STORYMIRROR

Tamali Sarkar

Others

4  

Tamali Sarkar

Others

কর্তব্য

কর্তব্য

4 mins
274

কর্তব্য:

অনির্বাণ বেসরকারি কোম্পানির একাউন্টেন্ট। আজ তার এক বছরে অ্যানিভার্সারি। আজ তার মনে খুব আনন্দ। অফিস থেকে হাফ বেলা ছুটি নিয়ে দুটোর মধ্যেই বেরিয়ে পড়ে সে। অ্যানিভার্সারিতে তার স্ত্রীকে সারপ্রাইজটা একটু অন্যরকম ভাবেই জানাবে। তাড়াহুড়োর মধ্যে অফিস থেকে বেরোবার সময় অনির্বাণ হেলমেটটা নিতে ভুলে যায়।


অনির্বাণ অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যায় একটা জুয়েলারি দোকানে। বেশ কিছুদিন আগে শ্রীলেখাকে সঙ্গে নিয়ে এই পথ থেকে যাওয়ার সময় দোকানের বাইরে থেকেই সোনার হারটা দেখে শ্রীলেখার খুব পছন্দ হয়। কিন্তু অনির্বাণের আর্থিক পরিস্থিতি শ্রীলেখা ভালই জানে তাই মনের আশাটা মনের মধ্যেই রেখে দেয়, সে আর প্রকাশ করে না। শ্রীলেখা মন থেকে প্রকাশ না করলেও অনির্বাণ বুঝতে পারে। জিজ্ঞেস করাতে শ্রীলেখা সে সময় এড়িয়ে যায় কিন্তু অনির্বাণ ঠিক করে নেয় তাদের প্রথম বছর অ্যানিভার্সারিতে সে শ্রীলেখাকে এই ঐরকম একটা সোনার হার কিনে দেবে। অনির্বাণ সেই মতো চার মাসের সেলারি থেকে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে আজ প্রায় 6 গ্রামের সোনার হারটা সে কিনে নেয়। সঙ্গে একটা বড় গোলাপ ফুলের তোড়া। লাল গোলাপ ফুল শ্রীলেখার খুব পছন্দ। বিয়ের আগে যতবারই অনির্বাণ দেখা করতে যেত প্রতিবার শ্রীলেখার জন্য একটা করে লাল গোলাপ নিয়ে যেতে হতো।


শ্রীলেখাও তাকে কথা দিয়েছে আজ হাফ ডিউটি করে সেও তারাতারি বাড়ি ফিরে আসবে। তাদের প্রোগ্রাম পুরো সাজানো তারা আজ একসাথে দুপুরে লাঞ্চটা বাইরে সারবে।


তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার জন্য অনির্বাণ একটু দ্রুত বাইকটা চালাতে আরম্ভ করে। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে রাস্তার মোড়ের মাথায় পুলিশ পেট্রোলিং করছে। তখনই তার মনে পড়ে হেলমেটের কথা। হেলমেট তো সে অফিসেই ভুলে এসেছে এখন তার কি হবে।


পুলিশ চেকপোস্টের সামনে আসতেই অনির্বাণ আবার আসার আলো দেখতে পায়। পুলিশের ড্রেসে শ্রীলেখা তার সামনে দাঁড়িয়ে। শ্রীলেখা হল থানার লেডি কনস্টেবল। সবাইকে যেমন গাড়ি চালান কাটছে সেরকম অনির্বাণকে সে তার কাগজপত্র পরীক্ষা করে তার কাছে হেলমেট না পরার কৈফত চায়। 

শ্রীলেখা তুমি আমাকে ধরছো? আমি তো তোমার জন্যই তাড়াতাড়ি করে চলে এসেছি। তখনই ভুলে গিয়েছিলাম।

শ্রীলেখা দেখুন মিস্টার এটা ঘর নয়, আমি একজন পুলিশ অফিসার। আর আমি আমার ডিউটি করছি।

অনির্বাণ সাথে সাথে বলে ওঠে সরি ম্যাম। ভুল হয়ে গেছে।

শ্রীলেখার সাথে সাথে হেলমেট না পরার চালান কেটে অনির্বাণের হাতে ধরিয়ে দিয়ে, কাল বেলা বারোটার মধ্যে ব্যাংকে গিয়ে টাকাটা জমা দেবেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্সপেক্টর শ্রীলেখাকে বলে, কি করছো শ্রীলেখা। ও তো তোমার ঘরের লোক।

রশিদটা ধরিয়ে দিয়ে, অনির্বাণ বাবু আপনি এখন যেতে পারেন। অনির্বাণ চলে যাওয়ার পর শ্রীলেখা পুলিশ অফিসারটিকে বলে স্যার ক্ষমা করবেন। ঘরে যেমন আমার কাছে স্বামী সব সেরকমই ডিউটিতে আমার কাছে কর্তব্যটাই সব। অন্যায়টা আমার স্বামী করেছে, আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি; আমি যদি আমার স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে আমি আমার কর্তব্য থেকে সরে আসতে পারিনি, এই মুহূর্তে সবাই যেমন অপরাধী, ও আমার কাছে সমান অপরাধী।

পুলিশ অফিসারটি শ্রীলেখার কথায় খুব খুশি হয়ে বলে, শ্রীলেখা তোমাকে আর ডিউটি করতে হবে না তুমি বাড়ি চলে যাও।

স্যার! এখনো তো তিনটে বাজেনি।

তোমার মতো ন্যায়বান পুলিশ অফিসারের জন্য কি এটুকু করতে পারি না। কর্তব্যরত আরো দুজন পুলিশ অফিসার শ্রীলেখার কাজে সম্মান জানিয়ে সবাই তাকে স্যালুট করে।


শ্রীলেখা থানা থেকে পোশাক পাল্টে গৃহবধূ সাজে চারটের সময় বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি আসার পথেই শ্রীলেখার মনে হয়, হয়তো অনির্বাণ তার ওপর খুব রেগে আছে কি করে যে তার কাছে ক্ষমা চাইবে। আজ তাদের এক বছরের অ্যানিভার্সারি দিনেই স্বামীর সঙ্গে এরকম আচরণ করল সে। 


দরজায় নখ হতেই অনির্বাণ দরজাটা খুলে দেয়। শ্রীলেখা ঘরে প্রবেশ করে। অনির্বাণকে দেখে তার মনে হচ্ছে না যে অনির্বাণ তার ওপর রুষ্ট হয়ে আছে। সারা ঘর সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা।

শ্রীলেখা চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে, যাই হোক সে তো তার স্বামীর সাথে অন্যায়টা করেছে। তার একদমই করা উচিত হয়নি।

-তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।


অনির্বাণ শ্রীলেখাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে, দূর পাগলী তুমি কাঁদছো কেন? তুমি যেটা করেছে সেটা তোমার কর্তব্য আর আমি যেটা করেছি সেটা হলো অন্যায়। আমি একটুও কষ্ট পাইনি। আমি আজ খুব হ্যাপি! তোমার মত একজন কর্তব্যপরায়ণ ধার্মিক স্ত্রী পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান করছি।

- আমি তোমাকে সবার সামনে ওভাবে বললাম তোমার কষ্ট হয়নি।


- সেটা আমার বউ ছিলনা। সেখানে লেডি কনস্টেবল শ্রীলেখা সেন ছিল।

শ্রীলেখা অনির্বাণ এর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে।

অনির্বাণ তার পকেট থেকে ওই সোনার চেনটা বার করে, শ্রীলেখার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। দুহাত শ্রীলেখার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আই লাভ ইউ "মাই সুইট হার্ট শ্রীলেখা সেন" এন্ড "অনেস্ট লেডি কনস্টেবল"। তোমার কর্তব্যই তোমার আসল পরিচয়।


চোখ ভেজা জলে ফেল ফেল করে অনির্বাণের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনির্বাণ চোখ মেরে শ্রীলেখাকে ইশারা করাতে শ্রীলেখা উপহারটা নিয়ে অনির্বাণকে আবার বুকে জড়িয়ে ধরে। অনির্বাণ ও জানে শ্রীলেখা তাকে কতটা ভালোবাসে।


তাদের এই সুখ মুহূর্তটা যেন চিরস্থায়ী হোক।




Rate this content
Log in