ইচ্ছে ডানা

Tragedy

4  

ইচ্ছে ডানা

Tragedy

স্বাধীনতার স্বাদ

স্বাধীনতার স্বাদ

8 mins
369


টাকা,পয়সা,সম্পত্তি,লোভ- লালসা,,এগুলো বড় বিচিত্র জিনিস। মানুষকে আর মানুষ থাকতে দেয় না,লোভের বশবর্তী হয়ে সে বিসর্জন দেয় তার মানবিকতা,অন্তরের শুভ্র চেতনাগুলোকে গলা টিপে হত্যা করে,নরপিশাচে পরিণত হয়।এমনই এক নরপিশাচ হল দিগম্বর মিশ্র।

আঠারো বছরের একটি মেয়ে রাত প্রায় এগারোটার সময় উর্ধশ্বাসে ছুটছে হাইরোড দিয়ে। বার বার সে পেছনে তাকাচ্ছে আর ছুটছে। বুকে একরাশ ভয় আর মনে একরাশ চিন্তা নিয়ে। কানের পাশ দিয়ে বড় বড় গাড়ি হুঁশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে,কোন ভ্রূক্ষেপ নেই সেই দিকে, যেন জীবনের মায়া সম্পূর্ণ ত্যাগ করেছে,মৃত্যুকে কোন পরোয়া করে না সে। এত জোরে দৌড়োচ্ছে যে এলোমেলো চুল গুলো সব হাওয়ায় উড়ছে,খালি পা,তাই পা কেটে রক্ত পড়ছে, প্রচন্ড ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত,তবুও সে দৌড়োচ্ছে। হটাৎ করেই গাড়ির হেডলাইটের তীব্র আলো চোখে পড়ায় চোখে হাত দিয়ে আড়াল করে চিৎকার করে মেয়েটি, গাড়িটি জোড়ে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ে,আর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি গাড়ির সামনে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যায়।

হন্তদন্ত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন মাঝ বয়সী কোট- প্যান্ট পরা,চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা,সুউচ্চ রাশভারী চেহারার এক ভদ্রলোক, সেই সঙ্গে তার সঙ্গে থাকা গাড়ির ড্রাইভার। গাড়ির সামনে মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে,হাঁটু গেড়ে বসে মেয়েটিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অবাক হয়ে যান,এই টুকু একটা বাচ্চা মেয়ে তার চুলগুলো সব এলোমেলো,চোখের নীচে কালি পরে গেছে,ঠোঁটের কোণে রক্ত শুকিয়ে, দেখে মনে হচ্ছে কত দিন অভুক্ত। চিন্তিত হয়ে বলেন," আরে রতন!! মেয়েটি তো অজ্ঞান হয়ে গেছে, এভাবে তো রাস্তায় ফেলে রাখা যাবে না,তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে,নে নে ধর,গাড়িতে তোল," দুজন মিলে মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে নিজের বাড়ি নিয়ে আসে।

বাড়িতে এনে মেয়েটিকে একটা সোফায় শুইয়ে দিয়ে ডক্টর কল করেন,অপর প্রান্ত থেকে ডক্টর," হ্যাঁ, বলুন মি.চৌধুরী, কি খবর? সবাই ভালো আছে তো?" "হ্যাঁ, হ্যাঁ, মি. সেন, সবাই ভালো আছে,আপনাকে একটু আমাদের বাড়ি এক্ষুনি আসতে হবে,ভেরি আর্জেন্ট,প্লিজ", চিন্তিত হয়ে বলেন মি. চৌধুরী।নিচে এত চেঁচামেচি শুনে ওপর থেকে নেমে আসেন রেণুকা দেবী,দেখেন অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে একটি মেয়ে,অস্থির হয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবেন,তার আগেই,,,,,,,,,

কলিং বেল বেজে ওঠে, দরজা খুলে দেখেন ডক্টর সেন এসেছেন,হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢোকেন তিনি,মি.চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে বলেন," তাড়াতাড়ি দেখুন এই মেয়েটিকে,,অনেক্ষন ধরে অজ্ঞান হয়ে আছে," ডক্টর সেন মেয়েটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে বলেন," দীর্ঘদিন না খাওয়া,মানসিক অত্যাচার আর ভয় পেয়ে এমনটা হয়েছে,চিন্তা করবেন না, মেডিসিন দিয়েছি,বিশ্রাম নিক,একটু পরে জ্ঞান ফিরে আসবে।"

এই কথা শুনে অবিনাশ চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে ।তাই দেখে, এগিয়ে যান রেণুকা দেবী, বলেন" কে এই মেয়েটি,আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না,তুমি কি বলবে ব্যাপারটা কি?" অবিনাশ বাবু এতক্ষন ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বলেন রেণুকা দেবীকে,শুনে রেণুকা দেবী স্তব্ধ হয়ে যান,কি বলবেন বুঝতে পারেন না।

পরের দিন সকাল সাতটা,রেণুকা দেবী ঘরে এসে ঘুমন্ত মেয়েটির দিকে চেয়ে দেখেন,কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটি,বাচ্চাদের মত গুটিসুটি দিয়ে শুয়ে আছে,কি শান্তিতেই না ঘুমোচ্ছে যেন দীর্ঘদিন ঘুমোয় নি,এক চিলতে হাসি খেলে যায় রেণুকা দেবীর ঠোঁটে। আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির গায়ে স্পর্শ করতেই তড়াক করে বিছানায় লাফিয়ে উঠে মেয়েটি,সামনে অচেনা একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,চোখ বড় বড় করে তাকায় সেইদিকে,পরিস্থিতি বোঝার জন্য ঘরের চার পাশটা মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিয়ে আস্তে আস্তে নিজের পা টেনে নিয়ে বুকের সামনে চেপে ধরে জড়োসড়ো হয়ে বসে ভয়ে ভয়ে তাকায় রেণুকা দেবীর দিকে।

হেসে এগিয়ে যান রেণুকা দেবী,মেয়েটির কাছে,আলতো করে হাত রাখেন মাথায়,বলেন," ভয় পেও না,তুমি এখানে নিরাপদে আছ,কাল ত কিছু খাওয়া হয় নি,তাই তোমার জন্য জুস নিয়ে এসেছি,একটু খেয়ে নাও,ভালো লাগবে," তবুও মেয়েটি একইভাবে বসে থাকে।রেণুকা দেবী ওকে স্বাভাবিক করতে ,গালে হাল্কা স্পর্শ করে বলেন," ভয় পেও না মা, আমি তোমার মায়ের মত,কি নাম তোমার?" রেণুকা দেবীর মুখে 'মা' কথাটা শুনে নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। নিজের থেকে ছাড়িয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে রেণুকা দেবী বলেন" ভয় নেই,আমরা তো আছি, হুমমম,বল কি নাম তোমার?" রেণুকা দেবীর স্নেহ মিশ্রিত ভালোবাসায় নিজের মাকে অনুভব করে মেয়েটি,হেসে ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে বলে," আমার নাম তন্দ্রা মিশ্র।"

এইভাবেই ক্রমশ অতিক্রান্ত হতে থাকে দিনগুলি।রেণুকা আর অবিনাশ বাবুর মত মা- বাবা পেয়ে তন্দ্রা বেজায় খুশি, বেশ আনন্দে ছিল ও।একদিন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় কারোর সঙ্গে জোড়ে ধাক্কা লাগে ওর,পড়ে যেতে নিলে দুটো বলিষ্ট হাত জড়িয়ে ধরে তন্দ্রার কোমড়,একে অপরের দিকে নিস্পল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,কিছুক্ষন পর হুঁশ ফিরলে ওকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেটি চিৎকার করে বলে," তুমি কে? আর এখানে কি করছ? 

মম,ড্যাড তোমরা কোথায়? এই মেয়েটি এখানে কি করছে? মম !! " 

এত চিৎকারে শুনে রেণুকা দেবী এসে বলেন," ঋদ্ধি, এত চেঁচাচ্ছো কেন? কি হয়েছে? আর তুমি আজ আসবে জানাও নি তো?" " তার আগে বল,এই মেয়েটি কে? কি করছে এখানে?" তন্দ্রাকে নির্দেশ করে বলে ঋদ্ধি। ঋদ্ধির এরূপ ব্যবহারে অপমান বোধ করে তন্দ্রা,লজ্জায় মাথা নত করে রাখে। রেণুকা দেবী ঋদ্ধিকে সাবধান করে বলেন," ভদ্রভাবে কথা বলো ঋদ্ধি,তুমি ভুলে যেও না তোমার শিক্ষা,এই জন্য তোমাকে বিদেশে পাঠিয়েছি? মানুষের সঙ্গে মানুষের মত ব্যবহার কর,"আর কোন কথা বলে না ঋদ্ধি,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তন্দ্রা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, চোখের জল মুছতে মুছতে নিজের রুমে দৌঁড়ে চলে যায়।

জানালার রড ধরে শুন্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তন্দ্রা,অদূরের দিকে তাকিয়ে নিজের অতীত জীবন স্মরণ করতে থাকে,কত সুন্দর ছিল সে জীবন,পাপা-মায়ের সঙ্গে বেশ কাটছিল দিনগুলো,হটাৎ করে কোথা থেকে এক ভয়ংকর তুফানএসে তছনছ করে দেয় ওদের জীবন,চোখ থেকে জল গড়াতে থাকে তন্দ্রার।কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতেই পেছন ঘুরে তাকিয়ে,তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে নিয়ে একটা স্মিত হাসি দেয়।

মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন রেণুকা দেবী,"মন খারাপ করিস না রে মা,আমার ছেলেটা অতটাও খারাপ না,ওর মনটা খুব ভালো,আসলে ও তোকে কখনও দেখেনি তো,তাই!"তন্দ্রা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেণুকা দেবীকে।

হাঁপাতে হাঁপাতে দৌঁড়ে বাড়িতে ঢুকে,সশব্দে মেইন গেট বন্ধ করে পেছনে হেলান দিয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকে তন্দ্রা।গলা শুকিয়ে আসে ওর,বার বার ঢোক গিলতে থাকে,চোখ বন্ধ করে পেছন দিকে মাথাটা হেলিয়ে রেখেছে,তাই দেখে ঋদ্ধি সামনে এসে বলে," কি হয়েছে তোমার? ওমন করে হাঁপাচ্ছো কেন?" চমকে ওঠে তন্দ্রা,ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় ঋদ্ধির দিকে। ওকে ওই অবস্থায় দেখে ঋদ্ধি দৌঁড়ে এক গ্লাস জল এনে তন্দ্রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে," এই নাও, ধর !জল খাও,একটু রিলাক্স লাগবে।" জলের গ্লাসটা ঋদ্ধির হাত থেকে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে জল পান করে, একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়ায় তন্দ্রা।

নিজের রুমে বসে আছে তন্দ্রা, খবর পেয়ে ছুটে আসেন রেণুকা দেবী আর অবিনাশ বাবু,ওনাদের দেখে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসে তন্দ্রা,চিন্তিত হয়ে অবিনাশ বাবু বলেন," কি হয়েছে মা, তুমি ওতো ভয় পেয়ে আছ কেন?" আমতা আমতা করে তন্দ্রা," ওওওওও রা,আমাকে খুঁজতে এখানে চলে এসেছে,ড্যাড,ওরা আমাকে মেরে ফেলবে,আমাকে বাঁচাও,প্লিজ," অবিনাশ বাবুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।রেণুকা দেবী এগিয়ে এসে তন্দ্রার পিঠে মাথায় হাত বোলাতে থাকেন,অবিনাশ বাবু ওকে শান্তনা দিয়ে বলেন," কিছু হবে না তোমার,কে খুঁজছে তোমাকে? আর কারা তোমাকে হত্যা করবে, বল? বল মা, না হলে আমরা জানব কি করে।"

অবিনাশ বাবুকে ছেড়ে দিয়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তন্দ্রা, দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে শুরু করে----

"সে দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন ছিল,আমার পাঁচ বছরের জন্মদিন,সেদিন পাপা খুব বড় করে পার্টির আয়োজন করেছিল,অনেক লোক আমন্ত্রণ করা হয়েছিল,"----------

"তনু,তনু,মা তুমি কোথায়? দেখ আমি তোমার জন্য কি এনেছি," ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন বিমল বাবু।দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে ওর পাপাকে।বিমল বাবু তার প্রিন্সেসকে কোলে তুলে নিয়ে স্নেহের চুম্বন দেন ওর দুই গালে,ধীর পায়ে ওনার পাশে এসে সরলা দেবী বলেন," উফফ! তোমাদের বাবা মেয়ের এই আদিখ্যেতা আর সহ্য হয় না বাপু,কি হবে এত গিফ্ট দিয়ে,বছর বছর এত গিফ্ট দাও যে এর জন্য একটা নতুন বাড়ি করতে হবে," মেয়ের গালে আদর করে হাসতে থাকেন সরলা দেবী।

"উমম,মা, তুমি আমার জন্য আমার ফেভারিট ক্ষীরের পায়েস করেছ তো?" ছোট্ট ছোট্ট আঙুল নাড়িয়ে বলে তনু।" ও লে,,বাবা,সে আবার বলতে,আমি আমার এই ছোট্ট সোনার জন্য এইটুকু করব না,,তুমি তো আমার ছোট্ট সোনা,,উম্মমা,," করে ছোট্ট তনুর গালে হামি দেন।

দুপুরে সরলা দেবী কাসার থালায় পাঁচরকম ভাজা আর পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে খাবার পরিবেশন করেন,ধান দূর্বা সহযোগে দীর্ঘ আয়ু কামনা করে মেয়েকে আশীর্বাদ করেন।

সারাটা দিন বেশ ভালোই কাটছিল,বিকেল হতেই কোথা থেকে পাঁচ ছয় জন লোক ঘরের ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে। অবাক হয়ে," একি তোমরা কারা? আর এইভাবে বিনা অনুমতিতে ভেতরে প্রবেশ করলে যে,বেড়িয়ে যাও এখান থেকে," দরজার দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে বলেন বিমল বাবু।" আরে চিল দাদা! অত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? দাঁড়াও," একটা ডেভিল হাসি দিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেন দিগম্বর মিশ্র,বিমল বাবুর ছোট ভাই। ওকে দেখে ওখানে উপস্থিত বিমল বাবু ও সরলা দেবী বিস্ফারিত চোখে চেয়ে বলেন ",তুমিইইই", ভয় পেয়ে একটা ঢোগ গেলেন সরলা দেবী,জড়িয়ে ধরেন ছোট্ট তনুকে একেবারে নিজের বুকের সঙ্গে।

বিমল বাবুর সামনে এসে দিগম্বর একটা দলিল এগিয়ে দিয়ে ," সাইন কর, তুমি তোমার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি আমার নামে করে দিচ্ছো তোমার ইচ্ছানুযায়ী,কর," চোখের ইশারা করে বলেন দিগম্বর মিশ্র। বিমল বাবু সই দিতে অস্বীকার করলে দিগম্বরের লোকেরা ওনার শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন,ওদের বাধা দিতে গেলে সরলা দেবীকেও অকালে প্রাণ হারাতে হয়,ছোট্ট তনু মুখ হা করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে,অঝোরে কাঁদতে থাকে, কিছু করার ক্ষমতা নেই ওর,পাপা মাকে এইভাবে চোখের সামনে চলে যেতে দেখা ছাড়া।

আর বলতে পারেনা তন্দ্রা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে,ওর এই কান্না অবিনাশ আর রেণুকা দেবীর হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করে তন্দ্রা-------

""এরপর থেকে শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার,পাপার উইল অনুযায়ী আমার আঠার বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ওই কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আমার কাকা বাবু কিছুতেই পাবেন না,তাই এত বছর আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ,নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন আমার ওপর,নিজের বাড়িটা আমার কাছে এক খাঁচায় পরিণত হয়,যেখানে স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না,বাড়ি থেকে বেরোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন,দিনের পর দিন অভুক্ত রেখেছিলেন,খাঁচায় বন্ধ পাখির মত অবস্থা হয়েছিল আমার, সবসময় ছটফট করতাম কি করে ওই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়,আর অবশেষে সেইদিন আমি সেই সুযোগ পেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই,কোন কিছু চিন্তা না করেই,আর আজ আমি এখানে,তোমাদের সামনে।""

চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে তন্দ্রার, অবিনাশ বাবু কাঁধে হাত রেখে আস্বস্ত করে বলেন," তুই কোন চিন্তা করিস না মা,আমি এর একটা ব্যবস্থা নিশ্চয় করব,অপরাধীরা এর শাস্তি অবশ্যই পাবে।" দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ঋদ্ধি ওদের সমস্ত কথা শুনছিল, নিজের অজান্তেই ওর দুচোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে,ভেতরে ঢুকে বলে," ড্যাড এই দিগম্বর যেন কোন ভাবেই ছাড়া না পায়,ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি পেতেই হবে।"

হটাৎ করেই নিচে প্রচন্ড কোলাহল শুনতে পেয়ে ওরা নিচে গিয়ে দেখে,দিগম্বর ওর দলবল নিয়ে হাজির।" আপনারা কারা? কি চাই আপনাদের?" রেগে বলেন অনিমেষ বাবু।

" কি চাই মানে?আমাদের বাড়ির মেয়েকে লুকিয়ে রেখে আবার বলছেন কি চাই?"চেঁচিয়ে বলেন দিগম্বর।

" এই একদম বাজে কথা বলবেন না, খুনি কোথাকার, নিজের দাদা বৌদিকে খুন করে আবার বড় বড় কথা,আপনাদের ব্যবস্থা যদি না করতে পারি তো দেখবেন" আঙুল তুলে রেগে বলে ঋদ্ধি।

" ওই টুকুতো পুঁচকি একটা ছেলে,তুমি করবে আমাদের ব্যবস্থা??" অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে দিগম্বর।

কোথাথেকে ঝড়ের গতিতে পুলিশ এসে বন্দুক তাক করে ঘিরে ধরে ওদের,নরাচড়া করা বন্ধ করে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দিগম্বর। সবার মাঝখান থেকে তন্দ্রা বেরিয়ে এসে ," কি কাকা বাবু অবাক হচ্ছো,ওনাদের আমিই খবর দিয়েছি,আমার পাপা মাকে হত্যা করে পার পেয়ে যাবে ভেবেছিলে,হুমমম,তখন আমি ছোট ছিলাম,তাই কিছু করতে পারি নি,কিন্তু এখন আর সেই দিন আর সেই সময় নেই,আমাকে অনাথ করে দেওয়ার শাস্তি তুমি অবশ্যই পাবে," অফিসারদের নির্দেশ দিয়ে সবাইকে নিয়ে যেতে বলে তন্দ্রা।

নিজের বাবা মায়ের হত্যার বদলা নিতে পেরে তন্দ্রা ভীষণ খুশি।এভাবেই কেটে গেছে বেশ কিছু বছর।পড়াশুনা কমপ্লিট করে ও এখন একজন প্রতিষ্টিত বিজনেস ওমেন,বিশ্বের খ্যাতির চূড়ায় উন্নীত করে, ওর পাপার স্বপ্ন পূরণ করেছে।ঋদ্ধির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে, জীবনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি ঘটে তন্দ্রার,বিহঙ্গের মত মুক্তির স্বাদ আস্বাদন ,মুক্ত গগনে ডানা মেলে উড়ার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে থাকে ঋদ্ধির হাত ধরে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy