Tamali Sarkar

Abstract Drama Others

3  

Tamali Sarkar

Abstract Drama Others

শাশুড়ি মা যখন মা

শাশুড়ি মা যখন মা

5 mins
517



আমিও বাবা মায়ের সন্তান, আমার শাশুড়ির পুত্রবধূ। এ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি কোন শাশুড়ি মা খারাপ নয়। বলতে গেলে আমরাই খারাপ! ঠিক বলছি, হ্যাঁ আমরাই খারাপ। প্রত্যেক শাশুড়ি মা, তোমার মা এক সময় ঘরের বউ হয়ে এসেছে। সেও বাপের বাড়ির সংসারে বাবা, মা, ভাই, বোনের মায়া মমতা, ভালোবাসা সবকিছু ত্যাগ করে অন্ধবিশ্বাস এর উপর ভর করে অপরের ছেলের সংসারে পা বাড়ায়। কত দুঃখ কষ্ট, লাঞ্ছনা বঞ্চনা নিয়ে তাকে তিলে তিলে সংসারটা গড়ে তুলতে হয়। যৌথ পরিবার হলে তো কোন কথাই নেই, তাকে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয়, সবার ভরন পোষণের দায়িত্ব নিজের কাজে তুলে নিতে হয়। কত যে তার চোখের জল ঘামের জলে মিশে গেছে তার কোন হিসেব নেই। শুধু ধৃঢ় মনে সংসার ধর্ম করে গেছেন। তাকে আমরা নতুন বউয়ের গুণ শেখাতে যাই। কিন্তু আমরা নতুন বউ হয়ে এসেই যেন হাতির পাঁচ পা রেখে ফেলি। আমরা মনে ভাবি শাশুড়ি মা কোন দিন গর্ভধারিনী মা হতে পারে না। এটা সত্য তিনি তোমাকে গর্ভধারণ করেনি ঠিকই কিন্তু তুমি যাকে বিয়ে করেছো সে তো তাকে গর্ভধারণ করেছিল। তাকে অনেক আদরে মানুষ করেছে, নিজের রক্ত জল করে সংসারের দায়বদ্ধতা মাথায় নিয়ে তার স্বপ্নগুলো বিসর্জন দিয়ে তার ছেলেকে মানুষ করেছে। সেও তো দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখেছে তার ছেলে আর ছেলে বউ তাকে যত্ন নেবে তাকে মায়ের মতো ভালবাসবে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়ে যায় উল্টো আমরা কখনোই তাকে নিজের মা বলে মনে করতে পারি না। কেন করতে পারি না। এটা কি একটু ভেবেছি, হতে পারে সে আমাদের গর্ভধারণ করেনি তাতে কি হয়েছে আমরা কি তাদের মায়ের ভালোবাসা দিতে পারি না। 


আমাদের মা-বাবা যেমন আমাদেরকে এই সুন্দর পৃথিবীতে পরিচালনা করেছেন সেও তো তার ছেলেকে পরিচালনা করেছেন তা সত্ত্বেও কেন বৃদ্ধাশ্রম গুলিতে দিন দিন ছেলের বাবা মাকে যেতে হয়। নিজের বাবা মায়ের মতো করে দেখতে পারি না। আমরাও তো একদিন শাশুড়ি হবো। সন্তানের মা হবো। এই সত্যটা কী ভাবে এরিয়ে যেতে পারি আমরা। আমরা তাদের সাথে নিষ্ঠুর ব্যবহার করবো আর ভবিষ্যতে ভালো কিছু আশা করবো সেটা তো হয় না। আমরাও তো পারি তাদেরকে মায়ের মতো ভালবাসা দিতে। প্রতিটা সংসারে কথা কাটাকাটি, ঝগড়া টুকটাক লেগে থাকে। হতেই পারে শাশুড়ি মা আর বৌমার ঝগড়া। তা বলে কি মেয়ে মায়ের থেকে কি দূরে সরে যাবে। আমাদের কুমন্ত্রণায় স্বামীরা বাধ্য হয়ে ব্যভিচারী হয়ে ওঠে, কোন সময় সে তার বাবা মায়ের সাথে ঝগড়া করা আলাদা হয়ে যাওয়া বা তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া, এটা কি যুক্তিযুক্ত, তোমার সাথে এরকম ঘটনা যখন ঘটবে সেটা কি তুমি মন থেকে মেনে নেবে কখনোই না তাহলে আমরা কেন? কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেবো। একটা জিনিস সবসময় মাথায় রাখা উচিত কোন ছেলেই কিন্তু তার বাবা মাকে আলাদা করতে চায় না শুধুমাত্র বউয়ের অন্যায় আবদারটা বাধ্য হয়ে তাকে রাখতে হয়। কেননা সে যদি তার আবদারটা না রাখে তাহলে হয়তো আমরা স্বামীর সংসারটা ছেড়ে চলে যাবো, ছোট বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে বা তোমাকে ভালোবেসে বাধ্য হয়, সে তার বাবা-মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করার জন্য। কিন্তু এটা কি আদৌ ঠিক। 


তাই সমস্ত বৌমাদের উদ্দেশ্যে বলছি, কথাটা কখনোই খারাপ ভাবে নেবে না। আমরা যে রকম আচরণ করবো ভবিষ্যতে সেরকমটাই পাবো আশা করি। আমরা সবাইকে ফাঁকি দিলেও উপর থেকে একজন আমাদের ওপর সবসময়ই নজর রাখেন। তার দৃষ্টিশক্তিকে আমরা কখনো এড়িয়ে যেতে পারবো না। তাই বন্ধুরা শাশুড়ি মাকে আর শাশুড়ি মা নয় নিজের মায়ের মতোই দেখবো। তুমি নিজের মায়ের মতো ভালোবাসা দিলে সেও তোমাকে নিজের মেয়ের মতনই ভালোবাসবে। তাদের এই বৃদ্ধ বয়সে মনে আঘাত নয়, ভালোবাসা দিতে হবে। এটা সব সময় জেনে রাখা দরকার তুমি সবে তাদের সংসারে পা রেখেছো আর সে তিলে তিলে সংসারটাকে গড়ে তুলেছে, তোমার হাতে তার গুছানো সংসারটা তুলে দিয়েছে। তুমি গুছানো সংসার পেয়েছো। কেউই নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করে যেতে পারে না। তার এই সংসারের মধ্যে জড়িয়ে আছে সমস্ত স্মৃতিগুলি। সে প্রাণ ভরে আগলে আছে এই সংসারটাকে তবুও সে সংসারের চাবিকাঠিটা তোমার হাতে তুলে দিয়ে দেয় শুধু মেয়ের মতো ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেই, কিন্তু তুমি তাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসলে, একসময় সেও তোমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসবে। হয়তো সংসারে চাপে তার মনে তিক্ততা চলে এসেছে এটা আমাদের বুঝতে হবে, আমাদেরকে মানিয়ে নিতে হবে। 


আমিও এ বাড়ির সংসারের বউ কিন্তু আমার কখনো মনে হয়নি আমার শাশুড়ি মা আমার নিজের মায়ের থেকে আলাদা। বিয়ে করে এ বাড়িতে আসার পর আমার শাশুড়ি মা শুধু একটা কথাই বলেছিল, আমার দু দুটো মেয়ে ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। তুমি আমার ছেলের বউ আমার দুটো কোল খালি হয়ে গেলেও ছেলে একটি পূর্ণ করলো। আজ থেকে তুই আমার কাছে মেয়ের মতো; আমাকে তুই কখনো নিজের মায়ের থেকে আলাদা ভাবিস না। আমরা এই বুড়ো বুড়ি পৃথিবীতে আর কতদিন এখন তুই সবকিছু। শাশুড়ি মা সেদিন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তারপর দিন থেকে কখনো আমি আমার শাশুড়ি মাকে আমার নিজের আরেক মা বলে মনে করতাম। বিয়ের আগে ছিল একটি বিয়ের পর হল দুটি। আমার সংসারে অশান্তি নেই বললে ভুল হবে, অবশ্যই আছে। কিন্তু ওই যে আমি আমার শাশুড়ি মায়ের সাথে ঝগড়া করলেও সেটা মায়ের মতই হয়ে দাঁড়ায়। মা যেমন মেয়ের নালিশ বাবার কাছে করে না। তেমনি আমিও মায়ের কোন কথা স্বামীর কাছে করি না। 


তিনি কখনো আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাননি। কোন কোন সময় বাড়ির মেয়েদের ক্ষেত্রে যেমন নিজের মা সেরা বান্ধবী হয়ে যায়। সেরকম শাশুড়ি মাকেও মনে করো, সেও তো সংসারে চাপে দগ্ধ হয়ে আছে। তাকে জরাজীর্ণ সংসারের মোহ থেকে বার করতে হবে। তার ভেতরেও তো কত সুখ আল্লাহ আনন্দ থেকে থাকতে পারে। সেও তো সবকিছু বিসর্জন দিয়ে সংসার চালিয়েছে। তাই আমরা নতুন বউ এরা কি পারিনা সপ্তাহে একদিন আমাদের শাশুড়ি মাকে সঙ্গে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, সিনেমায় যাওয়া বা রাস্তার মোড়ে গিয়ে ফুচকা, ঘুগনি খাওয়া, তাকে সঙ্গে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাওয়া, বাইরে দিয়ে কোন খাবার কিনে এনে শাশুড়ি মায়ের হাতে দিয়ে, মা আপনি ভাগ করে দিন। এ সমস্ত তো করা যেতেই পারে। দেখবে রান্নার মাছের বড় পেটিটা সে তোমার পাতেই তুলে দেবে। এই ছোট ছোট ঘটনাগুলি এক সময় মা মেয়ের মতো বন্ধনরূপে প্রকাশ পায়। তাই বন্ধুরা আসো আমরা প্রতিজ্ঞা করি, কখনো শাশুড়ি মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করবো না। নিজের মাকে যেরকম দেখি সেই চোখ দিয়েই শাশুড়ি মাকে দেখবো। শাশুড়ি মাকে সেবা করবো। গড়ে তুলি এক নতুন পৃথিবী যেখানে শুধু থাকবে ভালোবাসা। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract