মুদিখানা
মুদিখানা
সমাজের সত্যতা- মুদিখানা
মানুষের বিচার বুদ্ধি কতই না কঠিন যা নির্ভীকার থেকে শুধু উপলব্ধি করা যায়। তার ছোট্ট একটা উদাহরণ। আমাদের পাড়ায় একটিমাত্র মুদি দোকান নাম দশকর্মা ভান্ডার। খুব বেশি বড় না হলেও একেবারে ছোট বলা যায় না। চাল থেকে কেরোসিন তেল সব কিছুই দোকানে পাওয়া যায়। এই পাড়ার মুদি দোকানগুলি বড় বাজার থেকে পাইকারি মাল এনে তারা দুটো সামান্য পয়সার লাভে এনে বিক্রি করে। কিন্তু আমরা দুটো পয়সা সাশ্রয় করবো বলে বড় বাজার থেকে ক্যাশ পয়সায় মালগুলো কিনে আনি। এই পাড়ার মুদিখানা গুলি দুটো পয়সা সামান্য লাভের জন্য দিনের পর দিন তারা কাস্টমারদের তাদের বাকি খাতায় টাকা বাকি ফেলে রাখে। আমাদের মধ্যেই প্রচলিত আছে দুটো পয়সা সাশ্রয় করতে হলে মার্কেট থেকে কিনে নিয়ে আসবো সরাসরি।
সময়টা লকডাউন করোনা মহামারী সময়। যখন সমস্ত শপিংমল বড়বাজার গুলিতে একটার পর একটা দোকান বন্ধ হতে থাকে। যেখানে সাধারণ মানুষদের প্রবেশের উপর নিষিদ্ধা জারি হয়। সেই সময় এই পাড়ার মুদিখানা দোকানগুলি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এই করোনা মাহামারীর সময় আমরা পুরোটাই নির্ভর ছিলাম পাড়ার মুদিখানা দোকানগুলির ওপর। আমাদের পাড়ার দশকর্মা ভান্ডার মুদিখানা দোকানটা নেই নেই করে পাড়ার ২০০ পরিবারের দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। কত পরিবারের কর্তাদের সে সময় কাজ চলে যায় তার কোন হিসেব নেই কিন্তু তা সত্ত্বেও দোকানের মালিক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সবাইকে কমবেশি গৃহস্থলী সরঞ্জাম ধার বাকিতে দিতে থাকে। একবারের জন্য দ্বিধাবোধ করে না। লকডাউন এর সময় আমাদের পাড়ার মুদি দোকান গুলি যেভাবে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল আমাদের কি উচিত ছিল না তাদের পাশে সব সময় থাকা কিন্তু দেখুন সময় পাল্টে যাওয়ার পরপরই আমরা মানুষরা কিরম যেন একটা বেইমানের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ি। ওই যে ক্যাশ পয়সায় আমি মালটা কিনে পয়সা সাশ্রয় করবো।
পাড়ার মুদির দোকানের মালিক ভবেশ দা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ওই লকডাউনের সময়। তার পুরো সম্পত্তির বেশি ভাগ টাকাই ব্যাংক থেকে তুলে মানুষের সাহায্যের জন্য। সকল পরিবারকে নির্বিধায় মাল প্রদান করতেন। কারো পরিবারের হয় চাকরি চলে গেছে। কেউবা দুই তিন মাস ধরে বেতন পায়নি। এরকম ভাবেই দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছর কেটে যায়। কাউকেই তিনি না করতেন না। তিনি জানতেন সময় পরিবর্তন হবে। সবাই একসময় তার প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেবে। শুধু কি এটুকুই। হয়তো তিনি আশা করেছিলেন তার এই কাস্টমারগুলি চিরকাল তার দোকানের সাথে জরিয়ে থাকবে। ধীরে ধীরে সবকিছু আবার আগের মত হয়ে এলে শপিংমল বাজার ঘাট সবকিছুই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হতে থাকে। আর মানুষজন ধীরে ধীরে আবার আগের মতো হয়ে উঠে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আবার আগের মতো পুনরায় ঠিক হতে থাকে। যার যার পাওনা টাকা সবকিছু মিটিয়ে দিয়ে আবার সেই বড়বাজার আর শপিংমল গুলিতে ভিড় জমাতে আরম্ভ করে। তারা মনেও রাখতে চায় না বা মনে করতে চায় না ভবেশ দার মত মানুষের মনুষ্যত্বটাকে। ওই সময় ভবেশ দার মতো লোকগুলি যদি আমাদের মত সাধারন মানুষের পাশে এসে না দাঁড়াতে তাহলে কি ভয়াবহ অবস্থা হতো সেটাও কি একবারও কেউ ভেবে দেখেছে। কিন্তু তারা সেটা করেননি তারা বিশ্বাসের ওপর দিনের পর দিন বাকির খাতায় টাকা বাকি ফেলে রেখে গেছে কিন্তু আজ আবার সেই আগের অবস্থা। আমরা আবার যাওয়া অরম্ভ করেছি দুটো পয়সা সাশ্রয়ের লোভে বড় বড় শপিংমল গুলিতে। এই শপিংমল গুলি ব্যবসা করতে এসেছে কখনোই সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় না। বিপদের সময় সেই ভবেশ দার মতো পাড়ার মুদিখানার মালিক গুলোকেই আমরা কাছে পাব যা অস্বীকার করতে পারবো না।
সমাপ্ত