STORYMIRROR

Sanghamitra Roychowdhury

Abstract

3  

Sanghamitra Roychowdhury

Abstract

স্বপ্নবিলাসী নৌকাযাত্রী

স্বপ্নবিলাসী নৌকাযাত্রী

3 mins
769



চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা মুখের মিছিলে কেবল মুখ আর মুখ। কতরকমের মুখের মিছিল, আলাদা করে কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবুও তারই মধ্যে মৃদুল বিশেষ একটা মুখকে খুঁজে চলেছে প্রাণপণ। চোখজোড়া তার ঘুরছে চরকির মতোন, এমুখ থেকে ওমুখ ছুঁয়ে সেমুখ..... কিন্তু যেমুখ খুঁজছে মৃদুল, সেই মুখটিই অমিল। নাকি ভিড়ের ফাঁকে মৃদুল হারিয়ে ফেলেছে সেমুখ?


ওদের, মানে ঐ ভিড়ের হাতেহাতে তালিতে মৃদুলের কানের পর্দা ফাটার জোগাড়। মৃদুলের চারপাশ ঘিরে থাকা সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে এগিয়ে এসেছে সারিসারি বাড়ানো হাত। অনুষ্ঠান শেষে সবাই করমর্দন চায়, ছুঁয়ে দেখতে চায় তাদের স্টারকে, শোম্যানকে। শুধু সেই হাতটাই নেই, যে হাতটা মৃদুল একবার ছুঁয়ে দেখতে চায়। কার হাত ভাই, কাকে খুঁজছো? কোনদিক থেকে যে কে বললো, ঠাহর করার আগেই ভিড়ের মাথা ডিঙিয়ে মৃদুল দেখতে পেলো সেই মুখটা, তার সেই চঞ্চল চোখদুটো। ওমা, সে যে বড্ড দূরে, কি করে ছুঁতে পারবে তাকে মৃদুল?



আবার মৃদুলের কানে ঐ ভিড়ের মধ্যে থেকেই ছিটকে এলো, কাকে খুঁজছো, তাও জানো না? মৃদুল চোখ ফিরিয়ে স্থির করলো চোখ ভিড়ের কেন্দ্রে, সেখানে সে নিজেই দাঁড়িয়ে। ফ্ল্যাশবাল্বের ঝলকানি, অটোগ্রাফের খাতা, সেলফি স্টিক..... সব সামলে মৃদুল এখন ঘরের পথে। মনটা মৃদুলের ভার, রোজ খোঁজে তাকে, প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে, নিজেকে ঘিরে মেলা লেগে যাওয়া প্রতিটি জায়গায়। কিন্তু কোথায় সে? তাকে পায় না।



মৃদুলকে ঘিরে হরেক সব বিচিত্র আয়োজন। তার অনেক কিছুরই কার্যকারণের থই খুঁজে পায় না মৃদুল। শুধু সেই আয়োজনের ভিড়ে বোকার মতো সেই চেনা মুখটাকেই খুঁজে বেড়ায় ভিড়ের আগাপাশতলায়। সবাই তখন ছুটছে একবার তাদের স্টারকে ছোঁবে বলে.... একবার, অন্ততপক্ষে একবার। কেউ পারলে লুটিয়ে পড়ে প্রিয় স্টারের পথে। যেপথ দিয়ে স্টার যাবে, সেপথ ব্যারিকেড করে ঘেরা। ব্যারিকেড ভেঙে ভক্তরা পথ আগলেছে। পুলিশ পথ পরিষ্কার করছে, সরাচ্ছে সাক্ষাৎপ্রার্থী জনতার ভিড়। আরে, মৃদ

ুল স্পষ্ট দেখলো তাকে একঝলক। যতই একপাশ থেকে ক্ষণেকের জন্য দেখুক, তাকে চিনবে না? আজন্ম দেখা মুখ চিনতে কী কখনো ভুল হয়?




শেষবেলার ভাঙা রথের মেলায় যেমন রাধারাণী রুক্মিণীকুমারকে খুঁজে বেড়িয়ে, শেষমেশ না পেয়ে হতাশ হয়ে একলা ফেরে শিথিল পায়ে, ঠিক তেমনি মৃদুলও ক্লান্ত, অবসন্ন সেই চেনা মুখকে খুঁজে না পেয়ে। মৃদুলের ভেতরটা চিড়ফাঁড় হয়ে যায় অব্যক্ত আর্তনাদে।




সর্বাঙ্গে জড়ানো সারাদিনের ক্লান্তি, ধুয়ে ফেলতে যেতেই কে যেন পেছন থেকে টুকি বলেই আবার গায়েব। কে ও? মৃদুল চট করে পিছন ফিরেও দেখতে পেলো না তাকে। সারাদিনে তাকে ঘিরে বয়ে চলা ঝোড়ো স্মৃতি পাট করে সরিয়ে রাখতে যেতেই, কোত্থেকে মুখোমুখি হয় একটা কচিমুখ, অচেনা।




এ আবার কে? একে তো মৃদুল চিনতে পারছে না। এতো মৃদুলের সেই চেনামুখ নয়! জিজ্ঞেস করে বসলো এই কচিমুখকে, "কে হে, তুমি? আর এখানেই বা কেন? কী চাই তোমার?"

কচি গলায় ঝরে পড়া কাঁচা অভিমানে সে বলে, "এ বাবা, আমায় চিনতে পারলে না?" মৃদুল প্রাণপণে অতীত হাতড়ায়। তার জমাখরচের খাতায় চাওয়া- পাওয়া, লাভ-ক্ষতি, হার-জিত, মান-সম্মানের তালিকায় মৃদুলের চোখ উপরনীচ। পাহাড়চেরা ঝর্ণার মতো একরাশ খিলখিলে কচি হাসি আছড়ে পড়ে মৃদুলের কানে।




"ভারী বোকা তো তুমি! এখনো আমায় চিনতে পারলে না? খোলো, খোলো, মুখোশটা খুলে ফেলো তো এবার! যাও এবার আয়নার সামনে, তবেই তো চিনবে আমাকে। আমি তো সেই, যাকে তুমি ভিড়ের মধ্যেও খুঁজে বেড়াও, আমিই তো সেই তুমি। আমি যে তোমারই ছেলেবেলা। যখন রোজ তুমি স্বপ্নে এখনকার এই তুমিটাকেই শুধু চাইতে! পেয়েছো তো! হয়েছে তো স্বপ্নবিলাসের নৌকা পাওয়া! আফশোস কিসের?"



মৃদুলের মনে হোলো, "আহা, যদি মৃদুলের শৈশবের সাথে, বা শৈশবের মৃদুলের সাথে একখানা সেলফি তুলে রাখা যেতো!" এরকম একটা সেলফি মৃদুলের ভারী দরকার যে!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract