বন্ধুত্বের দাবি
বন্ধুত্বের দাবি
সমাজ বদ্ধ প্রাণী হয়ে বিভিন্ন সম্পর্কের বেড়াজালে আমরা সকলেই আবদ্ধ।শৈশব থেকে বার্ধক্য তথা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কারোর না কারোর ওপর নির্ভরশীল।এই নির্ভরশীলতা জীবনের বিভিন্ন স্তর পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন।এক্ষেত্রে বয়স একটা ফ্যাক্ট হলেও সব সম্পর্কের উর্দ্ধে বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যা বিশ্বাসের সূক্ষ্ম রজ্জু দ্বারা এমনভাবে যুক্ত থাকে যা ছিন্ন করা বেশ কঠিন।বন্ধুত্ব সম অথবা বিসম এই দুই প্রকারের হতে পারে।
সম বন্ধুত্বর ক্ষেত্রে দুটি সম বয়সী নারী অথবা পুরুষ অথবা বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে হতে পারে।আর বিসম বন্ধুত্বর ক্ষেত্রে বয়স অথবা ব্যক্তি দুটিই যে সম হবে এমন কোন অর্থ নেই।এমনই এক বিসম বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে অনু আর রুদ্রর মধ্যে।অনু রুদ্রের সমবয়সী নয়,ওদের মধ্যে বয়সের তারতম্য অনেক তবুও এক অদৃশ্য রজ্জুর দ্বারা অনু রুদ্রের প্রতি এক মায়া ও স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।অনু তার বন্ধুকে হৃদয়ের সিংহাসনে এমনভাবে প্রতিষ্টা করেছে যা ভ্রাতৃত্বের স্নেহ দ্বারা পরিপূর্ণ।রুদ্রকে সে কখনও সম্মুখ থেকে প্রত্যক্ষ করেনি কিন্তু কথোপকথনের মাধ্যমে রুদ্রর এক শান্ত,ভদ্র ও পরিশীলিত রূপ অঙ্কন করেছে নিজের মানস চিত্রপটে।
নাম রুদ্র তাই স্বভাবটা একটু উগ্র হবে সেটাই স্বাভাবিক।অত্যন্ত বিস্ময় ও রহস্যে মোড়া এই রুদ্র।নিজেকে শামুকের ন্যায় একটা শক্ত আবরণের মধ্যে সবসময় গুটিয়ে রাখে।সব সময় আতঙ্কে থাকে হয়তো এই শক্ত আবরণটা ভেঙে গেলে তার ভিতরে অবস্থানকারী একটি নরম,তুলতুলে স্বচ্ছ জীবনের সত্যতা সকলের সামনে প্রকাশিত হবে।যা ভেদ হওয়া মাত্রই কোন এক অজ্ঞাত সত্যি সকলের সামনে উন্মোচিত হবে যেটা ওর জীবনে ভয়ঙ্কর ক্ষতি ডেকে আনবে,যার ফল হয়ত বা মারাক্তক।
অনু বয়সে বড় তাই ওর জীবনাভিজ্ঞতাও নিতান্ত কম নয়।রুদ্র যে নানা ভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেয় সেটা অনু ঠিক বুঝতে পারে রুদ্রর কথা বলার মধ্য দিয়ে।তবুও এই ভাইয়ের প্রতি অনু মাঝে মাঝে বেজায় রেগে গেলেও বেশিক্ষন রাগ করে থাকতে পারে না,আবার তার ভাইয়ের স্মরণাপন্ন হয়।আর অনুর এই স্বভাবটা রুদ্র বেশ উপভোগ করে তা অনুর অজানা নয়।ভ্রাতৃত্বের উর্দ্ধে সর্বোপরি রুদ্র অনুর বন্ধু তাই অবলীলায় সে তার নিজের জীবনের অনেক কথাই রুদ্রের সঙ্গে ভাগ করে নেয় সেই বিশ্বাসের ভরসায়।
অনুর সঙ্গে রুদ্রের যোগাযোগ সাধিত হয়েছিল একটি সোশাল মিডিয়ার সৌজন্যে।রুদ্রের অসামান্য লেখনী ক্ষমতা সেই লেখনীকে রুদ্রের প্রতি বন্ধুত্বর দাবি রেখে অনু রুদ্রকে তার লেখার জগতে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়,জানে না সে সফল হবে কিনা তার এই প্রচেষ্টায় ,সেটা সম্পূর্ণ রুদ্রর ওপর নির্ভর করছে,সে আদেও এই বন্ধু স্থানীয় বড় দিদিকে দেওয়া কথা রাখবে কি না?আসলেও তাকে শ্রদ্ধা,ভক্তি, মান্য করে কি না? নাকি সবই নিছক মিথ্যে কথা,মন ভোলান।
না অনুকে ভুল প্রমাণিত করে রুদ্র।অনুকে দেওয়া কথা রাখতে পুনরায় কলম ধারণ করে সে।আর সেই কলম থেকে ঝরে পড়া অগ্নির স্ফুলিঙ্গ উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে থাকে সাহিত্যের প্রাঙ্গনে।রুদ্রকে ফেরানোর প্রচেষ্টায় সফল হয় অনু।
জানিনা কোন দিনও রুদ্র আর অনুর প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ হবে কিনা? তবুও অনু সারা জীবন এই বন্ধু ও ভাইকে নিজের মনের সিন্দুকে তালাবন্দি করে রাখবে আমৃত্যু।তুই সবসময় ভালো থাকিস রুদ্র,জীবনে সমস্ত বাধা অতিক্রম করে সফলতার উচ্চ শিখরে পদার্পন কর এই কামনা ও মন থেকে আশীর্বাদ করে তোর এই বন্ধু ও বড় দিদি অনু।ভালো থাকিস,সুস্থ থাকিস।
