ইচ্ছে ডানা

Inspirational Others

3  

ইচ্ছে ডানা

Inspirational Others

ভুরিভোজ

ভুরিভোজ

8 mins
243


গ্রামবাংলা বলতে যা বোঝায়,আর সেখানকার মানুষজন,সব কিছুতেই বৈচিত্র্য।ব্যক্তি বৈচিত্র্যর মধ্যে জামাই আদর বিশেষ ভাবে সমাদৃত।গ্রামের জামাইদের আবার ভীষণ মান।তারা শশুর বাড়িকে একপ্রকার হোটেল মনে করেন আর সেই বাড়ির লোকেরা তাদের কেয়ার টেকার।তাদের আতিথেয়তায় কোন ত্রুটি দেখা দিলেই ব্যাস কুরুক্ষেত্র অবসম্ভাবি। এমনই এক নামজাদা জামাই নিপেন্দ্র। গ্রামের সাধারণ ক্ষেত মজুর রমেন খুড়োর একমাত্র কন্যা মাধবীর পতিদেব। মাধবীর এই সবে একবছর হলো বিয়ে হয়েছে। সুতরাং এই বছরটি নিপেন্দ্রর কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের জামাই সে,প্রথম ষষ্ঠী বলে কথা। ভীষণ উত্তেজিত নিপেন্দ্র আতিথেয়তা উপভোগের আশায়। বিশেষ করে জামাই আদর।

   নব শ্বশুরালয়ে যাওয়ার নিমিত্ত দিন গুনতে থাকে নিপেন্দ্র। অপর দিকে মাধবী এক গভীর দুশ্চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে পড়ে এই ভেবে যে তার বাবা রমেন জামাই আদরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা পাবে কোথা থেকে। ক্ষেত মজুর বাবা অনেক কষ্টে যৌতুক জোগাড় করে একমাত্র মেয়েকে পাত্রস্থ করেছিল। নানা জনের কাছ থেকে কন্যার দায়ভার নামানোর জন্য ঋণ নিয়েছিল রমেন। সেই টাকাই এখনও সম্পূর্ণ পরিশোধ করে উঠতে না উঠতেই ষষ্টি আসন্ন। কি করবে মাধবী তা কিছুতেই স্থির করতে পারেনা। বিষণ্ণ চিত্তে মন মরা হয়ে থাকে সে।নিপেন্দ্র,তার তো মাধবীর বিষণ্ণ মন বোঝার ক্ষমতাই নেই। নিজের বিয়ে করা বউ হঠাৎ কেন এত বিষণ্ণ সেই দিকে তার ভ্রুক্ষেপই নেই। সে তো তার গ্রামের বন্ধুদের কাছে তার প্রথম ষষ্ঠী নিয়ে বেশ রসিয়ে রসিয়ে গল্প ফেঁদেছে। কি উপহার পাবে,কি খাবে,কেমন জামাই আদর হবে তার,সব সব কিছু। আসলে বিয়েতে যৌতুক হিসেবে যা দ্রব্য সামগ্রী সে পেয়েছে তাতে করে নিপেন্দ্র নিশ্চিত যে তার শ্বশুরালয় বেশ অবস্থাপন্ন। এটা যে নিপেন্দ্রর কত বড় ভুল তা থেকে সে বিস্মৃত। প্রত্যেক বাবা মা'ই চায় তার একমাত্র সন্তানকে সাজিয়ে গুছিয়ে শ্বশুর বাড়ী পাঠাতে। আর তার জন্য যে তাকে কত কৃচ্ছ সাধন করতে হয় তা অন্য কোন ব্যক্তির বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। নিপেন্দ্রর অবস্থাও তাই।

    রমেন ক্ষেত মজুর। যেদিন কাজে যায় সেইদিন উপার্জন হয়,নচেৎ উপার্জন কোথায়? বয়স হয়েছে তাই সেভাবে আর রৌদ্রের মধ্যে মাঠে গিয়ে কাজ করতে সে অক্ষম। সারা বছর যেমন তেমন করে কেটে গেলেও বর্ষা কালে নিজেদের পেটের অন্ন যোগাতেই তার হিমশিম অবস্থা। তার স্ত্রী কমলার অবশ্য একটা গাভী আছে। ঘুটে,দুধ বিক্রি করে সে সংসারে কিছুটা টাকার যোগান দেয় বটে তবে সেটা অতি সামান্য। পুরোনো চিন্তাভাবনার হলেও মাধবীই একমাত্র সন্তান। নচেৎ এই দুর্মূল্যের বাজারে একের অধিক সন্তান পালন বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার বিশেষ করে রমেনের মত ক্ষেত মজুরের সংসারে। মাধবীকে অনেক কষ্ট করে কোনরকমে বড় করেছে রমেন আর কমলা। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও মাধবীকে পড়িয়ে শিক্ষিত করেছে তারা। খুব বেশি দূর পড়াশোনা না করলেও লিখতে ও পড়তে পাড়ার মত শিক্ষা মাধবীর আছে। তাইতো যখন মাধবীর জন্য সম্বন্ধ এলো,এক দেখাতেই পাত্র পক্ষের মাধবীকে পছন্দ হয়ে গেল। দেখতে শুনতে মোটামুটি হলেও মাধবী বেশ কর্মঠ ও সংসারী মেয়ে। অপর দিকে রমেন তাদের থেকে অবস্থাপন্ন ঘরে মেয়ের সম্বন্ধ হওয়ায় দ্বিমত প্রকাশ করেনি বরং মেয়ের ভাগ্যে সে গর্বিত। নিপেন্দ্রর বাবার অল্প বিস্তর কিছু চাষের জমি আছে যেখান থেকে বছরের চাল আর সব্জির যোগান অনায়াসেই হয়ে যায়। আর নিপেন্দ্র স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাইনে খুব বেশি না হলেও বেশ ভালোভাবেই চলে যায়। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে জামাই আদর খাওয়ার নিপেন্দ্রর যে স্বপ্ন তা নিতান্তই অমূলক। তার কাছে মাধবীর পরিবারের অবস্থা কাচের ন্যায় স্পষ্ট। তবুও সে চায় একটু বেশি প্রাধান্য পেতে,যত্ন পেতে।

    গ্রামের মানুষদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও সৌজন্য বোধের অভাব বিন্দু মাত্র নেই। তারা তাদের ও অপরের যথাযথ সম্মান রক্ষা করতে জানে। খাদ্য পরিবেশনের দ্বারা না হলেও যথাসাধ্য চেষ্টা তারা করে যাতে আপ্যায়নে কোন ত্রুটি না থাকে। একেতেই নতুন জামাই তার ওপর মেয়ের সম্মানের কথা চিন্তা করে রমেন খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। কিছু একটা পথ তো খুঁজে বার করতেই হবে বিচলিত হলে চলবে না। ঠান্ডা মাথায় এর একটা সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করে রমেন। কিছু একটা মনে হতেই হঠাৎ করেই রমেনের মুখে হাসি খেলে যায়। নিঃশ্বাস হাল্কা করে স্বস্তি পায় সে। কাঠের উনুনে জাল ঢুকিয়ে গালে হাত দিয়ে একমনে শূন্যে তাকিয়ে থাকে মাধবী। নিপেন্দ্র স্নানের পূর্বে গায়ে মাখার তেল নিতে এসে মাধবীর অন্য মনস্কতা দেখে বলে ওঠে," কি হলো, গালে হাত দিয়ে ওত কি ভাবছো। ভাত ফুটে তার ফ্যান পরে যে জাল নিভে গেছে সে খেয়াল আছে?" নিপেন্দ্রর কথা শুনে মাধবী শশব্যস্ত হয়ে নড়েচড়ে বসে দেখে উনুনের জাল নিভে তা থেকে কাল ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। " তাড়াতাড়ি রান্না কর,আমার স্কুলের দেরি হয়ে যাবে তবে," বলেই নিপেন্দ্র নাভি মূলে তেল দিতে দিতে স্নান ঘরের দিকে যায়। নিপেন্দ্র চলে যেতেই মাধবী পুনরায় উনুন জ্বালিয়ে রান্নায় মননিবেশ করে। স্নান সেরে নিপেন্দ্র পাত পেরে খেতে বসলে মাধবী সামনে বসে নিপেন্দ্রকে একটা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে। নিপেন্দ্র খাওয়ায় মন নিবেশ করলেও মাধবীর মন পরে থাকে তার বাপের ঘরে। কি করে যে তার বাবা জামাই আদর করবে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে গালে হাত দিয়ে সেই কথাই ভাবতে থাকে মাধবী। খেতে খেতে নিপেন্দ্র বিষম খেলে মাধবী ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে শশব্যস্ত হয়ে এক গ্লাস জল এগিয়ে দেয় নিপেন্দ্রর দিকে। গ্লাসটা হাতে নিয়ে কিছুটা জল পান করেই নিপেন্দ্র মাধবীকে বলে," কোথায় থাকে তোমার মন আজকাল? সংসারে আছো না কি অন্য কোথাও বোঝাই যায়না। কি এত চিন্তা তোমার? আমাকে কি একটু খুলে বলা যাবে?" নিপেন্দ্রর কথা শুনে মাধবী ভাবে ,"কি বলবে? নিজের বাপের বাড়ির বদনাম কি আর পরের ছেলের সামনে করা যায়?"তাই একপ্রকার মুখে কুলুপ লাগায় মাধবী। নিপেন্দ্রও আর কোন উত্তর না পেয়ে খাওয়া শেষ করে স্কুলের পথে যায়।

  ষষ্ঠী আসন্ন সেই সঙ্গে নিপেন্দ্রর উত্তেজনা ও মাধবীর দুশ্চিন্তা। যথা সময় একদিন রমেন নিপেন্দ্রকে আমন্ত্রণ করতে হাজির হয় তার বাড়ি। মাধবী তার বাবাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। বারান্দায় একটা মাদুর পেতে তাতে রমেনকে বসতে বলে ভেতরে যায় মাধবী। ততক্ষনে জামাই শ্বশুর নিজেদের মধ্যে কথোপকথন অব্যাহত রাখে। কিছুক্ষণ পর মাধবী হাতে করে একটা কাসার গ্লাসে জল আর প্লেটে কিছু গুড়ের বাতাসা এনে রমেনকে দেয়। সচরাচর ছানার মিষ্টি না হলেও জল বাতাসাই হলো পাড়াগাঁয়ে আতিথেয়তার প্রাথমিক পন্থা। সকলের মধ্যে কথাবার্তা সম্পন্ন হলে মেয়ে জামাইকে নির্দিষ্ট দিনে যথা সময়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে রমেন বিদায় নেয়। এতসব কথার মাঝে মাধবী আসল কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে যাওয়ায় বিষণ্ণ হয়ে ওঠে ওর মন। অপরদিকে নিপেন্দ্র বেজায় খুশি ষষ্ঠীর আমন্ত্রন পেয়ে। মাধবীও বিষণ্ণ চিত্তে তার স্বামীর খুশি দেখে আনন্দিত হয়। সত্যিই তো জামাই মানুষ তাই আবার প্রথম ষষ্ঠী এতটুকু চাওয়া তো ন্যায়সঙ্গত। মাধবীও এটা ভেবে একটু স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করে যে হতেই পারে তার বাবা আপ্যায়নের সব ব্যবস্থা করেই রেখেছে আর শুধুশুধু বৃথাই ভেবে মরছে সে।

   ষষ্ঠীর দিন সকাল সকাল নিপেন্দ্র পাজামা পাঞ্জাবি পরে একেবারে বর বেশে প্রস্তুত। আজ সে প্রথম ষষ্ঠী করতে যাবে তাই তার ব্যাপারই আলাদা। মাধবীও একটা তাঁতের শাড়ি পরে বেশ সুন্দর করে সেজেছে। নিপেন্দ্রর আর্থিক অবস্থা তেমন খারাপ নয় মাধবীর সাজ পোশাক দেখেই তা বেশ বোঝা যায়। গ্রামের মোড়ে মিষ্টির দোকান থেকে একটা বড় মাটির হাড়িতে রসগোল্লা আর আম,জাম,কাঁঠাল,লিচু নিয়ে সে যাত্রা করে সঙ্গে পথ চলতি যার সঙ্গেই দেখা হয় একবার করে দন্ত বিকশিত হাসি উপহার দিয়ে তার শ্বশুর বাড়ী ষষ্ঠীর নিমিত্ত গমনের কথা ব্যক্ত করে। অপরদিকে তাদের রিক্সা ভ্যান যতই এগিয়ে চলে মাধবীর দুশ্চিন্তা আর উত্তেজনা ততই বেড়ে চলে। তবুও মুখে একটা কৃত্রিম হাসি নিয়ে সে তার স্বামীর সঙ্গে বার্তালাপ করে। নিপেন্দ্র বেশ হাসি খুশি ও বেহাল তবিয়তে শ্বশুর বাড়ীর পথে যাত্রা করে। অবশেষে দুজনই যখন বাড়ির সামনে এসে পৌঁছয় তখন তারা দেখে রমেন আর কমলা দুজনই জামাইকে আপ্যায়ন করতে একেবারে বাড়ির সামনে এসে হাজির মুখে মিষ্টি মধুর হাসি নিয়ে। এতক্ষণ মাধবী যে দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে এসেছে তা হটাৎ করেই বিস্ময়ে রূপান্তরিত হয় ওর বাবা মায়ের মুখে হাসি দেখে। মাধবী এটাই আনমনে ভাবতে থাকে যে," তবে কি তার বাবা মা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে জামাই আদরের? কিন্তু কি?" তবুও কিছুই মাধবীর বোধগম্য হয়না। "এসো এসো বাবা ভেতরে এসো। পথে আসতে কোন অসুবিধা হয় নি তো?" এই উক্তি শুনে মাধবী সকলের প্রতি ধ্যান দেয়। আর মনে মনে একটু প্রসন্নও হয় ওর মাথা তার স্বামীর সামনে হেঁট হয়ে যাবেনা বলে।

    সকালে জামাই বরণের পাশাপাশি প্রাতরাশ বেশ মনের মত হওয়ায় বেশ খুশি হয় নিপেন্দ্র। অতঃপর দুপুরের খাবারের অপেক্ষা। যথারীতি সেই সময় উপস্থিত হলে আসনে বসতে দেওয়া হয় নিপেন্দ্রকে। তার সম্মুখে তখন বড় কাসার থালা। তার চারিপাশে বেষ্টন করে আছে পাঁচ ছয়টা কাসার বাটি সহযোগে বিভিন্ন রকমের ভাজা,সব্জী, ডাল,মাছ,পাঠার মাংস থেকে শুরু করে দই মিষ্টি সবকিছু। দেখে বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে রমেন আজ এই বিশেষ দিনে নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়েও জামাই আদর ও যত্নের কোন ত্রুটি রাখেনি। এত আয়োজন নিপেন্দ্রকে ইন্দ্রিয় সুখের পাশাপাশি চিত্ত সুখও ঘটায় সাথে রমেন আর কমলার হাসি মিশ্রিত সৌহার্দ পূর্ণ ভালোবাসা। সবকিছুই মাধবী নির্বাক থেকে প্রত্যক্ষ করতে থাকে। এত সব আয়োজন তারা করলো কি করে এই প্রশ্নই এখন মাধবীর মনকে অশান্ত করে রাখে। যতক্ষন না এর উত্তর সে পাচ্ছে তার মন যে কিছুতেই শান্ত হবার নয়। দুপুরের খাওয়ার পাট চুকলে নিপেন্দ্রর বিশ্রামের ব্যবস্থা করে মাধবী ওর বাবা মায়ের কাছে যায়। আজ যে পরিমাণ আহারের ব্যবস্থা রমেন আর কমলা করেছিল তাতে করে মাধবী সেগুলো গ্রাস করলেও তার মন তৃপ্ত হয়নি এতটুকুও। মনে যদি হাজার চিন্তা ভিড় করে আসে তবে চর্ব,চস্য, লেহ্য,পেওতেও মন অশান্তই থাকে সেইসব আহার গ্রহণে পেট ভরলেও মন ভরেনা কিছুতেই।

   রমেন আর কমলা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় মাধবী," বাবা,মা তোমাদের সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। বলতে পার কিছু জিজ্ঞাসা আছে।" মাধবীর মুখের দিকে তাকিয়ে রমেন আর কমলার এটা বুঝতে অসুবিধা হয়না যে ও আসলে কি বলতে চাইছে।হেসে বলে রমেন," আরে আয় আয়, বোস, তা দুপুরে সব পেট ভর্তি করে খেয়েছিলি তো?" নিজের পাশে হাত দেখিয়ে বসতে বলে মাধবীকে। মাধবী তখন ছল ছল চোখে তাকিয়ে তার মা বাবার দিকে। একেতেই দরিদ্র, দিন আনি দিন খায় পরিবার তারা এতকিছুর আয়োজন করলো কোথা থেকে এই প্রশ্নই করে মাধবী। এর উত্তরে রমেন আর কমলা দুজনই চুপ করে থাকে। কারোর মুখেই কোন বাক্য সরেনা। হঠাৎই মাধবীর মনে পড়ে যায় বাড়িতে ঢোকার মুখে গোয়াল ঘর খানা কেমন যেন শুন্য লাগছিল। হ্যাঁ ও ঠিকই দেখেছে ওর মায়ের শেষ সম্বল ওই দুধেল গাই টাকে তো মাধবী বাড়িতে ঢোকার সময় দেখে নি,তবে কি? চোখ বিস্ফারিত করে তাকায় মাধবী ওর বাবা মায়ের প্রতি বলে," তবে আমি যেটা ভাবছি তোমরা কি সেটাই---", মাধবীকে বলতে না দিয়েই কমলা বলে ওঠে," ও তুই ওসব নিয়ে চিন্তা করিস না। জামাই মানুষ,ওর ও তো কিছু আশা থাকতে পারে তাই না? তাছাড়া এটা তোদের বিয়ের প্রথম বছর। এটুকু আপ্যায়ন না করলে কি পাড়াগাঁয়ে আমাদের মান থাকে?" ব্যতিব্যস্ত হয়ে মাধবী বলে," তাই বলে তোমাদের শেষ সম্বল টুকু--",রমেন মেয়েকে শান্ত করতে বলে ওঠে," নারে মা তুই ওত চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। মাত্র তো কয়েকটা দিনের ব্যাপার তারপর ওই গাই টাকে আবার মহাজনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো। আমরা যে জামাইকে খুশি করতে পেরেছি এই অনেক আমাদের কাছে। তুই সুখে থাক,শান্তিতে থাক,এর বেশি আর কি চাই বল।" মা- বাবার কথা শুনে মাধবীর চোখ অশ্রু পূর্ণ হয়ে ওঠে। দরিদ্র, তবুও তারা নিজের মেয়ের সুখের জন্য তাদের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল টুকু পর্যন্ত বিসর্জন দিতে কার্পন্যতা করেনি। জামাইকে নিজেদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে আপ্যায়ন করে। এ যে বড় পাওয়া। নিজেদের নিঃস্ব করে অন্যকে ঋদ্ধ করতে কে পারে? এটাই বোধহয় গ্রাম বাংলার দরিদ্র মানুষ। যাদের কাছে সম্পর্ক আর মূল্য বোধই শেষ কথা ধনীদের মত লোক দেখানো, ঠুনকো ভালোবাসা নয়।

                  ---------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational