভুলে গেছেন! এতো ভুলো মন নিয়ে ডক্টর কিভাবে হলেন?(অরিন্দম)
কে বলছেন বলুন নয়তো ফোন রাখছি,যতোসব খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আর।
আসলে সবে একটু চোখ লেগেছিল সেই অবস্থায় ফোনটা ধরেছে অয়ন্তিকা,এতোটা খেয়াল করেনি যে ওপারে কে আছে। তাই নয়তো...
মিস বসু!
এই ডাকটা শুনেই তড়াক করে উঠে বসে পড়লো বিছানায় অয়ন্তিকা। এটা তো ওকি ঠিক শুনছে! তাই ফোনটা নামিয়ে নম্বরটা চেক করে দেখলো একদম সঠিক ভাবছে, তাই মিনমিন করে বললো,
মিস্টার স্যানাল আপনি?
এই তো চিনে গেছেন,ভেরি গুড এতো জলদি মেমোরি ফিরে এসে গেছে দেখে খুশি হলাম।
অরিন্দম এর কথা শুনে অয়ন্তিকা কি উত্তর দেবে ভেবে পারছেনা তাই ও বড় রকমের গলার স্বর টা আরেকটু আস্তে করে বলল সরি মিস্টেক হয়না আমার, আমি আসলে ফোনটা চেক করিনি ঘুমের ঘরে তুলেছিলাম তো আপনার নম্বরটা খেয়াল করা হয়নি বলুন কি দরকার?
অরিন্দম ভেবেছিল আরেকদিকে হয়ত রাগ একথাই বলবে না। বা অন্য রকম আচরণ করবে কিন্তু সেইরকম আসবেন না পেয়ে, এত সুন্দর ভদ্র আর নরম গলায় কথা বলা দেখে অরিন্দম থাকলো তাহলে ওইদিনের বলা কথাগুলো উনি মনে রাখেনি তাহলে অরুচি স্বাভাবিক সহজভাবে ওনার সাথে কথা বলা।তাই বললো,
আপনি আমার বাড়িতে আসা বন্ধ করেছেন কেন? আমার উপর রাগ করে?
এমা না না আপনার উপর খামোখা রাগ কেন করবো, এইধরনের আচরণ সবার সাথে কথা যায় না।( অয়ন্তিকা)
কথাটা শুনে অনেক অরিন্দমের খারাপ লাগলেও সেটা পাত্তা না দিয়ে আবার প্রশ্ন করল,
আপনি আসেননি বলে আমার বোনের মনটা খারাপ আপনি সেদিনে ব্যবহার গুলো আশাকরি মনে রাখেন নি মনে রাখলেও তার জন্য ক্ষমা করে দেবেন কিন্তু আমার বোন যেহেতু আপনার নিজের বোনের মতো তার মন রাখতে তাকে খুশি করতে আপনি চাইলে এখানে এসে আড্ডা দিয়ে যেতে পারেন। আমার কোনো অসুবিধা নেই। দয়া করে পুরনো কথা মনে রাখবেন না।
অয়ন্তিকা শুধু বলল,
আচ্ছা,গুড নাইট।
গুড নাইট (অরিন্দম)
অয়ন্তিকার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না অরিন্দম নিজে থেকে ওকে ফোন করেছে, এতো রুড মানুষ আবার ওকে সরি ও বলছেন স্বপ্ন দেখছে না তো! তাই নিজেই নিজেকে চিমটি কেটে যখন ব্যাথা পেলো তখন সত্যি হয়েছে মানলো।এদিকে অরিন্দম মনে শান্তি পেলো যখন অয়ন্তিকা বললো পুরনো কিছু মনে নেই কিন্তু পরক্ষণেই ওর মনে খারাপ লাগাও এলো সবার উপরে রাগ করা যায় না কথাটা ভেবেই।ওর মনের ভিতরে অয়ন্তিকার কথা ভাবলেই অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হয় কিন্তু কেন? এতো দিনের নিয়ন্ত্রণ যেন ভেঙেচুরে নিজেকে বেরিয়ে আসতে চায়। যতবার ভাবতে চায় ওর মাথা ওর সাথ দেয় না বারবার ভিতর থেকে বলে সব ভুল এগুলো কিছু নয়। এই দ্বন্দ্ব এর শেষ কোথায় ও জানে না তবুও মাঝেমধ্যে ঠেলে বেরিয়ে আসে।
অয়ন্তিকার প্রথম প্রথম চাপা রাগটাই অরিন্দমের সেদিনের কথা ব্যাবহারে থেকে ভিতরের অভিযোগে এসে পৌঁছেছে সেটাই এখন অভিমানে পুড়ছে। কিসের মায়া আছে অরিন্দমের বাদামী চোখদুটো তে ও জানে না। দেখলেই ও যেন কোথায় হারিয়ে যায়,এতো মানুষের সাথে পেশাগত কারণে কথা বলেছে ভিতরের মানুষ কে টেনে এনেছে। এই মানুষটার সামনে কেমন যেন অবশ লাগে ওর। তবুও শক্ত হাতে অনুভূতি যেগুলো মাথাচাড়া দিয়েছে ও টের পেয়েছে শেষ পরিণতি কি তাই রাশ টেনে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে এখন। নিজেকে সামলে রাখাই ভালো যখন পরিনতি আমাদের জানার মধ্যে পড়ে।যতদিন আটকে রাখা যায় আর কি!
(চলবে)