Sagnik Bandyopadhyay

Tragedy

1.8  

Sagnik Bandyopadhyay

Tragedy

স্বীকারোক্তি

স্বীকারোক্তি

4 mins
503



একদিন আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ " সাগ্নিক দা! সাগ্নিক দা!" ডাক শুনতে পেলাম। পিছন ফিরে দেখি শর্মিলা ডাকছে। জিজ্ঞেস করলাম,"কেমন আছিস?" সে বলে উঠলো," ভালো নেই দাদা। তুমি ঠিকই বলেছিলে সাগ্নিক দা, প্রীতমের মতো ছেলে হবে না। আজ আমি এটা দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করছি।" "তোর এই স্বীকারোক্তি আজ আর কোনো কাজে লাগবে না।" জীবনে ভুল করলে এবং অন্যায় করলে কোনো না কোনো সময়ে সেই ভুলের মাশুল গুনতেই হয় এবং তার ফলস্বরূপ স্বীকারোক্তিও এসে যায়। তবে সেটা সময় থাকতে করাই ভালো, না হলে তা আর কোনো কাজে আসে না। আমার মানসপটে উদয় হলো প্রায় বছর চারেক আগের একদিনের সকালের স্মৃতি। সকাল ৬টা। চারদিক কোলাহলমুক্ত। আমি আর প্রীতম টিউশনে যাচ্ছি। সূর্যের আলো যেন আমাদেরকে নতুন জীবন দান করছে। হঠাৎ দেখি, প্রীতমের দিকে তাকিয়ে একজন কিশোরী মিচকে হাসছে। প্রীতমও হাসলো! এই ঘটনাটি অত্যন্ত দৃষ্টি মধুর ছিল। প্রীতমকে জিজ্ঞেস করলাম,"কে এই মেয়েটি, চিনিস তুই?" প্রীতম বলল," অল্প চিনি। ছাড় এইসব, চল্ তাড়াতাড়ি।" আমরা চলে গেলাম পড়তে। পড়ে ফেরার পথে আবার প্রীতমের সাথে ওই মেয়েটির দেখা হলো। মনে হলো মেয়েটি প্রীতমের অপেক্ষাতেই ছিল। চলে এলাম বাড়িতে। তারপর যখনই আমরা টিউশন যাই, তখনই মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকে প্রীতমকে দেখার জন্য। একদিন প্রীতমের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে একটা চিরকুট ফেলে গেল সে। চিরকুটে মেয়েটির নাম ও ফোন নাম্বার লেখা। মেয়েটির নাম শর্মিলা। প্রীতমকে বললাম,"ফোন করবি নাকি?" শুনে প্রীতমের লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠলো। প্রীতমের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকে। খুব ভালো ছেলে। ফোন করে কথা বলা শুরু করলো ওরা। এরপর একদিন প্রীতম আমার কাছে এসে বলল," জানিস সাগ্নিক, আমি শর্মিলাকে ভালোবেসে ফেলেছি।" শুনে আনন্দে বললাম," ট্রিট্ দে।" তারপর ওদের দুজনের মধ্যে একটি অকৃত্রিম ভালোবাসার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে থাকলো। শর্মিলা তখন নবম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রীতম তখন পড়ে দশম শ্রেণীতে। শর্মিলার স্কুল ছুটির সময় প্রীতম সাইকেল নিয়ে চলে যেত ওকে একটা পলক দেখবে বলে। সুযোগ পেলে দুজনের মধ্যে কথাও হতো। একদিন তো সাইকেল নিয়ে প্রীতম স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর শর্মিলাকে নিতে সেদিন ওর বাবা এসেছেন। সেটা প্রীতম ঠিক খেয়াল করেনি। প্রীতম শর্মিলাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে যাবে, এমন সময় শর্মিলার বাবা শর্মিলাকে ডাক দিতেই প্রীতম এমন ভয় পেয়ে যায় যে তখন শর্মিলার এক বান্ধবীর সাথে কথা বলতে শুরু করে। দুজনের মধ্যে সবকিছু খুব ভালোই কাটছিল। শর্মিলা মাধ্যমিক দিয়ে একাদশ শ্রেণীতে উঠে, প্রীতম দ্বাদশ শ্রেণীতে। হঠাৎ একদিন বিকেলে প্রীতম আমাদের বাড়িতে আসে, বেশ বিধ্বস্ত লাগছিল ওকে। দেখে মনে হলো কিছুতে কষ্ট পেয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম,"কিরে এখন আমার বাড়িতে? এখন তোর তো শর্মিলার সাথে দেখা করতে স্কুলের সামনে থাকার কথা। আজ কি স্কুল ছুটি ওর?" কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল,"না। ছুটি নয়। সব শেষ হয়ে গেল সাগ্নিক।" ওর কথাটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। " কি সব আবোল-তাবোল বকছিস? কি শেষ হয়ে গেল? আচ্ছা তোর সাথে ওর ঝগড়া হয়েছে, তাই তো?" আমার কথা শুনে বলল," ও আমাকে আর ভালোবাসে না।" "কি? এতদিনের সম্পর্ক তোদের। ধুর! নিশ্চয়ই তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।" প্রথমে আমার বিশ্বাস হলো না ওর কথা শুনে। কিন্তু ওর কাঁদো কাঁদো চোখের দিকে তাকাতেই বুঝলাম ঠিক কথাই বলছে। আমি জানতে চাইলাম," কেন তোকে ভালোবাসে না? তুই কত ভালো ছেলে। আমি বলছি প্রীতম, ও খুব বড়ো ভুল করছে। আমি ওর সাথে কথা বলবো।" শুনে প্রীতম আমাকে বারণ করল। তাও শর্মিলার সাথে কথা বললাম, "তুই নাকি ওকে ভালোবাসিস না?" শর্মিলা বলল," না! বাসি না! ওর মতো ছেলেকে কে ভালোবাসবে?" আমি হতবাক হয়ে গেলাম। " কেন ওর ত্রুটি কোথায়?" " প্রীতম আমাকে ঠিকমতো সময় দেয় না"- বলে উঠলো শর্মিলা। " ভুল করছিস শর্মিলা। খুব ভুল করছিস। প্রীতমের মতো ভালো ছেলে পাবি না আর। একটু ভেবে দেখিস।" "আমার ভাবা হয়ে গেছে, একমাস হয়েছে আমি সুমনের সাথে সম্পর্কে আছি।"- তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো শর্মিলা। শুনে বিস্মিত হয়ে গেলাম। অবাক লাগলো ভেবে, এরকম হতে পারে মানুষ! এদিকে প্রীতম ক্রমশ মনের দিক থেকে ভেঙে পড়তে থাকে। আমি প্রীতমকে সান্ত্বনা দিই। "দাদা! দাদা!" শুনে আমি আবার বর্তমানে ফিরে এলাম-" হ্যাঁ কি বলছিলি যেন?" শর্মিলা বলল," ভালো নেই দাদা।" শুনে হেসে বললাম," কেন রে? এখন তো তোর ভালো থাকার সময়। তোর সঙ্গে সুমন আছে।" তৎক্ষণাৎ শর্মিলা বলে উঠলো," না দাদা, সুমন ছেলেটা ভালো নয়। ও আমার সাথে সম্পর্কে থাকার সময়, আমার এক বান্ধবীর সাথেও সম্পর্কে ছিল। আমি বড়ো ভুল করে ফেলেছি। তখন বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি। আমি আবার ফিরে যেতে চাই প্রীতমের কাছে।" আমি বললাম, " সেটা আর এখন সম্ভব নয় শর্মিলা। বড্ড দেরী হয়ে গেছে রে!!"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy