রাতের অতিথি
রাতের অতিথি
বর্ষা কাল, মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে সঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানি আর আকাশ বিদীর্ণ করা মেঘের গর্জন।লোডশেডিং থাকায় চারিদিকে ঘন তমশা বিরাজ করছে।খালি চোখে অন্ধকারে কিছু দেখা না গেলেও মাঝে মাঝে বিদ্যুত ঝলকানির ক্ষীণ আলোয় স্বল্প সময়ের জন্য চারিপাশের বস্তু সামগ্রী দৃশ্যমান হচ্ছে।এমতাবস্থায় ঘরের মধ্যে লণ্ঠনের ক্ষীণ আলোয় মেয়েটি বসে একটি পুরনো জীর্ণ শীর্ণ ডাইরির পাতা ধীরে ধীরে ওল্টাচ্ছে আর গালে হাত দিয়ে একমনে কি যেন ভেবে চলেছে।
স্মৃতি সতত মধুর হলেও কিছু স্মৃতি যা শুধু বেদনার তা মনকে কেবলই ভারাক্রান্ত করে,তাতে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তবুও মন চায় সেই পুরনো স্মৃতিগুলোকে রোমন্থন করতে,তাই মেয়েটিও এর ব্যাতিক্র নয়,ফিরে যায় অতীতে ভালো খারাপের সংমিশ্রন জাত কিছু স্মৃতি রোমন্থন করতে।আজ অফিসের প্রথম দিন।চাকরি পেয়ে মেয়েটি ভীষণ খুশি।মেয়েদের এই সমাজের বুকে আত্মসম্মানের সহিত টিকে থাকতে হলে যে তার পায়ের তলার জমি মজবুত করা খুবই প্রয়োজন আর সেটা সম্ভব একমাত্র নিজেকে স্বনির্ভরশীল অর্থাৎ প্রতিষ্টিত করার মাধ্যমে।অনামিকা মধ্যবিত্ত পরিবারের সহজ সরল সাধারণ একটি মেয়ে।সংসারে অভাব অনটনের মধ্যেই বেড়ে উঠেছে সে,জীবনে অতিরিক্ত পাওয়া বলে কিছুই ছিল না তার।কারণ চাওয়াটা যদি সীমিত হয় তবে সেখানে পাওয়ার আশাটাও বোধহয় সীমিত,তাই জীবনের প্রতি কোন অভিযোগ নেই অনামিকার।হ্যাঁ, তবে লক্ষ্য একটা ছিল,নিজেকে সুপ্রতিষ্টিত করার।আজ অনামিকা তার সেই লক্ষ্য পূর্ন করতে পেরেছে।বাবা মাকে শেষ বয়সে একটু সুখ শান্তি দেওয়ার জন্য ওর যে প্রচেষ্টা তা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে।তাই আজ আর অনামিকার খুশির কোন সীমা নেই।
প্রথম দিন তাই একটু টেন্সড আছে অনামিকা।মধ্যবিত্ত পরিবার তাই সকালের খাবার অতি সাধারণ ডাল, ভাত আর সব্জি, বড়লোকদের মত ওই জ্যাম রুটির আদিখ্যেতা নেই।সাধারণ খাবার তবুও যেন আজ ওর গলা দিয়ে কিছু নামছে না।ভীষণ ব্যাকুল হয়ে আছে আজকের দিনে।তাই দেখে অনামিকার মা মাথায় হাত বুলিয়ে "চিন্তার কোন কারণ নেই,সব ঠিক হবে," এই আশায় আস্বস্ত করে প্রাতরাশ করার অনুরোধ করেন।মায়ের নিষ্পাপ মলিন মুখের দিকে চেয়ে অনামিকার মাতৃ হৃদয়ের সেই আর্জি তুচ্ছ করতে মন সায় না দেওয়ায় কোনক্রমে খাবার গুলো গলদগ্রহ করে,বাবা মায়ের চরণ স্পর্শ করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বারবার নিজের হাত ঘড়ির দিকে দেখছে আর তীর্থের কাকের মত বাসের অপেক্ষা করছে।আজ যেন ওর হার্টবিট অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশি তীব্রগতি ধারণ করেছে।ঘন ঘন নিশ্বাস পড়ছে,শরীর জুড়ে ঘর্ম নির্গত হচ্ছে,এক অস্বস্তি হচ্ছে অনামিকার কিন্তু কেন? সেটি তার অজানা।এদিকে বাসের অপেক্ষা করতে করতে অধীর হয়ে উঠেছে অনামিকা,"ধূর,বাব্বা,আজ বাস এত দেরি করছে কেন,ভালোলাগেনা ছাতা," নিজের মনেই বকতে থাকে অনামিকা।আসলে বাস দেরি করে নয় বরং অফিসে সঠিক সময় পৌঁছনোর জন্য ও নিজেই যে একটু তাড়াতাড়ি এসেছে সে খেয়াল নেই।
অত্যাধিক উত্তেজনা কাটিয়ে বাস এলে একদম সঠিক সময় অফিসে পদার্পন করে অনামিকা।উচ্চপদে সরকারি চাকরি পেলেও ওকে একজন বসের আন্ডারে কাজ করতে হবে।সেইমত অনামিকা ওর বসের সঙ্গে দেখা করতে যায়।দরজা নক করে কেবিনে ঢোকার অনুমতি পেলে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে অনামিকা।এতক্ষন ও নিজে একটা ঘোরের মধ্যে ছিল হটাৎ করেই সামনে চোখ যেতে ওর চক্ষু স্থির হয়ে যায় সামনে দাঁড়ান ব্যক্তিটিকে দেখে।সুউচ্চ, সুদর্শন,চোখে চশমা,কোঁকড়ানো চুল,একদম টিপটপ পোশাক পরিহিত একজন যুবক।এই পরিস্থিতির শিকার কেবলমাত্র যে অনামিকা তা কিন্তু নয়,অপরপক্ষের যুবকটিরও সেই একই অবস্থা।শাড়ি পরিহিতা,পিঠের উপর ফণীর ন্যায় কালো বেনি,পটলচেরা কাজল নয়না, স্মিথ হাসি সঙ্গে ঠোঁটের ওপর ছোট্ট কালো তিল যা প্রথম দর্শন মাত্রই যুবকটির হৃদয় হরণ করেছে,এই অপরূপ রূপবতী।
দুজনের চোখ যখন একে অপরের প্রতি নিবদ্ধ ও নিজেদের মন যখন ভাবের সাগরে নিমগ্ন ঠিক তখনই রূপম এসে ডেকে ওঠে "প্রত্যূষ"।তখনই যে যার ভাবের জগৎ থেকে বাস্তবের মাটিতে পদার্পন করে অপ্রস্তুত হয়ে একে অপরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রূপমের দিকে তাকায়।প্রত্যূষকে লক্ষ্য করে সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে নির্দেশ করে রূপম বলে ওঠে,"উনি মিস অনামিকা সেন,আজ প্রথম অফিস জয়েন করলেন,আজ থেকে তোর যা প্রয়োজনীয় কাজ সব উনি করে দেবেন।"অন্যদিকে রূপম অনামিকাকে প্রত্যুষের পরিচয় দিয়ে বলে ,"উনি তোমার বস,তুমি প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য ওনাকেই সাবমিট করবে।" রূপমের দ্বারা পরিচয় পর্ব সমাপ্ত হলে অনামিকা বলে ওঠে,"স্যার, আমাকে কি করতে হবে বলুন?" প্রত্যূষ আবারও অনামিকার মধুর কণ্ঠস্বর শুনে দ্বিতীয়বার প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে।একেই হয়ত বলে পূর্বরাগ,প্রথম দর্শনে ভালোবাসা যা অনামিকাকে দেখা মাত্র প্রত্যুষের মনে এই মুহূর্তে সঞ্চারিত হয়েছে।
এরপর প্রত্যূষ অনামিকাকে সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দিলে অনামিকা সেই স্থান পরিত্যাগ করে নিজের কেবিনে গিয়ে বসে।অনামিকা চলে যেতেই প্রত্যুষের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি খেলে যায় এইভেবে যে ওর দীর্ঘ অপেক্ষার হয়ত অবসান হতে চলেছে।এতদিন স্বপ্নে ও যে নারীকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী ভেবে কল্পনা করে এসেছে সে হয়ত এই মেয়েটিই, অনামিকা!
সাধারণ,লাস্যময়ী,অপরূপা।নারীকে যে শাড়িতেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে অনামিকাই তার প্রত্যক্ষ প্রমান।
প্রত্যুষের আন্ডারে কাজ করতে হয় বলে অনামিকা ধীরে ধীরে ওর অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়ে পড়ে।সরল,সাধারণ মেয়েরও এত মনমুগ্ধকর বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে তা প্রত্যূষ কোন দিনও বুঝতে পারতো না যদিনা অনামিকা ওর জীবনে প্রবেশ করত।এইদিকে অনামিকা সে মনে মনে প্রত্যূষকে ভালোবাসলেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সংকোচ বোধ করে যেহেতু প্রত্যূষ ওদের থেকে বহুলাংশে ধনী ও সম্ভ্রান্ত।পাছে ভালোবাসার স্বীকারোক্তির পরিবর্তে তিরস্কার প্রাপ্তি ঘটে যেটা অনামিকার পক্ষে মেনে নেওয়া মোটেও সহজ নয়,তারচেয়ে বরং এই ভালো প্রত্যুষের প্রতি ভালোবাসাটা নাহয় ওর হৃদয়ে অব্যক্ত হয়েই থাক।
এইভাবে দিন অতিক্রান্ত হতে থাকে।আর নিজেদের অজ্ঞাতসারে অনামিকা আর প্রত্যূষ কবে যে একে অপরের ঘনিষ্ট হয়েছে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি।প্রত্যুষের প্রতি এক অব্যক্ত ভালোবাসা অনামিকার তো ছিলই,আর পরবর্তীতে প্রত্যুষের ভালোবাসার স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে ওদের সেই ভালবাসা মর্যাদা লাভ করে।অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলেও প্রত্যুষের হৃদয়ের আর্তি অনামিকা উপেক্ষা করতে পারেনি,সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে প্রত্যুষের ভালোবাসা।আর এই গ্রহনীয়তার মধ্য দিয়ে প্রেমের গভীর সাগরে ডুব দেয় একে অপরকে অবলম্বন করে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ,সর্বপরি অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর এই সাধারণ মেয়েকে প্রত্যুষের বাবা-মা মন থেকে গ্রহণ না করলেও এক শুভ দিনে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সাতপাকের দ্বারা সাত জন্ম একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে অনামিকার শূন্য সিঁথি রাঙিয়ে দেয় প্রত্যূষ।কিন্তু কথায় আছে সকলের ভাগ্যে সুখ সয় না।সহজ,সরল,সাধারণ মেয়ে অর্থের অভাব থাকলেও যার জীবনে সুখ ও ভালোবাসার কোন অভাব ছিল না,তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারের যবনিকায় হারিয়ে যেতে থাকে প্রত্যূষ ও অনামিকার ভালোবাসা।কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেই নাকি নারীরা স্বাধীন।সংসার,সমাজের কোন বাঁধনই তাদের সেই স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে না।তবে অনামিকার জীবন কেন এত বিস্বাদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল,সে তো কর্মজীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
আসলে একই অফিসে দুজন কাজকরায় অনামিকার প্রাপ্ত মাসিক বেতনের প্রতি প্রত্যূষ নিজের অধিকার কায়েম করে সমস্ত অর্থ নিজের হস্তান্তর করে,যার ফলে অনামিকা তার বাবা মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করা থেকে বিরত থাকে। মধ্যবিত্ত পরিবার,বৃদ্ধ বাবা মায়ের একমাত্র অবলম্বন অনামিকা যে একজন পুত্রের যাবতীয় কর্তব্য পালন করে এসেছে ওর প্রত্যুষের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত।আর আজ প্রত্যুষের অর্থের প্রতি লোভের কারণ বশত বাবা মায়ের প্রতি সে কর্তব্য করতে অক্ষম অনামিকা।দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকায় একদিন অনামিকার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে প্রত্যূষকে এই ব্যবহারের কারণ জিজ্ঞেস করলে,প্রত্যূষ এই ব্যাখ্যা দিয়ে বলে,"স্বামীর সব কিছুতে যেমন স্ত্রীর পূর্ণ অধিকার,স্বামীরও তাই, সেইকারণে তোমার উপার্জিত অর্থের প্রতি আমার পূর্ণ অধিকার আছে,তাই, একদম সাধারণ একটা ঘটনা,এতে এত ভাববার কি আছে?" প্রত্যুষের কথা বলার ধরণ দেখে অনামিকা বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে এটাই উপলব্ধি করতে থাকে যে," প্রত্যূষ কত নিচ মনের এক ব্যক্তি, যে শুধু নিজের কথা,নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আর কারোর কথা নয়,সেই ব্যক্তির সঙ্গে আর একমুহূর্তও থাকা চলে না,"আর তৎক্ষণাৎ কালবিলম্ব না করে প্রত্যূষকে ছেড়ে সারা জীবনের মত ওর জীবন থেকে চলে যায় অনামিকা নিরুদ্দেশের পথে।
গভীর রাত,চারিদিকে নিঝুম নিস্তব্ধ।জনমানবের কোলাহল তো দূর পশু পাখিরও কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।অনামিকা একাকী মনে মনে ভাবছে আজ যেন ওর বুকে জমে থাকা সমগ্ৰ যন্ত্রনা প্রকৃতির আঁখি হতে প্রবল বৃষ্টির বারি ধারা রূপে নির্গত হয়ে অঝোরে ঝরে পড়ছে।অনামিকা ভাবনার মাঝেই হটাৎ দরজায় টোকা পড়ার শব্দ হওয়ায় ভীত হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ।ও কি ঠিক শুনলো,নাকি কোন ভ্রম,এই ভেবে দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে,আবারও শব্দ পেয়ে এবার তার ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয়।নিঃশব্দে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় অনামিকা ,বাইরে তখন পুরুষ কণ্ঠস্বর,"শুনছেন!কেউ আছেন ভেতরে,আমার একটু সাহায্য চাই,দয়া করে একটু দরজাটা খুলুন না,প্লিজ! আমি হেল্পলেস,এত রাতে কি করবো বুঝতে পারছি না,একটু সাহায্য করুন," একনাগাড়ে কথাগুলো বলতে থাকে এই আগন্তুক।কণ্ঠস্বরটি শোনার পর মেয়েটির বিস্ময়ে চোখ বড় হয়ে যায়,নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না সে,এটা সেই চেনা কণ্ঠস্বর,তবে কি-----।আবার ভাবনার মাঝে চ্ছেদ ঘটায় সেই কন্ঠ।মেয়েটি আর দ্বিধা না করে নিজের সন্দেহ ভঞ্জনার্থে দরজা খুলে সম্মুখে দ্বারায় আগন্তুকের।
বাইরে এত প্রবল বৃষ্টি সত্ত্বেও এই মুহূর্তে সমগ্ৰ পৃথিবী যেন থমকে গেছে।দুটি ভালোবাসার মানুষ এত বছর পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আবার ভাগ্যের জোড়ে উভয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে।এত গভীর অন্ধকারের মধ্যেও বাইরের বিদ্যুৎ ঝলকানির আলো আধারী খেলায় অস্পষ্ট হলেও কেউ কাউকে চিনতে ভুল করে নি।দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই আগন্তুক ক্ষীণ কণ্ঠে বলে ওঠে,"অনামিকা,তুমি?"অনামিকা প্রত্যুত্তর না দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওর অতীতকে আহ্বান করে বলে ভেতরে আসুন।সেই ডাকে না আছে কোন উত্তেজনা না আনন্দ। যেন প্রত্যূষকে দেখে অনামিকা বিন্দুমাত্র আনন্দিত হয় নি।আর তাই দেখে প্রত্যূষ একটু মানসিক আঘাত পেল,যে কিনা অনামিকা চলে আসার পর তার ভুল বুঝতে পেরে সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিল কিন্তু সময় আর পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়ায় তা আর সম্ভব হয় নি।এখন যখন ভাগ্য আর পরিস্থিতি প্রত্যূষকে সেই সুযোগ প্রদান করেছে তাহলে আর দেরি কেন।এই ভেবেই প্রত্যূষ অনামিকার হাত ধরে ফেলে আসা স্বামীর অধিকার নিয়ে আঁকড়ে ধরে অনামিকাকে।এতে অনামিকার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না দেখায় অবাক হয় প্রত্যূষ।কিন্ত অনামিকে ঠিক আগের মতোই স্থির,কোন উত্তেজনা নেই ওর মধ্যে।প্রত্যুষের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায় অনামিকা আর শান্ত স্বরে বলে,"অচেনা,অজানা কোন মেয়েকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে নেই সেটা আপনি জানেন না?"অবাক হয় প্রত্যূষ অনামিকার এই পরিবর্তন দেখে,বিস্ফারিত চোখ করে তাকিয়ে থাকে অনামিকার দিকে।আবারও বলতে থাকে অনামিকা,"রাত অনেক হয়েছে তাই আপনি এই রাতটুকু এখানে থেকে কাল সকালে সূর্য ওঠার আগেই এখান থেকে চলে যাবেন।আর হ্যাঁ,ফেলে আসা দিনগুলোকে আবার পুনরায় জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।" অনামিকার এই অদ্ভুত পরিবর্তন প্রত্যূষকে অবাক করেছে বৈকি,কিন্তু আর কোন আশা নেই দেখে প্রত্যূষও আর শেষ চেষ্টা করে নি।পরের দিন সকাল হতেই প্রত্যূষ সেখান হতে ত্বরায় প্রস্থান করলে অনামিকা কান্নায় ভেঙে পড়ে।বেদনাহত সেই দিনগুলোতে আর ফিরে যেতে চায় না ও,নিজের সম্মান খুইয়ে কারোর পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে চায় না।মুক্ত করতে চায় সমস্ত বন্ধন ও নিজেকে হিংসা ও দলাদলির রাজত্ব থেকে। তাই বাকি জীবন একা থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

